somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মূদ্রার অন্য পিঠ

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগার হত্যাকান্ড নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়ে গেছে। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি হত্যাকান্ডের বিচার চাই। কারো বিচার করার মত বিদ্যা বুদ্ধি আমার নেই। আমি শুধু আমেরিকার একটি ঘটনার সাথে মিলিয়ে বিষয়টি ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে চাই।

টুইন টাওয়ার হামালার পরে আমেরিকার কিছু স্কুলছাত্রের সাক্ষাতকার কোন এক টিভি চ্যানেলে দেখেছিলাম। সেখানে একটি ছাত্র বলছে, “আমরা নিশ্চয় তাদের কোন ক্ষতি করেছি, তাই তারা এমন একটি জঘন্য আক্রমন করতে পারল”। এখানে ছাত্রটি যেমন হামলাকে সমর্থন দেয়ার চেষ্টা করেনি, আমিও তেমনি হত্যাকে সমর্থন করার চেষ্টা করছি না। আমি শুধু কারন বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি(যদিও আমি জানি, যাদের পছন্দমত হবে না তাদের কেউ কেউ আমাকে গালি দেবে)।

আমার বাবাকে যদি কেউ গালি দেয় তবে আমার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের ওপর। প্রথমত, আমি আমার বাবাকে কতটা ভালবাসি/সন্মান করি এবং আমার নিজের আবেগের উপর কতটা নিয়ন্ত্রন আছে। যদি নিজের উপরে নিয়ন্ত্রন বেশি হয় তবে আমি কিছু না বলে বিষয়টা হজম করব। আর যদি আত্ননিয়ন্ত্রন ক্ষমতার চেয়ে বাবার প্রতি আমার ভালবাসা/ সন্মান বেশি হয় তবে আমি প্রতিক্রিয়া দেখাব।

প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা নির্ভর করে কিছু বিষয়ের উপরে। সমাজ বা রাষ্ট্রের উপরে আমার যদি আস্থা থাকে, তবে আমি সমাজের মুরুব্বির কাছে বিচার দিব অথবা থানা/কোর্টে যাব। কিন্তু, আস্থা না থাকলে আমি নিজেই ব্যাবস্থা নেব।

এই ব্যাবস্থা কেমন হবে তা নির্ভর করে, গালিটা আমার কতখানি খারাপ লেগেছে এবং আমার কি করার ক্ষমতা আছে তার উপরে। যদি আমার অল্প খারাপ লাগে অথবা আমার ক্ষমতা অল্প থাকে, তবে আমি তাকে ফিরে গালি দিব। যদি আমার বেশি খারাপ লাগে এবং আমার ক্ষমতা থাকে তবে আমি তাকে মারধোর করব।

হ্যাঁ, যদি আমার আত্ননিয়ন্ত্রন ক্ষমতা বেশি হয় তবে আমি পরের ধাপগুলোতে আসবই না। কিন্তু, মনে রাখতে হবে সবার আত্ননিয়ন্ত্রন ক্ষমতা সমান না(এটা তার দুর্বলতা বা মানসিক অক্ষমতা যাই বলি না কেন)।

এখন আরেকটি বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা যাক। রাস্তায় যখন কেউ পায়ে হেটে চলে অথবা গাড়ি চালায় তখন উভয়ের দায়িত্ব দেখে-শুনে চলা। কিন্তু, যদি কোন গাড়ি কাউকে চাপা দেয় তবে আমরা কোন চিন্তা না করেই গিয়ে গাড়ি ভাংচুর করি আর ড্রাইভারকে পিটাই। প্রায় কখনই চিন্তা করে দেখি না যে, ড্রাইভারের ব্রেক করার সময়/সুযোগ ছিল কিনা। ড্রাইভারের দায়িত্ব বেশি হতে পারে, কিন্তু পথচারিরও তো কিছু দায়িত্ব আছে? ক্ষতিগ্রস্তের প্রতি সমবেদনায় আমরা এসব ভুলে যাই। আমার বাবাকে কেউ গালি দেয়ায় আমি যদি তাকে মেরে বসি তখন আপনি আমার বিচার করতে আসবেন। কিন্তু, গালি দেয়ার অধিকার তার আছে কিনা সেটা বিবেচনা করা কি আপনার দায়িত্ব নয়? অবশ্য কাউকে গালি দেয়া যদি আপনার কাছে বাকস্বাধীনতা মনে হয় তবে আমার কিছু বলার নেই।

ধর্মীয় গোঁড়ামি আর ধর্মবিদ্বেষ দুটোই আমার কাছে অগ্রহনযোগ্য মনে হয়। কিন্তু, মজার ব্যপার হল ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে আমরা যতটা সোচ্চার ধর্মবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ততটা নই(হতে পারে প্রথমটার বাজারে কাটতি বেশি বলে)।

মূল কথায় আসি। যেকোন হত্যাকান্ডের চেয়ে ব্লগারদের হত্যাকান্ডের বিচার আমি বেশি করে চাই। কারন, এটি আমার ধর্মের প্রতি মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। তবে সেই সাথে আমি এও চাই যে, কেউ যেন আমার ধর্মবিশ্বাসে আঘাত না করে। আমি বিশ্বাস করে একটা পাখিকেও পবিত্র মনে করে সন্মান করতে পারি। আপনি তা নাই করতে পারেন। কিন্তু, আমি সন্মান করি জানার পরে আমার সামনে আপনি তাকে অসন্মান করতে পারেন না। বাকস্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাকে বা আমার বিশ্বাসকে অসন্মান করার অধীকার আপনাকে দেয়না।

আমি ব্লগারদের হত্যাকান্ডের বিচারের সাথে সাথে সেই সব ব্লগারদের শাস্তি চাই যারা অন্যায়ভাবে অন্যের ব্যাক্তিগত বা ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করে। কারন, যতদিন দুটিই নিশ্চিত করা না হচ্ছে ততদিন এমন কিছু এক্সট্রিমিস্ট আমাদের শান্তিভংগ করবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টোকাইদের রফিকুন নবীর ক্যানভাসেই মানায়, শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টিতে কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতায় নয়

লিখেছেন মিশু মিলন, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:১১

সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, সংগীতকে আমি দেখি সিরিয়াস ধরনের কাজ হিসেবে। কারণ, এসব শিল্প মানুষের মানসপটে খুব প্রভাব ফেলে, একটা সমাজের চরিত্র গঠনে প্রভাব ফেলে। ফলে এসব শিল্পের সঙ্গে তাদেরই যুক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণচোখ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৩৮


(ষড়ঋপু সিরিজের তৃতীয় কাহিনি — লোভ)

⸻ সতর্কীকরণ: ছায়া পড়লে আলোও কাঁপে ⸻

এই কাহিনি কেবল একটি গল্প নয়। এটি এক মানসিক প্রতিচ্ছবি, যেখানে লুকিয়ে আছে মানব আত্মার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এসব লুটপাটের শেষ কোথায়!

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১৮

আধা লিটারের পানির বোতল দোকানদার কেনে সর্বোচ্চ ১২.৫০ টাকায় আর ভোক্তার কাছে বিক্রি করে ২০ টাকা। এগুলো কি ডাকাতি না?

গোপন সূত্রে যতটুকু জানা যায়,
প্রাণ ৮.৫ টাকা কেনা
ফ্রেশ ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চারুকলায় আগুনে পুড়ে গেল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্‌যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে একটি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও আরেকটি শান্তির পায়রা।



আজ শনিবার সকালে চারুকলা অনুষদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা
March for Gaza | ঢাকা | ২০২৫

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
আল্লাহর নামে শুরু করছি
যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী,
যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন।

আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×