সম্প্রতি বিশ্বের বেশ কিছু দেশের বেশ কিছু লোককে সিরিয়ায় যুদ্ধ কিভাবে শুরু হয়েছে? জিজ্ঞেস করা হলে, বিভিন্ন রকম উত্তর আসে -
- ISIS কে দমন করতে।
- হিজবুল্লাহ।
- আসাদকে রাশিয়ার সমর্থন
- বারাক ওবামার আসাদ বিরোধী অবস্থান।
- ইত্যাদি... ইত্যাদি...
কতগুলি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে? কে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে? কোন কোন দেশ নাক গলিয়েছে? কোন দেশ কোন গ্রুপের পক্ষে? -
- চট করে কেউই উত্তর দিতে পারে না।
শুরুতে কিছু লোক জানলেও, পাঁচ বছর ব্যাপী যুদ্ধের তান্ডবে সবাই সেটি ভুলে গেছে। সেটি বলবার আগে, ছোট বেলায় শোনা ছোট্ট একটি গল্প বলে নেয়া দরকার বলে মনে করছি।
ছোট্ট একটি ছেলে গুড় খেয়ে পাশের একটি বাড়ীর সীমানা দেয়ালে হাতটা মুছে বাসায় চলে এসেছে। কিছুক্ষণ বাদে সেই গুড়ে পিপড়া এসেছে। সেই পিপড়া খেতে পোকা এসেছে। পোকা খেতে টিকটিকি এসেছে। টিকটিকি খেতে দুপাড়ার দু বাসার দুটি মুরগী এসেছে। মুরগী দুটোকে তাড়া করেছে দু বাসার দুই কুকুর। সেই কারণে, দুই বাসার দুই ছেলে কুকুর দুটোকে মেরেছে। কেন কুকুর মারা হল? ছেলে দুটোর মধ্যে মারামারি লেগেছে। ছেলে দুটোর বড় বোন এসে চুলোচুলি শুরু করে দিয়েছে। কেন বোনকে মারা হয়েছে? এই কারণে দুই বাড়ীর ভাইরা হাতাহাতি করেছে। এরপরে তাদের বাবারা মারামারি শুরু করেছে। দুই পরিবারের পক্ষে সাপোর্টার জুটেছে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। পুরো এলাকা দুভাগে বিভক্ত। দুই দিকের দুই মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। লাঠি, বল্লম নিয়ে পুরো গ্রাম দুভাগে ভাগ হয়ে, মাঝামাঝি একটি বড় মাঠে জমায়েত হয়ে মারামারি শুরু করেছে। আজও মারামারি চলছে
২।
ফেব্রুয়ারী ২০১২। দারা শহর, সিরিয়া। Mouawiya Syasneh একজন ফ্যাশন সচেতন পাংক স্কুল ছাত্র। বয়স ১৪। সপ্তম গ্রেডের ছাত্র। Mouawyia এর মাথায় দেয়াল লিখনের আইডিয়া (gaffiti) আসে শুধুমাত্র দুষ্টু বুদ্ধি থেকে, অন্য কোন কারণে নয়। সে তার স্কুলের দেয়ালে লিখে -
- "It's your turn doctor"।
তখন মধ্যপ্রাচ্যের Egyptian president হোসনি মোবারক ও তিউনিসিয়ার ক্ষমতাধর বেন আলীকে জনতা ক্ষমতাচ্যুত করেছে। ইতোমধ্যে NATO বাহিনী কর্নেল গাদ্দাফিকে সরিয়ে দিয়েছে। সিরিয়ার মানুষের ধারনা বা আশা ছিল - এবার আসাদের টার্ন। আসাদ বাকীদের মতই ডিকটেটটর এবং একজন ডাক্তার - অপথ্যালমোলজিষ্ট।
পুলিশের চোখে আসে লেখাটি। কয়েকদিনের মধ্যেই Mouawyia, তার তিন বন্ধু ও আরও ছয়জনকে পুলিশ বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের উপরে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ইলেকট্রিক শক দেয়া হয় বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে, সেই পানিকে ইলেকট্রিফাইড করে।
তাদের ব্যপারে খোঁজ নিতে গেলে, তাদের বাবাদের বলা হয় -
- তোমাদের ছেলেদের ভুলে যাও। বাসায় যেয়ে আরও বাচ্চা পয়দা কর। না পারলে, তোমাদের মহিলাদের আমাদের কাছে পাঠিয়ে দাও, আমরা বাচ্চা বানিয়ে দিচ্ছি।
এসব কথায় জনমনে রোষের সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে এক মাস পেরিয়ে গেছে। ছেলেগুলোর সম্মন্ধে বাবা মায়েরা কিছুই জানতে পারেনি।
মার্চের ষোল তারিখে জুম্মার নামাজের পরে প্রথম মিছিল বের হয় দারা শহরে। মিছিল শান্তিপূর্ণই ছিল এবং বারবার শ্লোগান দেয়া হচ্ছিল - আর্মি জনগন এক। প্রথমে জলকামান ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কিন্তু, তারা আবার জোট বাঁধে। বিকেল ৪টা ২০ এর দিকে হেলিকপ্টারে করে সৈন্যরা এসে গুলি ছুড়লে ২ জন নিহত হয়। পরের দিন দুইজনের দাফনের সময় আবার বিক্ষোভ হয়। এবার গুলিতে আরো অনেকেই নিহত হয় বাচ্চা সহ। প্রতিবাদ চলতেই থাকে, সাথে গুলিবর্ষনও চলতে থাকে। নিকটস্থ প্রাচীন একটি মসজিদে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। মার্চের ২২ তারিখে সেই মসজিদের ভেতরে গুলি করে একজন ডাক্তার সহ ৭ জনকে হত্যা করে আর্মিরা। প্রতিবাদ চলতেই থাকে।
ফলশ্রুতিতে ৪৫ দিন পরে সবাইকে মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু, তাদের ক্ষতবিক্ষত চেহারা দেখে বিক্ষোভে ফেটে পরে জনতা। সাথে এতদিনের হত্যাকান্ডের ক্ষোভ তো ছিলই। চলে প্রতিবাদ, চলে গুলিবর্ষন। ধীরে ধীরে বিক্ষোভ দারা শহর থেকে ছড়িয়ে পরে পুরো সিরিয়ায়। সম্প্রতি আলেপোকে মৃত নগরী বানিয়ে ফেলে আসাদ বাহিনী।
৩।
Mouawiya Syasneh এক সাক্ষাৎকারে বলে -
- আমি যদি জানতাম যে, আমার লেখা এই graffiti গুলো এত বড় সংঘাতে রুপ নিবে, তাহলে আমি কখনই লিখতাম না। Mouawiya Syasneh এর বয়স ইতোমধ্যে ১৯। এখন সে নিজেই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে বিদ্রোহী মিলিট্যান্টদের সাথে যুদ্ধ করছে। তার হারাবার কিছুই নেই। সে বলে -
- আমি জীবনে চেয়েছি, কিন্তু পাইনি এমন কোন ঘটনা আমার জীবনে ঘটেনি বাবার জন্য। আমার ইচ্ছে ছিল বিজনেস অথবা অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনা করব। সিরিয়ায় সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার - বোম্বিংয়ে আমার বাবাই মারা গেছেন। মারা গেছে সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আমি তার কবরে প্রায়ই যাই। ভাবি, যে কোন দিনেই আমার বন্ধুরা আসবে আমাকে এখানে দেখতে।
- "ইতোমধ্যে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে অপারেশন হয়েছে Mouawiya Syasneh এর, কিন্তু যুদ্ধ সে চালিয়ে যাচ্ছে।"
যদিও বিশ্ব রাজনীতি জড়িয়ে গেছে সিরিয়া নিয়ে, তারপরেও বলতে হয় -
- "গুড়টা প্রথম দেয়ালে Mouawiya Syasnehই লাগিয়েছিল।"
তথ্যসূত্রের লিংকঃ
https://news.vice.com/article/the-young-men-who-started-syrias-revolution-speak-about-daraa-where-it-all-began
http://www.aljazeera.com/programmes/specialseries/2017/02/boy-started-syrian-war-170208093451538.html
http://pulse.ng/world/mouawiya-syasneh-meet-the-boy-who-started-the-syrian-war-video-id6212663.html
http://newsdespatch.com/tag/mouawiya-syasneh/
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৫২