দুটি ট্রান্সপ্লান্টে পরও যখন আমার উন্নতি হলো না,বাবাকে বললাম,"থাকুক বাবা,এ কদিন আমি স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে চাই।এতো টানাটানির কি দরকার!!শেষ কটা দিন বুক ভরে নিঃশ্বাস নি।তরল অক্সিজেন ভালো লাগে না,বাবা।"কাঁদছি আমি,বাবাও কাঁদছে।সেই ছোটবেলাতে মাকে হারিয়েছি।বাবা আর আমার দিন ভালোভাবেই পার হয়ে যাচ্ছিল,মাঝখানে বাদ সাধল আমার ব্রেইন ক্যান্সার।
.
আজকাল দিনগুলো কত সুন্দর!!অনেক ছোটবেলা না তবে পঞ্চম শ্রেনীতে পড়তাম যখন মা মারা যায়।আজকাল,মায়ের হাতের রান্নাটা খুব মিস করি।কেমন রান্না করত মনে নেই,তবে যেমনই হোক আমার কাছে সেটা অসাধারণই লাগত।হয়ত আজ নেই,তাই বলছি অসাধারণ রান্না ছিল।তবে মনে হয় আজ যদি মা থাকতেন তাহলে হয়ত এতো কষ্ট হতো না।মায়ের কোলেই মাথা রেখে দিন পার করে দিতাম।
.
এ জীবনে বাবা কিছুর অভাব বুঝতে দেননি।বাবা খুব বেশি কখনই আশা করেননি আমার কাছ থেকে,যখন যেটাতে মন লেগেছে করিছি।নিষেধাজ্ঞা তো আসেইনি বরং সবসময় সাপোর্ট দিয়েছেন।তবে বাবাকে নিরাশ করিনি কখোনোই।কিন্তু এই বয়সে নিরাশই করলাম সাথে নিজেকেও। জীবন সংগ্রামে হেরে গেলাম যে।
.
লালচে আভা মেশানো গোধূলি দেখা হবে না,শুভ্র কাশফুল দেখা হবে বা পূর্ণিমা রাতে জোৎস্নাস্নান করা হবে না।কারো হাত ধরে শিশিরভেজা রেল লাইনে হাঁটা হবেনা।আজ এ শেষ সময়ে বাঁচার ইচ্ছা যেন আরো প্রবল হয়ে উঠছে।আনমনে ছাদে বসে থাকা আমাকে কেউ পেছন থেকে চোখ বেঁধে বলবে না,"নাঈম,বড্ড ভালবাসি।"
.
ছোটবেলা থেকেই বন্ধুবৎসল আমি।প্রত্যেকদিনই কেউ না কেউ বাসায় আসে,কথা বলে আবার চলে যায়।কিন্তু আরিশা আসেনি একবারও,ফোনও দেয় না।আমিও দি না,কি দরকার এ অনিশ্চয় জীবনে কাউকে স্বপ্ন দেখানোর।তবে আমাদের স্বপ্নও কম ছিল না,বিধাতার হয়ত এতটা স্বপ্ন পছন্দ হয়নি তাই আমাকে থামিয়ে দিয়েছেন।
.
আজকাল শরীর বড্ড খারাপ হয়ে যাচ্ছে,ডাক্তারের মতবাদে,"লাস্ট স্টেজ"।যে কোনো সময় হয়ত থমকে যাব।
বাবার মুখের দিকে তাকানো যায় না,আমি ছাড়া তাঁর আছে কে!
কতটা কষ্ট পেলে বাবা নিজে আরিশার বাড়িতে গিয়ে আমার সাথে কথা বলতে বলে এসেছেন।হয়ত চান,ছেলে শেষ সময়টুকু ভালো থাকুক।
.
আরিশা কি জানে আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়?আরিশা কি জানে আমি আর থাকব না?আরিশা কি জানে তাকে দেখলে সব কষ্ট আমার চলে যায়?আরিশা কি জানে আমি তাকে আমার শেষ নিঃশ্বাসেও বাবার পাশে দেখতে চাই?
এ কথা গুলোর উত্তর আমার চাই না,আমি শুধু তাকে শেষ হাসি দিয়ে থমকে যেতে চাই।
.
আজ এসেছিল আরিশা।মলিন চেহারা নিয়ে,এভাবে তো ওকে দেখতে চাই নি।ওকে হাসি খুশিই দেখতে চাই,আমার শেষ সময় পর্যন্ত,আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। বললাম,দুঃখিত বুঝতে পারিনি বাবা এ কাজ করবেন সেটা।
.
তুমি না আসলেও পারতে আরিশা।আরিশা কাঁদছে,"নাঈম,কিভাবে বলো একথা?আমি আসব না কেনো?এ কদিন আসিনি কারন কিভাবে আসব আমি তোমার সামনে?আমার ভালবাসায় কি কম ছিল যে সেটা বিধাতার পছন্দ হলো না?এ কদিন শুধু কেঁদেছি,চোখ ফুলিয়ে ফেলেছি,তোমার শূন্যতা আমার কাছে নিঃশ্বাসহীনতায় ভোগার মতোই। আল্লাহ কেন এমনটা আমার সাথেই করলেন?"
আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে,রক্তবমি শুরু হলো আরিশার সামনেই।তারপর চোখ খোলার পর হসপিটালে আমি।
বাবা আর আরিশাই আছেন এখোনো।মেয়েটাকে আমি না পারব ছাড়তে না পারব রাখতে।আর বাবাকে কতটা ভালবাসি তা আজ বুঝতে পারছি।আফসোস তার মুখে হাসিটা রাখতে পারলাম না।
"আচ্ছা চলে যাওয়ার পর কি মায়ের সাক্ষাত পাবো?কতদিন দেখিনা মাকে,মায়ের কি আমার কথা মনে পড়ে?কেউ কি একটু মাকে জানাবে যে আমি আসছি?"
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:৩০