রাস্তায় নামলেই হাজার হাজার গাড়ির ভির। মামুনের গাড়ির খুব শখ। এই শখ কোনদিন পূর্ণ হবে কিনা মামুন তা জানে না। একটি সুন্দর গাড়ি চোখে পড়লেই সে তাকিয়ে থাকে। আরও ভাল করে দেখার আশায় এগিয়ে যায়।
আড়ং এর পাশের একটি মাঠে গাড়ি বিক্রি হয়। সেখানে ঘুরতে ওর খুব ভাল লাগে। গাড়িগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, দামদর করা যায়। মামুনকে অবশ্য কেউ গাড়ির দাম বলেনা। ওকে দেখলেই বোঝা যায় ফকিরা পার্টি। যারা গাড়ি কিনতে আসে তাদের কাছে দাড়িয়ে গাড়ি বিষয়ক সমস্ত তথ্য গেলে ও। মামুন সব গাড়ির নামও ঠিক ঠাক ভাবে জানে না। কিন্তু দেখলে বুঝতে পারে কোনটা কেমন।
এত এত গাড়ি দেখে মামুন একটা মজার জিনিস আবিস্কার করেছে। সবথেকে দামি গাড়িগুলো বুড়োদের দখলে। গাড়ির মধ্যে বসে তারা গম্ভীর গলায় কথা বার্তা বলে, মিটিং ফিটিং করে। মামুনের খুব রাগ হয়। আরে গাধারা এত সুন্দর গাড়ি কি মিটিং আর গম্ভীরভাবে কথা বার্তা বলার জন্যে কিনেছিস? বাড়িতে যা। গিয়ে বউকে বল, “ বউ একটা লাল শাড়ি পরে আসো। আজ তোমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাব। বাচ্চারা কই? তাদেরও ডাকো।”
মামুনের মন খারাপ হয়। আদৌ তার কি কখনো গাড়ি হবে? ইশ তার যদি একটা গাড়ি থাকত! নীলাকে নিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে সোজা গ্রামের দিকে চলে যেত। ধানক্ষেতের পাশে গাড়ি দাড় করিয়ে নিলার হাতে হাত রেখে সূর্য ডোবা দেখত। গাড়িতে নিশ্চয়ই ফ্লাক্স থাকত আর সেই ফ্লাক্সে চা। চা খেতে খেতে নীলা নিশ্চয়ই মজার মজার সব গল্প বলত। মেয়েটা এত সুন্দর করে কথা বলা কোথায় শিখেছে?
সন্ধার পর নিশ্চয়ই আকাশে ইয়া বড় একটা চাঁদ উঠত। আর নীলা কিন্নর কণ্ঠে গান জুড়ে দিত।
একটু রাত হলে ওরা ঢাকার দিকে ব্যাক করত। গাড়ির সাথে চাঁদটাও পাল্লা দিয়ে দৌড় লাগাত। নীলা নিশ্চয়ই বলত, “ দ্যাখো দ্যাখো। চাঁদটা আমাদের সাথে সাথে আসছে। আমাদের বসার রুমে কি ওর জায়গা হবে? আমারা চাঁদকে কি খতে দেব?”
মামুনের বুকটা হাহাকার করে ওঠে। নীলা কি আসলেই ওর মত একটা উজবুক বেকার ছেলেকে বিয়ে করবে?
ত্রিশ বছর পরের কথা।
নীলা মামুনকেই বিয়ে করেছে। ওদের দুটো ছেলে মেয়েও আছে। ছোট মেয়েটির বিয়ের কথা চলছে। মামুনের গাড়ির শখও পূর্ণ হয়েছে। যেন তেন গাড়ি না। রীতিমত দামি গাড়ি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল নীলাকে নিয়ে তার কখনো গ্রামের দিকে লং ড্রাইভে যাওয়া হয় নি। চা খেতে খেতে সূর্য ডোবা দেখা হয় নি। চাঁদকে পাশে রেখে ঘরে ফেরা হয় নি।
নীলাকে নিয়ে হাসপাতালেই বেশি যেতে হয় ওর। বুড়ো হওয়ার সাথে সাথে দুনিয়ার রোগ শোক পেয়ে বসেছে নীলাকে। ফালতু সময় কোথায় নষ্ট করবার? মামুনকে এখন ভীষণ ব্যাস্ত থাকতে হয়। এতটাই ব্যাস্ত যে গাড়িতে বসেই গম্ভীরভাবে মিটিং করতে হয়।
মামুনের গাড়িটা দেখতে দেখতে একজন যুবক হেঁটে যাচ্ছে। তার নাম রাতুল। রাতুলের খুবই মেজাজ খারাপ। তার সারাদিন হাঁটতে হাঁটতে জান খারাপ অবস্থা । রাতুল মনে মনে ভাবছে, “ শালার দুনিয়া। এত সুন্দর সুন্দর গাড়ি, সব কেন বুড়োদের দখলে? এরা গাড়ির মধ্যে বসে শুধু গজ গজ করে। আহা! তার যদি একটা গাড়ি থাকত!”
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:৫৮