প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আমি অফিস শেষে বের হলাম। এর মধ্যে আমার বউ কয়েকবার ফোন দিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছে তেল শেষ হয়ে গেছে। ঘড়ির কাঁটায় নয়টার মত বাজে। সকালে আমার উপস্থিতির খাতায় লাল দাগ পরেছে দেরিতে আসার জন্যে। এরা অফিসে আসার হিসাব রাখে যাবার না। যেখানটায় বাস থামে সেখানে আরও অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। আমার মুখের সামনে দিয়ে মানুষ ভর্তি একটার পর একটা বাস চলে যাচ্ছে, দুনিয়ার ভিড় ঠেলে ওঠার উপায় নেই। ওদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাসায় বাজারও খুব একটা নেই। আমার স্ত্রী লিলি প্রতি বেলাতেই আমার সামনে ডাল ভাত দিয়ে পালিয়ে যায়। সে ভাল করেই আমার পকেটের অবস্থা জানে। বেচারি হয়তো লজ্জায় বলতে পারে না যে বাজার নেই।
আমি জলদি বাসায় ফেরার জন্যে পা চালালাম কিন্তু সারাদিনের খাটনির কারনে পা দুটো বেকে বসল। একটা রিকশা দাড় করালাম। ভাবলাম রিকশা করে বাংলামটর পর্যন্ত যাই। বাংলামটর থেকে নিশ্চয়ই বাসে ওঠা যাবে। রিকশা ওয়ালাকে ভাড়া জিজ্ঞেস করলাম, বাংলামটর পর্যন্ত কত?
রিকাশাওলা জবাব দিল, ত্রিশ টাকা।
আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মগবাজার থেকে বাংলামটর ত্রিশ টাকা? সত্যিকার ভাড়া দশ টাকা। বৃষ্টির কারনে পাঁচ টাকা বেশি নিক, কিন্তু তাই বলে তিনগুন বেশি? রিকশার চিন্তা বাদ দিয়ে আমি আবার হাঁটা শুরু করলাম। একটা সকল্প পরিবহন এর বাস আমার থেকে কিছুটা সামনে এসে দাঁড়াল। আমি দৌড় লাগালাম বাসটা ধরতে। বাসে উঠতে যাব তখন বাসের কণ্টাক্টার চেঁচিয়ে বলল, যেখানেই নামেন চল্লিশ টাকা।
আমি বললাম, ভাই ফার্মগেট নামব।
যেখানেই নামেন চল্লিশ টাকা।
আমি নেমে এলাম। মগবাজার থেকে ফার্মগেটের বাস ভাড়া পাঁচ টাকা। চল্লিশ টাকা দিয়ে যাবার প্রশ্নই ওঠে না। ভাবলাম আমার মত আর কেউ উঠবেনা। কিন্তু চল্লিশ টাকা শুনেও অনেককে উঠতে দেখলাম। আমার মেজাজটা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেল। সাধারণত আমি সিগারেট খাইনা। খেতে খারাপ কি ভাল অথবা ক্যান্সার হবে ভেবে খাইনা, তা নয়। সিগারেট বাজে খরচের তালিকায় পরে। লিলিকে বিয়ে করার পরে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু প্রচণ্ড মেজাজ খারাপের কারনে সিগারেটের নেশা পেয়ে গেল। বেনসন কিনব কিনব করেও সবথেকে সস্তা দামের চারটা সিগারেট কিনলাম।
আমরা সুযোগ পেলেই সরকারকে ঝেরে গালি দেই। বেশিরভাগ গালি দেওয়া হয় দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে। সংবাদ পত্র এবং মিডিয়ার কারনে আমারা সবাই কমবেশি সরকারের দুর্নীতির ব্যাপারটা জানি। এছাড়া প্রতিদিনের জীবনে একটু একটু করে বেঁচে থাকতে গিয়েও সেটা টের পাই। এই সমালোচনা মুলক লেখা আমি অবশ্যই সরকারের কুৎসা গাইতে লিখছি না। একটু ভেবে দেখুন একজন রিকশাওলা যখন দুর্নীতি করার সুযোগ পেল সে তখন দুই গুন পরিমান দুর্নীতি করল। একজন বাসের কণ্টাক্টার যখন দুর্নীতি করার সুযোগ পেল তখন সে পাঁচ গুন দুর্নীতি করল। এরকম আরও আরও উধাহরন আমি আপনাদের দিতে পারি।
আমার অফিসের কথাই ধরুন না? অফিসের প্রিন্টারটা উন্মুক্ত। তবে শুধু অফিসের কাজ করার জন্যে। কিন্তু আমি জানি অফিসের লোকজন ফাক পেলেই নিজের প্রিন্টাও বিনামুল্যে সেরে নেয়। হোক না সেটা তার ছোট ছেলের নোটখাতা। এরা তো বড় বড় মানুষ। আমাদের পিওনের কথা বলি। আমাদের পিওনকে কিছু বাইরে থেকে আনতে দিলে যতটা পারা যায় সে মেরে দেয়। কেউ কিছু বলেনা। কারন সবার হাড়ির খবর সে কমবেশি জানে।
প্রেমিক প্রেমিকার কথা ধরুন। একজন ছেলে। কি নাম দেয়া যায়? ধরুন অপু। অপু দুটি মেয়েকে ভালবাসে। একজনকে বেশি একজনকে কম। তার ভাষ্যমতে, একজন তার রিয়াল প্রেমিকা অন্য জন টাইম পাস। এখন মজার ব্যাপার হল অপু যাকে সত্যিকার ভালবাসে তার কাছে অপুই হচ্ছে টাইম পাস। আবার অপু যাকে টাইম পাস ভাবে তার কাছে অপু আসল প্রেমিক। কিন্তু সেই মেয়েরও নকল প্রেমিক অথাবা ১২৩৪৫... সিরিয়ালের প্রেমিক থাকাও অস্বাভাবিক নয়।
শুক্রবারের নামাজটা আমি সাধারণত মিস দেই না। জুম্মার নামাজ নিয়ে একটা ঘটনা বলি। যারা জুম্মার নামাজ পড়তে যান তারা লক্ষ্য করে দেখবেন প্রথম তিন চার কাতারে অনেক ফাঁকা থাকে। অথচ পিছনের সারিতে লোক বোঝাই। নামাজ মিস করার ভয়ে কেউ মসজিদের ছাদে কেউ রাস্তায় এমনকি কেউ কেউ সিঁড়ি এবং ওজুখানায় দাঁড়িয়ে যায়। মনে করেন, সামনের সারিতে যদি ত্রিশ জন দাড়ায় তো পিছনের সারিতে দাড়ায় পঁয়তাল্লিশ জন। সামনের সারির মুসুল্লিরা একটু জায়গা ছেড়ে দিলে পিছনের লোকজনের উপকার হয়। অন্তত প্রখর রোদে ছাদে দাড়াতে হয় না। আমি একবার লেট করে মসজিদে উপস্থিত হলাম, দেখি নামাজ শুরু হতে যাচ্ছে। সব জায়গা দখল। কি করি? সোজা ভিতরে ঢুকে গেলাম। জানতাম প্রথম তিন সারিতে ফাঁকা থাকে। তো আমি সোজা তিন নাম্বার সারির কর্নারে গিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম। সেখানে এক মুসুল্লি বিরাট এক জায়নামাজ দিয়ে অনেক জায়গা দখল করে রেখছে। আমি তাকে একটু জায়গা দিতে বিনিত অনুরোধ করলাম। সে কড়া গলায় বলল, লেট করে কেন আসছেন? জায়গা দেয়া যাবে না। যান পিছনে গিয়ে দাঁড়ান।
আমি গলা আরও নরম করে বললাম, পিছনে জায়গা নেই।
তাহলে বাসায় চলে যান। নামাজ পড়ার দরকার নেই।
প্রচণ্ড রাগে আমার মন বিষিয়ে উঠল। এরা আল্লার ঘর মসজিদেও জায়গা দখল করার চেষ্টা করে। হায় খোদা! একবার ভাবলাম বের হয়ে যাই কিন্তু পিছনের দিকের সারিতে এক লোক বেশ কষ্ট করে আমার জন্যে জায়গা করে দিল। মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়ে নামাজ শেষ করে বাড়ি ফিরলাম।
আমরা নিজেরাই যদি স্ব স্ব ক্ষেত্রে দুর্নীতি থেকে নিজেদের বিরত রাখতে না পারি তো সরকারকে গালি দেবার অধিকার আমরা রাখি না।
বি. দ্র: চিন্তা ভাবনা করে লেখা সমালোচনা এটা নয়। পরের বার আরও গুছিয়ে লিখতে চেষ্টা করব। গল্পের মত বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। সে কারনেই “আমি এবং লিলি” এই দুটি চরিত্রের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ত্যাশ্যা কথা মানে বাসি কথা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১:৪৯