প্রেম-ভালবাসা। অনেক মধুর একটা শব্দ, যখন যার জীবনে আসে তার জীবন পাল্টে দেয়। নিহাদ নামের ছেলেটির জীবনকে একেকজনের ভালবাসা একেকরকম করে পাল্টে দিয়েছে, নিহাদের জীবনে ভালোবাসা অনেকবার এসেছে অনেকটা একতরফা ভালবাসা/ভালোলাগা।
সত্যিকারের ভালোবাসা নাকি জীবনে একবার আসে আর সেটা কখনো হারিয়ে যায়না, আজ পর্যন্ত সেই ভালবাসার দেখা পায়নি। তবে নিহাদের ক্ষেত্রে কি হয়েছিল জানিনা, সেগুলো কি ভালবাসা ছিল, নাকি আবেগ? আমি জানিনা। নিজের অজান্তে সে বার বার নতুন করে ইন এ রিলেশনশিপ জড়ায়, আর নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। ঘটনার শুরু ২০০৩ সাল থেকে,
.
সাল ২০০৩। নিহাদ ক্লাস থ্রিতে পড়ে। সর্বপ্রথম যে মেয়েটিকে ভালো লাগে তার নাম “রোদেলা”।রোদেলা ওদের ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিল। নিহাদের রোল ছিল তখন ৬ । একবার মেম “সমাজ” বই থেকে একটা প্রশ্ন লিখতে দেন, সবার আগে লিখে খাতাটা জমা দেয় নিহাদ। পুরো ক্লাসে একমাত্র সে ছাড়া আর কেউ ভালভাবে লিখতে পারেনি এমনকি রোদেলাও না। মেম যখন লেখার প্রশংসা করছিলেন তখন রোদেলা খাতাটা মেডামের কাছ থেকে নিয়ে নিহাদের কাছে আসে, আর চোখ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কোথা থেকে লিখেছো উত্তরটা, এই উত্তর তো নোটে নেই।“ (তখন সবাই উচ্চ নম্বরের সিঁড়ি নামক নোট বই পড়ত)
.
প্রাইমারীতে থাকাকালীন নিহাদকে নোট কিনে দেয়া হয়নি যাতে নির্ভরশীল হয়ে না যায়। তখন তার মা নোট করে দিতো। নিহাদ তার নোট খাতাটা বের করে বলল, এই যে এখান থেকে লিখেছি, আমার মা লিখে দিয়েছেন”
.
এর আগে তাদের কথা হয়নি, এর ঐদিন ই ছিল ওর সাথে নিহাদের প্রথম ও শেষ কথা। তারপর থেকে রোদেলাকে নিহাদের ভালো লেগে যায়, ওর অবাক চাহনি নিহাদকে মুগ্ধ করে। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে রোদেলাকে মাঝে মাঝে দেখতো নিহাদ। এই ভালোলাগার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে রিয়াজ ভাইয়ের "মনের মাঝে তুমি" ছবিটা।
.
►ফলাফলঃ রোদেলা মেয়েটি নিহাদের জীবনে ভালোলাগা নামক অধ্যায় শুরু করে।
.
সাল ২০০৪। নিহাদ ক্লাস ফোরে, রোল এখন ২, ছেলেদের ক্যাপ্টেন। রোল ১ ছিল রেশমা আপার, উনি সবার বড় ছিলেন। উনি থাকা অবস্থায় হাজার চেষ্টা করেও নিহাদ ১ হতে পারেনি, উনার হাতের লেখা খুব সুন্দর ছিল তো তাই। বছরের মাঝামাঝি সময়ে “নউমি” নামের একটা মেয়ে ভর্তি হয়, তখন সারাদেশে “রিয়াজ” ভাইয়ের “মনের মাঝে তুমি” ছবি চলছিল। ঐ ছবিতে অভিনয় করা “আনু” নামের ছোট মেয়েটির মত অবিকল দেখতে ছিল নউমি। ওকে দেখামাত্র ভালো লেগে যায় নিহাদের। ওর “কাওসার” নামে এক কাজিন ছিল, কাওসার যখন ওর সাথে কথা বলত তখন খুব রাগ লাগতো নিহাদের।
একবার ক্লাসে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কাওসারকে চেপে ধরে নিহাদ। আর বেচারা চিৎকার দিয়ে উঠে, তখন “শামছুন নাহার” মেমের ক্লাস চলছিল। মেম হোমওয়ার্ক দেখছিলেন, চিৎকার শুনে তাদের দিকে তাকান, তারপর কাওসারের মুখে নালিশ শুনে সেদিন নিহাদকে অনেক ঝেড়েছিলেন। সেদিন বাড়িতে এসে নউমিকে উদ্দেশ্য করে একটা চিঠি লিখেছো নিহাদ, চিঠিটার সারমর্ম ছিল এরকমঃ-
“নউমি তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না, আমাদের মাঝে যে আসবে তাকে শেষ করে দিব, কাওসারকেও ছাড়বোনা, দরকার হলে ওকে মেরে জেলে যাব”।
বার্ষিক পরীক্ষা দেয়ার পর নউমি চলে যায়। চিঠিটা নউমিকে দেয়া হয়নি, এত পিচ্চি সময়ে কার এত সাহস চিঠি দেয়ার।
.
►ফলাফলঃ নউমিকে দেখার পর ভালোলাগাটা আরেকটু গভীর হয়, আর জীবনে প্রথম চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা হয় নিহাদের।
.
ছোটবেলা থেকেই নিহাদ দেখে আসছে কোন এক অজানা কারণে মেয়েরা তার প্রতি খুব আগ্রহ দেখায়। নিহাদও ব্যাপারগুলো খুব এঞ্জয় করতো, আর করবেই বা না কেন? কয়জনের এমন কপাল হয়? তারই কয়েকটা ঘটনা বলি,
.
এটি ২০০৫ সালের ঘটনা। প্রথম সাময়িক থেকে বার্ষিক পর্যন্ত একই রুমে ক্লাস ফোরের একটা হিন্দু মেয়ের পিছনে নিহাদের সিট পড়েছিল। শুরু থেকেই মেয়েটা নিহাদের সাথে কথা বলতে চাইতো, আর প্রায়ই বলতো, “আপনি কি চোখে কাজল দেন? আপনার চোখগুলো অনেক সুন্দর”
নিহাদ জবাবে বলতো, “নাহ দেইনা। আমার চোখ এমনি”
.
মেয়েটি আরও কথা বলতে চাইতো, কিন্তু নিহাদ আর পাত্তা দিতোনা দেখে ওর হাসিমাখা মুখটা কালো করে নিহাদের দিকে তাকিয়ে থাকতো।
.
►ফলাফলঃ মেয়েরা কিভাবে আগ্রহ প্রকাশ করে, আর অভিমান করলে কি করে সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিহাদ।
.
সাল ২০০৫। নিহাদের রোল যথারীতি ২। ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিল বিধায় কিছু মেয়ে এমনিতেই ফিদা ছিল, কিন্তু সোনিয়া নামের মেয়েটা মনে হয় একটু বেশীই ছিল। মেয়েটি ক্লাসে সারাক্ষণ নিহাদকে ফলো করতো, ফলো করার তীব্রতা এত বেশি ছিল যে নিহাদ পুরো বিরক্ত হয়ে যেতো যেমনঃ নিহাদ ক্লাসে বসে কিছু লিখছে, সে দেখতো সোনিয়া ও লিখছে, নিহাদ পাশের বন্ধুর সাথে কথা বলছে, সোনিয়াও কথা বলছে তার বান্ধবীর সাথে। সবসময় নিহাদের চোখের সামনের বেঞ্চটাতে বসত, তাই তাকে ফলো করার ব্যাপারটা পুরো বুঝতে পারতো। এভাবেই চলছিল কোনদিন কথা হয়নি।
.
একদিন নিহাদ তার গনিত বইয়ের ভেতর একটা চিরকুট পায়। তাতে লেখা ছিল, “নিহাদ” আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি”। কোন নাম লেখা ছিল না তাই সে বুঝতে পারেনি কে দিয়েছে। একদিন বিকেলের ঘটনা নিহাদ আর তার কাজিনরা মিলে মাঠে “বউ চি” খেলছে, হঠাৎ সোনিয়াকে তাদের দিকে আসতে দেখলো। সোনিয়া তার কাজিন পাপিয়ার সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছিল। হঠাৎ নিহাদ হাতে একটা জুতা নিয়ে “তুই এখানেও এসেছিস?” চিৎকার করে বলতে বলতে সোনিয়াকে ধাওয়া করে, একসময় জুতা ছুঁড়ে মারলো, জুতাটা ওর পায়ে গিয়ে লাগল। মেয়েটি সে যাত্রা দৌড়ে পালালো।
ঐদিকে পাপিয়া তার পিঠে সজোরে থাপ্পড় দিয়ে বলল, “শয়তান, মেয়েটা তোকে একটা কথা বলতে আসছিল, আর তুই?”
নিহাদ বললাম, “এর জ্বালায় আমি ক্লাসে শান্তি পাইনা” সারাক্ষণ আমাকে ভেঙ্গায়।
.
কিছুদিন পর গনিত বইয়ের ভিতর আরেকটা নামবিহীন চিরকুট পেলো। তাতে লিখা ছিল, “নিহাদ আমি এতদিন তোমার সাথে যা যা করেছি তার জন্য দুঃখিত”।
পরে নিহাদ একসময় পাপিয়ার কাছ থেকে জানতে পারে চিরকুট গুলো সোনিয়ার, আর পাপিয়ার মাধ্যমে সেগুলো ওর কাছে পাঠাতো। নিহাদ জানেনা সোনিয়া নামের মেয়েটা আজ কোথায় আছে। সেদিনের ছেলেমানুষির কথা মনে পড়লে নিজের অজান্তে মুচকি হাসি ফুটে উঠে ঠোঁটের কোণে।
.
►ফলাফলঃ সোনিয়ার হাসিটা অনেক সুন্দর ছিল। তারপর থেকে সুন্দর হাসি চেনার অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিহাদ।
.
আজ পর্যন্ত যে সকল মেয়ে নিহাদের জীবনে এসেছে তারা প্রত্যেকেই আশীর্বাদ ছিল। এদের মধ্যে কেউ কবিতা প্রতিভার কারণ, কেউ শিল্পী প্রতিভার কারণ, আবার কেউবা সাহিত্যিক প্রতিভার। এই ছিল নিহাদের প্রাইমারী জীবনের ঘটনা। পাঠকদের সাড়া পেলে হাইস্কুল ও কলেজ জীবনের ঘটনা শেয়ার করবো।
.
===================================================
ツ লিখাঃ Nahid Hossain Nhd
[ BSPI Polytechnic 47 ET ]