আলিফ, বা, তা…
আরবি পড়িতে শুরু করিয়াছি। আলহামদুলিল্লাহ্।
বয়স্ক বয়সে শুরু করিলাম জন্যই হয়তোবা মনঃসংযোগ করিতে পারিতেছি না। তাহার উপরে দীর্ঘদিনের পাঠ্য বিরতির কারণে যখন রাস্তা ঘাটে সাইনবোর্ডই পড়িতে মন চাহে না, তখন কি আর পুস্তকের ঐ ক্ষুদ্র অক্ষরগুলো মনে দাগ কাটিতে পারে? তাই নিতান্তই নিরুপায় হইয়া ছোটবেলার সেই অব্যর্থ পদ্ধতি গ্রহণ করিতে বাধ্য হইলাম -
- বাছা, পড়িবে না? পড়িও না। কিন্তু পড়ার টেবিলে দুইটি ঘণ্টা তোমাকে বসিয়া থাকিতে হইবেক। দেখি কেমনে তুমি না পড়িয়া এই দীর্ঘ সময় অতিবাহিত কর?
অত্যন্ত আশ্চর্য হইলাম দেখিয়া যে, সেই অব্যর্থ পদ্ধতি আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত। আজ যে আমি বড় হইয়াছি, বড় হইয়াছে অভিজ্ঞতার ঝুলি। মনের ভিতরে ইতোমধ্যে সৃষ্টি হইয়াছে অনেক অজানাকে জানার জানালা। সেই জানালা দিয়া মনঃসংযোগের ঘুড়িখানা বারবার লাটাই হইতে ছিঁড়িয়া বাতাসের সহিত পশ্চাতদেশ দুলাইয়া দুলাইয়া লক্ষ হীন ভাবে কোন এক অজানা লক্ষের দিকে উড়িয়া যায়।
পড়িতেছিলাম। কোনও কারণ ব্যতীত হঠাৎ এইমাত্র ছিঁড়িল। আরবিতে কতগুলি বর্ণ? গুনিয়া দেখিলাম ৩১। ইংরেজিতে ২৬ আর বাংলায় স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ মিলিয়া ৫১। আচ্ছা, কোন ভাষায় সর্বাপেক্ষা বেশী বর্ণ? শরণাপন্ন হইলাম গুগল আংকেলের। আংকেলের দিল অনেক বড়। এমন কোন জিনিস ইহজগতে নাই যাহা তাহার সংগ্রহশালায় নাই। বাংলা উচ্চারণে হাড়ি, পাতিল, ডেকচি অথবা ডেচকি যাহা লিখিয়াই সার্চ দাও না কেন, নিদেনপক্ষে হাজার দুয়েক সাইট আসিয়া হাজির হইবে। যদিওবা পাতিল এর জায়গায় স্মিতা পাতিল বা দীপক প্যাটেলের চৌদ্দ গুষ্ঠি এবং চরিত্র নিয়া টানাহেঁচড়া শুরু করিবে, তথাপি ইহা স্বীকার করিতে হইবে যে, চেষ্টার কোন ত্রুটি নাই মামার।
- টাইপ করিলাম - maximum number of letter.. ও মোর সোবহানআল্লাহ্ ! চলিয়া আসল - maximum number of letter in any language.. মনের কথা ও পরের কথা আগে জানলো কেমনে? যাহা হউক প্রবেশ করিলাম ভিতরে। সর্বনাশ! তামিল ভাষায় তো দেখি ২৪৭ টা বর্ণ। ইল্লে - চেন্নাই এক্সপ্রেস। এত বর্ণ দিয়ে করেটা কি? খায় না মাথায় দেয়?
হঠাৎ করিয়া মেয়ের গলা-
- বাবা, তুমি যেভাবে পরিতেছ, তাহাতে তো এক একটি অক্ষর শিখিতেই তোমার এক বৎসর লাগিয়া যাইবে। গায়ে মাখিলাম না। বলিলাম –
- জান মা, আরবিতে না ৩১টি অক্ষর আর তামিল ভাষায় সর্বাপেক্ষা বেশী ২৪৭টি।
- বাবা, তাহার মানে তোমার আরবি অক্ষরগুলো শিখিতে ৩১ বৎসর লাগিয়া যাইবে। তামিল কি শেখা সম্ভব? মুচকি হাসিয়া মেয়ে চলিয়া গেল। কিছুটা হতাশায় ঘুড়িটা এবার নিজ হাতেই ছিঁড়িয়া দিলাম।
আচ্ছা, বেশী বর্ণ থাকার কি সুবিধা? একে তো বর্ণ সংখ্যা কম তাহার উপর ইংরেজিতে আবার আকার, ইকার আলাদা করিয়া নাই। অক্ষর দিয়াই উহাকে সারিতে হয় বলিয়া সুবিধা হইতে অসুবিধাই বেশী বৈকি। “B” ও “l” এর পরে “a” বসাইয়া, দুই এর মাঝে “ng” ও শেষে “desh” বসাইলে পাই - আমার জন্মভূমি সুজলা সুফলা Bangladesh। ছোটবেলার সেই ছড়াটির কথা কি মনে পড়ে?-
Baa Baa black sheep,
have you any wool?
আল্লাহ গো, এখানে একইভাবে উচ্চারণ করিলে তো শ্রদ্ধেয় পিতাকে টানিয়া টানিয়া আদুরে গলায় ডাকিয়া, ভুলাইয়া ভালাইয়া ঘর বা স্বর্গ হইতে নামাইয়া সরাসরি ভেড়ার পালের মধ্যে নিক্ষেপণ। তাও আবার কালো, সাদা হইলেও কথা ছিল। ইহাতেই শেষ নহে। কি বেদনা! পিতাকে তাহার শরীর হইতে লোম ছিঁড়িয়া নেবার হুমকি! ইয়াহ মাবুদ, ইয়াহ পরোয়ারদেগা, ইহা কি কেয়ামতের সংকেত নহে? তুমি সকলকে হেফাজত করিও। a দিয়া এখানে “অ্যা” উচ্চারিত হয়, যেমন - Bat, Cat. U দিয়াও তো কখনও কখনও “আ” উচ্চারিত হয়। P, U, T পাট বলিলে শিক্ষক কর্তৃক কিঞ্চিত বেস্ট বেটার গ্রহণ করিবার পরে, আঁখি ও নাসিকার জল এক করিয়া জনৈক ছাত্র কিছুটা অনুযোগ সহকারে বলিল-
স্যার, C, U, T কাট, B, U, T বাট
কি দোষ করিল মোরে P, U, T পাট?
বাবা, বাবা .... ঘুড়িটি লাটাইয়ে ফিরিয়া আসল। ইংরেজির আরও যে সমস্যা রহিয়াছে, বুঝিলাম। বাবা, বাবা ....ছেলে হন্তদন্ত হইয়া আসিয়া বলিল –
- জান বাবা, ঐ নায়িকাটার না পেটের অসুখ হইয়াছে। কি কারণে তাহা অবশ্য জানা যাইতেছে না।
- তুমি এত খবর রাখ কি করিয়া? আর পেটের অসুখের কথাই কি লিখিয়াছে?
- হ্যাঁ বাবা, আসলে তোমাকে আসল কথাটি বলিতে পারিতেছি না। তুমি পড়িলেই বুঝিতে পারিবে। বলিতে বলিতে পত্রিকাখানা আমার হাতে ধরাইয়া দিল। দেখিলাম, পড়িলাম, বুঝিলাম ও অতঃপর বলিলাম –
- ইংরেজিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে “ড়” কে D দিয়ে লেখা হয়। তুমি “ড়” কে “দ” পড়িয়াছ। আসলে পুরোটাই নায়িকার নাম – দীপিকা পাড়ু়কোন। অন্য কোন কিছুই ইহাতে নাই। ছেলে বুঝিল। কিন্তু সে যাহা ভাবিয়াছিল, তাহা তো বাস্তবে অবশ্যই সম্ভব। মাসুম বাচ্চা, বুঝিয়া চলিয়া গেল। কিন্তু, তাহার পিতার মন তো বুঝিতে চাহে না, কোনভাবেই সেই বাস্তবতাটাকে মানিয়া লইতে পারিতেছে না। ছবির দিকে তাকাইয়া মনে হইতেছিল - ইহা অসম্ভব। এতো সুন্দর!! ইহাও কি সম্ভব?
ইংরেজির আরও সমস্যা রহিয়াছে। কিছু কিছু শব্দে কিছু অক্ষর ব্যবহৃত হয় যাহা আবার উচ্চারিত হয় না। যেমন - Knife কে কেনাইফ উচ্চারণ না করিয়া বলিতে হয় নাইফ। উচ্চারণই যদি না করিতে হয়, তবে খামোখাই কেন এই K এর দরকার। অনেককে জিজ্ঞাসা করিয়াও কোন উত্তর পাইলাম না। ব্রিটিশ বলিয়া কথা। নিশ্চয়ই কোন না কোন ফন্দি ফিকির ইহার মধ্যে করিয়া রাখিয়াছে। হয়তবা দুইশত বৎসর পর কোন না কোনভাবে এই K কে ব্যাবহার করিয়া দেশটাকেই না লিখাইয়া নেয়। কোনভাবেই উত্তর না পাইয়া ঘুমাইতে পারিতেছিলাম না। গুগল আংকেলও খুব একটা সুবিধা করিতে পারিল না। আধো ঘুমের মধ্যে K K K বলিবার পর স্ত্রী উঠিয়া বলিল কি হইয়াছে? আবার K K বলিলে স্ত্রী বলিল –
- আরে বাবা আমি।
- K K
- তুমি কি অন্য কাউকে আশা করিতেছিলে নাকি এখন এইখানে?
- ছুরি, ছুরি।
- কি বলিলে? তোমার এখন দরকার ছুঁড়ি? তার মানে কি তোমার কাছে হইয়াছি বুড়ি?
- বুড়ি না কেনাইফ, কেনাইফ, ছুরি। এবার স্ত্রী সজোরে ধাক্কা দিলে পূর্ণ বাস্তবতায় ফিরিয়া আসিয়া বলিলাম -
- আচ্ছা, knife এ K এর ভূমিকাখানা কি বলতো?
- প্রেশারের ঔষধ খাইয়াছ?
- হ্যাঁ। সব কিছু মিলাইয়া আর একবার ডাক্তার দেখাইব ফুল বডি। স্ত্রী বরফ শীতল গলায় বলিল –
- হ্যাঁ প্রেশার ট্রেশার সব কিছু মিলাইয়া একজন ভালো সাইকিয়াট্রিক দেখাও। অপমানটা নীরবে হাসিমুখে সহ্য করিতে হইল। মাঝে মাঝে জীবনে কিছু সময় আসে যখন লোহা গিলিয়া হজম করিতে হয়, কিন্তু মুখে এমন হাসি হাসি ভাব বজায় রাখিতে হয় যেন দেখিয়া মনে হইতেছে তুমি হাওয়াই মিঠাই খাইতেছ। কি নরম ও সুস্বাদু! আহা! মুখে দিতেই যেন গলিয়া যাইতেছে।
আবার শুইয়া পরিলাম। কোনভাবেই ঘুম আসিতেছে না K এর চিন্তায়। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে। নিজেই চেষ্টা করিয়া দেখি না কেন কোন ব্যাখ্যা বের করা যায় কিনা। অনেক চেষ্টার পরে অবশেষে স্বর্গীয় পিতার অধ্যাপনার বিষয় রসায়নশাস্ত্র সাহায্যের হাতখানা বাড়াইয়া দিল। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কিছু রাসায়নিক পদার্থ নির্দিষ্ট বিক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে না কিন্তু তাহাদের উপস্থিতি বিক্রিয়াকে ঘটায় এবং ত্বরান্বিত করে। এই রাসায়নিক পদার্থগুলিকে প্রভাবক বলে। সকালবেলা নাস্তা করিবার পর চায়ের কাপ ও পত্রিকাখানা লইয়া বারান্দায় না বসিয়া পিতা যখন দুষ্ট গোছের সন্তানের রুমের সামনে বসেন, তখন ঐ বান্দরও বাধ্য হইয়া পড়াশুনা করে। এখানে পিতা পড়াশুনার প্রভাবক। একইভাবে যদি K কে প্রভাবক চিন্তা করিয়া সাজাইয়া লিখি –
“শব্দের মধ্যে যোগ হইয়া, যখন কোন অক্ষর নিজে উচ্চারিত না হইয়া শব্দ বা পুরো বাক্যটির অর্থকে আরও বেশী অর্থবহ এবং অলংকৃত করিয়া তোলে, তখন ঐ অক্ষর বা অক্ষরমালাকে ঐ শব্দ বা বাক্যের প্রভাবক অক্ষর বলা হয়”। যেমন - K in knife। এখানে K নিজে উচ্চারিত না হইয়া নাইফ বা ছুরিকে আরও ধারাল বা শানিত করিতে সাহায্য করিতেছে।
আচ্ছা, কেমন হইত? যদি নাইফের আকারের সাথে K এর আকারের একটা সম্পর্ক স্থাপন করা যাইত। যেমন- নাইফ যত বড় হইবে শব্দে K এর ফন্ট সাইজও ততই বড় হইবে। আবার, একটি নিদিষ্ট ধারাল অবস্থার নীচে হইলে Small letter এ আর উপরে হইলে Capital letter এ K কে লিখিতে হইবে।
এই দিক হইতে আমার বাংলা ভাষাকে অনেক ভালো বলিতে হয়। প্রতিটি শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারণ করা যায়। তবে, উচ্চারণের বিচিত্রতায় নাকি র,ড়,ঢ়, ঋ এর সৃষ্টি। ঝড়ে গাছ হইতে পাতাটি ঝরিয়া পরিয়া গিয়াছে। জনৈক ছাত্র তিনটি শব্দেই ‘র’ ব্যাবহার করিলে স্যার এক নাম্বার কাটিয়া দিলেন। ছাত্রটি বলিল - স্যার, পাতা যখন ঝড়ে ঝরিয়াই পরিয়া গিয়াছে তখন আর কোন ‘র’ ব্যবহৃত হইল তাহাতে কীইবা আসে যায়? স্যারের বেত্রাঘাতে বুঝিতে পারিল, আসলে ইহাই আসে যায়। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি ছাত্রটির সহিত একমত পোষণ করি।
শুধুমাত্র উচ্চারণের কারণে চারটি ‘র’ ব্যাবহার না করিয়া যদি অবস্থা বা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত বুঝাইতে পারা যাইত তাহা হইলে ভাল বৈ মন্দ হইত না। যেমন - কামড় - এখানে যে কামড়ে শুধু দাগ হইয়াছে কিন্তু কোন রক্ত বাহির হয় নাই তাহাকে কামর, যদি রক্ত বাহির হয় কিন্তু অবস্থা ভালো, হাসপাতালে নিতে হয় নাই সেক্ষেত্রে কামড়, যদি হাসপাতালে ভর্তি করিতে হয় সেই ক্ষেত্রে কামঢ়, আর যদি কামড়ে মরণ হয় তবে কামঋ। ইহাতে কামড় গ্রহীতার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পুনরায় লিখিবার আর প্রয়োজন হইত না। যেমন লেখা যায় - গতকাল আনুমানিক বিকাল চার ঘটিকায় দুই বন্ধুর মধ্যে মারামারির এক পর্যায়ে কামরান গালিবের গলায় কামঋ বসাইয়া দেয় (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহির রাজিউন)। আগামীকাল বাদ আছর....। তদ্রূপ স্কুল এর স্যারদেরকে স্যার, কলেজের হইলে স্যাড়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে স্যাঢ় এবং যে সমস্ত স্যারদের ডক্টরেট ডিগ্রী আছে তাহাদের স্যাঋ লিখিলে অনেক বাড়তি প্রশ্ন হইতে শিক্ষকরা মুক্তি পাইতেন। তবে ইহা কোন সমস্যা নহে, আমার মায়ের ভাষাকে অধিকতর উন্নত করিবার প্রয়াস মাত্র।
বাংলার প্রতিটি বর্ণেই লুকাইয়া আছে কোন না কোন কারিশমা। “ং” বর্ণটি আকার আকৃতিতে বাংলা লেখায় সেইরূপ নজর কাড়িতে পারে না। পনের জনের দলে এগারজন মাঠে খেলে আর বাকী চারজন সাইড লাইনে বসিয়া প্রার্থনা করে কখন দলের একজন আহত হইয়া মাঠ ছাড়িবে। “ং” সাধারণ বাংলায় এইরূপ সাইড লাইনে বসিয়া থাকা একজন খেলোয়াড়। অথচ যখন বাংলায় সংস্কৃত লেখা হয়, তখন এই “ং” কেই মেসি বা রোনালদো রূপে মাঠে পাদচারণা করিতে দেখা যায়।
সংস্কৃত চর্চা যে পরিবারের সংস্কৃতি বহন করে, সেইরূপ একটি পরিবারের ছোট জামাই আধুনিক শিক্ষায় যথেষ্ট শিক্ষিত হইলেও সংস্কৃত বলাতে অনেকটা অক্ষম ছিল বলা যায়। তাই সর্বদা শ্বশুর বাড়ীর মিলন মেলায় কায়দা করিয়া অনুপস্থিত থাকিত। কিন্তু একবার কোনভাবেই রেহাই মিলিল না। শ্বশুর বাড়ীর সকলে যখন একত্রিত হইল আলোচনা করিতে, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই ছোট জামাইকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছিল না। ছোট জামাইয়ের অবস্থান তখন খাটের নীচে। আলাপ আলোচনা যখন শুরু হইয়া গেল, তখন ছোট জামাই খেয়াল করিল যে, বাক্যগুলি সে বুঝিতে পারিতেছে এবং তাহাতে বস্তুত “ং” এর ছড়াছড়ি ছাড়া অন্য কিছুই নহে। ছোট জামাই বীর দর্পে খাটের নীচ হইতে বাহির হইয়া আসিল এবং বুক ফুলাইয়া বলিতে থাকিল -
“অন্বেষরং দিলেং যদি সংস্কৃতং হয়ং
তবেং কেনোং ছোট জামাইয়ং খাটের তলায় রয়ং।“
Size does not matter for chopping wood. আকারে ছোট হইলেও বাংলা বর্ণের মধ্যে চন্দ্রবিন্দু কিছু কিছু শব্দকে এতটাই ভালবাসায় গলাইয়া ফেলে যে, পুরো বাক্যটির অর্থই যেন পরিবর্তিত হইয়া যায়। যখন কোন মেয়ে বলে তুমি আমার চাদ, তখন শুনিয়া মনে হয় যেন শুধু মুখেই বলিতেছে। হয়তোবা ভালবাসার চাইতে ধান্ধাই এখানে বেশী বটে। ঐ একই বাক্য যখন চন্দ্রবিন্দু সহযোগে সঠিকভাবে সুন্দর করিয়া বলে, তখন মনে হয় শুধুই চাঁদ বা আমি তোমাকে ভালবাসি বলিয়াই ক্ষান্ত হইতেছে না, বোনাস হিসাবে আরও যেন বলিতেছে - আযা মেরি গালে মে লাগযা। তবে এখানে সঠিকভাবে উচ্চারণটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেমনটি ফিডব্যাক বা ঢাকা ব্যান্ডের মাকসুদ চাঁদ বলে।
তবে এই চন্দ্রবিন্দুর কারণেই কিনা জানিনা, উঠতি বয়সের বাঙ্গালী মেয়ে ও উঠতি বাঙ্গালী ব্যান্ড শিল্পীদের নাঁক দিঁয়া কঁথা বঁলা বাঁ গাঁন গাঁইবাঁর একটা প্রচলন দেখা যায়। আমি দেশের বাইরে এক হিঁমেশ রেঁশমিঁয়া ব্যতীত আর অন্য কাউকেই এ পর্যন্ত নাঁক দিঁয়া কঁথা বঁলিতে বাঁ গাঁন গাঁইতেঁ শুঁনি নাঁই।
আরবিতে বর্ণের সংখ্যা কম বলিয়াই হয়তবা “প” ও “ভ” নেই। এই কারণে ছোটবেলা হইতেই আরবি পড়া হুজুরদের সমস্যারও কমতি নেই। হুজুরের ছেলে গাড়ী কিনিয়াছে। সবাই হুজুরকে ধরিল খাওয়াতেই হইবে এবং জিজ্ঞাসিল –
- কি গাড়ী কিনিয়াছে হুজুর? হুজুর বলিল –
- বলব, বলব।
- এখন বলিলে সমস্যাটা কি?
- আরে বললামই তো বলব।
- আসলে হুজুর খাওয়ানোর ভয়ে বলিতেছেন না।
- বলব, বলব বলিতেছি বারবার, তারপরও আপনারা শুধু শুধুই ঝামেলা করিতেছেন। ক্যাচালের এক পর্যায়ে বোঝা গেল হুজুরের ছেলে আসলে ভলভো গাড়ী কিনিয়াছে।
পাড়ার চৌধুরী সাহেবের উপর এই হুজুরের বড়ই রাগ, যদিওবা তিনি জ্ঞানী, ভদ্র, সৎ ও বিনয়ী একজন মানুষ। রাগের কারণটা হইল, প্রায়শই তিনি হুজুরের ভুলগুলি ধরিয়া ফেলেন এবং তাহার সঠিক ব্যাখ্যা করেন। হুজুর কোনভাবেই তাহাকে শায়েস্তা করিতে পারিতেছিলেন না। একবার আসিল সেই মহেন্দ্র ক্ষণ। তিন তিনটি জায়গা হইতে একই খবর পাওয়া গেল যে, চৌধুরী সাহেবের ছোট ছেলে বিয়ে না হইতে বৌকে নিয়ে গ্রামের বাড়ীতে আসিয়াছে। তওবা তওবা আস্তাগফিরুল্লা ওয়া মিনকুল্লে যামবেও.....। বাদ মাগরিব জরুরী সভা ডাকিলেন এবং বাদ আছর চোখে সুরমা লাগাইতে বসিয়া গেলেন। পাড়ার একজন হুজুরকে সভার কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন এবং উত্তর শুনিয়া বলিলেন - আমি তো নিজেই ছোট ছেলের বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম। পরে খোঁজ খবর লইয়া যাহা বুঝিতে পারা গেল, তাহা হইতেছে যে, হুজুরের লোকজন তো হুজুরেরই মতন বটে। চৌধুরী সাহেবের ছোট ছেলে, তাহার কর্মস্থল ভিয়েনা হইতে বৌকে নিয়া বাড়ীতে আসিয়াছে। আর তিন ছোট হুজুর বলিয়াছে বিয়েনা হইতে..।
হুজুরের দুই ভাই কিছুদিন হুজুরের বাসায় বেড়াইয়া বাড়ীতে ফিরিয়া যাইতেছে। দুই ভাই এর উদ্দেশ্যে হুজুর বলিতেছেন -
- বাইরে, তোরা দুগা বাই, বালায় বালায় বোর বেলা উইঠ্যা, দুগা বাত মুখে দিয়া, বোরের বৈরবের বাসটা ধইরা, বালায় বালায় বাড়ী যাইতে পারলে, বড়ই বালা হয় গো বাই।
যখন “প” ও “ভ” অনুপস্থিত, তখন এই দুর্মূল্যের বাজারে দুইটা “ক” (কাফ) রাখিবার কারণটা কি? দুইটা কাফই লিখিতে হয় বাংলায় “ক” ও ইংরেজিতে “K” বা “Q” দিয়া। তবে পার্থক্যটা মূলত উচ্চারণে। প্রথম কাফটা বাংলার সাধারণ “ক” এর মত উচ্চারিত হয়। তবে দ্বিতীয় ক্বফটা উচ্চারণ করা খুবই কষ্টকর বটে। ঠাণ্ডা লাগিলে কফ যেইখান হইতে বাহির হইয়া আসে, ক্বফটাও ওইখান হইতেই বাহির করিতে হয়। দুই একবার চেষ্টা করিলাম এবং আশ্চর্য হইয়া লক্ষ করিলাম যে, হইতেছে না অবশ্যই, কিন্তু অদ্ভুত রকমের একটা স্বর গলা দিয়া বাহির হইতেছে। ঘুমের মধ্যে বোবা ধরিলে এবং গরু জবেহ করিবার সময় গলা হইতে যে রকম আওয়াজ বাহির হয়, এই দুইয়ের সংমিশ্রণে তৈরি, শব্দের মত কিছু একটা বাহির হইতেছে। পরবর্তীতে, দুইবার ঢেঁকুর কাটিবার পরে তৃতীয় দফায় এক্কেবারে হেঁচকি উঠিয়া গেলো। স্ত্রী আতংকিত হইয়া দৌড়াইয়া আসিল এবং পরিস্থিতি বুঝিতে পারিয়া বলিল –
- তোমার শুরুতেই টেনে পড়ার দরকারটা কি? প্রথমে শিখ, পরে টেনে পড়িও। আমি বলিলাম –
- না টানিলে শিখিব কি করিয়া? আর না শিখিলে টানিব কি করিয়া?
- আচ্ছা তোমার সমস্যাটা কি বলতো? তুমি সবকিছুতেই এত প্যাঁচাও কেন?
- আমি আবার প্যাঁচাইলাম কখন, কোথায়? আর এর মধ্যে তুমি প্যাঁচানোর কীইবা দেখিলে? একটা সোজা লম্বা তামার তার আনিয়া দাও। মুহূর্তের মধ্যে যখন উহাকে কয়েলে রূপান্তরিত করিয়া ফেলিব, তখন বুঝিবে প্যাঁচানো কাহাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ সহ বৈজ্ঞানিক নাম লিখ। আচ্ছা, তামার তারের কয়েলের কি কোন বৈজ্ঞানিক নাম আছে? থাকিলে থাকিতেও পারে। থাকুক না, হইলে হইবে হয়ত দন্ত কাঁপানো কোন নাম। হইতে পারে "তামরোপ্যাঁচিও কয়েলোফলিকাস" জাতীয় কোন নাম। নাম যাহাই হউক না কেন, তাহাতে সেইরকম কিছুই যায় বা আসে না। তবে এইটা অবশ্যই মনে রাখিতে হইবে যে, নিয়মিত বিরতিতে কয়েকটি অক্ষরের উপরে ও পেটে একটি বা দুইটি করিয়া নোকতা - সরি, ফোঁটা দিতে হইবে। এই ফোঁটাগুলির অর্থ কি তাহা আমার জানা নাই, তবে এইটুকু বুঝি যে, ফোঁটাগুলি বৈজ্ঞানিক নামের সৌন্দর্য ও শক্তিবর্ধক হিসাবে কাজ করে।
বলা বাহুল্য যে, স্ত্রীর অনেক আগেই প্রস্থান ঘটিয়াছে।
এইরূপ বন্ধুর পথের মধ্যে দিয়া নানাবিধ সমস্যায় ঝাঁকুনি খাইতে খাইতে পড়ার গাড়ী সেইরকম আগাচ্ছে না বলিলেই চলে। সব প্রতিকূলতার, সব সমস্যার সমাধান হউক বা না হউক, অবসান অবশ্যই হয়। সৃষ্টিকর্তার এক হাত হইতে পরিয়া গেলে, কখনই কেহই মাটিতে পরে না, অন্য হাতেই পরে। এইটা জানিবার পরেও মানুষ অতটুকু সময়েই অস্থির হইয়া পরে, যতটুকু সময়ে সে দুই হাতের মাঝখানে শূন্যে পতন রত অবস্থায় থাকে। সব প্রতিকূলতার মধ্যেও একটাই আশার আলো যে আমি একজন খুব ভাল শিক্ষক, থুক্কু ওস্তাদজি পাইয়াছি। আমার ওস্তাদজি আমারই সন্তান। ওস্তাদজি বীর শ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মাদ পাবলিক কলেজের তৃতীয় শ্রেণীর একজন ছাত্র।
- ওস্তাদজি এখন পবিত্র কোরআন শরিফ পড়িতেছেন, আফটার সাকসেসফুলি কমপ্লিটিং দ্যা আর্ট অফ ম্যাঙ্গো প্লাকিং।
জানুয়ারি’ ২৭, ২০১৪ - আমার জীবনের প্রথম লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২২