প্রিয় বন্ধুটিকে মন খারাপ করে থাকতে দেখে ডেভিড বলল,
-কিরে, মন খারাপ করে আছিস কেন?
-ফ্যামিলিতে বাবা-মার ঝগড়া, অশান্তি, আর এদিকে সেলিনার সাথেও ব্রেকআপ হওয়ার মত অবস্থা ।
-ওহ! এই ব্যাপার। (একটা সিগারেট এগিয়ে দিয়ে) এই নে, একটানে সব টেনশন শেষ হয়ে যাবে ।
-সত্যি!!
-হে যত টানবি তত আরাম পাবি ।
..
প্রথমে সিগারেট, তারপর ধীরে ধীরে গাঁজা, মদ, ইয়াবা অন্যান্য মাদকদ্রব্য সেবন করা শুরু করে ছেলেটি । তারপর সময়ের স্রোতে ডেভিডের মত বন্ধুরা হারিয়ে যায় একদিন তবে মরণব্যাধি পিছু ছাড়েনা ।
বন্ধুরা, সিগারেট হল নেশাজগতে প্রবেশের টিকিট । সিগারেটের প্রতিটি টান কিভাবে যে তোমার আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারবে না । আজকাল সিগারেট মানে ফ্যাশন । সিগারেট মানে পুরুষত্বের প্রতীক । ছেলেদের হোস্টেলের সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে দরজা-জানালার ফাঁক দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়, আর ইয়াবা তো ওষুধের মত যেখানে-সেখানে পাওয়া যাচ্ছে । আর আমাদের তরুণ সমাজ যারা কিনা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তারা নিজেদের জীবনের আলো অন্ধকারে ঢেকে ফেলছে ।
ছেলেদের রুমের টেবিলে বই-খাতার বদলে শোভা পায় সিগারেটের প্যাকেট আর অ্যাশ ট্রে, ময়লার ঝুড়িতে ময়লার বদলে সিগারেটের প্যাকেটে ভরতি থাকে । এখন আপনি যদি ওদের কিছু বোঝাতে যান, তাহলে উল্টো ওরা আপনাকে বুঝিয়ে দিবে । কেননা আজকাল সবাই নিজেকে এক এক বিষয়ে পি.এইচ.ডি প্রাপ্ত বিজ্ঞানী মনে করে । ওদের যুক্তি হলঃ
১. সবার সাথে মিশে থাকতে হলে একটু আধটু খেতে হয় ।
২. এক সময় তো মরে যামুই, খাইয়া না হয় মরি ।
৩. হইছে তোর আর জ্ঞান দিতে হবেনা, আমার ভালো আমি বুঝি ।
৪. সিগারেট হল পুরুষত্বের প্রতীক ।
..
হা হা সিগারেট হল পুরুষত্বের প্রতীক, কথাটি চিন্তা করলে খুব হাসি পায় আমার, কিসের পুরুষত্বের প্রতীক, যে জিনিস একটু একটু করে সব শেষ করে দিচ্ছে তা কিভাবে পুরুষত্বের প্রতীক হতে পারে বলে আমার জানা নেই । বেশীরভাগ ছেলেদের সিগারেট খাওয়া শুরু হয় বন্ধুর হাত ধরে । বন্ধু খায় বলে কি আমাকেও খেতে হবে, সে যা করে তাতেই আমাকে সাপোর্ট করতে হবে? সেও আমার মতই মানুষ, সেও ভুল করতে পারে, ভুল পথে হাঁটতে পারে, তাই বলে কি আমাকেও তার পথচলার সঙ্গি হতে হবে? আমার কি বিবেক নেই? আজ বন্ধুত্বের দোহায় দিয়ে এসব করে বেড়াচ্ছেন তাহলে শুনুন আপনাকে বলছি,
বন্ধুত্ব হল একটা পবিত্র সম্পর্ক । প্রকৃত বন্ধু হল সে যে আপনাকে ভালো পথে চলতে সাহায্য করে, যে আপনাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসে, যে আপনাকে বাঁচতে শিখায় ।
যে আপনাকে অন্ধকার পথের সন্ধান দেয় সে প্রকৃত বন্ধু নয়, সে হল ক্ষণিকের সুসময়ের সাথি । প্রয়োজন ফুরালে একদিন ঠিক চলে যাবে ।
..
বাবা-মা আপনাকে পাঠিয়েছে পড়াশুনা করে ভালো মানুষ হওয়ার জন্য । তাদের কষ্টের উপার্জনের টাকার এভাবে নেশার পিছনে নষ্ট করবেন না ।
যে মা নিজে না খেয়ে আপনার মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন, যে বাবা নিজে কিছু না কিনে আপনাকে নতুন কাপড় কিনে দিয়েছেন । তাদের এত কষ্টের টাকা নেশার পিছনে নষ্ট করতে আপনার বিবেকে বাঁধলো না? মনটা কি একটুর জন্যও নাড়া দেয়নি?
আরে ভাই সিগারেটের প্যাকেটেই তো লেখা থাকে "ধূমপান মৃত্যুর কারণ, ধূমপানে ক্যান্সার হয়"
আপনি নিজেও জানেন এটা খেলে ক্ষতি হয়, তা জানা সত্ত্বেও কেন এই মরণ বিষ খাচ্ছেন? আপনি মারা গেলে বা অল্প বয়সে অসুস্থ হয়ে পড়লে আপনার ফ্যামিলির কি হবে? আপনার মায়ের অতুলনীয় হাসির কি হবে? কখনো কি চিন্তা করেছেন?
কি সমস্যা বলুন, গার্লফ্রেন্ড জনিত প্রবলেম? সঙ্গদোষ? নাকি অন্যকিছু?
যে প্রবলেম ই হোক না কেন? বন্ধু গার্লফ্রেন্ড এসব কোন কিছুই স্থায়ী নয়, সময়ের পরিবর্তনে কত বন্ধু আসবে যাবে, আর গার্লফ্রেন্ড? নিজেকে পবিত্র রাখুন আপনার লাইফপার্টনারের জন্য যাকে আল্লাহ্তায়ালা সৃষ্টি করেছেন শুধুই আপনার জন্য ।
বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল, চলার পথে বন্ধুর দরকার হয় । তাই ভালোমানুষের সাথে বন্ধুত্ব করুন, তাদের সংস্পর্শে থাকুন, তাতে ভালো কিছু শিখতে পারবেন আর তাতে আপনারই মঙ্গল ।
..
একটা কথা মনে রাখবেন, পৃথিবীতে বাবা-মা নিজের পরিবারের চেয়ে আপন কেউ নয় । নেশা ছেড়ে দিন, নেশাখোর বন্ধু এড়িয়ে চলুন । নেশা হয়তো খানিক আনন্দ দিতে পারে, কিন্তু তার বিনিময়ে এটি আপনার মূল্যবান জীবন কেড়ে নিচ্ছে । ক্ষণিকের আনন্দ নিয়ে মরার মত বেঁচে থাকার চেয়ে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করুন, কারণ বেঁচে থাকার চেয়ে বড় কোন আনন্দ নেই ।
▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬ ▬▬▬
লিখাঃ নাহিদ হোসাইন
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৮