নারকোলেপসি!!!!সেটা আবার কি রোগ?",মা চিৎকার দিয়ে উঠলেন।
ডাক্তার বললেন,"নারকোলেপসি একধরনের স্লিপিং ডিসঅর্ডার।ডাক্তার বললেন,ওর ঘুম আর আমাদের ঘুম এক নই।ও ঘুমের মধ্যেও আমাদের কথা শুনতে পাই।যেমন দেখুন,আমি ওকে ওর বাবার নাম জিজ্ঞাসা করলাম।ও ঘুম থেকে উঠে উত্তর দিবে।"
মিনিট ১৫ বাদে ইনায়া ঘুম থেকে উঠল।কয়েকবার চোখ পিট পিট করল।তারপর ডাক্তার এর দিকে ফিরে বলল,"আমার বাবার না রশিদ আহমেদ।"
মা,বাবা এবং আমি অবাক।
বাবা ডাক্তারের কাছে শুনলেন,"এ রোগ কেনো হয়?"
ডাক্তার বললেন,"এই রোগের কারণ এখোনো জানা যায়নি।"
"অপারেশন-এর মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব?"
"নাহ",ডাক্তার ছোট্ট করে উত্তর দিলেন।
"তাহলে উপায়?",মা মনে হয় এবার কেঁদেই দিবে।
ডাক্তার মৃদু হেসে আশস্ত করলেন,"চিন্তা করবেন না।অনুভূতি সঞ্চার হয় এমন সময়ও ও ঘুমিয়ে পড়বে।ওর ঘুম কতক্ষণ থাকবে সেটার সঠিক কোনো সময় নেই।১০ সেকেন্ড থেকে ৩০ মিনিটও হতে পারে।"
বাবা বললেন,"এর কোনো প্রতিষেধক আছে?"
"না,তবে কিছু ওষুধ আছে।আর আছে সঠিক পরিচর্যা।ওকে সবসময় আগলে রাখতে হবে এবং আপাতত একা ছাড়বেন না।শুনুন,এ রোগ লাখে একজনের হয়।অনেক বড় বড় লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।তাদের মধ্যে থমাস আলভা এডিসন,উইন্সটন চার্চিল এর মতো লোকও রয়েছেন।প্রেসক্রিপশন করে দিচ্ছি।তবে ওষুধগুলো পাবেন না মনে হয়,বাইরে থেকে আনাতে হবে।"
ডাক্তার প্রেসক্রিপশন দিলেন।বাবার কাছ থেকে ওটা নিলাম দেখলাম।তিনটা ওষুধ লেখা মোডাফিনিল,সোডিয়াম অক্সিবাইট,মেথিলফেনিডেট।
বাবা বললেন,"তাহলে কবে নাগাদ ওষুধ আসবে?"
ডাক্তার বললেন,"সপ্তাহ খানিক তো লাগবেই।"
চলে আসলাম ডাক্তার এর ওখান থেকে।
বাসায় এসে মায়ের পাশে বসলাম।ওনার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।আবার কাঁদবেন মনে হলো।
বেশ ভেঙে পড়েছেন মা।বাবাও ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে বসে থাকলেও মাকে স্বান্তনা দিচ্ছেন।
ইনায়া আমার পাশে বসা। ও কিছুই বুঝতে পারছে না মনে হয়।বার বার বলছে আমার কি হয়েছে,আমার কি হয়েছে।মা তো ওকে জড়িয়ে ধরেই এক বার কেঁদে দিলেন।
ডাক্তার থেকে আসার দুই দিন পার হয়ে গেছে।মা খানিকটা সামলে নিয়েছেন।ইনায়ার এর মধ্যে তিন-চার বার এমন হয়েছে।মা বিচলিত না হয়ে ও ঘুমিয়ে পড়লে ওকে কোলে তুলে বেডে শোয়ায়ে দেন।
.
মামার বিয়ের দিন পনেরো বাকি।বাবা ইতোমধ্যে মামাকে সব খুলে বলেছেন।সব শুনে মামা বললেন তার ওখানে যেতে।মামা আরো বললেন,"নতুন জায়গায় ভালো লাগবে।আর এখানকার পরিবেশও সুন্দর ও মনোরম।"
দুই দিন পর ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিলাম।আমরা সবাই ইনায়ার সাথে স্বাভাবিক ব্যবহারই করছি যেন ও কষ্ট না পাই।
যাওয়ার সময় প্রচুর বৃষ্টি!!!
বৃষ্টি আমার ভালো লাগে না।আর অতিরিক্ত বৃষ্টি আমার সবচেয়ে ঘৃণার।
ট্রেন চলে এসেছে।সামনে আমাদের জন্য কি আছে সেটা ভাবতে ভাবতেই ট্রেনে উঠলাম।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১:০৭