সাংবাদিকতার কাজে যে আমাকে কোথায় কোথায় যেতে হচ্ছে তা বলে বুঝাতে পারব না।এখন এক পতিতার সামনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে বসে আছি,আর তার থেকেও বেশি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আমাকে ফেলে দিয়েছে তার একটা প্রশ্নে!
প্রশ্নটা ছিল এমন,আমাদের যদি ভোগের লোক না থাকত তাহলে কি সেই পতিতা সমাজ তৈরি হতো? তাহলে কেনো শুধু আমাদের বাঁকা চোখে দেখে সমাজ? যে দিনে বাঁকা চোখে দেখে,সেই রাত্রে সর্বস্ব সোঁপে দিচ্ছে!!
তাহলে কেনো এই আড়াল আড়াল খেলা?
.
আজ আমি বড় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আঁটকে পড়েছি,কিন্তু পতিতার উপর একটা প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে হবে এবং একটা প্রবন্ধও লিখতে হবে।আর এ দায়িত্ব এডিটর স্যার আমার উপর দিলেন কারন আমার মতো নাকি খুব কম লোকই কথা সাজাতে পারে।কি এক বিপদ বলুন তো?
.
২৫-২৮ বছর বয়স হবে মেয়েটার,প্রথমে ঢুকতে সে আমাকে হয়ত খদ্দের ভেবে নিয়েছিল।কিন্তু ওর ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই পরিচয় দিয়ে দিলাম এবং আসার কারনও বলেদিলাম।
অবশ্য একজনের জন্য যতটা সময়ে যতটা টাকা নেওয়া হয় তা দিয়েছি।আমি তিনটা প্রশ্ন করব,উত্তর দিলে দিবেন নাহলে না!
আমি চলে যাব।
"আচ্ছা,প্রশ্ন করুন",ভাবলেশহীন মুখ নিয়ে বললেন
-এ পথে কেন?
-পেটের দায়ে
-কিভাবে?
-দু্রসম্পর্কের মামার লগে ৪ বছর আগে শহর দেখতে আইছিলাম,মামা আমারে এইখানে বেঁইচে দিয়ে গ্যাছে
-মুক্তির ইচ্ছা হয়?
-প্রথম প্রথম হতো,এখন হয় না।
-কেনো হয় না।
স্যার আফনার তিনটা প্রশ্ন হইয়ে গ্যাছে।
বেকুব বনে গেলাম,ওহো তাই তো।উঠে এলাম ওখান থেকে।
.
আমার লেখাটা ছিল এ বিষয়ে কিছুটা এমন:
পতিতা!!একি প্রথম শব্দেই নাক সিঁটকালেন।যায় হোক,বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের আর্থ সামাজিক অবকাঠামোতে অনেক ধরনের পেশা তৈরি করে দিচ্ছে।পতিতাবৃত্তি তারমধ্যে একটা।৯৯% পতিতার 'পতিতা' হওয়ার পেছনে কারন থাকে।বাকি ১% শখের বশে।এ বিষয়ে বেশি বলব না,তবে পেছনে গল্প আছে এমনের সংখ্যায় বেশি।তবে এ সমাজ এ বৃত্তিকে নিচু চোখে দেখলেও নির্মূলে আগ্রহী নই।কারন এ বৃত্তি দিনে যারা নির্মূল কর্মসূচি আর 'তারাও মানুষ' নামক মানববন্ধনে যুক্ত হয়,শেষরাত্রে তারা সঁপে দিতে সেখানেই যায়।একদলের এ বৃত্তির চাহিদা আছে,তাদের জন্যই তৈরি হয়েছে এ বৃত্তি এবং তাদের জন্যই টিকেও আছে।জানেন,যদি পুরুষসমাজ বেপর্দার নারী গ্রহণ না করত,তাহলে বেপর্দা থাকত না।তেমনই একদল পুরুষ চাই না এ বৃত্তি বন্ধ হোক,তাই টিকে আছে "পতিতাবৃত্তি"। কোন মেয়েই পতিতা হয়ে জন্মায় না । আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা , পক্ষপাতদুষ্ট সামাজিক নিয়ম, পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাব ইত্যাদি পরিস্থিতির স্বীকার হয়েই একটা মেয়ে বেছে নিতে বাধ্য হয় এই ঘৃণিত পতিতার জীবন । এটা কোন মেয়েরই কাম্য জীবন নয় । একটা মেয়ের পতিতা হয়ে উঠার পেছনের কাহিনী যাই হোক এটা ঠিক যে কোন মেয়েই স্বেচ্ছায় পতিতার জীবন বেছে নেয়না । কিন্তু প্রায় সব সময়ই যে বা যারা এই মেয়েটিকে অন্ধকার পতিতার জীবনে ঠেলে দিচ্ছে তারা রহস্যময় ভাবে থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।মোদ্দা কথা এ সমাজ চাই না এ প্রথা বিলুপ্ত হোক।
আজ সমাজে 'পতিতা'দের শুধু নিচু চোখে দেখা হয়,এমনকি তারা মৃত্যুর পর মাটি পর্যন্ত পাই না।তাহলে যে সমাজের জন্য আজ তারা টিকে আছে তাদের কেনো মাটি নসিব হই?আমার ছোট ছেলেটা সেদিন পড়ছিল,"পাপীকে নই,পাপকে ঘৃণা করো"।
.
সমাজের বর্তমান অবস্থা,"সর্প হয়ে দংশন করে,ওঝা হয়ে বিষ নামাতে আসে
লেখক:নাঈম আশফাক
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৫২