২০১০ সালের শুরু থেকে আমার কাজের একটি অংশের পরিবর্তন হয়। তখন থেকে আমি দেশে উদ্যোক্তার সংখ্যা কীভাবে বাড়ানো যায় সেটা ভেবেছি। আমার মূল ক্ষেত্র যেহেতু আইটি কাজে আমার চিন্তার অনেকখানি জুড়ো সেটা থাকে, এখানেও ব্যতিক্রম নয়। আমি শুরুতে কিছু উদাহরণ খুজতে থাকি। মার্চ মাসে বিসিএসের একটি মেলায় দিনবদলের গল্প শিরোনামে একটি উপস্থাপনা করি। এটি সেমিনার ছিল না। কেবলই একটি উপস্থাপনা। আমি গোটা দশেক উদাহরণ উপস্থাপন করি যেখানে কয়েকজন সফল উদ্যোক্তার বিষয় ছিল যারা বেশিরভাগ আইটির সঙ্গে যুক্ত। তারও আগে, সফটএক্সপোতে ই-কমার্স বিষয়ক সেমিনারে আমি বলি ফকরুদ্দিন বাবুর্চীর গল্প। এসবই ছিল উদাহরণ খোজার অংশ।
একুশ শতকের একটি সফল উদ্যোগ, যার শুরু ৯৬/৯৭ সালে হলো গুগল্ । সিলিকন ভ্যালির নানান উদ্যোগের মতো এখানেও অনেক উদ্যোগ শেষে সেটি সফল হয়। গুগল নিয়ে আমার একটি পর্যবেক্ষণ ছাপা হয়েছে আগে । এর মধ্যে একদিন কুমিল্লা যাওয়ার পথে একজন সফল উদ্যোক্তা জিল্লুরের গাড়ির মধ্যে গুগল নিয়ে একটি বই পেয়ে সেটি পড়তে শুরু করি। সেই বই পড়ার অভিজ্ঞতাটি এখানে শেয়ারও (প্রথম পর্ব --- দ্বিতীয় পর্ব )করেছি। আজকের প্রথম আলোর ছুটির দিনে সেটির একটি সামারী ছাপা হয়েছে ।
আমাদের দেশে কেন জানি আমরা ভাবি উদ্যোক্তারা কেবল বিজনেজ স্কুল থেকে আসবেন। আমার এ উপলব্ধির কারণ কয়েকটা। এক. উদ্যোক্তার বিষয় বা এন্টারপ্রেণারশীপ কেবল বিজনেস স্কুলেই পড়ানো হয়। মনে সায়েন্স স্কুলে এটির দরকার সেই। আবার বিজনেস স্কুলের যতো গ্র্যাজুয়েটকে আমি চিনি (আমার দৌড় খুবই সীমিত) তাদের মাত্র কয়েকজনকে আমি ব্যবসা উদ্যোগী হতে দেখেছি। বেশিরভাগই চাকুরি করতে চান। সায়েন্স স্কুলে কিন্তু এই লাইনে পড়াশোনাই নাই। বুয়েটে আমাদের সময়ে ইইইতে একটি ম্যানেজমেন্ট কোর্স আর একটি কস্ট একাউন্টিং ছিল (এখন কী অবস্থা তা অবশ্য জানি না)।
আবার ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিদের নিয়েও আমরা কখনো মাতামাতি করি না। সিআইপি এবং হালের দুই একটি বেসরকারি উদ্যোগ ছাড়া তাদেরকে আমরা মনে হয় সেভাবে সম্মনিত করি না। একটা কারণ বোধহয় আমাদের সমষ্টিক চিন্তা হলো সৎভাবে ব্যবসা করা যায় না। নিজের মেয়ে, বোনের বিয়ের সময় বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত এখনো চাকুরীজীবীকেই অগ্রাধিকার দেয়।
মজার বিষয় হলো, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমাবর্তন বক্তা হিসাবে কোন সফল উদ্যোক্তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে সেটি আমি শুনি নি (বলে নিচ্ছি, আমার মাত্র দুইটি কান)। হলেও হয়তো খুব সীমিত। অথচ আমরাই কিন্তু বলি .”গুনির কদর না হলে গুনির জন্ম হয় না।”
কাজে উদ্যোক্তা তৈরির কাজটাতে আমরা অনেক পিছিয়ে। আমাদের সফল প্রকৌশলী ও অন্যান্য গ্রাজুয়েটদের মধ্যে যারা বিদেশে যাচ্ছেন তারা কিন্তু সেখানে চাকুরীই করেন বেশি। কিন্তু সেখানে নতুন কিছু করার সুযোগ এখানকার থেকে বেশি।
আমাদের সমাজবিজ্ঞানীরা আমাদের হয়তো বলতে পারবেন কীভাবে আমরা এই অবস্থা থেকে বের হতে পারবো? আপাতত চিন্তার জগৎটা খোলা থাক।
সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।