#১
ডিটেকটিভ রুদ্র। ইন্সম্নিয়া তে ভুগছে। রাতে ঘুমাতে পারেনা। চোখ বন্ধ করলেই ভয়ানক সব দৃশ্য ভেসে উঠে। চোখের পাতা এক করতেই পারছেনা। এই মুহূর্তে ও ডাক্তারের কাছে যেতে চাচ্ছেনা।
অনিদ্রা। ঘুম টা অনেক জরুরি। সারাদিনের অবসাদ, ক্লান্তি দূর করতে ঘুম টা খুব জরুরি।
নির্ঘুম রাত একজন মানুষকে নিঃশেষ করে দিতে পারে। নাহ, স্লিপিং পিল এও কাজ হচ্ছেনা। নিশ্চুপ, নির্ঘুম রাত। অনিদ্রা একটা ভয়ানক ব্যাধি। অনিদ্রা অনেক কারণেই হতে পারে। অনিদ্রা দূর করতে অনিদ্রার কারণ টা খুঁজে বের করা জরুরি।
তবে কারণ টা যদি হয় ভয়ানক কিছু!
নির্ঘুম, নিশ্চুপ, ভয়াল, দুর্বিষহ রাত্রি। অনুশোচনা, অনুতাপ, রাগ, অনিদ্রা।
#২
হিমিকা। বয়স ১৬। কলেজ স্টুডেন্ট। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড তৃষা। হিমিকা আর তৃষা। বলতে গেলে মানিকজোর। এদের দুই জনকে কখনও আলাদা করা যায়না!! সবসময় একসাথে।
রিয়াদ। হিমিকার বি এফ। ক্লাস মেট। ছেলেটা কেমন যেন। বখাটে। হিমিকার মতো মেয়ের সাথে যায়না। যাই হোক। প্রেম তো অন্ধ! কিন্তু আজকালকার প্রেম!! অন্ধ না কি সেটা কে জানে!!
#৩
প্রতাপ। রুদ্রের সহযোগী। অনেক দিন থেকেই তারা একসাথে কাজ করছে। একসাথে যে কতগুলো হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। কিছুদিন আগে অবশ্য একটা কেস নিয়ে দুজনের মাঝে অনেক ঝামেলা হয়েছিল। যাই হোক, ওদের ডাক পরেছে একটা ছোট্ট শহরে। ছোট্ট শহর। বড় কোন ঘটনা ঘটেনা বল্লেই চলে। এই শহরে হত্যাকাণ্ড। শহরের পুলিশ গুলো বড়জোর চোর ডাকাত ধরা ছাড়া আর কিছুই পারেনা। তাই বড় শহর থেকে ডিটেকটিভের তলব। রুদ্র আর প্রতাপ। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ডিটেকটিভ।
#৪
রুদ্র। একটি বদ্ধ কক্ষ। নিশ্চুপ রাত। নির্ঘুম। টেলিফোন টা বেজে উঠলো।
রুদ্রঃ হ্যালো!! কে?
আগন্তুকঃ নির্ঘুম রাত, তাইনা?
রুদ্রঃ কে?? আমি আপনাকে চিনতে পারছিনা! কে আপনি?
আগন্তুকঃ অনুশোচনা? ভয়াল স্মৃতি। তাইনা? সত্য গোপন করা সহজ। কিন্তু বিবেক কে ফাঁকি দিবে কি করে??
রুদ্রঃ হ্যালো। কে??
টুট টুট টুট...............।
লাইন টা কেটে গেলো। আবার নীরবতা।। নিশ্চুপ, নির্ঘুম......। অনিদ্রা একটা ভয়ানক ব্যাধি।
#৫
ফ্রেন্ডশিপ ডে। পার্টি চলছিল। হঠাত হিমিকা আর রিয়াদের ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো। যা কিছুক্ষণ পর হাতাহাতি তে রুপ নিল। রিয়াদ হিমিকার গায়ে হাত তুলেছিল। হিমিকা কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলো। পরদিন সকালে হিমিকার মৃতদেহ পাওয়া যায়।
রুদ্র আর প্রতাপ চলে এসেছে। ওরা লাশ টি পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। গায়ে আঘাতের চিহ্ন। কিছু নতুন, কিছু পুরান। লাশ টা ফেলে দেয়ার আগে খুনি খুব ঠাণ্ডা মাথায় লাশ টি পরিষ্কার করেছে। কোন ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায়নি। খুনি খুব ঠাণ্ডা মাথায় সব কাজ করেছে। হাতে পর্যাপ্ত সময় ছিল বুঝা যাচ্ছে। কোন ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই। তার মানে খুনি হিমিকার পূর্ব পরিচিত।
সন্দেহের টির টা যাচ্ছে রিয়াদের দিকেই। হিমিকা তাকে ঠকাচ্ছিল। তার সাথে প্রেমের নামে টাইম পাস করছিল। হিমিকার ঘরে এমন কিছু গিফট পাওয়া গিয়েছিল যা তার বাবা মা দেয়নি। রিয়াদের মতো কলেজ পড়ুয়া ছেলের পক্ষে এগুলো কেনা সম্ভব নয়। আর আত্মীয় কেও দিলে তা লুকিয়ে রাখার কোন কারণ নেই। তার জীবনে আরও কেও ছিল। জার কথা কেও জানেনা। রিয়াদ বুঝতে পেরেছিল। রেগে গিয়ে হিমিকা কে মারধর ও করত। যাই হোক। সন্দেহের তীর আপাতত রিয়াদের দিকে থাকলেও কোন সম্ভাবনা কেই বাদ দেয়া যাচ্ছেনা।
#৬
ইন্সপেক্টর জহির। কয়েকদিন আগেই জয়েন করেছে পুলিশ এ। তরুণ, নবীন, সৎ পুলিশ অফিসার। ওর কাঁধে পড়েছে এই কেস টি। আজ ওর প্রথম অপারেশান। শহরের অদূরেই এক দুর্গম এলাকা। পাহাড়ের ধারে। নিচে একটি লেক। পাথুরে জায়গা। সেখানেই একটা ঘর। এক সন্দেহভাজন কে ধরতে এসেছে ওরা। রুদ্র, প্রতাপ আর জহির। সাথে আরও কয়েকজন অফিসার। হঠাত ই একজন কে দৌড়ে পালাতে দেখা গেলো। দুর্গম অপরিচিত এলাকা। পিছু নিল সবাই। কুয়াশা। কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা। হঠাত ই গুলির শব্দ। এক পুলিশ গুলিবিদ্ধ হল। রুদ্র তার পাশে ছিল। ও আততায়ীর পিছু নিল। কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। রুদ্র দূরে একজনকে দেখতে পেলো। অস্পষ্ট। গুলি ছুড়ল। আর্তনাদ। রুদ্র কাছে গিয়ে দেখল প্রতাপ গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। তার পাশে একটি রিভল্বার। রুদ্র তুলে নিল।
#৭
ফ্রেন্ড শিপ ডে। পার্টি। হিমিকার আসতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। ও রিয়াদ কে খুঁজছিল। পেয়েও গেলো। কিন্তু!! এরকম টা ও কখনও ভাবেও নি। নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড!! কিভাবে পারল?? তৃষা আর রিয়াদ একসাথে। হ্যাঁ, থাকতেই পারে একসাথে। তাই বলে এভাবে!! ছি!! ও আর সহ্য করতে পারছিল না। গিয়ে তৃষা কে চর মারল। রিয়াদ প্রতিবাদ করতেই ঝগড়া লেগে গেলো। হাতাহাতি। রাগে দুঃখে হিমিকা বেরিয়ে এল। কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। দ্বিতীয় ওই লোকটিকে কল করলো। বেরিয়ে গেলো। পরদিন তার লাশ পাওয়া যায়!!!!
#৮
নির্ঘুম রজনী। কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না রুদ্র। সবাই জানে যে হিমিকার খুনির হাতেই প্রতাপ খুন হয়েছে। কিন্তু রুদ্র। ও তো জানে সত্যি টা। গুলি টা যে তার নিজের পিস্তল থেকেই বেরিয়েছে।
রাগ, দুঃখ, যন্ত্রণা, অনিদ্রা। নিশ্চুপ, নির্ঘুম রজনী। চোখ বন্ধ করলেই প্রতাপের মুখটা ভেসে আসছে। বুলেটের আঘাতে বিক্ষত, রক্তাক্ত প্রতাপ।
ফোন টা আবার বেজে উঠলো।
আগন্তুকঃ আমি সব জানি। হাহাহাহাহাহা...
রুদ্রঃ কে, কে আপনি?
আগন্তুকঃ আমি কে তা জানাটা কি জরুরি?? জরুরি হল আমি কি জানি সেটা? ঘুম হচ্ছেনা, তাইনা? ওই ঘটনার পর থেকে আমার ও হয়না!! হিমিকা! ফুলের মতো মেয়েটি। নিষ্পাপ। আমাকে অনেক স্রদ্ধা করতো। সবকিছু বলতো। রিয়াদের সাথে ঝগড়া হল। বেচারি খুব কষ্ট পেয়েছিল জানেন? ও রিয়াদ কে মনে প্রাণে ভালোবাসতো। ছেলেটা ওকে খুব কষ্ট দিত। আমাকে কল দিয়ে ও খুব কাঁদছিল। আমি ওকে আমার লেকের ধারের বাসায় চলে আসতে বললাম। আসলে নেশা টা এত চড়ে গিয়েছিল না!! আর হিমিকাকেও খুব মানিয়েছিল। নীল রঙ আমার খুব প্রিয়। হিমিকা আমার বুকে মাথা রেখে কাঁদছিল। হঠাত কি হল! আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। হিমিকা খুব অবাক হল। আমাকে খুব বিশ্বাস করতো মেয়েটি। অপমান, লজ্জা আমায় নিঃশেষ করে দিচ্ছিল।
মানুষের জীবন। জীবন নেয়া এত সহজ কেন? আপনার ও তো ভাল জানার কথা তাইনা?? হঠাত গুলিটা বেরিয়ে গেলো!!! হাহাহাহাহাহাহা।। আমি সব দেখেছি। রিভল্বার টা ইচ্ছা করেই ফেলে রেখেছিলাম। একটা কথা বলি!! আমি যদি শাস্তি পাই!! ডিটেকটিভ রুদ্র। মনে রাখবেন। আপনাকে কিন্তু ছাড়ব না। ভেবে দেখেন। আমি যা বলব তাই করতে হবে। এত বছরের সাজান ক্যারিয়ার। এক মুহূর্তেই নিঃশেষ হয়ে যাবে।
আহ... অনেক দিন ঘুম হয়না। আজ খুব ভাল ঘুম হবে। প্রশান্তির ঘুম।
রুদ্র আর কিছুই বলতে পারছিল না। শত প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরছে। এত বছরের ক্যারিয়ার। একটা ভুলের জন্যে সব শেষ হয়ে যাবে?
নিশ্চুপ, নির্ঘুম রাত। রাগ, দুঃখ, অভিমান, হতাশা, অনিদ্রা।
#৯
প্রতাপের মৃত্যুর কেস টা পরেছে জহিরের হাতে। ও রুদ্রের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে একটা রিপোর্ট বানিয়ে নিয়ে এল রুদ্রের স্বাক্ষর নিতে। কিন্তু বিবেক। এতদিনের সৎ, নিষ্ঠাবান অফিসার। তার বিবেকে বাঁধল ভুলে ভরা মিত্থে রিপোর্টে সাক্ষর করতে। রুদ্র জহির কে পুরো কেস আবারো ইনভেস্টিগেট করে দেখতে বলল।
প্রতাপের গায়ে যে গুলিটা লেগেছিল টা পাল্টে দিতে হবে। সেজন্যে রুদ্র নিজেই চলে গেলো হাসপাতালে। ডাক্তারের সাথে দেখা করে বুলেট টা নিয়ে এলো। পুলিশ স্টেশনে আসার পথে পাল্টে নিল বুলেট টা। প্রতাপের লাশের পাশে রিভল্বার টা পেয়েছিল।
#১০
রমিজ। হিমিকার কলেজ এর ফিজিক্স এর প্রফেসর। হিমিকা কিছু প্রোজেক্ট এর কাজ করছিল যার জন্যে রমিজ এর সাহায্য নিচ্ছিল ও। এভাবে রমিজের খুব কাছাকাছি চলে আসে ও। এই প্রজেক্ট টা সম্পর্কে কাঊকেই জানায়নি হিমিকা। সবাইকে চমকে দিতে চেয়েছিল ও। রমিজ এর বয়স ৪৭। বিয়ে হয়েছিল। একটা মেয়েও ছিল। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় মা মেয়ে। হিমিকাকে ও নিজের মেয়ের মতই ভালোবাসতো। অনেক দামি গিফট কিনে দিত। হিমিকাও ওকে খুব স্রদ্ধা করতো।
তবে প্রত্যেক মানুষের মাঝেই পশু বাস করে। সেই পশুত্ব কে জয় করা খুব সহজ নয়!!
হিমিকার মৃত্যুর পর তৃষা আর রিয়াদের মেলামেশা খুব বেড়ে গিয়েছিল। বেস্ট ফ্রেন্ড এর মৃত্যু যেন তার উপর কোনই প্রভাব ফেলেনি। বরং তাকে খুব বেশিই খুশি লাগছিল যেন।
#১১
১ মাস পর। ছোট্ট সেই শহরটিতে আরও একটি খুন। রিয়াদের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এক ই অবস্থায়। ঠিক যেভাবে পড়ে ছিল হিমিকার মৃতদেহ। খবর টা শুনে রুদ্র আর ঠিক থাকতে পারল না। এত বড় ভুল ও করে ফেলেছিল!! না!! আর মেনে নিতে পারছেনা ও। এ কি করেছে ও! সবকিছু এখন তার কাছে পানির মতো পরিস্কার হয়ে গেলো। এভাবে ওকে ফাঁসানো হল!! কিভাবে???
বিবেক কে পরাজিত করেছিল ও। সেই ফোন কল। রুদ্র নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে এতটাই মরিয়া ছিল যে এত সূক্ষ্ম জিনিস তার চোখ এড়িয়ে গেলো!!
বিবেক কে বিসর্জন দিয়ে ও নিরপরাধ রিয়াদ কে জেলে ভরেছিল। কিন্তু অনুশোচনা থেকে হোক আর যাই হোক, রমিজ কে ও ছেড়ে দেয়নি। নিজের অপরাধ শেষ পর্যন্ত স্বীকার করে নেয় ও। তবে তার আগে রমিজ কে খুন করে রুদ্র। প্রতাপের মৃত্যু টা দুর্ঘটনা ছিল। কিন্তু নিজের অপরাধ ঢাকতে রুদ্র এত কিছু করায় চাকরি টা হারায়। তার সাজা হয়নি যদিও। রমিজ কে খুনি প্রমাণ করতে সফল হয় ও!!
#১২
তৃষা রিয়াদ কে পাগলের মতো ভালোবাসতো। কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড এর জন্যে ছার দিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু যখন ও জানতে পারল হিমিকা প্রোজেক্ট টা নিয়ে কাজ করা শুরু করে দিয়েছে তখন আর নিজেকে সামলাতে পারেনি ও। হিমিকা আর তৃষা। ক্লাস এর সবচাইতে ব্রাইট স্টুডেন্ট। ফিজিক্স প্রোজেক্ট প্রতিযোগিতা চলছিল। রমিজ হিমিকা কে খুব বেশি ভালোবাসতো। তাই কিছুটা পিছিয়ে থাকা সত্যেও ও হিমিকার প্রোজেক্ট টাই সিলেক্ট করে। ভালবাসা, প্রোজেক্ট সব কিছুতেই এই পরাজয় মেনে নিতে পারল না তৃষা। নিজের বাবার সাহায্য নিয়ে খুব সুন্দর একটা নাটক সাজিয়ে ফেলল ও।
সবকিছুই এখন রুদ্রের কাছে পরিষ্কার। প্রতাপ রুদ্রের গুলিতে নয়। খুন হয়েছে তৃষার গুলিতে। হিমিকাকে খুন করে কৌশলে ফাঁসিয়ে দেয় রমিজ কে। এটা কেন বুঝতে পারল না রুদ্র!! নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে এতটাই মরিয়া ছিল রুদ্র!!
রিয়াদ সত্যিই খুব ভালোবাসতো হিমিকাকে। জেল থেকে মুক্তির পেয়েছিল ও। রমিজ খুনি প্রমানিত হয়েছিল।
তৃষা ওকে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু রিয়াদ প্রত্যাখ্যান করে। রাগে দুঃখে অভিমানে শেষ পর্যন্ত রিয়াদ কেও খুন করে বসে তৃষা।
#১৩
তৃষা এখন মানসিক হাসপাতালে ভর্তি। তৃষার বাবার জেল হয়েছে। রুদ্রের কাছে ফোন কল গুলো তৃষার বাবাই করতো।
এই ঘটনা গুলো এখন রুদ্র কে তাড়িয়ে বেরায়।
নির্ঘুম, নিশ্চুপ, ভয়াল, দুর্বিষহ রাত্রি। অনুশোচনা, অনুতাপ, রাগ, অনিদ্রা।