somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প "পরী"

১২ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পরিচয়েই আমি মানুষকে প্রভাবিত করে ফেলতে পারি। অবশ্য সেই প্রভাব বেশিদিন টেকে না। দুদিনের মধ্যেই লোকজন বুঝে ফেলে “ মাকাল ফল”।
আমি একটা এড ফার্মে জব করি। একদিন আমাদের ডিরেক্টর রাব্বি ভাই, D.O.P( Director of Photography), আর্টিস্ট আর টিমের বাকিদের নিয়ে মিটিংয়ে বসেছেন। আমরা নতুন একটি TVC( TV commercial) নিয়ে কাজ করছিলাম। হঠাৎ রাব্বি ভাই কর্নারে একটি মেয়েকে দেখিয়ে বলে উঠলেন, এই মেয়ে কে?
আমি দেখলাম নীল রঙের ড্রেস পরা একটি মেয়ে বসা। মেয়েটি কিছু বলার আগেই আমি বললাম, বস। মেয়েটির নাম পরী। সে আমাদের একজন আর্টিস্টের সাথে এসেছে।
রাব্বি ভাই আর কথা না বাড়িয়ে মিটিং চালিয়ে গেলেন। মেয়েটা আড়চোখে আমাকে লক্ষ্য করছিল।
মিটিং শেষ হতেই মেয়েটি আমার দিকে এগিয়ে এল। আমি জানতাম আসবে। কারন অলরেডি আমি আমার জাদুর মন্ত্র পড়ে ফেলেছি। মেয়েটিকে ইমপ্রেস করার জন্যে আমি তার নাম বানিয়ে বলেছি পরী। আদৌ তার সাথে আমার কোন পরিচয় নেই।
মেয়েটি বলল, আপনি আমার নাম পরী বললেন কেন?
আমি গলা খাকারি দিয়ে পরিষ্কার করে জকঝকে উত্তর দিলাম, আপনি পরীর মত দেখতে তাই।
আপনি কোনদিন পরী দেখেছেন?
আগে দেখিনি। আজই প্রথম দেখলাম।
মেয়েটি মিষ্টি করে হাসল। তারপর হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমি রিয়া।
আমি তার হাত ধরে বললাম, আমি ইমন। এখানকার চিপ এসিস্টেণ্ট ডিরেক্টর। আপনার রিয়া নামটা সুন্দর। শুধু সুন্দর না খুবই সুন্দর। কিন্তু ধরুন আমি যদি আপনাকে পরী বলে ডাকি তাহলে কি আপনি কিছু মনে করবেন?
হ্যাঁ করব।


সেদিন রিয়ার সাথে অনেক কথা হল। সে জানাল কোন আর্টিস্টের সাথে নয় সে এসেছে আমাদের কোরিওগ্রাফার হাবিব ভাই এর সাথে। যাবার আগে আমিই উশখুশ করছিলাম তার নাম্বারটা বাগানোর জন্যে, কিন্তু আমাকে ইমপ্রেস করে সে আমার নাম্বারটাই চেয়ে নিল। বলল বাসায় গিয়ে ফোন দেবে। আমার কেন জানি মনে হল দেবেনা।


আমি ভেবেছিলাম বাসায় যেতে যেতে রিয়ার উপর থেকে আমার প্রভাব কেটে যাবে। কিন্তু আমার ধরানার বেলুনে আলপিন ফুটিয়ে পরদিন সকালেই পরী মানে রিয়া আমাকে ফোন দিল।
হ্যালো। এই আপনি ভাল আছেন?
আমি গলায় যথেষ্ট উৎসাহ ফুটিয়ে বললাম, আরে পরী যে।
আরে রাখুন আপনার পরী। বিপদে আছি উদ্ধার করুন।
কি বিপদ?
আমার মা যদি আপনাকে ফোন দেয় তাহলে বলবেন যে আপনি আমাকে ভালবাসেন। মানে আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড। ok???
মানে কি?
মানে না বুঝলেও চলবে।

মনের মধ্যে ছোট্ট একটা লাড্ডু যে ফোটেনি তা অস্বীকার করছি না। কিন্তু মূল ঘটনা অন্যরকম। রিয়ার বিয়ের জন্যে তার মা উঠে পরে লেগেছিল। আমাকে বটগাছ মানে বয়ফ্রেন্ড হিসেবে দ্বারা করিয়ে মামালা ডিসমিস করেছে আরকি। স্মার্ট গার্ল।

এরপর অনেকদিন কেটে গেছে। অফিসে বসে গাধার মত খাটছি। হঠাৎ রিয়ার ফোন। ফোনের স্ক্রিনে ওর নাম দেখেই বুকটা ধক করে ওঠে। ফোন ধরার সাথে সাথে হ্যালোর তোয়াক্কা না করে রিয়া বলে, আপনি ফ্রি আছেন?
আমিও সালমান খান এর মত ভাব নিয়ে বললাম আপনার জন্যে ফ্রি তো ক্যায়া জলচকি, সোফা, খাট হয়ে বসে আছি।
Ok Ok তাহলে এক কাজ করুন। সোজা বসুন্ধরা সিটির নয় তলায় চলে আসুন।
কেন?
প্রশ্ন করছেন কেন? এলেই তো দেখতে পাবেন।


আমিও কোন কথা না বাড়িয়ে চুলটাকে একটু ঠিকঠাক করে, জুতোয় একটু ঘসা দিয়ে, প্যান্টে একটু ঝারি মেরে বসুন্ধরা ছিটির নয় তলায় গিয়ে উপস্থিত হলাম। রিয়া ফুড কোর্টের এক কর্নারে একটা গোল টেবিল দখল করে বসেছিল। সামনে পেপসির দুটো গ্লাস। একটা খালি আর একটা খালি হতে যাচ্ছে। আমি একটা চেয়ার টান দিয়ে বসতে বসতে বললাম, তারপর পরী? হঠাৎ এই অধমকে স্মরণের কারন?
সে আমার প্রশ্নের ধারে কাছে দিয়ে না গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুরে দিল, কতক্ষণ থাকতে পারবেন?
আপনার যতক্ষণ লাগবে।
গুড। কি খাবেন?
আপনি বলেন, আপনি কি খেতে চান?”
উঁহু না। আজ আমি ডেকেছি তাই সব বিল আমার নামে যাবে। যেদিন আপনি ডাকবেন সেদিন আপনার। ok??
আমি ডাকলে আপনি আসবেন??
আমার প্রশ্নের উত্তরে সে মিষ্টি করে হাসল। আমি বুঝে গেলাম, আমার প্রভাব কেটে গেছে। এখন আমি পুরোপুরি এই মেয়ের নিয়ন্ত্রনে। সে আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। কখনো ছিলনা।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে রিয়া আমাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে ঢুকল। সিনেমার নাম “Avatar” । আমি সাধারণত সিনেমা হল এড়িয়ে চলি। খরচের ব্যাপার। যা দেখার কম্পিউটার এর সতেরো ইঞ্চির মধ্যেই দেখে ফেলি। পেন ড্রাইভ থাকার কারনে সিনেমার ডিভিডিও আমাকে কিনতে হয় না। “Avatar” দেখেছি কমসে কম চারবার। কিন্তু সে কথা কি রিয়াকে বলা যায়? রিয়া অবশ্য চোখ কপালে তুলে বলেছে, ওহ গড! তুমি Avatar দেখ নাই?
আমিও মুখটাকে সরল বানিয়ে এমন একটা ভঙ্গি করলাম যেন ফিল্মটা না দেখে বিরাট অন্যায় করে ফেলেছি।
ok. চলো টিকেট কাটি।
এই মেয়েটার ok বলার রোগ আছে। চান্স পেলেই ok বলে। আমার ধারনা যারা ok বেশি বলে, বাস্তব জীবনে তাদের রিজেক্ট করার ক্ষমতা শিল্পির পর্যায় পরে। আমার কলেজ জীবনে অরিন নামের একটি মেয়েকে আমি একবার বন্ধু হবার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। চমৎকার একটা হাসি দিয়ে সে বলেছিল, ok. friends for ever.
ওটাই শেষ দিন ছিল। পরে কোনদিন অরিন আর আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি। পরিচিত মানুষকে দেখেও না দেখার ভান করা তো শিল্পের পর্যায়ই পরে।

সিনেমার তখন মাঝামাঝি। নায়ক নায়িকা চুটিয়ে প্রেম করছে। আমিও ডুবে গেছি সিনেমার মধ্যে। হঠাৎ রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার কি আমার হাত ধরতে ইচ্ছা করছে?
আমি ইলেকট্রিক শখ খেলাম। সত্যি কথা বলতে আমার এমন কোন ইচ্ছাই করছিল না। এত বড় দুঃসাহস কি আমার আছে? আমি তো মনের ঘরের ছিঁচকে চোর। ডাকাতি করার কথা কিভাবে ভাবি? তবুও গলায় সাহস ফুটিয়ে বললাম, হ্যাঁ।
এমন সুযোগ তো আর বারবার আসে না। রিয়া সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল, তাহলে ধরুন। তাকিয়ে আছেন কেন?
আমার সিনেমা দেখার পার্ট এখানেই সমাপ্ত হল। মনে মনে রিয়াকে নিয়ে আমি দুনিয়ার বেলুন ফুলান শুরু করলাম। আহা! কি সুন্দর নরম হাত। মনে মনে নিজের পিঠ চাপরে দিলাম। বাহ! তোর প্রভাব দেখি কাজ করছে।


সেদিনের পর আবার দীর্ঘ বিরতি। আমি বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছিলাম রিয়া রিসিভ করেনি। পরে আমারও আর ফোন দেয়া হয় নি। স্বপ্নের বেলুন ধিরে ধিরে ফেটে চৌচির। হঠাৎ এক বিকেলে রিয়ার ফোন।
এই আপনি একটু বাসায় আসতে পারবেন?
আমি সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করলাম,কেন?
সে বলল, বাসায় কেউ নেই। বিরাট বিপদে আছি। আপনি এসে উদ্ধার করুন।
আমার চৌচির হওয়া বেলুনগুলো আবার জোরা লাগতে শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যে তার বাসার ঠিকানাও এসএমএস এর মাধ্যমে পেয়ে গেলাম। তড়িঘড়ি করে ছুটলাম রিয়ার বাসার দিকে।

যে ঠিকানা দিয়েছে, সেই বাড়ি জমিদার বাড়ির থেকে কম নয়। দেখলেই বুকে ধাক্কার মত লাগে। এই বাড়ির তুলনায় আমার এক রুমের বাসা তো কুঁড়েঘর। মনে সাহস সঞ্চয় করে বেল টিপলাম।

রিয়াই দরজা খুলে দিল। আসলেই বাসা খালি। আমার মনের মধ্যে জানি কেমন কেমন করতে লাগল। রিয়া আমার হাত ধরে টেনে সোজা তার বেডরুমে নিয়ে গেল। আহা! কি সুন্দর বেডরুম, কি সুন্দর দেয়ালের কারুকাজ আর কি সুন্দর বিছানা। বিছানার উপর তিনটা লাল শাড়ি রাখা।
রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে করুন স্বরে বলল, কাল আমার বিয়ে। শাড়ি হয়েছে তিনটা। রাতে আরও একটা যোগ হবে। কোনটা পরব বুঝতে পারছি না। আপনি বলে দিন না, কোনটা পরব? আপনি যেটা বলবেন সেটাই পরব।
আমি কাঁপা কাঁপা স্বরে জবাব বললাম, আপনার বিয়ে?
রিয়া দৃঢ় গলায় বলল, হ্যাঁ.......।

আমার মনের আকাশের সবগুলো বেলুন একসাথে সশব্দে ফুটে উঠল। মেয়েটা এত নিষ্ঠুর কেন??????
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:০৩
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×