somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার অনুভব

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

।।নাসীমুল বারী।।


এক.
জোৎস্না ছড়ানো রাত। একটু গভীর। বেশ শান্ত। স্নিগ্ধ চাঁদের রুপোলি আলোয় চারপাশের জগৎটা অপূর্ব আলপনায় মোহনীয় হয়ে উঠেছে। উঠোনের এক পাশ থেকে নিশাচর পুষ্প চামেলির সুবাসিত সম্ভাষণ মনটাকে কবি করে তোলে। সৃষ্টির কী অপূর্ব সৌন্দর্য এ গভীর রাতটা! বারবার মুগ্ধ হই সৃষ্টির এমন অপূর্বতায়। আর ভাবি স্রষ্টা কতো সুন্দর! সেই সুন্দর স্রষ্টার বান্দা আমি কতটুকু সুন্দর হয়েছি? কতটুকু তার আদেশ মানছি? ভাবছি আর ভাবছি এ গভীর রাতে।

দুই.
মেঘগুলো আকাশে উড়ে বেড়ায়। উড়তে উড়তেই বয়স বাড়তে থাকে। এক সময় বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়েÑ এ যেন আকাশের মায়ার বাঁধন ছেড়ে কেঁদে কেঁদে চলে আসে আরেক পরিবেশে। ভিন্ন জগতে। আমাদের মেয়েরাও তেমনি। আনন্দ উচ্ছ্বলতায় ওরাও বেড়ে ওঠে। তারপর একদিন কেঁদে কেঁদে চলে যায় আরেক পরিবেশে; ভিন্ন জগতে।
মেঘ-বৃষ্টি আর মেয়েরা একই কক্ষপথের যাত্রি।

তিন.
আমাদের সমাজ, আমাদের কৃষ্টি; এখানে মেয়েদের অস্তিত্ব কী? জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা এবং বিয়ের আগ পর্যন্ত ওদের অস্তিত্ব, ওদের ঠিকানা ‘বাবার বাড়ি’। বিয়ের পর—‘স্বামীর বাড়ি’। ওখানে সংসার, সন্তানাদি নিয়ে বেড়ে চলা। বার্ধক্য আসে। সময়ের কারণে বাড়ি পায় উত্তাধিকাররা। তখন ঠিকানা? ‘ছেলে বা ছেলেদের বাড়ি’।
মেয়েদের আজন্ম অস্তিত্ব, ঠিকানাই ভাসমান। সত্তার স্বীকৃতি নেই। এটাই আমাদের মেয়েদের কৃষ্টি।

চার.
ভালোবাসা কি শুধু একটা দিবসে হয়? মনের আবেগ অনুভূতি যখনই প্রত্যাশিত সুন্দরের দেখা পায়, চোখের দৃষ্টি যখন ভাষা হয়ে ওঠে— তখনই মনে ভালোবাসা অঙ্কুরিত হয়। আর এমন অঙ্কুরিত ভালোবাসায় কোনো দিনক্ষণ থাকে না। স্থান-কাল থাকে না। তাই ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস— এটা আমি মানি না। এ-ই ভালোবাসা দিবস মনের আবেগ, ইচ্ছেকে সংকুচিত করে ফেলে। আমি ভালোবাসতে চাই প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। প্রতি সময়।

পাঁচ.
অনুভূতির দিগন্তে কান শোনে মনের ডাক; চোখ বুঝে মনের ভাষা। হৃদয়ের এমন ইশারায় জন্ম নেয় ভালোবাসা। সে ভালোবাসা খুঁজে ফিরে সুন্দরকে। ভালোবাসার এমন প্রত্যাশায় যুগ-যুগান্তরে জন্ম দিয়েছে কালজয়ী ঘটনার। রচিত হয়েছে অমর সাহিত্য। গড়ে উঠেছে তাজমহল। এখন মোবাইলে, ফেসবুকে কি হৃদয়ের সে-ই ইশারা খুঁজে পাওয়া যায়? চোখের ভাষার দেখা মেলে? প্রযুক্তির বেগ আবেগকে হরণ করেছে। ধানের মধ্যেই জন্ম নেয় ধানের চিটা। আজ আবেগের মাঝেই প্রযুক্তির কারণে জন্ম নেওয়া ভালোবাসার চিটা আবেগের অনুভবকে ধূসর মলিন করে তুলেছে। তারপর. . .।

ছয়.
স্বামী-সন্তান দূর বিদেশে; দীর্ঘদিন দেখা নেই। বন্ধু— তারও সাথে বিচ্ছিন্নতা গ্রীষ্ম কিংবা শীতের ছুটিতে। কিংবা ভালোবাসার হৃদয়াবেগের অনুভব; এ সবেরই সংযোগ-প্রকাশ ঘটত চিঠিতে। এ জন্যেই হয়ত কালজয়ী গান-কবিতার জন্ম হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে সাহিত্যের একটি ধারা ‘পত্র সাহিত্য’। ‘রানার, রানার চলেছে!’ কিংবা ‘চিঠি দিও প্রতিদিন’ কিংবা ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’ ইত্যাদি চিঠিমূলক কালজয়ী গান আজও হৃদয় মনকে নাড়া দেয়। অনুভূতির আবেগে হারিয়ে যাই।
সময়ের প্রযুক্তিতে এখন? না নেই সেই চিঠি। সেই আবেগ। সেই প্রতীক্ষা-প্রত্যাশা। এখন আবেগের প্রকাশ ‘এসএমএস’ নামে স্বল্প বক্তব্যে নতুন আরেকটি ধারার জন্ম দিয়েছে। এখানে প্রতীক্ষা-প্রত্যাশা অতি ক্ষণিক সময়ের। জয়তু প্রযুক্তি, জয়তু আবেগ।

সাত.
টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট; এই রোমাঞ্চকর উত্তেজনা, এই আবার বেদনাহত শীতলতা। অতৃপ্তি রেশ বয়েই চলে। সাহিত্যের ছোটগল্পও তাই। অতৃপ্তির রেশ নিয়ে এর অস্তিত্ব। যেমন একটি চরিত্র সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেল। ছোটগল্পে হঠাৎই সে সড়কে আসবে, দুর্ঘটনায় পড়বে। মারা যাওয়ার পর কাছাকাছি কোনো একজনের কিংবা উপস্থিত জনের হৃদয়ের করুণ চিত্রকল্পটি অঙ্কিত হবে। ব্যাস, এখানেই শেষ। কিন্তু উপন্যাস? টেস্ট ক্রিকেট আর কি! রাজকীয় মেজাজে ধীরলয়ের মাঝেই ক্ষণিকের উত্তেজনা নিয়ে দীর্ঘ কয়েক দিনের খেলা এটি। পূর্বোক্ত ঘটনাার বেলায়ও তাই। চরিত্রটি সড়কে আসার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। তারপর দুর্ঘটনার শিকার। তারপর এ দুর্ঘটনায় পারিবারিক-সামাজিক প্রভার নিয়ে বিস্তারিত লেখ্যচিত্র। অতঃপর লেখকের দর্শন-এর সংযুক্তি; তবেই তা উপন্যাস।
বাহ! কী চমৎকার সাহিত্য আর ক্রিকেট!।

আট.
বোশেখের ঝড়ো তরঙ্গের ছন্দায়িত নদীটা সৌন্দর্যের অপূর্ব দোলা ছড়িয়ে দেয়। গোধূলি বেলায় ক্ষুদ্র তরঙ্গের ওই নদীতে সোনা ছড়ানো বিছানা পাতা থাকে। জোৎস্না রাতে কালো জলে রুপোলি মিটি মিটি হাসিতে প্রেয়সির সম্ভাষণ পাওয়া যায়। আর সারাদিনের জোয়ার-ভাটায় বয়ে চলা নদীটা মুগ্ধ করে অনুভবী মনটাকে। নদী তাই সুন্দর আর সুন্দর। নদীর প্রকৃতির এমন রূপ দেখাটাই শিল্পদৃষ্টি। এ দৃষ্টির জন্যে চোখ নয়— প্রয়োজন মনের। মনের এমন দৃষ্টিকেই বলে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কমবেশি সবারই আছে। তবে সুক্ষ্মতার হার সবার এক নয় বলেই সাধারণদৃষ্টি আর শিল্পদৃষ্টির উদ্ভব হয়েছে। শিল্পই সুন্দরের প্রতিনিধি। তাই শিল্পীর দৃষ্টিতে ‘চোখের জলের হয় না কোনো রং, তবু কতো রঙের ছবি হয় আঁকা।’

নয়.
স্মরণের পান্ডুলিপিতে অনেক সময়েই হারিয়ে যাই শৈশবে। মনে হয় যদি ফিরে আসতো শৈশব; তবে গেয়ে উঠতাম ‘কাটেনা সময় যখন আর কিছুতে. . . আয় খুকু আয়. . .।’ কিন্তু সময় তো বয়ে চলে আপন গতিতে। ফিরে পেতে পারি না শৈশব। তবে অনুভবে শৈশব আসে বার বার। ফিরে পাই আনন্দ উচ্ছ্বাসের শৈশব। ঝগড়া-আড়ির শৈশব। ফল-ফুল চুরির শৈশব। পাখির ছানা পাড়ার শৈশব। কিংবা মাঠের দিগন্তজোড়া দৌড়োদৌড়ির দুরন্ত শৈশব। তবে কি শৈশবই জীবনের স্মরণীয় সময়?

দশ.
কথা যেখানে এসে দাঁড়ায়— সাহিত্য সেখান থেকে স্বপ্ন ধারণ করে। সাহিত্যেই কথা আরও বড় পটে বিকশিত হয়। সভ্যতাকে জাগিয়ে তোলে। অনুভূতির সুখ দেয়। স্বপ্নে রং ছড়ায়। বাস্তবতায় সৃষ্টিশীলতা দেয়। কথা মানুষের মৌলিক গুণ। সাহিত্য সে গুণের উৎকর্ষতা। কথা আর সাহিত্য একই ঔরসে জন্ম নিলেও মৌলিক স্বরূপ দুটি ভিন্ন ধারা মাত্র। অস্তিত্বের কারণেই দুটি দুই পথে চলে।

এগার.
বাতাস বইছে। প্রচণ্ড বাতাস। বাতাসের গতি বেড়েই চলছে। মাঠ থেকে গরুগুলো দৌড়ে পালাচ্ছে আশ্রয়ের খোঁজে। পাখিরাও ছন্দ মতো উড়তে পারছে না। এলোমেলো ছন্দহীন হয়ে পড়েছে প্রকৃতি। ঝড় একটি জনপদকে তাল-লয়-ছন্দহীন করে তোলে। তারপর . . .! তারপর জনপদের মানুষ আবার জেগে ওঠে নতুন সুন্দরের প্রত্যয়ে। নতুন ছন্দের প্রত্যয়ে। ঝড়ের সাথে মানুষের এ লড়াইটা চিরন্তন। জীবনটাও ঠিক তেমনি। প্রতিষ্ঠা পেতে জীবনে ঝড় বইবেই। ঝড়কে জয় করতে পারে সে-ই সফল। সে-ই সুন্দর। জীবনের রাঙা প্রভাত তাকেই রাঙিয়ে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৫
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×