✎ ভালোবাসার মানে জানতে চেয়েছিলাম একই পৃথিবীর ভিন্ন চরিত্রের মানুষের কাছে। ভালোবাসা সম্পর্কে তাদের উত্তর........
১. ভালোবাসা হল, মনের অনুভূতির ব্যাপার।
২. ভালোবাসা বলে কিছু নেই, সব পাগলের প্রলাপ।
৩. ভাই, প্রেম করার চেয়ে মুরগী পালা ঢের ভালো ( মানুষ এটা কেন বলে বুঝিনা)
৪. ভালোবাসা সেটা আবার কি? খায় নাকি মাথায় দেয়?
৫. ভালোবাসা অন্ধ, ভালোবাসা পাপ, ভালোবাসা পীড়াদায়ক।
৬. ভালোবাসা মানে হল টাইম পাস, পার্ক ডেটিং, তারপর রুম ডেটিং। ইত্যাদি।
.
এই হল মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের মন্তব্য, এবার আমি আমার কথায় আসি,
.
✎ আল্লাহ্ তায়ালা সর্বপ্রথম আমাদের আদিপিতা হযরত আদম আঃ কে সৃষ্টি করলেন। তখন সমস্ত সৃষ্টিকুলে তিনি ছাড়া আর কোন মানুষ ছিলনা। আদম আঃ যখন একাকী অনুভব করতে লাগলেন, তখন আল্লাহ্ তায়ালা উনার সহধর্মিণী হিসেবে মা হাওয়া আঃ কে সৃষ্টি করলেন। আদম আঃ ভালোবাসায় আকৃষ্ট হয়ে যখন মা হাওয়া (আঃ) কে ছুঁতে গেলেন তখন আল্লাহ্ উনাকে বারণ করলেন এই বলে মোহরানা আদায় করা ব্যতিত ছোঁয়া অবৈধ। অতঃপর আল্লাহ্র আদেশে উনি দরূদ শরীফ পাঠ করে মোহরানা আদায় করে নেন।
.
✎ মানবজাতি সৃষ্টির পূর্ব থেকেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি একে অপরের বিশেষ আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়, আর এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের বর্তমান যুগে যেভাবে একে অপরের প্রতি লোলুপ আকর্ষণ প্রকাশ করা হচ্ছে সেগুলো কি বৈধ? উপরের ঘটনাটি আমাদের সবার কম-বেশ জানা। ঘটনাটি বলার কারণ হল, আল্লাহ্ তায়ালা আদম আঃ কে মোহরানা আদায়ের পূর্ব পর্যন্ত ছোঁয়ার অনুমতি দেননি, আমাদের মোহরানা হল বিয়ের সময় যেটা ধার্য করা হয় সেটা, তারমানে উপরের ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বিয়ের আগ পর্যন্ত ছেলে-মেয়ের সকল প্রকার মেলামেশা হারাম।
.
✎ এখন আমাদের বর্তমান যুগের রিলেশনশিপের কথায় আসি। মানবজাতি সৃষ্টির পর শয়তান নামক ইবলিশ আমাদেরকে বিপথে পরিচালিত করার জন্য নানা রকমের ফন্দি করে আসছে। আজকের যুগের ছেলে-মেয়েরা সেই ছোট বেলা থেকেই আলমগির-শাবানা, লাইলি-মজনু, শাহজাহান-মমতাজ এদের প্রেম কাহিনী শুনে আসছে, আর টিভিতে রোমান্টিক নাটক, মুভি দেখে আসছে। এসব দেখতে দেখতে ঐ শিশুটির মনে কারো ভালোবাসা পাওয়ার তীব্র ইচ্ছার বীজ বপন শুরু হয়ে যায়। আর সেই বীজ অঙ্কুরোদগমের পিছনে শিশুটির বড় ভাই/আপু/কাজিন এরা বিশেষ ভুমিকা পালন করে। অনেকে আছে ডেটিংয়ে ছোট ভাই বোনকে নিয়ে যায়। তাদের ডেটিং ও রাতজেগে ফোনে কথাবলার স্টাইল দেখে শিশুটির সুপ্ত মনে ভালোবাসার চারা গজাতে শুরু করে। বোঝ হওয়ার পর মেয়েটি অনেক প্রপোজ পায়, আর ছেলেটি প্রপোজ করে। তারপর রোমান্টিক কবিতা, রোমান্টিক গল্প রোমান্টিক নাটক, রোমান্টিক ছবি যখন ঐ সাবালক বাচ্চাটি দেখে তখন তার মনে বিশেষ কোন একটা মানুষের ভালোবাসা পাবার তীব্র ইচ্ছে জন্মায়। আর সে ইচ্ছে থেকেই ছেলেটি/মেয়েটি ১৪-১৬ বছরের মধ্যেই আবেগের বশবর্তী হয়ে রিলেশনে জড়িয়ে পড়ে। সাধারণত ১৩ বছরের পর থেকেই বায়োসন্ধিকাল শুরু হয়, এসময়ের ছেলেমেয়েরা চোখের সামনে যা ভাললাগে তাই করে, কেউ রিলেশনে জড়িয়ে পড়ে, কেউ নতুন সিগারেট খাওয়া শিখে আর কেউবা ১৮+ পত্রিকা পড়া শুরু করে। সঠিক দিক-নির্দেশনার অভাব আর সঙ্গদোষের কারণে এমনটি হয়। যার ফলে তারাই একসময় পত্রিকার সুইসাইড/ধর্ষণ/মার্ডারের হেডলাইন হয়।
.
✎ আমাদের এই সময়টার যত প্রবলেম সবগুলোই রিলেশনজনিত প্রবলেম। ক্লাসের ভালো ছাত্র যার হাতে একসময় ৫ ইঞ্চির কলম শোভা পেতো, প্রেমে বিফল হয়ে আজ তার হাতে ৩ ইঞ্চির সিগারেট। সবসময় হাসিখুশি চঞ্চল মেয়েটি আজ চুপচাপ স্বভাবের, যার কাছে রাত মানে ছিল সুন্দর স্বপ্ন নিয়ে ঘুমানো, আজ তার কাছে রাত মানে বালিশকে সিক্ত করে তোলা। অবুঝ বয়সে, ভুল সময়ে, ভুল মানুষের সাথে রিলেশনে পড়ে অনেকে সুইসাইড করছে, অনেকে নিজের জীবনটাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে, আর অনেকে বিএফ বা তার বন্ধুদের সাথে প্রতারণার স্বীকার হয়ে হাঁটছে নিষিদ্ধ কোন পল্লীতে।
.
✎আমাদের আদিপিতার ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে যদি বলি, "কি দরকার বিয়ের আগে রিলেশনে জড়ানোর? কি দরকার প্রেম করার? আরে প্রেম যার সাথেই করোনা কেন, বিয়ে তার সাথেই হবে যার সাথে আল্লাহ ঠিক করে রেখেছেন, সুতরাং কাউকে আগে আগে ভালবেসে কষ্ট পেয়ে/কাউকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ? ভালো যখন এতই বাসতে ইচ্ছে করে তখন বিয়ের পর নিজের স্বামীকে/স্ত্রীকে বাসো, সেটাই হবে সত্যিকারের পবিত্র ভালবাসা। যে ভালবাসার ওয়ারেন্টি জিএফ/বিএফ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি এমন এক ভালবাসার বন্ধন যা প্রিয় মানুষটির সাথে বাঁধা যায়, যা মৃত্যুর পরও টিকে থাকে। এই ভালবাসার শুরু আছে শেষ নেই।"
তখন বিদ্রোহী রোডসাইড রোমিও-জুলিয়েট তীব্রভাবে কমেন্টে নিন্দা জানিয়ে বলবেন, "ভালোবাসা মনের অনুভূতির ব্যাপার, কে কাকে কখন ভালোবাসে তা কেউ বলতে পারবেনা। ভালোবাসা হয়ে যায় হঠাৎ, এসব নীতিকথা থামান, আপনি প্রেম করতে পারেন না বলে আমাদের নিষেধ করছেন। প্রেম করে ছেকা খেয়েছেন" ইত্যাদি।
.
✔আমি কাউকে প্রেম করতে নিষেধ করিনি, প্রেম করার পর কার কেমন পরিণতি হয় সেটা আসেপাশে চোখ বুলালেই বুঝা যায়, প্রেম করতে ইচ্ছে হয়? হে প্রেম করো, তবে অনিশ্চিত পরিণতির জন্য তৈরি থেকো। আর যাই করোনা কেন, কখনো সুইসাইড করার কথা চিন্তা করিও না। সুইসাইড কোন ভালো সমাধান নয়, এই মহাপাপ করার আগে নিজের বাবা-মার কথা চিন্তা করিও অন্তত একবার। আরে, মন তো কত কিছুই করতে চায়, মন ডানা মেলে আকাশে উড়তে চায়, রাজা হতে চায় আরও কত কি? তাই বলে কি মন যা চায় তাই করতে হবে?
.
✎ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই ভালোবাসা নামক অদৃশ্য বস্তুর বিচরণ, কবি-সাহিত্যিকদের হাতে সেই ভালোবাসা পূর্ণতা লাভ করার পর, রোমান্টিক মুভি আর নাটকের মাধ্যমে আমাদের অবুঝ মনে ভালোই বংশবিস্তার করছে।
.
✔নিজের মনের আবেগকে কন্ট্রোল করতে শিখো, তাহলে তুমি, তোমার পরিবার আর অন্য কেউ কষ্ট পাবেনা। আবেগ দ্বারা নয় বন্ধু, বিবেগ দ্বারা সিদ্ধান্ত নিতে শিখো। আর একটি কথা মনে রাখিও, প্রেম যার সাথেই করোনা কেন, বিয়ে তার সাথেই হবে যার সাথে আল্লাহ ঠিক করে রেখেছেন। ভালোবাসা নামক সম্পর্কের শুরু আমরা নিজেরা পছন্দ করে করি, আর প্রায়ই সঠিক মানুষ চিনতে ভুল করি। আর বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্কের শুরু করেন আল্লাহতায়ালা নিজে, আর তিনি যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন, আর তাইতো সেই সম্পর্ক স্থায়ী হয়। কাউকে ভালবাসতে খুব বেশী ইচ্ছে করে? তাহলে নিজের পরিবারকে ভালোবাসো, বিয়ের পর নিজের লাইফপার্টনারকে ভালোবাসো। সেটাই হবে সত্যিকারের পবিত্র ভালোবাসা।
===============================
ツ লিখাঃ Nahid Hossain Nhd (Match Maker)
.
[ BSPI Polytechnic 47 ET ]