ডিম একটি অদ্ভুত খাবার। একাধারে সস্তা তার উপরে রান্নার পদ্ধতি অনেক সহজ । প্রচন্ড রাতে যখন সবুর মিয়ার কিছু খেতে ইচ্ছে করে তখন – তিনি ট্র্যাঙ্ক থেকে যত্ন সহকারে রেখে দেওয়া একটি প্লেট আর কাঁটাচামচ বের করেন, এই প্লেট আর কাঁটাচামচের ইতিহাস আছে , তার স্ত্রী জরিনা বেগম যেদিন মারা যায় সেদিন এই প্লেটে ভাত খেয়ে মারা গিয়েছিল। সেদিন থেকে খুব যত্ন সহকারে এই প্লেট আর চামচ ট্রাংকে তালা বদ্ধ করে রেখে দিছেন । স্ত্রীকে মনে পড়লে বের করেন । আজ সবুর মিয়ার পেটে ভীষণ খিদে , তিনি সামনে কাঁটাচামচ আর প্লেট নিয়ে বসে আছেন । কাঁটাচামচ দিয়ে কেটে কেটে ডিম খাচ্ছেন। আর বলছেন – বুঝলা বউ এই সেই প্লেট দেহ কি সুন্দর ডিম ভাজা। কেমন সুবাস আসে – একেবারে মৌ মৌ অবস্থা । ডিমে একটু মরিচ কম হইছে । তবে কোন সমস্যা নাই , ভালোই লাগছে মনে হচ্ছে অমৃত খাবার । কে জানে আল্লাহ্র কাছে গেলে ডিম দিয়া ভাত খাওইব নাকি ? আল্লাহ্ জানে । দিলেও কিসের ডিম দিব মেলা সন্দেহ আছে । আল্লাহ্ পাকের কাছে সব ডিমই সমান । তার সমান ভালোবাসা দিয়ে তিনি সব কিছু তৈরি করছেন । ঘোড়ার ডিম জিনিসটা মানুষের মুখে মুখে শুনি । কে জানে ঐ খানে আছে নাকি । থাকলে আমার কোন আপত্তি নাই । একটু শুকনা মরিচ বাড়ায় দিয়া কড়া কইরা ভাইজা দিলেই অইব । কপা কপ পানি ভাত দিয়ে খাইয়া ফেলমু।
সবুর মিয়ার আপন বলতে কেউ নাই, আছে শুধু পাশের বাড়ির – রাসু । রাসু এসে সবুর মিয়াকে ডাক দিল । সবুর ভাই , ও সবুর ভাই, কি করেন? কে রাসু ? আসো ভিতরে আসো । কি করেন সবুর ভাই? – ডিম খাই । খাইবা ? কই ডিম আপনার প্লেট তো দেহি খালি । ডিম পাইলেন কই ? রাসু শোন কিছু খাওয়ার জন্য তা চক্ষে দেহা লাগে না । মাঝে মাঝে হুদাই খাওয়া যায় । তোমারে একটু দিমু ? খাইবা একটু । ঝাল একটু কম । তবে লবন ঠিক আছে ? খাইয়া দেখ স্বাদ পাইবা। রাসু কি মনে করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল ----
সবুর মিয়া কয়েকবার ডাকল । রাসু , এই রাসু । রাসু আর ভিতরে ঢুকলো না.......
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১১