লজ্জা নারীর ভূষণ, অলংকার স্বরূপ। কিছু বেতিক্রম থাকা সত্ত্বেও বলবো, লাজুক বৈশিষ্ট্যতা একমাত্র বাঙালি নারীর মধ্যে দেখা যায়। আদর, সম্মান, মান-মর্যাদা এগুলো পৃথিবীর অন্য কোন ধর্মের নারীর মধ্যে দেখা যায়না। বাঙালি নারী লজ্জা পায় প্রথম প্রপোজ পেলে, লজ্জা পায় প্রিয় মানুষটির চোখে চোখ রেখে কথা বলতে, তারা লজ্জা পায় বিয়ের প্রস্তাব পেলে এমনটি পৃথিবীর আর কোন নারীর মধ্যে দেখা যায়না। এই অপরূপ সৌন্দর্য আল্লাহ একমাত্র বাঙালি নারীকেই দান করেছেন, সেই সাথে তাদের অসীম ভালবাসার ক্ষমতাও দিয়েছেন। বাঙালি নারী সাহসী, দুর্বার, নির্ভীক। তারা সাহসী হয় তার ভালবাসার জন্য, পরিবারের জন্য, প্রিয় মানুষটির জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে।
.
বাঙালি নারীদের মন খুব নরম, সেই মন যখন কারো প্রেমে পড়ে তখন আরো নরম হয়ে যায়, কিন্তু তারা সেটা প্রকাশ করতে পারেনা, হয়তো করতে চায়না। অসীম ধৈর্য, ত্যাগ, কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা, আপনজনদের খুশী রাখার জন্য নিজের সবকিছুকে বিসর্জন দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহ একমাত্র বাঙালি নারীদের দিয়েছেন।
.
আমাদের দেশের নারীদের জন্মের পর থেকেই ত্যাগ করতে হয়, মধ্যবিত্ত পরিবারে যদি ছেলে বড় হয়, আর মেয়েটি ছোট হয়, তাহলে চাওয়া পাওয়ার দিক থেকে অনেক বাবা-মা ছেলের আবদারগুলোকে আগে প্রাধান্য দেন। মেয়েটিকে এই বলে বুঝানো হয় যে, "তোর বড় ভাই সংসারের বড় ছেলে ওকে তাড়াতাড়ি বড় হয়ে সংসারের হাল ধরতে হবে, পরে তুই তোর ভাইয়ের কাছে ইচ্ছেমত আবদার করতে পারবি" মেয়েটিকে সবসময় আশার আলো দেখানো হয়, কিন্তু তা পূরণ করা হয়না। সে কোন বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করতে চায়, তার কি করতে ভালো লাগে তা জিজ্ঞেস না করেই পরিবারের বড়দের বিশেষ করে বড় ভাইয়ের ইচ্ছাগুলো তার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়।
.
একটি মেয়েকে জন্মের পর থেকে ত্যাগ করতে হয়। ত্যাগ করতে হয় তার ইচ্ছেগুলো, মনের অনুভূতিগুলো। ত্যাগ করতে হয় বয়ফ্রেন্ডকে, পিতার ঘর ত্যাগ করতে হয়, বিয়ের পর ত্যাগ করতে হয় তার নাম, সন্তান লাভের পর ত্যাগ করতে হয় তার রাতের ঘুম, খাওয়া-দাওয়া। সন্তান বড় হয়ে খারাপ আচরণ করলে ত্যাগ করতে সন্তানকে নিয়ে তার সমস্ত আশা-ভরসাকে। আবার ছেলের বউ যদি খারাপ হয়, তাহলে ত্যাগ করতে হয় তার আপন স্বামীর ঘর, মেয়েটির শেষ জীবনের ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম, আর একমাত্র সঙ্গী বলতে থাকে চোখের জল।
.
মেয়েমানুষ আল্লাহ তায়ালার অপূর্ব সৃষ্টি গুলোর মধ্যে একটি। আল্লাহ বলেছেন, “যখন আমি কোন বান্দার প্রতি খুব খুশী হই তখন তাদের কন্যা সন্তান দান করি”
আমাদের নবীজী বলছেন, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”
কথাগুলো একবার মন থেকে চিন্তা করে দেখুন নারীদের কত মর্যাদা, কত সম্মান দেয়া হয়েছে। এখন আপনার বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন, আমরা কি নারীদের সেইভাবে সম্মান করছি?? আমাদের বর্তমান সমাজে নারীদের অবস্থান কোথায়??
.
ইসলাম নারীকে অনেক অনেক অনেক সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে নারীদের উচিত ইসলামিক আদর্শ অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করা, আর আমাদের সমাজের উচিত নারীদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর।
.
► পরিশেষে একটা কথায় বলবো, মেয়েরা আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি। একটি মেয়ে হয় কারো মেয়ে, কারো বোন, কারো স্ত্রী, কারো মা। মেয়েদের মন খুব নরম, সেই মন শুধু একটা জিনিস চায় সেটি হল প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে অফুরন্ত ভালবাসা। বাবা-মা, ভাই, স্বামী, সন্তান, সন্তানের বউ, শ্বশুর, শাশুড়ি সমস্ত আপন জনদের কাছ থেকে ভালবাসা চায় একটি মেয়ের মন। মেয়েদের সেই নরম মনে কখনো আঘাত করোনা বন্ধু, কখনো কষ্ট দিয়ো না। শুধু তাকে আপন করে ভালবাসা দিয়ে দেখো, সমস্ত পৃথিবীর সাথে লড়াই করবে শুধু তোমার জন্য। সেই তুমি হতে পারো তার বয়ফ্রেন্ড, তার স্বামী, কিংবা তার ছেলে।
মেয়েদের বুঝতে শিখুন, তাদের সাথে কখনো খারাপ ব্যাবহার করবেন না, আমরা তো মানুষ, তাহলে আমরা কেন পশুর মত হিংস্রতা প্রকাশ করি?? এটা কি আমাদের শোভা পায়?? হে সমাজ নারীদের সম্মান যদি দিতে না পারো তাহলে অন্তত অসম্মান করোনা, করোনা, করোনা, করোনা..
.
লিখাঃ নাহিদ হোসাইন (NHD)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৩