টিপ টিপ টিপ!!!!
সকাল ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে।একবারও মনে হলো না এ বৃষ্টি থামবে।সারাদিনের প্লান নষ্ট।সিলেট যাওয়া হবে না মনে হয়।বাস অবশ্য রাত ৮ টায়।
সিলেট কেনো যাবো? মামার বিয়ে।মামাবাড়ি অবশ্য সিলেট না।মামাবাড়ি অর্থাৎ নানাবাড়ি সাতক্ষীরা।কিন্তু মামা লন্ডনে যাওয়ার পর সাতক্ষীরা না গিয়ে সিলেটে বাড়ি বানিয়েছেন।আমি অবশ্য যায়নি এখোনো আম্মুর কাছে শুনেছি।নানা বেঁচে না থাকায় মামা আর তেমন ঘরমুখো হননি।এদিকে নানীও ভিটে বাড়ি ছাড়তে নারাজ।অগত্যা মামা নানীর খরচ মাসে মাসে পাঠিয়ে দেন।কিন্তু এবার আর না করতে পারেননি।একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা।
.
নাহ!বৃষ্টি থামছে না।আম্মু আর আব্বু অবশ্য সব গুছিয়ে রেখেছে।কিন্তু আমার ছোট বোন ইনায়া এখোনো ঘুমাচ্ছে।আগে ওর ঘুম ভাঙায়।
আমি আইয়ান,বছর সতেরো বয়স।বাবা,মা আর ছোট বোন নিয়েই থাকি।ছোট বোন ইনায়া,বছর নয় বয়স।খুব আদরের এবং মেধাবী কিন্তু অলস।আমি দেখেছি ছোটবেলায় অনেক ঘুমাত।যখন তখন ঘুমাত।আম্মুকে কিছু বললে বলত ছোট মানুষ ঘুমাবেই তো।কিন্তু এখোনো সেই একই পরিমাণ ঘুমায়।মাকে এবার বলায় মা চুপ করে ছিলেন।হয়ত ভাবছিলেন এতো ঘুম সত্যি স্বাভাবিক নই।
রুমে গিয়ে দেখি ইনায়া ঘুমাচ্ছে কিন্তু বেডে নয় জানালার নিচের মেঝেতে।গিয়ে ডাক দিলাম কিন্তু উঠল না,নড়লোও না।পানির ছিটা দিলাম তবুও না।এক চিৎকারে আম্মুকে ডাকলাম।আম্মু আসতে আসতে ও উঠা শুরু করল।আমার দিকে তাকিয়ে বলল,"ডাকছিলে,ভাইয়া?"
আমি বললাম,"হুমম,কি হয়েছিল?ওখানে কেনো ঘুমাচ্ছিলি?"
বলল,"জানালার ধারে বৃষ্টি দেখছিলাম হঠাৎ বজ্রপাত হলো আর কিছু মনে নেই।"
বজ্রপাতের শব্দে ঘুমিয়ে গেল ব্যাপারটা কেমন জানি লাগল।
তারপরের দিন একই ঘটনা।ওর পাশে একটা স্টিলের গ্লাস পড়ল।আর ও অজ্ঞান।পানির ছিটা দিলেও কিছু হয়না।সে নিজে থেকেই পনেরো মিনিট পর উঠল।
.
ওহ! বলতে ভুলে গিয়েছি।সেদিন আর যাওয়া হয়নি মামার বাড়ি, ইনায়ার জন্য।মামাকে বলে দেওয়া হলো ৩-৪ দিন পর যাব।
ইনায়ার সাথে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারগুলো হতেই থাকল।আম্মু তো খুব উদ্বিগ্ন।
আব্বু একটু খোঁজ নিয়ে এক ডাক্তার এর কাছে নিয়ে এলেন।সবাই এলাম।
ডাক্তারকে বিশদ বলার পর তিনি বললেন,"কবে নাগাদ হচ্ছে এমন?"
আম্মু বললেন,"৪-৫ বছর বয়সের আগে তো এমনিই ঘুমাত বেশি তাই অত খেয়াল হয়নি।কিন্তু তারপর ওর পাশে চিৎকার এমনকি কাঁদেলেও ও অজ্ঞান হয়ে যেত।তবে তখন বেশ তাড়াতাড়িই উঠে যেত।কিন্তু এখন তো ১৫-৩০ মিনিট সময় নেই।"
ডাক্তার মাথা নাড়লেন,যেন তিনি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।
তিনি কিছু বললেন না।চেয়ার থেকে উঠে ইনায়ার সামনে টেবিলে একটা থাবা দিলেন।ইনায়া আবার ঢলে পড়ল।
আম্মু বললেন,"এমনই হয় ওর সাথে সবসময়।"
ডাক্তার বললেন,"ও আসলে অজ্ঞান হয় না।ঘুমিয়ে পড়ে।ওর রোগ হলো এক ধরনের স্লিপিং ডিসঅর্ডার। রোগের নাম:
"নারকোলেপসি"
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:৫৪