কাহিনীর শুরু সেদিন বিকেলে হোমসের একটা ফোন পেয়ে। অলস দুপুরে লাঞ্চ সেরে আরামসে পাইপটা ধরিয়ে ইজিচেয়ারে শুয়েছি মাত্র, এমন সময় ক্রিং.........ক্রিং। ভীষণ বিরক্ত হলাম

“ওয়াটসন?”
“হ্যাঁ, বলছি”
“জলদি ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে নাও”
“কেন?”
“দু’ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশ যেতে হচ্ছে”

সময়: ১৩ই নভেম্বর ২২১০, বিকেল ৫টা
স্থান: হাসিনা জুনিয়র 3’র বাড়ি।
সংবাদ: হাসিনা জুনিয়র 3 কে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করল খালেদা জুনিয়র 3’র অধীনস্থ আইএসপিআর। হাসিনার ভাষ্যানুযায়ী তাকে জোর করে বের করে দেয়া হয়েছে, ভাঙা হয়েছে সদর দরজা এবং বেডরুমের দরজা, অপরদিকে আইএসপিআর বলছে তিনি বের হয়েছেন স্বেচ্ছায়।
পাইপে দুটো টান দিয়ে সেই যে বিশাল গেটের দিকে তাকিয়েছে হোমস, আর চোখ ফেরানোর নাম নেই। কি খুঁজছে সেই জানে। দু’বার জিজ্ঞেস করেও কোন উত্তর পাইনি। এমন সময় বলে উঠল, “বাড়ি তো নয়, যেন রাজপ্রাসাদ”। বলে হাঁটা ধরল। আমিও পিছু নিলাম।
গেট দিয়ে ঢুকতেই বিশাল খোলা জায়গা। আগেই শুনেছিলাম যে বাড়িখানা ১৬০ কাঠা জমির উপর দাঁড়িয়ে। এতটুকু জায়গা হেঁটে বাড়িটাতে ঢুকতে হবে বুঝতে পেরে দমে গেলাম

হেঁটে হেঁটে পৌঁছুলাম বিশাল দরজার সামনে। এক ঝলক দেখেই “হুঁ” করে উঠল হোমস। জিজ্ঞেস করতে যাব কি হল, এমন সময় নিজেই বলা শুরু করল “ডালমে কুছ কালা হ্যায়”


আমরা ঢুকে পড়লাম ভেতরে। চারপাশে গোছানো রাজকীয় আসবাবপত্র, সব জায়গায় যত্নের ছোঁয়া। বোঝা যায় যে বাড়িটার মেইনট্যানেন্সের পেছনে মোটা টাকা ঢালা হত। মনে পড়ল খবরের কাগজের একটা লাইন: “৬১ জন কাজের লোক কাজ করে এ বাড়িতে”

ওরে বাপরে, কি বিশাল ড্রয়িংরুম। সাদা কাপড়ে ঢাকা বিশাল সাইজের সোফাগুলো পড়ে আছে তেমনি, সম্ভবত উচ্ছেদের পর ঢেকে দেয়া হয়েছে। চকচকে মেঝেতে নিজের মুখের প্রতিবিম্ব দেখে মনে পড়ল, পরশুদিনের পর আর শেভ করা হয়নি



এরপর একে একে বেডরুম, গেস্টরুম, কিচেন সব দেখে ফিরছি, এমন সময় হোমস আমার একটা হাত টেনে ধরল, “টয়লেটটা একবার দেখা দরকার না???” কি মনে করে আমিও রাজি হয়ে গেলাম।
টয়লেটটা দেখে প্রথম যে কথাটা মনে হল সেটা হচ্ছে, আমার বেডরুমের মত দুটো এখানে এঁটে যাবে। বিশাল বাথটাব আর দেয়ালের কেসে সাজানো প্রসাধনী। সবচেয়ে অবাক হলাম বাথটাবের পাশে একটা ছোট রেফ্রিজারেটর দেখে



গেট থেকে বেরিয়ে যখন হেলিকপ্টারের দিকে হাঁটছি, তখন হোমসের চোখ মাটির দিকে, কিন্তু তার মন মাটিতে বলে মনে হলো না। অনেকটা ভয়ে ভয়েই জিজ্ঞেস করলাম, “দরজাটা দেখেছ?”
“হুঁ”
“কব্জাগুলো?”
“হুঁ”
“দরজা যদি ভাঙা হয়ে থাকে, তাহলে এই দরজাটা নতুন লাগানো হয়ে থাকবে। সেক্ষেত্রে কব্জাগুলোতে চিহ্ন থাকার কথা। অন্তত স্ক্রুগুলোর ঘাট চকচকে হয়ে থাকবেই। কি হলো, শুনছ?”
“হুঁ”
“কিন্তু আমি ভাবছি টয়লেটের ফ্রিজটার কথা। ওটা দিয়ে কি করেন উনি?


“যা দেখবার পরেই দেখতে পাবে। কার কথা সত্যি সেটা একটু ভাবলেই বেরিয়ে পড়বে, আমাকে শুধু একটু সময় দিতে হবে”
“ঠিক আছে।”
লম্বা লন পেরিয়ে হেলিকপ্টারে এসে উঠলাম। ঘুরতে শুরু করল রোটর। বিকট শব্দ হচ্ছে। কেন যেন মনে হল আরও একটা শব্দ কানে আসছে................................
সময়: ১৪ই নভেম্বর ২২১০, রাত ১০টা
স্থান: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চোখ যখন খুললাম, তখন সুন্দরী এক নার্স


পরদিন বিকেলে ওরা আমাকে ছাড়ল, সোজা রওনা হলাম লন্ডন, নিজের বাড়িতে (আমার তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা



সর্বশেষ সংবাদ: হোমসও ব্যর্থ, দু’শ বছরের চলমান উচ্ছেদ রাজনীতি বাঙালীকে উপহার দিল আরেকটা অমীমাংসিত রহস্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:৪১