মোবাইল ফোন-এ কথা বলার জন্য বেতার তরঙ্গের সঙ্গে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ফলে কথা বলার অতিরিক্ত অন্যান্য সেবা প্রবর্তন করা সম্ভব হয়েছে, যেমন: খুদে বার্তা -এসএমএস বা টেক্সট মেসেজ সেবা, এমএমএস বা মাল্টিমিডিয়া মেসেজ সেবা, ই-মেইল সেবা, ইন্টারনেট সেবা, অবলোহিত আলো বা ইনফ্রা-রেড, ব্লু টুথ সেবা, ক্যামেরা, গেমিং, ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক ব্যবহারিক সফটওয়্যার ইত্যাদি। যেসব মোবাইল ফোন এইসব সেবা এবং কম্পিউটারের সাধারণ কিছু সুবিধা প্রদান করে, তাদেরকে স্মার্টফোন নামে ডাকা হয়।
সেলুলার ফোন প্রারম্ভিকভাবে পূর্বসুরীরা জাহাজ এবং ট্রেন থেকে এনালগ রেডিও কমিউনিকেশনের সাহায্যে ব্যবহার করত। মোটোরোলা কোম্পানিতে কর্মরত ডঃ মার্টিন কুপার এবং জন ফ্রান্সিস মিচেলকে প্রথম মোবাইল ফোনের উদ্ভাবকের মর্যাদা দেয়া হয়ে থাকে। তাঁরা ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে প্রথম সফলভাবে একটি প্রায় ২ কেজি (৪.৪ পাউন্ড) ওজনের হাতে ধরা ফোনের মাধ্যমে কল করতে সক্ষম হন।
মোবাইল ফোনের প্রথম বাণিজ্যিক সংস্করণ বাজারে আসে ১৯৮৩ সালে, ফোনটির নাম ছিল মোটোরোলা ডায়না টিএসি ৮০০০এক্স (DynaTAC 8000x)।
মোবাইল ফোন ব্যবস্থার অপারেটররা তাদের সেবা অঞ্চলকে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, পঞ্চভুজ বা ষড়ভুজ ইত্যাদি আকারের অনেকগুলো ক্ষেত্র বা কোষে বিভক্ত করে। সাধারণত ষড়ভুজ আকৃতির কোষই বেশি দেখা যায়। এই প্রত্যেকটি অঞ্চলের মোবাইল সেবা সরবরাহ করা হয় কয়েকটি নেটওয়ার্ক স্টেশন (সচরাচর যেগুলোকে আমরা মোবাইল ফোন কোম্পানির এন্টেনা হিসেবে জানি) দিয়ে। নেটওয়ার্ক স্টেশনগুলো আবার সাধারণত সেলগুলোর প্রতিটি কোণে অবস্থান করে। এভাবে অনেকগুলো সেলে বিভক্ত করে সেবা প্রদান করার কারণেই এটি "সেলফোন" নামেও পরিচিত। মোবাইল ফোন বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলে অনেক বড় ভৌগোলিক এলাকায় এটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে সংযোগ দিতে পারে ।
যদিও মোবাইল ফোন নির্মাতারা তাদের ফোনকে বিশেষায়িত করার জন্য অনেক আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্য যোগ করছে প্রতিনিয়ত, তবুও সকল মোবাইল ফোনেরই কয়েকটি প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এদের অপরিহার্য অঙ্গ। এগুলো হচ্ছে -
তড়িৎ কোষ বা ব্যাটারী - ফোনের শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
কোন ইনপুট পদ্ধতি যার সাহায্যে ফোন ব্যবহারকারীর সাথে ফোনের মিথস্ক্রিয়া বা দ্বি-পাক্ষিক যোগাযোগ সম্ভব হয়। সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ইনপুট পদ্ধতি হচ্ছে কী প্যাড তবে ইদানীং স্পর্শ কাতর পর্দা বা টাচ স্ক্রীন তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সাধারণ মোবাইল ফোন সেবা যার দ্বারা ব্যবহারকারী কথা বলতে বা খুদে বার্তা পাঠাতে পারেন।
জিএসএম ফোনগুলোয় সিম কার্ড থাকে। কিছু কিছু সিডিএমএ ফোনে রিম কার্ড থাকে।
প্রতিটি স্বতন্ত্র ফোনের জন্য একটি করে স্বতন্ত্র আইএমইআই (IMEI) নাম্বার যার সাহায্যে ওই ফোনটিকে সনাক্ত করা যায়।
নিম্নস্তরের মোবাইল ফোনকে প্রায়ই ফিচার ফোন বলে ডাকা হয় এবং এগুলো শুধুমাত্র প্রাথমিক টেলিফোন যোগাযোগ সুবিধা দেয়। আর কিছু মোবাইল ফোন আরও অগ্রসর সুবিধা এবং কম্পিউটারের মত সেবা প্রদান করে, তাদেরকে স্মার্ট ফোন বলে।
বেশ অনেক মোবাইল ফোনের পরম্পরা কিছু নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীকে উদ্দেশ্য করে তৈরী করা হয়েছে। যেমন বহুজাতিক বা কর্পোরেট ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষায়িত ই-মেইল সুবিধা নিয়ে এসেছিল ব্ল্যাকবেরি। সনি-এরিক্সনের গান শোনার বিশেষায়িত 'ওয়াকম্যান' সিরিজ বা 'সাইবারশট' ক্যামেরা ফোন, নকিয়ার এন সিরিজ মাল্টি মিডিয়া ফোন এবং আইফোন সিরিজ বা স্যামসাং এর গ্যালাক্সী এস সিরিজ।
মোবাইল ফোন/সেল ফোন/দূরাভাস যন্ত্র কে শুধু মোবাইল বললে ভুল হবে কারন মোবাইল অর্থ চলমান। তাই মোবাইল শব্দ দ্বারা যে কোন চলমান বিষয়কে নির্দেশ করা যায়। যেমন, মোবাইল কোর্ট, মোবাইল টয়লেট। সুতরাং কথা বলার যন্ত্রকে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করতে সঠিক ভাষার প্রয়োগ করা জরুরী। মোবাইল ফোনের সঠিক এবং ইউনিক ব্যবহার হচ্ছে গতিশীল মানুষের সাথে কথা বলা বা তাদের গতিবিধি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা কারন বাকি সকল ব্যবহারের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৩