somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফাসি

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি বলেছিলাম -
বাসেত সাহেব একজন অসৎ শিক্ষক। স্কুলে ভালভাবে না পড়িয়ে প্রাইভেট আর কোচিংয়ে পড়ায়।
সমস্ত শিক্ষক সমাজ -
প্রতিবাদে ফেটে পড়ল। বলা হল - বাদশাহ আলমগীর যখন তার পুত্রকে শিক্ষকের পা ধুঁয়ে দিতে বলেন, তখন আমি কি করে অসৎ বলি? আন্দোলন হল, স্কুল বন্ধ রাখলেন।
- আমি বলতে পারলাম না যে, আমি ভুল জায়গায় সত্য বলেছি।
বাসেত সাহেব আমার গ্রামের একজন অসৎ শিক্ষক।
- আমার ফাসির রায় হল।

আমি বলেছিলাম -
শাহেদ সাহেব একজন ঘুষখোর ইঞ্জিনিয়ার।
সমস্ত ইঞ্জিনিয়ার সমাজ -
ক্ষোভে ফেটে পড়ল। দেশের উন্নয়ন, রাস্তা ঘাট, পানি বিদ্যুৎ সরবরাহ সহ সভ্যতার উন্নয়নে যারা কাজ করে, তাদের এত বড় অপমান? হরতাল ডাকলেন। দেশে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখলেন।
- আমি বলতে পারলাম না যে, আমি ভুল জায়গায় সত্য বলেছি।
- আমার ফাসির রায় হল।

আমি বলেছিলাম -
জাহেদ সাহেব একজন লোভী ডাক্তার।
সমস্ত ডাক্তার সমাজ -
আগুন হয়ে উঠলেন। দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা যারা মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়, তাদের লোভী বলা? এবার মারাত্নক আন্দোলন হল।
- আমি এবারও বলতে পারলাম না যে, আমি ভুল জায়গায় সত্য বলেছি।
- আমার আবার ফাসির রায় হল।

আমি বলেছিলাম -
সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা
দেশ মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা
আপনারা চাষাকে বড় সাধক বলবেন, কিন্তু চাষার ছেলে বলে গালি দিবেন সবাই। কবিরা ভন্ড।
সমস্ত কবি সমাজ -
কেঁদে কেটে অস্থির। শিক্ষক বাদে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সবাই বললেন - চাষার ছেলেকে চাষার ছেলেই তো বলব - ঐ ব্যাটা, তুই একটা অসৎ, তুই একটা ঘুষখোর, তুই একটা লোভী, তুই একটা ভন্ড, এক কথায় তুই ব্যাটা একটা চাষার ছেলে।
শিক্ষক বললেন - আমি তো কথায় কথায় ছাত্রদের চাষার ছেলে বলে গালি দেই। কিন্তু, প্রশ্নপত্রে আমি তো কখনই চাষার ছেলে লিখি নাই। আমার কোন দায় নেই।
কবি সমাজ বললেন - আমরা কখনই চাষার ছেলে বলি না। আমাদের ভন্ড বলেছে, এই বলে কান্না শুরু করলেন।
- আমি বলতে পারলাম না যে, আমি এবারও ভুল জায়গায় সত্য বলেছি।
- আমার চতুর্থবারের মত ফাসির রায় হল।

আজ আমার ফাসি।
বললেন, শেষ কিছু বলার থাকলে বলতে -
- আপনারা একবারও আমার নাম বা পেশা জিজ্ঞেস করলেন না। কারণ, আমার আসলেই পেশা নাই। আপনাদের একটা বছর একটা পরীক্ষার প্রশ্নে অসৎ, ঘুষখোর, লোভী, ভন্ড বললে অবশ্যই ভুল হয়, যদিও আপনাদের মধ্যে অনেকে তাই। তাহলে ভুলটা কোথায়? ঐ যে বলেছিলাম -
আমি বলতে পারলাম না যে, আমি ভুল জায়গায় সত্য বলেছি। এটিই ভুল। প্রশ্নপত্রে বলাটা ঠিক হয় নাই।
আপনারা বাস্তবে অনেকেই এই দোষে দুষ্ট, এটি স্বীকার করতে রাজী। কিন্তু প্রশ্নপত্রে আপনারা সহ্য করতে পারেন না, ক্ষোভে ফেটে পরেন।
অথচ, প্রশ্নপত্র নয়, যুগে যুগে আমাদের চৌদ্দ পুরুষকে বইয়ের ভেতরে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন, পরিচয় দিয়েছেন -
- গনি মিঞা একজন দরিদ্র কৃষক।
- জীবনভর এই পেশাটারে আপনারা দরিদ্র মানুষের পেশা বানাইলেন, একদিনও তো আন্দোলন করে নাই আমার বাপ দাদারা। আপনারা সিল মেরে দরিদ্র বানিয়ে রেখেছেন আমাদের চৌদ্দ পুরুষকে -
- আমার নাম গনি মিঞা, পিতা - গনি মিঞা, তার পিতা, পিতার পিতা, আমার সন্তান - সবার নামই গনি মিঞা।
- আপনারা জীবনভর দাদা, বাপ, আমার সন্তানরে পর্য্যন্ত চাষার ছেলে বলে গালি দিলেন। আমরা কিচ্ছু বলি নাই।
- আমরা কিছুই করি না। সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, আপনার খাবারের থালের ঐ সাদা ভাতগুলো ফলাই। আইজ আমার ফাসিতে আমার ছেলে আন্দোলন করবে না। কালকে ভোরবেলা ক্ষেতে নামবে। চোখের জল আর সেচের জলে তৈরী করবে সাদা ভাত। আমরা থাকব গরীব, চাষার ছেলে, মান সম্মানহীন। আপনাদের পেশা নিয়ে কিছুই বলা যাবে না কোথাও। আপনাদের মান সম্মান আছে। আমরা বড় সাধক, জীবনভর গনি মিঞা দরিদ্র কৃষক আর চাষার ছেলে। কিছু বলার নাই। এরচেয়ে ফাসিই ভাল।

চারিদিকে নিঃস্তব্ধতা। পিনপতন নীরবতা। কেউ একজন ফিসফিস করে বলে -
- তাড়াতাড়ি ঝুলায় দে চাষার পোলারে। বড্ড ঝামেলা করতেছে।
আমি শুনি জীবনের শেষ শব্দ ...ক্যাচ.. ক্যাচ..
পায়ের নীচে মাটি নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:২৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×