আমার জীবনে ভালো শিক্ষক যে পাইনি তা না কিন্তু আজ আমি লিখতেই বসেছি খারাপ অভিজ্ঞতা তাই ভালোদের কথা আজ উহ্যই থাকুক...
একজন শিক্ষক যে তার স্টুডেন্ট কে ক্লাশে কতটা বাজেভাবে ইনসাল্ট করতে পারে তা আমি জেনেছি কলেজে ওঠার পর... তিনি আমাদের কলেজের সায়েন্স আর্টস কমার্স নির্বিশেষে সব স্টুডেন্টদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়... যতদিন না আমি ভরা ক্লাশে তার ইনসাল্টের শিকার হয়েছি ততদিন অব্দি তিনি আমারও পছন্দের স্যার ছিলেন... ক্লাশমেট এক ছেলে নোংরা বিহেভ করেছিলো বলে ওকে থাপ্পর মেরেছিলাম আমি আর এই ঘটনার পরেরদিন স্যার আমাকে ক্লাশে সবার মধ্যে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো ওকে মেরেছি ক্যানো? ও কি আমাকে বাজে মন্তব্য করেছে? যদি করে থাকে সেটা যেন আমি ক্লাশের সবার সামনে বলে শুনাই! ও কি আমাকে বাজে ভাবে টাচ করেছে? যদি করে থাকে তাহলে কোথায় টাচ করেছে? এবং সর্বোপরি আমার মতো একটা উগ্র, উশৃঙ্খল মেয়েকে টিজ করা খুব বড় কোনো অপরাধ নয়.. এবং আমি ক্যানো মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে থাপ্পর মারলাম এই দায়ে সেদিন ক্লাশভর্তি ছেলে মেয়ের মধ্যে ছয়/সাত/আটটা বেতের বাড়ি মেরে শাষিয়ে ছিলেন যেন ভবিষ্যতে আর কখনো ছেলেদের সাথে মারামারি করার স্পর্ধা না দেখাই.. স্যারের কাছ থেকে এরপর প্রায় প্রতিদিন ক্লাশে নতুন নতুন অপমান অপেক্ষা করতো আমার জন্য... কোনোদিন হয়তো সে বলতো "কিরে বরিশাইল্যা পড়া পড়ে আসছিস?" আবার কোনোদিন হয়তো সামনের চুল কাটা ছিলো বলে শুনতে হতো, "ক্যাটরিনা হইতে চাস নাকি তুই? তুই আসলে বালটিনা হইতে পারবি হা হা হা"... কী বীভৎস ছিলো কলেজের সেইসব দিনগুলি!!!!
ভার্সিটিতে এসে একইভাবে দু'জন ম্যামের খপ্পরে পড়লাম... কোনোদিন কুর্তি কিংবা ফতুয়া পরে ক্লাশে গেলে ম্যাম অবধারিতভাবে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করতো "এই মেয়ে তোমার ওড়না কই".... একদিন টিচার্স রুমে ডেকে নিয়ে বিনা কারনে অপমান করলো.... আরেকদিন পরীক্ষার সময় দুই ম্যাম ই গার্ড পরলো.... কপাল খারাপ ওইদিন ই আমি ফতুয়া পরা ছিলাম আর আমার সিট ও পরেছিলো একদম সামনের সারিতে... পরীক্ষা দেওয়ার পুরোটা সময় ধরে তারা দু'জন এমন সব আজেবাজে কথা বলছিলো যে আমি কাঁদছিলাম আর পরীক্ষা দিচ্ছিলাম.... একজন বলছিলো "আরেহ এসব মেয়েরা ক্লাশ ফোর/ফাইভেই ভার্জিনিটি হারায়া বসে থাকে আরেকজন তাতে সায় দিয়ে আরো নোংরা নোংরা মন্তব্য করছিলো" সেদিন কি যে পরীক্ষা দিয়েছিলাম মনে নেই তবে এরপর থেকে আর কোনোদিন ফতুয়া পরে ভার্সিটিতেই যাইনি.... আসলে যাওয়ার সাহস পাইনি... বাজে মন্তব্য কে ই বা শুনতে চায় তাও আবার শিক্ষকের কাছ থেকে....
অরিত্রীরা মরে গিয়ে আসলে আমাদেরকে সত্যি কথাগুলি মুখ ফুটে বলতে শিখিয়ে যায়...... যে কথাগুলো কোনোদিন বলিনি...... নিজের মধ্যে নিজে এক হীনমন্যতা পোষণ করেছি যেসব ঘটনায়... অরিত্রীরা মরে গিয়ে আমাদের মনে সাহস যোগায় সেসব লেখার...... যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক অরিত্রীরা...