কাদিয়ান গ্রামে অভিশপ্ত মিথ্যা নবুয়তের দাবিদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কবর।
কাদিয়ানী মতবাদ কী?
'কাদিয়ানী মতবাদ' বলতে মিথ্যা নবুওয়াত দাবীদার মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মতবাদকে বোঝানো হয়ে থাকে। আর 'কাদিয়ানী ফিরকা' বা 'কাদিয়ানী সম্প্রদায়' বলতে তার অনুসারীদেরকেই পরিচয় দেয়া হয়ে থাকে। তবে তারা নিজেদেরকে 'কাদিয়ানী ফিরকা' বা 'কাদিয়ানী সম্প্রদায়' নয় বরং 'আহমদিয়া মুসলিম জামাত' বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। 'আহমদী জামাত', 'মির্জায়ী', 'কাদিয়ানী' ইত্যাদি নামেও তারা পরিচিত।
যেখান থেকে কাদিয়ানীদের যাত্রা শুরু
মির্জা গোলাম আহমদ বর্তমান ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার অন্তর্গত কাদিয়ান নামক গ্রামের অধিবাসী। কাদিয়ান গ্রামের অধিবাসী বিধায় তাকে এবং তার অনুসারীদের সংক্ষেপে 'কাদিয়ানী' বলে পরিচয় দেয়া হয়।
মিথ্যাবাদী কাদিয়ানীর জন্ম বৃত্তান্ত
১৩ ফেব্রুয়ারী ১৮৩৫ ইং সালে মির্জা গোলাম আহমদ জন্মগ্রহন করেন। মির্জ গোলাম আহমদ ছিলেন মির্জা গোলাম মুর্তজার কনিষ্ঠ সন্তান। ৭৩ বছর বয়সে ১৯০৮ সালে মৃত্যুবরন করেন এই মিথ্যাবাদী কাদিয়ানী।
দখলদার বৃটিশদের দালালীই যাদের পারিবারিক ঐতিহ্য
এই পরিবারটি ছিল ততকালীন ইংরেজ সরকারের হিতাকাঙ্খী এবং ইংরেজ কল্যানে নিবেদিত প্রান। তার পিতা মির্জা গোলাম মুর্তজা ইংরেজ সরকারের একজন বিশেষ অনুরাগভাজন ও অনুগত কৃতজ্ঞ জমিদার ব্যক্তি ছিলেন।1 ইংরেজ সরকারের জন্য তিনি নিজেকে উতসর্গ করে দিয়েছিলেন।2 সিপাহী বিপ্লবের সময় তিনি ৫০ টি ঘোড়া ক্রয় করে পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য দিয়ে বৃটিশ সরকারের সাহায্য করেছিলেন। অন্য একটি যুদ্ধে চৌদ্দজন অশ্বারোহী সৈন্য দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।3 তার জ্যেষ্ঠ ভাই মির্জা গোলাম কাদেরও বৃটিশ গভর্নমেন্ট এর খেদমতে আন্তরিকভাবে নিয়োজিত ছিলেন।4 বৃটিশ সরকারের পক্ষ হয়ে তিনি দেশ প্রেমিক আযাদী আন্দোলনের বীর সৈনিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন।5
মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী প্রাইভেটভাবে মাধ্যমিক ক্লাশ পর্যন্ত উর্দূ, ফারসী, আরবি ও কিছু ইংরেজি পড়াশোনা করেন। কয়েকবার মোক্তারী পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে ব্যর্থ হন।6 অবশেষে শিয়ালকোট আদালতে কেরানীর চাকরি আরম্ভ করেন।
ফুট নোট: ১. তার পিতা ইংরেজ সরকারের একজন অনুগত ও কৃতজ্ঞ জমিদার তথা দালাল ছিলেন। এ সম্পর্কে স্বয়ং গোলাম আহমদের স্বীকারোক্তি দেখুন: 'আমার পিতা মরহুম এ দেশের বিশিষ্ট জমিদারের মধ্যে গণ্য ছিলেন। গভর্নরের দরবারে গেলে তিনি কুর্সি পেতেন। তিনি বৃটিশ সরকারের প্রকৃত কৃতজ্ঞ ও হিতাকাংখী ছিলেন।' উদ্ধৃতি সূত্র- এযালাতুল আওহাম, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, পৃষ্ঠা ৬৮।
২. এ সম্পর্কে স্বয়ং গোলাম আহমদের স্বীকারোক্তি: 'আমার ওয়ালেদ সাহেবের জীবনী হতে ঐসব খেদমত কিছুতেই পৃথক করা যায় না, যা তিনি আন্তরিকতার সাথে এই সরকারের কল্যানে আঞ্জাম দিয়েছিলেন। তিনি নিজ মর্যাদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বদা বৃটিশ সরকারের সেবাকার্যে নিয়োজিত ছিলেন। সরকারের বিভিন্ন অবস্থা ও প্রয়োজনের সময় তিনি এমন সততা ও অানুগত্য প্রদর্শন করেছেন যে, যতক্ষন কেউ কারো খাঁটি ও আন্তরিক হিতৈষী না হয়, ততক্ষন তেমন আনুগত্য প্রদর্শন করতে পারে না।' উদ্ধৃতি সূত্র- মাসনাফাহ, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, পৃষ্ঠা ১।
৩. এ সম্পর্কে মির্জা গোলাম আহমদের স্বীকারোক্তি: '১৮৫৭ সালের হাঙ্গামায় যখন উচ্ছৃংখল জনতা এ অনুগ্রহদাতা বৃটিশ গভর্নমেন্টের মোকাবেলা করে দেশে হৈচৈ সৃষ্টি করে, তখন আমার পিতা মরহুম নিজের টাকা দিয়ে পঞ্চাশটি ঘোড়া ক্রয় করে পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সংগ্রহ করে গর্ভমেন্টের খেদমতে পেশ করেন। আরও একবার চৌদ্দ জন অশ্বারোহী দিয়ে সরকারের খেদমত করেন। এসব আন্তরিকতাপূর্ন খেদমতের কারনে তিনি গভর্নমেন্টের প্রিয়পাত্র বলে গন্য হতেন।' উদ্ধৃতি সূত্র- ক) এযালাতুল আওহাম, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, পৃষ্ঠা ১৬৮ এবং খ) মাসনাফাহ, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, পৃষ্ঠা ১।
৪. এ সম্পর্কে মির্জা গোলাম আহমদের স্বীকারোক্তি: 'এ অধমের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মির্জা গোলাম কাদের যতদিন জীবিত ছিলেন তিনিও পিতা মরহুমের পদাঙ্ক অনুসরন করে চলেছেন এবং বৃটিশ গভর্নমেন্টের আন্তরিক খেদমতে মনে-প্রানে নিয়োজিত থেকেছেন। অত:পর তিনিও মুসাফিরখানা হতে বিদায় গ্রহন করেন।' উদ্ধৃতি সূত্র- মাসনাফাহ, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, পৃষ্ঠা ১।
৫. এ সম্পর্কে মির্জা গোলাম আহমদ বলেন: 'আমার পিতা আমার ভ্রাতাকে একমাত্র গভর্নমেন্টের খেদমতের জন্য কোন কোন যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। সর্বক্ষেত্রেই গভর্নমেন্টের মনতুষ্টি অর্জন করেছেন।' উদ্ধৃতি সূত্র- মাসনাফাহ, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, পৃষ্ঠা ১।
৬. কাদিয়ানী ধর্মমত, মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী। প্রাগুক্ত ৫০-৫১ পৃষ্ঠা থেকে সংক্ষেপিত।
কাদিয়ানীদের কিছু আকীদা-বিশ্বাস:
১। ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের আগমন সম্পর্কিত মুসলমানদের ধারনা ভুল।
২। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং পুনরায় তাঁর আগমন সম্পর্কিত মুসলমানদের ধারনা ভুল।
৩। খতমে নবুওয়াত সম্পর্কিত মুসলমানদের ধারনা ভুল। তাদের মতে, শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরেও আরও নবী হতে পারে।
৪। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নবী, তার নিকট ওহী আসত। তার উপর ২০ পারার মত কুরআন নাযিল হয়েছিল।
৫। তাদের বিশ্বাস, খোদার পুত্র হতে পারে। নাউ'যুবিল্লাহ।
৬। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকাশ ছিলেন।
৭। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আল্লাহর প্রকাশ ছিলেন।
৮। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মুহাম্মদ এবং আহমদ।
৯। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী অনেক নবী বরং সমস্ত নবী রাসূল থেকে এমনকি হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও শ্রেষ্ঠ। নাউ'যুবিল্লাহ। আস্তাগফিরুল্লাহ।
১০। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ছিলেন খোদার অবতার বা খোদা। নাউ'যুবিল্লাহ।
১১। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ছিলেন কৃষ্ণের অবতার।
১২। এছাড়াও তাদের আকীদা-বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে-
ক. মির্জা সাহেব ছিলেন ইবরাহীম আলাইহিসসালাম।
খ. পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাস।
গ. কাদিয়ানীগন নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গকে নবী মনে করেন: রামচন্দ্র, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, জরদশত, কনফুসিয়াস ও বাবা নানক।
১৩। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী খাতামুন্নাবী বা শেষ নবী। তারপরে আর কোন নবী আসবে না।
যে কারনে এই পোস্ট:
অনর্থক, অহেতুক, অযাচিত এবং অসঙ্গতভাবে খুঁচিয়ে, ঠেলে, উত্যক্ত করে, বিরক্তি সৃষ্টি করে যিনি কাদিয়ানী ধর্মমত নিয়ে কলম ধরতে নিরন্তর প্রেরনা যুগিয়ে যাচ্ছেন, আমার কাদিয়ানী আহমদী ভাই 'নাইমুর রহমান আকাশ' এর সৌজন্যে সামান্য এই নিবেদন। আল্লাহ পাক যদি সহায় হন, এবং তিনি যদি ইচ্ছে করেন, চলতি শীত মৌসুমে ইনশাআল্লাহ বাকি কয়েকটি পোস্টে এই বিষয়ক ফিতনা ফাসাদের স্বরুপ উম্মোচন করা হবে। যাতে করে সাধারন মুসলমানগন প্রকৃত সত্য জানতে পারেন এবং কাদিয়ানী আহমদী মিথ্যাবাদীদের ধোঁকা থেকে নিজেদের রক্ষা করে চলতে পারেন। প্রতিটি পোস্টে চেষ্টা থাকবে রেফারেন্স এবং দলিলভিত্তিক আলোচনা যাতে উপস্থাপন করা যায়।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলের ঈমান-আমল হেফাজত করুন। দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানের কল্যান দান করুন। আমীন।
এই লেখাটি তৈরিতে একাধিক সোর্স থেকে সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা-
১। গুগল।
২। ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ, মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন।
৩। কিয়ামতের আলামত, আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী।
৪। মিরাজ ও বিজ্ঞান, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ.।
৫। কাদিয়ানী মতবাদ, ইহসান ইলাহী জহির, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
৬। কাদিয়ানী ধর্মমত, মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:১৯