প্রথম অংশ।
বাবা ও ছেলে মাটির ব্যাংক কিনেছে একইরকম। বাবা প্রায় প্রতিদিনই এক টাকা বা দুই টাকা ফেলেন। কখনও পাঁচ দশ টাকা। ছেলে প্রতিদিন চেষ্টা করেও পারে না ফেলতে। সপ্তাহে দুইদিন হয়তোবা ফেলে। আর সেটি চার আনা বা আট আনা এবং কখনও হয়তোবা কাগজের এক টাকা।
ছেলে দেখল এভাবে তো পোষাবে না। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসল। বাবার বেডরুমে রক্ষিত ব্যাংকটি সে তার ঘরে রক্ষিত ব্যাংকটির সাথে অদল বদল করল। সে দেখে, বাবা তার ব্যাংকে টাকা ফেলছে। তার ভাল লাগে। এরপরে সে চিন্তা করল যদি ধরা পড়ে যায়, তাই সপ্তাহ খানেক পরেই বাবার ব্যাংক, বাবার নিজের জায়গায় রেখে, সে বাবাকে বলে -
- বাবা, আমার ব্যাংকটা তো চুরি হয়ে যেতে পারে, তোমার ঘরে রাখলে চুরি হবে না।
এই বলে সে বাবার সামনেই একটি কাগজে বাবা, আরেকটিতে নিজের নাম লিখে, ভাত দিয়ে সাটিয়ে দেয় ব্যাংক দুটির গায়ে। ব্যাংক দুটি পাশাপাশি।
ছেলেটি বাবার অনুপস্থিতিতে হাল্কা করে লাগানো কাগজ দুটো বদলিয়ে দেয়। ছেলেটি বাবার সামনেই বা কখনও সবার সামনেই, নিজের নাম লেখা ব্যাংকে টাকা ফেলে।
ছেলেটি দুরে দাড়িয়ে দেখে, বাবা তার ব্যাংকে টাকা ফেলছে। ছেলেটির মন আনন্দে ভরে উঠে।
মাসখানেক পরে আজ স্থানীয় মাঠে মেলা শুরু হয়েছে, যার জন্যই এ পয়সা জমানো। ছেলেটি নিজে জমালে হয়তো খুব বেশী হলে বিশ ত্রিশ টাকা জমাতে পারত। এখন কম করে হলেও শত টাকার উপরে হবার কথা। বাবা সহ বাসার সবার অগোচরে ছেলেটি ব্যাংকটি ভাঙ্গে। গুনে দেখে সর্বসাকুল্যে আঠার টাকা আর অনেকগুলি কাগজ। চারটে কাগজ আঠা দিয়ে লাগানো ও সেগুলির গায়ে ১, ২, ৩, ৪ লেখা। বাকী কাগজগুলিতে লেখা -
- সিরিয়াল অনুযায়ী ১ থেকে ৪ পর্য্যন্ত পড়বে। ছেলেটি খুলে পড়তে শুরু করে -
১ নং -
বাবা,
টাকা কোথা থেকে অর্জন করবে সেটি যেমন কঠিন, তার থেকে কঠিন হচ্ছে কোথায় জমাবে? সেটি জানা -
"আমি সবার অগোচরে তোমার ঘরে গিয়ে আমার ব্যাংকে টাকা জমিয়েছি।"
২ নং -
বাবা,
টাকা আগলে রাখতে হয় নীরবে ও অগোচরে।
- তাই নীরবে আমি তোমার নাম লেখা আমার ব্যাংকে সবার অগোচরে টাকা ফেলেছি আর সবার সামনে তোমার ব্যাংকে কাগজ ফেলেছি। আর তুমি সবার সামনে আমার ব্যাংকে টাকা ফেলেছ।
৩ নং -
বাবা,
জগতে কখনই বড় টাকার সাথে লাগতে যাবে না। কখনই পারবে না বড় টাকার সাথে। আর বড় টাকার সাথে না থেকে নিজের মত থাকাই উত্তম। কারণ, বড় টাকা ছোট টাকাকে টানে।
- তাই, তুমি যত টাকা জমাতে পারতে, তার চেয়ে কম টাকা তুমি গুনে পাবে। কারণ, বড় টাকা তোমার টাকাকে টেনে নিয়েছে, তোমার হাত দিয়েই।
বাবা, তুমি আজ মেলায় যাবে। যাবার আগে আমার কাছে টাকা নিয়ে যাবে। আমি যা দেব, তাতে তুমি খুশীই হবে।
৪।
বাবা,
ছোট টাকার আওয়াজ বেশী, বড় টাকার আওয়াজ নেই।
- তোমার মনে হতে পারে যে, আমি কি করে বুঝতাম? ঝাকি দিলেই তোমার কম টাকা পয়সার ব্যাংকে ঝনঝনে আওয়াজ হত।
দ্বিতীয় অংশ
ছোটবেলায় আমিও মেলার জন্য পয়সা জমাতাম। আমারও ধারনা ছিল যে, বিশ থেকে ত্রিশ টাকা হবে হয়তোবা। ভেঙ্গে দেখি একশত টাকার উপরে। আমি অবাক। পরে জানলাম, বাবা আমার ব্যাংকে আমার অগোচরে টাকা ফেলেছেন।
একে মফস্বল শহর, তার উপরে সময়। ছোটবেলায় আমরা বাবাকে থ্যাংক ইয়্যু বা আই লাভ ইউ বলি নাই কখনো। আমাদের ছেলেমেয়েরা খুশী হলে চুমু দেয়। আমার মনে আসে না। তাই, মাথা নীচু করে দাড়িয়ে রইলাম। কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব করে বাবা উপরের গল্পটি হাসতে হাসতে বলেছিলেন -
- "পিসি সরকার বা ডেভিড কপারফিল্ডকে দেখিনি, আমি বাবাকে দেখেছি।"
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৫৫