somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টিভ জবসের পথ ৩ : আদর ও বকা সমানে সমান!!!

২০ শে আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
এপলের সাফল্যের একটি বড় কারণ স্টিভ নিজে। তবে, তার চেয়ে বড় কারণ ঠিক সময়ে যোগ্য ও মেধাবী লোকদের একজায়গায় জড়ো করতে পারা।
মেধাবী লোকদের নিজের কোম্পানিতে জড়ো করতে হলে দুইটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো মেধাবীদের কাছে কোম্পানিকে আকর্ষণীয় করে তোলা। এই কাজটি কিন্তু সহজ নয়। প্রথমত মেধাবীরা কমবেশি একসেন্ট্রিক, খেয়ালী, উদাসী, আলুথালু এবং উল্টাপাল্টা চিন্তা করে। সেগুলো উদ্ভট মনে হতে পারে। আবার এমন সব কথা বলে যা কী না কোম্পানির খরচের খাতায় যোগ বাড়াতে পারে। এমন লোকদের আকর্ষণ করার একমাত্র হাতিয়ার কিন্ত বেতন নয়!!!

ট্যালেন্টরা কাজের পরিবেশ চায়। ওদের যখন ইচ্ছে হবে তখন ১৬-১৮ ঘন্টা কাজ করবে। আবার ইচ্ছে হলে গিটার বাজিয়ে গান করবে। কাজের পরিবেশটাও উদ্ভাবনের অনুকুল হতে হবে। মেধাবীরা মেধাবীদের বন্ধু হয়। কাজে মেধাবীদের আকর্ষন করতে হলে প্রথমে কয়েকজন মেধাবীকে আনতে হয়। তারপর তাদের জন্য ভাল কাজের পরিবেশ। মস্তিস্কের ধুসর কোষগুলো ব্যবহার করতে হয় এমন সব কাজ তাদের দিতে হবে। এতে চ্যালেঞ্জ হবে। ফলে, তারা বন্ধুমহলে কথাগুলো বলবে। তখন একটা রেফারেল সিস্টেম চালু করতে হবে। মানে, তুমি যদি তোমার মতো আর একজনকে ধরে আনতে পারো তাহলে ৫০০ ডলার বোনাস পাবা!
এইভাবে ট্যালেন্টদের একটি পছন্দের জায়গায় পরিণত হয় এপল। যারা সোজা রাস্তায় চলে না, তাদের নেতাকেও বিপ্লবী হতে হয়ে। স্টিভের মটো হল, “যদি পাইরেটস হতে পারো তাহলে কেন তুমি নেভী হবা”??কাজে এপলে সব পাইরেটসরা হাজির হতে থাকে। পালোর গোদাটাকে তাহলে বড় পাইরেট হতে হয়। স্টিভ নিজেও প্রচলিত পদ্ধতিতে চিন্তা করার লোক নয়। উদ্ভট চিন্তা ভাবনাই তার পছন্দ। কাজে রতনে রতন চেনে।

দ্বিতীয় কাজটি হল ট্যালেন্টদের ধরে রাখা। এটিও কম কষ্টকর কাজ নয়। প্রথমে তাদের বোঝাতে হয় যে, তোমাদের যতো চিন্তা ভাবনা আছে সেটা শোনার লোক আছে। তারপর প্রমাণ করতে হয় পাগলামীতে কোম্পানিও কোন অংশে কম না!
শোনার কায়দার একটি হচ্ছে রিট্রিট। এপলের নিত্য নতুন পণ্য উদ্ভাবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হল এই রিট্রিট। রিট্রিট হচ্ছে পিকনিক স্টাইলে মিটিং ও ব্রেইন স্ট্রংমিং। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রিট্রিটে সবাই প্রাণখুলে কথা বলতে পারে। নিজেদের যত আইডিয়া আছে সেটা প্রকাশ করতে পারে। এখান থেকে বের হয় নতুন চিন্তা, পুরোনো চিন্তার নতুন রূপ।
আর একটা হলো টিম‌মিটিং। স্টিভ ম্যাক টিমের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি প্রতি সপ্তাহে হতো। শুধু তাই নয়, যখনই কোন নতুন পরিস্থিতি হতো তখনই একটা মিটিং হয়ে যেত। কালেকটিভ ডিসিশন যাকে বলে!

এগুলো সব কাজের কথা। ট্যালেন্টদের ধরে রাখতে হলে কোম্পানির মধ্যে বন্ডিং বাড়াতে হয়। সেটি বাড়ানোর জন্য নানানরকম কিছু করা লাগে।
একটি হল সেলিব্রেশন। জন্মদিন হলো প্রধান। ঘটা করে টিমমেটদের জন্মদিন পালনতো এখন প্রায় সব হাউসে হয়। দ্বিতীয় হল কোমপানিতে যোগদানের বার্ষিকী। এর সঙ্গে স্টিভের মাথা থেকে বের হল - মাইলস্টোন উদযাপন, কঠিন বাধা অতিক্রম উদযাপন। কী নয়। প্রতিটি মাইলস্টোন উদযাপনের জন্য কেক কাটা, টি‌শার্ট তৈরি করা এ সবই ছিল স্বাভাবিক। সে সময়ে এপল সম্ববত টি‌শার্ট কোম্পানিতে পরিণত হয়েছিল। এমনকি স্টিভের রুমের একটি টেবিল ক্লথের ডিজাইন হয়েছিল টি‌শার্টগুলোর ডিজাইন দিয়ে।

আর একটি হলো রিকগনিশন, স্বীকৃতি। উদারভাবে টিমমেটদের স্বীকৃতি দেওয়ার রেওয়াজ তৈরি করতে হবে। সেটি একটি ই‌মেইল হতে পারে “Great! Keep up the spirit”। আবার নগদ নারায়নও হতে পারে। সেটি খালি যে পে বিলে এড হবে তা নয়। অন্যভাবেও হতে পারে। একবার ঠিক হলো ম্যাকটিমের সবাই ১০০ ডলার করে বোনাস পাবে। সিদ্ধান্ত হওয়ার পরদিন সকালেই স্টিভ ছুটলো ফ্যাক্টরিতে। প্রত্যেক কর্মীর চেয়ারের সামনে গিয়ে বেঞ্জামিস ফ্র্যাঙ্কলিনকে প্রত্যেকের হাতে তুলে দিলেন। একজায়গায় জড়ো করে নয়!!!
টাকার অঙ্কে সেটি খুব বেশি ছিল না। কিন্তু যে কর্মীটি ম্যাক কার্টনে ঢোকানোর পর সেটির ওপর ঠিকানা লেখা স্টিকার লাগায় তার কাছে কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান একটি “রহস্যময়” বিষয়। সেই চেয়ারম্যান তাকে হাতে ১০০ ডলার দিচ্ছে, পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে এর থেকে আনন্দের এবং অনুপ্রেরণার বিষয় কী হতে পারে?

কাজে নিত্য নতুন ট্যালেন্টরা সেখানে যোগ দেবে সে আর আশ্চর্য কি। নতুনদের দিয়ে নতুন নতুন পণ্য হবে তাতেও কী কোন বিস্ময় থাকে।

শুধু এটুকু নয়। একদিন সকালে স্টিভ তার প্রথম ম্যাকটিমের সবাইকে ডেকে পাঠালেন। ডিজাইনারদের টেবিলে সবাই একটি বড়ো শীটে সই করেছে। স্টিভ আর ওজনিয়াক দুজনেই। এই শীটেরই একটি প্রতিলিপি হয়েছে প্রথম ম্যাকের কেসিং‌এর ভেতেরের দিকের ডিজাইন। প্রথম লটে যত ম্যাক ফ্যাক্টরি থেকে বের হয়েছে সবগুলোতে তাদের সবার সই ছিল।
আপনি জানেন বা না জানেন, তারা সবাই জানতো দুনিয়ার নানা প্রান্তে তারা পৌছে যাবেন, হয়ে উঠবেন এমন একটি পণ্যের অবিচ্ছেদ্য অংগ যা বাজারজাত শুরু হওয়ার পর থেকে মানব সভ্যতার তিন ‘সি’ কে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হচ্ছে মানুষকে।

তিন C হল Connect, Consume and Communicate.



পরের কিস্তি কবে লিখতে পারবো তি জানা নাই! দোয়া করবেন।

সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
১৬টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×