আপনি কি জানেন?
- আপনি মারা যাবার পরে আপনার ফেসবুক একাউন্টের কি হবে?
- মৃত ব্যক্তিকে ফ্রেন্ড রিকোয়ষ্ট পাঠানো যায় এবং সেটি একসেপ্টও হয়?
- মরনের পরেও লিমিটেড একসেসে ফেসবুক চালান যায়?
যদি না জানেন, তাহলে আপনি মারা যাবার পরে, আপনার বিপত্নীক স্বামী বা বিধবা স্ত্রীর কি হবে? তা নয়, আপনার ফেসবুক একাউন্টের কি হবে? -
- তা জানতে এই লেখাটি পড়ুন।
সাধারনভাবে একজন মানুষের মৃত্যুর পরে, তার যেমন কবর হয় বা তাকে সৎকার করা হয়, ঠিক সেভাবেই ফেসবুক সেই মৃত ব্যাক্তির ফেসবুক একাউন্ট Memorializing করে। ফ্রেন্ড লিষ্টে থাকা কেউ রিপোর্ট করলে, সেটি অন্য ফ্রেন্ড কর্তৃক ফেসবুক ভেরিফাই করে, Memorializing declare করে। নামের ডান পাশে যেমন (অবঃ) লেখা থাকে, ঠিক তেমনই লেখা উঠবে - Remembering
এক্ষেত্রে, আপনার memorialized timeline এ, ফ্রেন্ডরা আপনাকে স্মরণ করে কিছু শেয়ার করতে পারবে। কি আশ্চর্য্য! আপনি নেই, আপনার টাইমলাইনে শেয়ার হচ্ছে! এটি সবসময় ভাল নাও হতে পারে। মরেও শান্তি নেই। আপনার পোষ্ট আপনার সেটিংস অনুযায়ী যাদের দেখতে পারার কখ্থা, তারা ঠিকই দেখতে পারবে। কি যন্ত্রনা। এটি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আপনাকে আগেই সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখে যেতে হবে, জমিজমার দলিলের মতনই।তবে, আপনাকে কেউ কোন গ্রুপে এড করতে পারবে না, বিভিন্ন suggested group আসবে না। আপনার বার্থডে নোটিফিকেশন যাবে না যৌক্তিকভাবে। ডক্টরেট করা মানুষের মেট্রিক পাশের সার্টিফিকেট! কি লাগে? তবে, আমার মনে হয় -
- তার পোষ্টে ঢুকে কমেন্ট, ছবি দেখলে প্রিয়জনের মন খারাপ হতে পারে। বন্ধুবান্ধব অনেকেরই মন খারাপ হবে। কেউ হয়তো দেখবে, সে কখনও ফেসবুকে তার সাথে ক্যাচাল করেছে। মনে হবে - কেন করলাম? মাঝরাতে প্রিয়জন দেখবে মৃতব্যক্তি সম্মন্ধে কে কি কমেন্ট করল? আশ্চর্য্য! মৃতব্যক্তিকে নিয়ে ফেসবুকে নড়াচড়া হবে। একান্ত আপনজনের জন্য সেটি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সুখকর না হবার কথা, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে।
Memorializing account এ অন্য কেউই আর লগ ইন করতে পারবে না। memorializing একবার হয়ে গেলে, সঠিক পাসওয়ার্ড জানা থাকলেও, আর সেই একাউন্টে ঢোকা সম্ভব না। কিন্তু, আপনার Immediate family member - শুধুমাত্র বাবা, মা, স্ত্রী/স্বামী, সহোদর ভাই/বোন, নিজ সন্তান যদি মনে করে যে -
- পাখিই যখন উড়ে চলে গেছে, খাঁচা রেখে কষ্টের কি দরকার?
তখন তারা উপযুক্ত প্রমানাদিসহ ফেসবুকে এপ্লাই করলে, ফেসবুক সে একাউন্ট ডিলেট করে দিবে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে গিয়ে। তবে এরজন্য দাখিল করতে হবে এগুলোর মধ্যে যে কোন একটি -
Power of attorney
Birth certificate
Last will and testament
Estate letter
এবং, সাথে নিম্নের যে কোন একটি -
Obituary
Memorial card
তবে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য এগুলিকে কিভাবে পাঠাতে হবে, কতটুকু গ্রহনযোগ্যতা পাবে ফেসবুকের কাছে, সেটি বোধগম্য নয়। তবে, সেটি যে খুবই কঠিন হবে, তা বলে দেয়া যায়।
কিন্তু, এ ব্যপারে আপনি বেঁচে থাকতেই নিম্নোক্ত কাজগুলির যে কোন একটি করে যেতে পারেন -
- আপনি নিজে আপনার একাউন্ট Memorialize করার ইন্সট্রাকশন দিয়ে যেতে পারেন। সেটিংসে সেটি বিদ্যমান।
- আবার একইভাবেই, বেঁচে থাকতেই আপনি যদি মনে করেন, আমি মারা গেলে আমার একাউন্ট যেন বন্ধ করে দেয়া হয়, সেটি করে রাখারও অপশন আছে। আপনার একাউন্ট ডিলেট হয়ে যাবে।
- আপনি যদি মনে করেন যে, মরার পরেও আপনি লিমিটেড একসেসে ফেসবুক চালাবেন, সেটিও সম্ভব। আপনাকে সেক্ষেত্রে আপনার হয়ে কাউকে মনোনীত করে যেতে হবে। আপনি যাকে মনোনীত করবেন, সেই ব্যক্তির নাম জীবিত অবস্থায় সেটিংসে বলে যাবেন। মনোনীত ব্যাক্তিকে বলা হয় Legacy Contact.
Account Setting - Security - Legacy Contact.
আপনি মারা গেলে এবং মারা যাবার রিপোর্ট ফেসবুকে একসেপ্ট হওয়া মাত্রই, অর্থাৎ Remembering লেখা ওঠা মাত্রই, সেই Legacy Contact এ থাকা ব্যাক্তি অবলীলায় আপনার একাউন্টে ঢুকে পরতে পারবে। অগেই বলেছি লিমিটেড একসেস। সে ব্যাক্তি যে কাজগুলি করতে পারবে এবং করা উচিৎ -
- আপনার প্রোফাইল পিকচার ও কাভার ফটো পরিবর্তন করবে। আপনি হয়তো খুব একটি শোভনীয় নয়, এমন কোন ছবি প্রোফাইল পিকচার এবং/বা কাভার ফটোতে রেখেছেন, যেটি মৃত ব্যক্তির সাথে মানানসই নয়। তখন ঐ ব্যক্তি হয়তোবা আপনার একটি সুন্দর ছবি দিয়ে নীচে কিছু উক্তি লিখে দিতে পারে। যেমন -
- তুমি ঘুমাও শান্তিতে, আমরা জেগে আছি তোমাকে বুকে ধরে - এ জাতীয়।
এরপরে, Legacy Contact, একটি pinned পোষ্ট দিবেন remembering timeline এ, মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে -
আমাদের বন্ধু বা/ -- আজ .....
এছাড়াও Legacy Contact আপনার হয়ে কমেন্টের উত্তরও দিতে পারবেন। আরেকটি বড় ব্যপার, Legacy Contact আপনার নতুন ফ্রেল্ড রিকোয়েষ্ট একসেপ্ট করতে পারবে। চিন্তা করুন -
- একজন মানুষ বেঁচে নাই, অথচ লোকজন তার বন্ধু হচ্ছে। আশ্চর্য্য নয় কি?
তবে মৃত্যুর পরে ফেসবুক সত্যই একটি যন্ত্রনার বিষয় হয়ে দাড়াবে। এখানেই শেষ নয়, দুনিয়াতে সোশ্যাল মিডিয়া যেভাবে প্রসার পেয়েছে, তাতে এসব চিন্তা করে দুনিয়াতে সফট বিজনেসও শুরু হয়ে গেছে।
- একটি আ্যাপস আছে, নাম তার - If I die। এই আ্যাপস কিনে দেখবেন, মারা যাবার পরে যাতে কোন ধরনের ঝুট ঝামেলা না হয় ইন্টারনেটে, সেই সংক্রান্ত সাহায্য করার দায়িত্বে নিয়োজিত তারা। অনেকটা আঞ্জুমানে মফিদুলের সফট সংস্করন বলা যায়। এই আ্যাপসে আপনি আপনার last message type করে রেখে যেতে পারেন। আপনি memorialized হওয়ার সাথে সাথে, আপনার নিজের একাউন্ট থেকে আপনার লাষ্ট মেসেজটি অটোমেটিক পোষ্ট আকারে জেনারেট হবে, যেটিতে আপনি হয়তোবা লিখেছিলেন -
- সবাই ভাল থেক। আমি চললাম।
- অরেকটি ওয়েব সাইট আছে, যেটিতে আপনার গুগল, ইয়াহু, পে একাউন্টগুলোর নাম ও ইন্সট্রাকশন সেখানে দিয়ে রাখলে, আপনার মৃত্যুর পরে, সমস্ত ইন্টারনেট চালিত সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফিনানসিয়্যাল সার্ভিসগুলো তারা আপনার নির্দেশ মোতাবেক ঠিকঠাক করে দিবে। নাথিং ইজ ফ্রি, পেইড সাইট। অবাক হয়ে দেখলাম -
- সেই পেইড ওয়েবসাইটে ৩০ দিনের ট্রায়াল একসেস ফ্রি। এই ওয়েব সাইটে ট্রায়াল একসেস দেবার মানে বুঝলাম না, -
- মানুষকে কি সামনের দিনগুলিতে মৃত্যুরও ট্রায়াল দিতে হবে?
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৫০