অপরাধ গল্প "সুখ"
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ছেলেটির নাম কালাম। বয়স কত? খুব বেশি হলে বার কি তের। পেশায় টোকাই। প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে বস্তা ভরাই তার কাজ। প্রতি বস্তা বিক্রি হয় আশি থেকে নব্বই টাকায়। তা দিয়ে কোনমতে খওয়াটা চালান যায় আর কি। কালাম ঘুমায় পান্থপথের আন্ডার গ্রাউন্ড ব্রিজের পাশে। ফ্রি তে না। চাঁদা দিতে হয়। আজাকাল কোন কিছুই ফ্রি না। ঘুমও না।
কালামের মনে বেজায় দুঃখ। এভাবে বাঁচা যায় নাকি? খাওয়ার ঠিক নাই। ঘুমের ঠিক নাই। সিনেমা দেখবে তারও উপায় নাই। ইশ! যদি পকেটমার হওয়া যেত! অনেক ভাল হত। একটা দাও মারলে কয়েকদিনের জন্যে নিশ্চিন্ত। ভাল খাবার দাবারের ব্যাবস্থা করা যেত। এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ান যেত। বস্তির দিকে একটা ঝুপড়ির মত ঘরও নিশ্চয়ই ভারা নেওয়া যেত। আর যখন তখন মন চাইলেই সিনেমা দেখা যেত। হলে মান্নার নতুন একটি সিনেম এসেছে। নাম “ধর”, ডিপজলও আছে ছবিতে।ছবিটা দেখার কোন উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মান্নার সিনেমা তার খুব ভাল লাগে।
দেখতে দেখতে কালামের বয়স আঠার হয়ে গেল। এখন সে পুরদস্তুর পকেটমার। গুলিস্থানে তার রিতিমত নামডাক আছে। পুলিশ ভাইয়েরাও তাকে এক নামে চেনে। নামটা একটু আপডেটও হয়েছে “ গুল্লি কালাম” নামের শানে নযুল হল, কালাম গুল্লির মত পকেট মারতে পারে। কেউ কিছু বোঝার আগেই গুল্লির মত ফুঁস। পুলিশ অবশ্য তাকে কখনো ধরে না। কালাম নিয়মিত পুলিশকে চাঁদা দেয়। আইনের লোকের সাথে শত্রুতা করা ঠিক না।। বন্ধু বানালে অনেক ফায়দা। নামকরা পকেটমার হলে কি হবে? কালামের মনে সুখ নাই। বস্তিতে কি থাকা যায়? সারাদিন চিল্লা চিল্লি, ঘুমাইয়া কোন আরাম নাই। রাস্তার পাশের হোটেলে আর ঢুকতে মন চায় না। সবথেকে বড় কথা, এই পেশাটা আর তার ভাল লাগে না। ধরা পড়লে কঠিন মাইর খেতে হয়। মাইর হজম হতে সময় লাগে। কবে হাড্ডি গুড্ডি সব ভেঙ্গে যায়।
কালাম ভাবে, আহারে! যদি এলাকার পাতি মাস্তান হওয়া যেত। বিশাল সুখের ব্যাপার। দোকানে দোকানে ঘুরে চাঁদা তোলা। ব্যাস। আর কোন কাজ নাই। বস্তি ছেড়ে ভাল জায়গায় ভাল একটা ঘর নিশ্চয়ই নেয়া যেত।
বয়স পঁচিশ হতে না হতেই কালাম বিশাল মাস্তান হয়ে গেল। তার সামনে এলাকার লোকজনের রিতিমত হাটু কাপা শুরু হয়ে যায়। মেয়েরা দূর থেকে মাথায় কাপড় দিয়ে উলট পথ ধরে। এমন অবস্থা যে দোকানে গিয়ে চাঁদাও তুলতে হয় না। দোকানদাররা নিজেরা চাঁদা তুলে একসাথে জমা দিয়ে আশীর্বাদ নিয়ে যায়। দামি মোটর সাইকেলে করে ঘুরে বেড়ায় কালাম। ইদানিং সে হোটেল আকাশীতেও যাতায়াত করে। সেখানাকার নিশি কন্যাদের সাথে তার ভাল খাতির হয়েছে।
এতকিছুর পরেও কালামের মনে কোন সুখ নাই। সে ভাবে, আহা! কোন ভাবে যদি এলাকার কমিশনার হওয়া যেত। বিশাল সুখের ব্যাপার। পায়ের উপর পা তুলে থাকা যেত। লোকজন সম্মান করত। বিভিন্ন জায়গা থেকে দাওয়াত পাওয়া যেত। এখনকার কমিশনারের দুইটা বউ। সিনেমার নায়িকাদের মত সুন্দরী। শুধু বউ না, শালার বাইরেও চক্কর আছে। তার বউরাও নিশ্চয়ই জানে। লাভ কি? সবাই জেনেও না জানার ভান করে থাকে। সবই ক্ষমতার ব্যাপার স্যাপার।
একদিন এলাকার বর্তমান কমিশনার আততায়ীর গুলীতে মারা গেল। ভোর রাতে তার লাশ ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করা হল। পুলিশ অনেক তদন্ত করেও খুনির পাত্তা বের করতে পারল না।
কালাম খালি হাসে। তার ইদানিং হাসতে ভাল লাগে। সে জানে খুনটা কে করেছে। নতুন কমিশনারের পদে নিজেই দাড়ায়। এলাকার লোকজনের কাছে দোয়া চায়। লোকজন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে কালামকে দ্যাখে। বিপুল পরিমান ভোট দিয়ে জনগণ কালামকে জিতিয়ে দেয়। জনগণ তো অবাক, আমারা কখন ভোট দিলাম?
কালাম মন খুলে হাসে। সে জানে, সে কিভাবে জিতেছে।
বছর দুই গড়াতেই কামালের মনে দুঃখ ভর করে। ধুর! কমিশনার হয়ে লাভ কি হল? এমপি হতে পারলে ফয়দা ছিল। কমিশনারের কোন ক্ষমতাই নাই।
জাতীয় নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই বর্তমান এমপি নিজেই কালামকে এমপি পদে দাড়িয়ে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিল। এলাকার লোকজনের মাথায় তো বজ্রপাত। কালাম হাসে। সে জানে এমপি কেন রাজি হয়েছে। এও জানে এমপির ছোট মেয়েটা এখন কই? মেয়েটা দেখতে কিন্তু মাশাল্লা।
বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে কালাম এমপি হয়ে গেল। চারিদিকে তার সুখই সুখ। ক্ষমতাই ক্ষমতা। দুর্নীতি করার কত সুযোগ। যার তার গায়ে হাত দিতেও কোন বাধা নেই। কে ওকে বাঁধা দেবে? কালাম হাসে। শুধুই হাসে। কারন সে জানে কিভাবে কি করতে হয়।
বছর দুই যেতে না যেতেই কালামের মনে হয়, এমপি হয়ে লাভ কি হল? মন্ত্রী হওয়া দরকার। পাওয়ার তো মন্ত্রীদের হাতে। টিভি খবরের কাগজে মন্ত্রীদেরই তো বেশি দেখা যায়। আহারে! যদি মন্ত্রী হওয়া যেত। বিশাল সুখের ব্যাপার।
কালাম এখন মন্ত্রী। অন্য এক মন্ত্রীকে পদত্যাগ করিয়ে ওকে বসান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে ব্যাপারটি তত্ত্বাবধান করেছেন। কালামকে আর পায় কে? ক্ষমতাই ক্ষমতা। কি চাই জীবনে আর?
এতকিছুর পরেও কালামের মন খারাপ। মন্ত্রী তো ভাল জিনিস। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো আরও ভাল জিনিস। প্রধানমন্ত্রী পদটা ওকে টানে। ইশ! পুরো দেশটা হাতের মুঠোয় থাকত। কিন্তু কিভাবে কি করা যায়? আহা! প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতার কোন সীমা পরিসীমা নাই। কালামের মুখে হঠাৎ হাসি ফুটে ওঠে। কালাম জানে কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভব।
কালামের বয়স এখন চল্লিশ। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী। কত কাঠ খড় পুড়িয়ে, কত প্লান করে, কত চাল চেলে সে প্রধানমন্ত্রী হয়েছে সেটা একমাত্র সেই জানে। কত মানুষকে জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে ওর প্রধানমন্ত্রী হবার জন্যে তার ইয়াত্তা নেই।
কিন্তু লাভ কি? কালামের মন ভীষণ খারাপ। সুখের পাখিটা তাকে ধরা দেয়নি। দিন রাত কালামকে এখানে ওখানে ছুটে মরতে হয়। তার নিয়ন্ত্রণে কিছুই নেই। রাতে ঠিকমত ঘুমানোরও সুযোগ নেই তার। দেশ বিদেশের ফোন আসে। জরুরী অবস্থা দেখা দেয়। দিক দেখা। তাতে তার কি? কালামের মেজাজ খারাপ হয়। প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা বিশাল ভুল হয়ে গেছে। আহা! সেই টোকাই জীবনটা যদি ফিরে পাওয়া যেত। কত আনন্দ ছিল। খেতে কত মজা লাগত। ঘুমলে হুশ থাকত না। মান্নার সিনেমা দেখে চোখ দিয়ে পানি পড়ত। এত এত পলিটিক্সের চাপে বহু বছর সিনেমা দেখা হয় না। আহারে সুখ!! তুই কই? কিভাবে তোরে পাই? কালাম দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সুখের কাছে সে পরাজিত।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন