এক বিকালে বারান্দায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলাম ।এমন সময় রাতুল এসে হাঁক দিল, দেখে আমি নিজেও অবাক। কত দিন পর রাতুলের সাথে দেখা। সে কবে দেখেছি,মনেও পরে না। কাঁদের বেগটা রেখে বসে পড়ল আমার সাথে। বলতে শুরু করল তার জমানো কত কথা। শেষ হতে চায়না তার।
বলতে লাগল চয়ন আমার ভাল বন্ধু। ভার্সিটিতে পড়ার সময় ও আর আমি খিলগাঁও থাকতাম। রোজ বিকালে দুজন রেললাইনে গিয়ে বসে কত গল্প করতাম,কত আড্ডা দিতাম তার শেষ নাই। চয়ন নানা সংঘঠনের সাথে জড়িত ছিল। সরাসরি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। কিন্তু মনে মনে কোন একটা দল সমর্থন করত। প্রকাশ করত না। এক সাথে থাকতাম ঠিক কিন্তু আমি সবসময় তাকে বুঝতাম না। তাকে বোঝা খুব কঠিন ছিল। খুব শক্ত মনের ছিল চয়ন। দুজন একসাথে অনার্স শেষ করলাম। মাস্টার্স ভর্তি হলাম। তার বীমা কোম্পানীতে একটা চাকরি হল। এ নিয়ে আমাদের মাঝে কত মাতামাতি। তার আনন্দের থেকে আমাদের আনন্দ যেন বেশি। এভাবেই চলতে থাকল আমাদের সময়।
এবার আমি রাতুলকে বললাম- তোমাদের আর কোন বন্ধু!
হ্যাঁ ছিল অনেকে। রাসেল, লিটু, মিজান, অন্তু, মামুন,রায়না,শশি,কালিমা আরও অনেকেই ছিল আমাদের বন্ধু।
রাতুলের জন্য চা চলে আসল। আমার চায়ের কাপ খালি হল। আমি ভাবতে লাগলাম রাতুল এসব আমাকে বলার কারন টা কি ?
রাতুল চায়ের কাপে ঠোঁট লাগায় আর বলেই চলে- একদিন আমি আর চয়ন ভার্সিটি যাচ্ছি। গুলিস্থান পার হয়ে বংশাল মোড় হয়ে নয়া বাজার যেতেই একটি মিছিল এসে রাস্তা ব্লক করে ফেলে। হঠাৎ করেই একটি শব্দ। হৈচৈ পড়ে যায় চারদিক। কানে আসে চয়নের চিৎকার। রাতুল রাতুল বলে ডাকতে থাকে। আমি অস্থির হয়ে যাই। ভীর ঠেলে রাতুলকে খুঁজে পাই। দেখি রাতুল বিদ্ধস্থ। মিছিলের ভিতর থেকে বিস্ফুরিত হওয়া ককটেল তার গায়ে আঘাত হানে। হায়রে নিয়তি। টান দিয়ে কোন মতে পাঁজাকোলা করে রিকশা তোলে নিয়ে গেলাম হাঁসপাতালে। ডাক্তার দেখল অনেক সময় পরে। সাত দিন হাঁসপাতালে ছিল সে। তখন তার মোবাইল ছিল আমার কাছে। চার দিন পর বিকালে একটা ফোন আসে। একটা মেয়ের কণ্ঠ আমি অবাক হই। আমি ভাবতেও পারিনি যে একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে সে কথা বলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২৬