somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্যালেন্ট শো এর নামে ছ্যাবলামি

০৫ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ট্যালেন্ট শো এদেশে আগেও ছিলো। কিন্তু যদি বলি এখনকার ট্যালেন্ট-শোগুলোর কথা তাহলে এর সূত্র ধরতে হলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে সেই ২০০৫ সালে যখন ইন্ডিয়ান আইডলের জ্বরে কাঁপছিলো ভারত আর সেই সাথে বাংলাদেশও। তখন আমাদের উৎসাহ দেখে কে? পারলে আমরাই যেন অভিজিৎ সাওয়ান্ত, অমিত সানা, রাহুল বৈদ্য, প্রযুক্তা শুক্রেদেরকে জিতিয়ে দেই। অভিজিৎ সাওয়ান্ত ইন্ডিয়ান আইডলে প্রথম সে আসর জয় করেন আর সেই সাথে ভারত ও বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর মনে গেঁথে দেন একটা কথাই - "শো যদি করতেই হয় তবে ট্যালেন্ট শো।"

২০০৬ সাল, শুরু হলো ইন্ডিয়ান আইডলের আদলে নির্মিত বাংলাদেশে প্রথম অনুষ্ঠান "Close UP 1 - তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ"। এই অনুষ্ঠানটিও জনমনে ব্যাপক সারা ফেললো। Close UP 1 এর প্রথম সেই আসরে নোলক বাবু ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।

এরপরে পর্যায়ক্রমে ইন্ডিয়ান আইডলের আরো ২টি আসর সম্পন্ন হয়। ৪র্থটি এখন চলছে। Close UP 1 ও তার ধারা অব্যাহত রাখে। আসে সেরা কন্ঠ, তিন চাকা, ক্ষুদে গানরাজ প্রভৃতি অনুষ্ঠান।

আসুন দেখি কি সেই উপাদানসমূহ যা আজকের রিয়ালিটি শো তথা ট্যালেন্ট শোগুলোকে ছ্যাবলামির পর্যায়ে উন্নীত করেছে:

১. এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিভা অন্বেশন কতোটুকু হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে সবারই। কারন অতীতে ও এখনও দেখা যাচ্ছে যে মানুষ প্রতিভা না দেখে আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোট দিচ্ছে।

২. এরকম অনুষ্ঠানে আসার পর সকল প্রতিযোগী সমান। তাদের বিচার হওয়ার কথা তাদের গান দিয়ে। কিন্তু তা সত্বেও তাদের ব্যাক্তিগত জীবনকে অনুষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। গলার নৈপুণ্য না দেখে আর ঘরের বেঁড়া ফুটা, কার বাড়ির চাল নাই, কে এতিম, কে মাটির হাঁড়িতে ভাত খায়, কে রিকশা চালায় এসব দেখে জনগণ ভোট করছে এবং এখানেই এখনকার প্রতিভা অন্বেশন অনুষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্যটা লুকিয়ে। তাদের প্রতিযোগীদের সম্পর্কে এসব বিষয়াদি টিভিতে প্রচার করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর তাদের অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে চান। আর এতে লাভও হয় বটে। কারন যেমনটা আমরা জানি, আমাদের দেশের মানুষ আবেগ তাড়িত হয়ে কাজ করে। আর মোবাইল ফোনও এখন খুবই সহজলভ্য একটি বস্তু.......

৩. একই নাম্বার থেকে অনধিক ২০টি পর্যন্ত SMS!!! আবার কয়েকটি অনুষ্ঠানে দেখি বলছে যেকোন নাম্বার থেকে যতোবার খুশি SMS করতে!!! এই না হলে SMS বাণিজ্য। অঙ্কটা খুবই সরল হয়ে গিয়েছে। তোমরা অনুষ্ঠান বানাও, প্রতিভা আসুক না আসুক, যোগ্য প্রতিযোগী নির্বাচিত হোক আর নাই হোক আমরা মোবাইল কোম্পানীগুলো টাকা দিয়ে যাবো। আমরা পাবো SMS, আর তোমরা অনুষ্ঠান চালিয়ে যাবার টাকা।

৪. অনেক অনুষ্ঠানেই দেখা যাচ্ছে অনেক গণ্যমান্য বিচারকরাও ভুলে যাচ্ছেন যে তারা অনুষ্ঠানে বিচারক হয়ে এসছেন। তিনি একজন প্রতিযোগীর প্রশংসা করতে পারেন, তাকে উৎসাহ দিতে পারেন, কিন্তু ছ্যাবলামি মোটেও আশা করা যায় না। আর তাই তিনি চাইলেও পারেন না প্রতিযোগীর প্রশংসা করতে করতে তার কাছে নিজেকে নগণ্য দেখাতে। তাহলে আর প্রতিযোগী আর বিচারকের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায় থাকলো?

৫. ভারতীয় কিছু প্রতিভা অন্বেশন অনুষ্ঠানের অনুকরনে ইদানিং প্রতিযোগী আর বিচারকদের মধ্যে কৃত্তিম বাক-বিতন্ডার আয়োজন করা হচ্ছে, কথা কাটাকাটি দেখানো হচ্ছে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে একাধিক প্রতিযোগীর মধ্যেও অসুস্থ মানসিকতা দেখানো হচ্ছে। খুব পরিষ্কারভাবেই এটি অনুষ্ঠানের দর্শক ও জনপ্রিয়তা বাড়ানোর একটি কৌশল।

৬. উপরে অনুষ্ঠানগুলোতে যে আবেগজড়ানো পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলেছিলাম, তা এখন আরো ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। সম্প্রতি দেখলাম একটি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিযোগীর বাবা-মাদেরকে এনে একে একে তাদের পরিবারের দুঃখবিজড়িত গল্প শোনানো হচ্ছে। এটিও ভারতীয় প্রতিভা অন্বেশন অনুষ্ঠানগুলোর অনুকরনেই।

৭. SMS ভোটিংয়ের পুরো ব্যাপারটায় কোন মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেই। তাই এর স্বচ্ছতা খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ। অনেকগুলো চ্যানেলের বিরুদ্ধে তাদের ইচ্ছানুযায়ী প্রতিযোগীদেরকে নির্বাচিত করার অভিযোগ আছে।

৮. প্রতি বছর বছর এ ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের কি অর্থ থাকতে পারে? ২ বা ৩ বছরে একবার আয়োজন বরলে তাও না হয় বুঝতাম। এতো প্রতিভা খুঁজে বের করে কি লাভ যদি অনুষ্ঠানের পর তাদের কোন কর্মসংস্থান না হয়? ক'জন প্রতিভাকে মিডিয়া তার বুকে ঠাঁই দেবে? ভারতীয় ট্যালেন্ট শোগুলোর প্রতি যদি খেয়াল করেন তবে দেখবেন যে খুব অল্প সংখ্যক প্রতিযোগী বাদে প্রায় সবাই শো-বিজে তাদের স্থান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন আবার বিভিন্ন চ্যানেলে প্রথম দিককার ট্যালেন্ট শো এর প্রতিযোগীদের নিয়ে নতুন করে প্রতিভা অন্বেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাস্যকরই বটে! যদি খুব একটা ভুল না বলে থাকি তবে অচিরে আমাদের দেশেও এমনটাই শুরু হয়ে যাবে।

৯. খেয়াল করে দেখবেন, প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানের ১ম আসরটি সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছিলো। কিন্তু তাদের জারিজুরি শুরু হয়েছে ২য় আসর থেকে।

১০. একটা অনুষ্ঠানের নাম না বলে পারলাম না। একুশে টেলিভিশনে প্রচারিত ধুম-তানা না ফানা কি যেন একটা। আপনার কি কখনো এই জঘণ্যতম অনুষ্ঠানটি দেখবার দুর্ভাগ্য হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে, তবে আর চেষ্টাও করবেন না যেন ভুলেও। উক্ত অনুষ্ঠানে কোমলমতি শিশুদেরকে দিয়ে যেসব অশ্লীল (বাচ্চাদের অনুষ্ঠানের সাথে অশ্লীল শব্দটি একেবারেই বেমানান, কিন্তু অনুষ্ঠানটি এতোটাই জঘণ্য) নাচের অঙ্গ-ভঙ্গি করানো হচ্ছে তা কাউকেই স্বস্তি দেবে না। কি করে এরকম একটি অনুষ্ঠান একুশে টেলিভিশনের মতো একটি চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে তা আমার অন্তত জানা নেই।

১১. অনুষ্ঠানগুলোতে বিচারকগণ কোন কোন ক্ষেত্রে এমন সব প্রতিযোগীদের প্রশংসা করছেন, আমি নিশ্চিৎ ক্যামেরার আড়ালে তারা সেটা ভাবলে লজ্জা পাবেন।

এগুলো বাদেও আরো অনেক কারন আছে যা আজকের তথাকথিত প্রতিভা অন্বেশন অনুষ্ঠানগুলোকে মানহীন, জঘণ্য ও SMS বাণিজ্যমূলক অনুষ্ঠানে পরিণত করেছে। এসবের কোনটাই আমাদের কাম্য নয়। এ দেশে প্রতিভার অভাব নেই, কিন্তু তাদের নিয়ে যে SMS বানিজ্য করা হচ্ছে তা একধরনের কারচুপির শামিল, হয়তো একপ্রকার দুর্নীতিও।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:১৫
৪২টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×