(১৯৯৫ সালের ২৪ আগষ্ট। এদিন পৃথীবি ছেড়েছে ইয়াসমিন। এদিকে আমি/আমরা খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। তাই ইয়াসমিনের ১৯তম মৃত্যূবার্ষিকিতে হতভাগিকে নিয়ে নতুন কোন লেখা দেয়া সম্ভব হয়নি। গত বছরের লেখাটাই চালিয়ে দিলাম...আমার পুর্বপুরুষদের হত্যাকান্ডের অর্ঘ্য হিসেবে !!!)
জীবিতরা খুব দ্রুত মৃতদের ভুলে যায়। আসলে, বেঁচে থাকার আস্বাদ পরতে পরতে উপভোগ করার হাতছানি কে এড়াতে চায় ? আমি মারা যাওয়ার পর তোমরা কিছুদিন তেলেবেগুনে জ্বলে-পুড়ে ছাড়খার হলে,তারপর ঠিকই ভুলে গেছ নিয়মকরে।এতদ্রুত যে,ভাবলে তোমাদেরই লজ্জা লাগবে। কিন্তু তারপরও গন্ডারের চামড়ায় লজ্জা ঢেকে বলবে-এটাই তো জীবনস্রোতের রীতি। বলি বলিহারি ! চাইলে,আমায় গালি-গালাজ করতে পার,থু থু ছুঁড়তে পার,কিন্তু বিশ্বাস করো ধৈর্যেয় আর কুলোচ্ছিল না। তাই,এই সাতসকালে,তোমরা যখন কব্জি ডুবিয়ে সেহরি শেষে নাসিকা গর্জনে মত্ত,সেই সুযোগে বসে পড়লাম জীবিতদের চরকা নিয়ে।
আমায় এখনো চিনতে পারনিবুঝি ? সেই যে আঠারো বছর আগে, কোন এক নিকষ কালো রাতে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম রক্ষকের হাত ধরে,শেষপর্যন্ত তারাই মানুষের শরীর নিয়ে জন্মানো পিচাশের বেশে গণধর্ষন করেছিল আমাকে। মায়ের মুখখানিও দেখতে দেয়নি। পিচঢালা রাস্তায় পড়েছিলাম স্খলিত বসনা লাশের মতো....
বিদীর্ণ।
নিষ্পেষিত।
দলিত-মথিত।
ফুটোপয়সা মুল্যের....
একদলা মাংসপিন্ড রুপে।
কী,শেকড় খুঁজতে সভ্যতার শুরু অব্দি পিছিয়ে গেলে নাকি ? অতদুর যেতে হবে না। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির ছুতোয় তোমরাই আমাকে উলঙ্গ করেছিলে শতশত উৎসুক চোখের সামনে ! তারপর থেকে শুধুই দল ভারী হচ্ছে । সীমা,সিমি,তানিয়া,তৃষা সহ আরও কতশত নাম। স্রোতের মতো আসছে !
সবার ক্ষেত্রেই তোমরা একে অপরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছ-"এর আমলে ঘটেছে,তাই আমার আমলে ঘটতেই পারে।'কিন্তু রাজনীতিবিদদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেই কি মুক্তি মিলবে ? ব্যালটে-কিংবা বুলেটে যেভাবেই হোক না কেন,ওরা তো তোমাদের সীল নিয়েই বাজনা থামলে বসবো কোথায় খেলে যাচ্ছে,গত ৪২ বছর ধরে ! তাহলে ?
জৈবিক অনুভুতি বুঝে ওঠার পর থেকে তাই 'ওরা'ও টিকে যাচ্ছে। মর্মান্তিক মজার ব্যাপার হলো,যে যখন ক্ষমতায় যায় তখন তার গলাতেই 'ওরা' ঝুলে পড়ে। আর তেনারাও বরণ করে নেন বধুবরনের কায়দায় ! অথচ,আমি শুনেছিলাম,বন্দুকের নল কিংবা পুরুষত্বের বল নয়,ভোটই ক্ষমতার উৎস। তাহলে গদিটাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে নিতে চাইলে,আমজনতার প্রিয়ভাজন হলেই হয় ? কিন্তু তা,ঘটেনা কেন ?আসলে টেকনাফ থেকে তেতুঁলিয়ার প্রতিটি রাস্তা সোডিয়ামের আলোয় ঠিকরে ওঠার আগে আলো পৌঁছানো দরকার তাদের মস্তিস্কের খোন্দলে,যাদের হাতে রয়েছে দেশবদলের চাবিকাঠি। কিন্তু যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ। রামায়ণের সেই দশানন তার ক্ষমতা দিয়ে সীতাকে চেয়েছিল। আর,আমরা ক্ষমতা চাই আখের গোছানোর জন্য। তাই তো। সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় একটি চেয়ার দখল করতে পারলেই তো মানুষের চোখে নায়গ্রা আর বুকের ভেতর সাহারা উপহার দেয়ার আনন্দ ! ক্ষমতার মর্মসুখটা বোঝার জন্য আসলে নোবেল পাওয়ার দরকার নেই। আমি চাইলেই রক্ষক হয়ে ভক্ষন করার সুখ করতে পারবো,যা এককথায় ক্ষমতারই উৎপাদিত ফসলমাত্র। তারজন্য অনেককে বঞ্চিত করতে হয়। সেখান থেকে ক্ষোভের জন্ম হয়। তা সামলাতে একটা সন্ন্যাসী ইমেজ তো লাগবেই। সে কারণেই তো নৌকা-শীষ-পাল্লা নিয়ে সময় বুঝে শার্দুলদের এতটা মাতামাতি। আখের গোছানোর মহচ্ছবে ওরাই তো মোক্ষম হাতিয়ার।
আচ্ছা,তোমরা যারা সাধারন তারাও তো সাধ্যমতো আখের গোছানোর চেষ্টা করে থাক। কিংবা ইতিমধ্যে যা কামিয়ে ফেলেছ,তা কচ্ছপ কামড় দিয়ে পড়ে থাক ? তাই অধ্যাপকেরা প্রতিবাদ করেন না,কারণ তিনি ভাইস-চ্যান্সেলর হতে চান। লেখকের কলম থেকে চোখা শব্দ বের হয় না,কারণ তিনি লেখার দোরগুলো বন্ধ করতে চান না। 'অপরাজিতারা'ও প্রতিবাদে মুখর হয়না,কারণ ভাল বিয়ে হবেনা।
তাই আমিও মুখ বুঁজে ছিলাম। ওরা যখন আমার দুই পা দু্ই দিকে চিরে বুকের ওপরে চড়ে বসেছিল,তখন চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল গোটাগ্রহের যাবতীয় সব নীতিবাক্য। বিশ্বাস করেছিলাম, কেউ না কেউ আসবে বাঁচাতে। নইলে,ধর্মের অনেক আশ্বাস যে চুলোয় যাবে !,আসলে,ভুল ভেবেছিলাম। কারণ,তোমরা তো সেই কবে থেকেই মরে বেঁচে আছ।নরকে ফিরে যাওয়ার আগে শুধু একটা অনুরোধ-তোমাদের ঘরে কারো মেয়েসন্তান জন্মালে দয়া করে তার কোন নাম রেখোনা। মেয়ে তো মেয়েই, ভোগের রসমঞ্জরী ; তার আবার নামের প্রয়োজন কি ?