somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেসব আমাদের দিন ছিলো

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তার সাথে আমার হাটাহাটির সম্পর্ক আছিলো । একদিন সন্ধ্যায় ফুলার রোড দিয়া হাঁটতে হাঁটতে পলাশীর দিকে যাইতেছিলাম ... বিকালে তুমুল বৃষ্টি হইছে ; স্যান্ডেল হাতে নিয়া ভেজা পীচে হাঁটতে হাঁটতে সে আমারে রাস্তা থিকা একটা আকাশমণির পাতা কুড়ায়া দিয়া বললো “আমি তোর লগে আজীবন হাঁটতে চাই” ।
যেহেতু আমার ডান হাতে স্যান্ডেল সেহেতু আমি বাঁ হাতে তার দেওয়া ভেজা পাতাটা নিয়া বললাম , “ও”
সে তার এমন রোম্যান্টিক প্রস্তাবের জবাবে আমার গা ছাড়া “ও” শুইনা মন খারাপ কইরা রাস্তার উপরে বইসা পরলো। আমিও বসলাম ... বললাম , “এইমাত্র কইলি সারাজীবন হাটবি আর এহনি বইসা পরছোস ক্যা”
সে উদভ্রান্তের মতন আমার হাত ধরলো, “ফাইজলামি না, আমি তোরে আসলেই ভালবাসি”
আমাদের প্রেম হইলো। ঢাকার রাস্তায় রাস্তায়, গলি-ঘুপচিতে হাঁটতে হাঁটতে আমরা প্রচুর প্রেম করলাম । সে বেকার মানুষ , আমি একটা টিউশানি করি খালি। হাঁটতে হাঁটতে ক্ষুধা লাগলে আমরা টং দোকানে বইসা চা খাই। মাঝে মাঝে একটা সিঙ্গারা দুই জনে ভাগে খাই। জুন জুলাইয়ের খটখটা রোদ্দুরের গা বাচায়া আমরা উদ্যানে ঢুইকা যাই। মন খারাপ করা উদাস দুপুরে একজন মন্দিরা বাজায়া লালন গায় আমরা সেইখানে বইসা সারাদুপুর, বিকাল পার কইরা ফেলি। সন্ধ্যায় টিএসসি তে বিশ টাকার টিকেট কাইটা সিনেমা দেখি। সিনেমা শেষ কইরা সে আমারে হল অব্দি পৌছায়া দেয়। আমি হলের ভিতরে যাওয়ার আধ ঘন্টা পর সে ফোন দিয়া বলে “একবার বারান্দায় আয়। আমি এহনো যাই নাই। তোরে আরেক বার দেখুম বইলা রাস্তায় দাড়ায়া আছি” । আমার রুম ছয় তলায় । আমি ছয় তলার বারান্দা দিয়া আকাশের দিকে তাকায়া থাকি আর সে হলের বাউন্ডারির পরে যে রাস্তা তার ওই পারে দাড়ায়া আমারে দেখে। অন্ধকার বারান্দায় সে আসলেই আমারে দেখে কিনা সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত না। আমি কিন্তু চাইলেই তারে দেখতে পারি সোডিয়ামের আলোয়, কিন্তু আমি তার দিকে তাকাই না । আমি আকাশের দিকে তাকায়া থাকি। আমার চোখ ভিজে আসে জলে। অনেকক্ষন পর রাস্তার দিকে তাকায়া দেখি সে কোনো এক ফাঁকে বাসে উইঠা চইলা গেছে।
কোনো কোনো রাতে তার ফোনে আমার ঘুম ভাঙে। রাত তিনটা । সে আমারে বলে “একবার বারান্দায় আয়। আমি রাস্তায় দাড়ায়া আছি। আমার ঘুম আসে না। তোরে একবার দেইখা চইলা যাবো”। আমি ঘুম ঘুম চোখে গিয়া বারান্দায় দাঁড়াই । আমার মনে হয় এই পৃথিবীর চাইতে সুন্দর আর কিছু নাই। ভোরের আলো ফোটার আগেই আমি হলের বাউন্ডারি টপকে রাস্তায় নামি। তার হাত ধরে হাটতে থাকি উদ্দেশ্যহীন।
আমার জন্মদিনে রাত বারোটায় সে আসে তিনটা ফানুশ নিয়ে। যাবার সময় তার পকেটে বাস ভাড়া থাকেনা। এই দিনগুলো আমরা দ্রুত পার করে ফেলতে চাই। আমাদের মনে হয় সামনে আরো ভালো দিন আছে আমাদের অপেক্ষায়।

একদিন তার চাকরি হয়। একদিন আমার চাকরি হয়। কিন্তু তার স্ট্যাটাস বদলায়, আমার স্ট্যাটাস বদলায় না। তার পছন্দ অপছন্দ বদলায়। তার পোশাক বদলায়, চুলের স্টাইল বদলায়। আমার কিছুই বদলায় না। তার সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমার খেই হারিয়ে যায়।
আমরা আর শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাটার সময় পাই না। আমরা আর ভোর রাতে ঘর পালিয়ে রাস্তায় নামি না। আমাদের অফিস থাকে। আমরা আর টং দোকানে চা খাই না সামাজিকতার ভয়ে। মাঝ রাত্রিরে সে আর আমারে ফোন দিয়া তার মন খারাপের কথা বলেনা।
সে তার সুন্দরী কলিগ নিয়া সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যায়। তার নতুন নতুন বান্ধবী হয়। সে তার বান্ধবী নিয়া দেশে বিদেশে ঘোরার স্বপ্ন দেখে। আমি এখনো তার হাত ধইরা রাস্তায় নামতে চাই। আমি তার অপেক্ষায় থাকি । তার সময় হয়না। সে আসেনা । সে ডাকেনা। সেই দিনগুলা হারায়া যায়। রাস্তার পাশের গাছের পাতার মতোন সেই দিনগুলায় ইটের গুড়ার রঙের লালচে ধুলা জমে। সেই ভবঘুরে দিনগুলা ফ্যাকাশে মুখ থুবড়ায়া পইড়া থাকে রাস্তায়।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৬
৪৫৬ বার পঠিত
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিরাট ব্যাপার-স্যাপার | রম্য =p~

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নিজের মোবাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাই সরাসরি দুইস্তর বিশিস্ট প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন: নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার

লিখেছেন বিদ্রোহী ভৃগু, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৪

ভূমিকাঃ

ছাত্র-জনতার সফল জুলাই বিপ্লবের পর আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন ও প্রকৃত উন্নয়নের এক নতুন পথে যাত্র শুরু করেছে। নোবেল লরিয়েট ড। ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=শোকর গুজার প্রভুর তরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৪



প্রভু তোমার দয়ার কথা, বলে হয় না শেষ তো
কত রিযিক আহার দিয়ে, রাখছো মোদের বেশ তো!
তোমার সৃষ্টির কেরামতি, নেই কো বুঝার সাধ্য
তোমার বান্দা তোমার গোলাম, শুধু তোমার বাধ্য!

গাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুপার সানডে : সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের পথে বাংলাদেশ!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭


আজকের দিনটি বাংলাদেশের সচেতন মানুষের দীর্ঘদিন মনে থাকবে। এত সংঘর্ষ ও মারামারি অনেকদিন পর ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলো। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ আগে থেকেই উদ্বিগ্ন তার উপর বিভিন্ন অবরোধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপে সংস্কার শেষে ভোটের পক্ষে রায় দিয়েছে ৬৫.৯ % মানুষ

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


পাগল ও নিজের ভালো বুঝে ,কখনো শুনেছেন পাগল পানিতে ডুবে মারা গেছে কিংবা আগুনে পুড়ে মারা গেছে ? মানসিক ভারসাম্য না থাকলেও মানুষের অবচেতন মন ঠিকই বুঝে আগুন ও পানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×