১৯৮০ সাল।
ফরিদ একজন ট্রাক ড্রাইভার। থাকে টঙ্গীতে। তার নিজস্ব একটি লাশবাহী পিক আপ আছে, ভাড়া খাটায়। সুযোগ পেলে সে নিজেও ড্রাইভ করে। লাশ বহন করলে ইনকাম ভালই। তবে, লাশের গাড়ী একা নিয়ে যেতে স্বাভাবিকভাবেই ভয় লাগে, তাই দুজন লোক লাগে। একজন ড্রাইভার ও অন্যজন এসিস্টেন্ট। একটি লাশ বহন করতে হবে। এসিস্টেন্ট ছুটিতে। তাই ফরিদ নিজেই সেদিন এসিস্টেন্ট হয়ে ফ্রন্ট সিটে বসেছে। রওনা করেছে চিটাগংয়ের উদ্দেশ্যে। পিক আপের পেছনে লাশের সাথে বসেছে, মৃত ব্যক্তির চাচাত ভাই। বাকী যে দুই একজন আত্নীয় স্বজন ছিল, তারা বাসে করে আগেই চিটাগং রওনা করেছে। কুমিল্লায় চা বিরতির সংক্ষিপ্ত বিরতি দিয়ে, আবার রওনা করেছে তারা। এবার ফরিদ নিজে ড্রাইভিং সিটে, আর তার ড্রাইভার ফ্রন্ট সিটে। লাশ নামিয়েই সকালে যত তাড়াতাড়ি ফেরা যায়, তত ভাল। আরেকটি ট্রিপের সুযোগ থাকে সকালে।
রাত তখন দেড়টা। কুমিল্লা আর ফেনীর কাছাকাছি একটি নির্জন রাস্তা। গাড়ী চলছে মোটামুটি স্পিডেই। হটাৎই পেছন থেকে লাশের ভাইয়ের চিৎকার ভেসে আসে। লাশের গাড়ীতে এরকম হটাৎ চিৎকার ও কান্না অস্বাভাবিক নয়। কারণ, মৃত ব্যক্তির শোকে থাকা আত্নীয় স্বজন প্রায়শই হটাৎ করে কাঁদে। কিন্তু, এই চিৎকারটা অন্যরকম। গাড়ী একটু স্লো করার সাথে সাথেই, লাশের সাথে থাকা লাশের চাচাত ভাই, গাড়ীর পেছন থেকে লাফ দিয়ে নেমে দৌড় দিয়েছে রাস্তা ফেলে ক্ষেতের দিকে। ফরিদ একটু অবাক হয়ে রাস্তার পাশে গাড়ী নিয়ে থামাতে গিয়ে এসিস্টেনকে বলে -
- কি হয়েছে? দেখতো।
গাড়ী রাস্তার পাশে সম্পূর্ণরুপে থামানোর আগমুহুর্তেই ফরিদ দেখে যে, তার ড্রাইভার অর্থ্যাৎ এসিস্টেন্ট গাড়ীর দরজা খুলেই, একইভাবে নেমে দৌড় দিয়েছে।
ফরিদ পেছনে তাকিয়ে দেখে, লাশ উঠে বসেছে। সাদা কাপড় জড়ানো, কিন্তু মুখের অংশ হয়তোবা কোনভাবে খুলে গেছে। চোখ বন্ধ। ফরিদ শুনেছে, মৃত্যুর পরে অনেক সময় নাকি লাশ কিছুটা বাঁকা হয় মাংসপেশীর টানে। গাড়ী থামার ঠিক আগমুহুর্তেই ফরিদ দেখে -
- আস্তে আস্তে দুটো হাত দুদিকে উঠে যাচ্ছে এবং চোখ দুটি খুলতে শুরু করেছে। ভয়ে মুহুর্তের মধ্যেই গাড়ী থেকে নেমে ফরিদ দৌড় দেয় সামনের দিকে। খানিক দৌড়ানোর পরে রাস্তার পাশে একটি গাছের আড়াল থেকে, তার এসিস্টেন্ট ডাক দেয় -
- ওস্তাদ।
ফরিদ থামে। দুজনই হাপাচ্ছিল। এরপরে সাহস করে তারা গাড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখে -
- লাশটি গাড়ীর পেছন থেকে হেঁটে হেঁটে গাড়ীর সামনে আসল। এরপরে লাশটি ড্রাইভিং সিটে বসল। রাস্তার পাশ থেকে লাশের চাচাত ভাই এসে ফ্রন্ট সীটে বসল।
- লাশ, নিজে লাশবাহী গাড়ীটি ড্রাইভ করে তাদের সামনে দিয়েই চলে গেল।
- "ফরিদ বুঝল, তার গাড়ী ছিনতাই হল।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১১