লিখাঃ নাহিদ হোসাইন
মানুষ বলে ভালবাসা নাকি অনেক ধরণের, ভালবাসা অন্ধ, ভালবাসা খারাপ ইত্যাদি।
সব ভুল, আমার মতে ভালবাসা ৩ ধরণের।
১. পবিত্র ভালবাসা
২. অন্ধ ভালবাসা
৩. কর্পোরেট ভালবাসা।
আসুন এখন এই তিন ধরণের ভালবাসা সম্পর্কে জেনে নিই। পবিত্র ভালবাসা সম্পর্কে সবার শেষে লিখব, কথায় আছে না, “শেষ ভাল যার সব ভাল তার”
২. অন্ধ ভালবাসাঃ একে অপরের প্রতি একতরফা ভাবে অন্ধ বিশ্বাস, অধিক পরিমাণে আবেগ, ঘন ঘন ব্রেকআপ এই টাইপের ভালবাসার ক্ষেত্রে দেখা যায়।
অন্ধ ভালবাসায় ছেলে/মেয়ে দুইজনেই অধিক পরিমাণে আবেগী হয় (তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা টাইপের) ভালবাসার মানুষটির একটু অবহেলা, খামখেয়ালীপনা, যেন সহ্য করা যায়না, এ অবস্থায় অনেকেই ভুল পথের দিকে পা বাড়ায়, অনেকে নিজের জীবনটাই দিয়ে দেয়। অন্ধ ভালবাসায় সামনের চোখ দুটো ছাড়া বাকি সবগুলো চোখই অন্ধ থাকে। অন্ধ ভালবাসার রিলেশন গুলো বেশীদিন টিকে না, সন্দেহ আর অবহেলার কারণে তা হারিয়ে যায় কালের অতল গহ্বরে।
অনেকে হাত কেটে, নাম লিখে প্রিয় মানুষটিকে প্রমাণ করার চেষ্টা করে তোমাকে কতোটা ভালবাসি। কিন্তু তারা এটা কেন বুঝেনা ভালবাসা কোন প্রমাণ করার জিনিস না, এটি অনুভূতির ব্যাপার।
এই টাইপের ভালবাসার মূল সূত্র হলঃ
“যেকোনো মূল্যে আমি তোমাকে চাই, নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোমাকে চাই”
(আরে ভাই মরে গেলে তো সব কাহিনী শেষ, যার জন্যে মারা যাবেন সেতো ঠিকই ফুর্তিতে থাকবে)
আজ চারদিকে এত এত সুইসাইড, অনেক মেয়েরা সতীত্ব হারায়, অনেকে নিজের জীবনটাকে ঠেলে দেয় অন্ধকার গলির পথে, অনেকে না মরেও মরার মত বেঁচে থাকে, এই সবকিছুই একমাত্র হয় অন্ধ বিশ্বাসের কারণে। ভালবাসায় আহত প্রেমিকরা হাতে অ্যালকোহল আর নিকোটিনের ধোঁয়া বাতাসে উড়িয়ে বলে “ভালবাসা অন্ধ”
৩. কর্পোরেট ভালবাসাঃ কর্পোরেট ভালবাসা নামক বস্তু অতীতে ছিল না, এটি আমাদের বর্তমান জেনারেশনের আবিষ্কার। আজ চারদিকে ৯০% কর্পোরেট ভালবাসার ছড়াছড়ি। যেখানে দেখা যায় একটা ছেলের কয়েকটা গার্লফ্রেন্ড আর একটি মেয়ের কয়েকটি বয়ফ্রেন্ড।
সামাজিক সাইট গুলোর মাধ্যমে (বিশেষ করে ফেসবুক) এই টাইপের ভালবাসা দিন দিন পারমানবিক বোমার মত বিস্ফোরণ হচ্ছে। বর্তমানে অধিকাংশ ছেলে মেয়েরা মনে করে কয়েক ডজন জিএফ/বিএফ থাকা মানে সেলেব্রিটি, প্লে বয়, প্লে গার্ল।
বন্ধুরা মিলে প্রতিযোগিতায় নামে দিনে কে কয়টাকে পটাতে পারে।
আর আশ্চর্য হলেও সত্যি এদের স্বীকার হয় ভালো ছেলে মেয়ে গুলো, যারা সত্যিকারের ভালবাসায় আশায় থাকে। কিন্তু কর্পোরেট ভালবাসার স্বীকার হয়ে পৃথিবীর সব ছেলে/মেয়েকে একরকম মনে করে।
অনেক সময় দেখা যায়, যারা কর্পোরেট ভালবাসার স্বীকার তারাই আবার নিজেরা প্লে বয়/ প্লে গার্ল হয়ে বাকিদের ছেকা দিচ্ছে। আর তাদের মূলমন্ত্র হল, বিখ্যাত এক প্লে বয়ের বানী, “যদি কোন ছেলে/মেয়ে তোমাকে ধোঁকা দিয়ে আঘাত করে, তাহলে সেই আঘাত সারানোর জন্য মলম হবে বাকি ছেলে/মেয়ে, যাদের তুমি ধোঁকা দিবে”
ফলশ্রুতিতে আমাদের চারপাশে আজ কর্পোরেট ভালবাসা দিন দিন বেড়ে চলেছে, হয়তো কিয়ামতের আগে কখনো থামবে না।
এবার আসুন সবচেয়ে মধুর, সর্বশ্রেষ্ঠ ভালবাসা পবিত্র ভালবাসা সম্পর্কে জেনে নিই।
পবিত্র ভালবাসাঃ এটি এমন এক ভালবাসা যার সঠিক অর্থ কেউ বলতে পারবে না।
এটি এমন এক ভালবাসা যাতে থাকেনা কোন দৈহিক চাওয়া, থাকেনা কোন অবিশ্বাস, থাকেনা কোন সন্দেহ। থাকে শুধু নীরব কিছু অভিমান, মিষ্টি ঝগড়া আর অফুরন্ত ভালবাসা।
পবিত্র ভালবাসার সঠিক অর্থ লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়, এটি শুধু পবিত্র মন দিয়ে আপনি অনুভব করতে পারবেন।
কোন এক বৃষ্টি ভেজা দিনে বৃষ্টিতে ভিজে প্রিয় মানুষটির হাতে হাত রেখে কিছুটা পথ চলার সময় আপনি পবিত্র ভালবাসার অনুভূতি পাবেন।
কোন এক ক্লান্ত বিকেলে যখন আপনার প্রিয় মানুষটি কাঁধে মাথা রাখবে তখন আপনি পবিত্র ভালবাসার অনুভূতি পাবেন।
আবার কোন এক জোছনা রাতে যখন আপনার প্রিয়তমার জন্য গীটারে সুর তুলবেন তখন তার মুখের মিষ্টি হাসি দেখে আপনি পবিত্র ভালবাসার অনুভূতি পাবেন।
পবিত্র ভালবাসার অনুভূতি ছড়িয়ে আছে আমাদের চারপাশে, ছড়িয়ে আছে আমাদের ভালবাসার মানুষদের ঘিরে। পবিত্র ভালবাসার ওয়ারেন্টি জিএফ/বিএফ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি এমন এক ভালবাসার বন্ধন যা প্রিয় মানুষটির সাথে বাঁধা যায়, যা মৃত্যুর পরও টিকে থাকে। এই ভালবাসার শুরু আছে শেষ নেই।
পবিত্র ভালবাসা খুঁজতে হয়না, সঠিক সময়ে সবার জীবনে আসে, আর তা কখনো হারিয়ে যায়না, যা হারিয়ে যায় তা কখনো পবিত্র ভালবাসা নয়।
পবিত্র ভালবাসার আগে হয়তো কর্পোরেট ভালবাসা/অন্ধ ভালবাসা এসে আমাদের জীবনটাকে উলটপালট করে দিতে পারে, কিন্তু জীবনের সাথে হেরে গেলে চলবে না, নিজেকে পবিত্র রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
পবিত্র মনে অপেক্ষা করতে থাকুন, সঠিক সময়ে পবিত্র ভালবাসা, আর ভালবাসার মানুষটি আপনার জীবনে আসবে।
উপরের লেখাগুলো কোন বাস্তব ঘটনার প্রতিফলন নয়, শুধুমাত্র আমার কল্পনা জগতের ভাবনা। (নাহিদ)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৪৬