প্রথম পর্বের লেখার পর দ্বিতীয় পর্বের এই লেখার মাঝখানে অনেকেই বইটি সংগ্রহ করেছেন এবং পড়ে ফেলেছেন। তাদের জন্য এই লেখাটি পুনরুক্তি মনে হতে পারে।
পোস্ট করার কিছুক্ষনের মধ্যে আমি মাশরুর আলী স্যারের (প্রফেসর, সিএসই, বুয়েট) ফোন পাই! (স্যার এখনো সামুতে নিরুপদ্রব হতে পারেননি বলে আমার পোস্টে মন্তব্য করতে না পেরে ফোন করেছেন।) বললেন ইন্টারনেটে বইটির কপি তিনি জোগাড় করতে পেরেছেন। ততক্ষনে আমি দেখলাম সেই লিংকগুলো দেওয়া হয়েছে। নিশাচর নাইমকে ধন্যবাদ।
সম্ভবত আমার এই পোস্টটি গুগল বা ইন্টারনেট রীতিনীতির একটি ছোট্ট উদাহরণ। কারণ, অন্য যে সব মতামত এখানে এবং আমার ফেসবুক পাতায় পাওয়া গেছে সবই একটি গুগল সত্যকে পুন:প্রতিষ্ঠিত করেছে -নেটওয়ার্কের শক্তি। সবার সামগ্রিক সহযোগিতায় আমার ধারণা বিপুল পাঠক বইটি পাঠে সমর্থ হয়েছেন। ইন্টারনেট দুনিয়ায় এইটি একটি বড় শক্তি - সম্মিলিতের শক্তি। একটা সময় ছিল যখন সংগঠিত হতে হলে সংগঠন করতে হতো, এখন সেটা লাগে না। যাদের মনে আছে তারা জানেন, ফিলিপিনো প্রেসিডেন্ট এসত্রাদার পতনের জমায়েতটি হয়েছে এক ঘন্টায় এবং সবাইকে ডাকা হয়েছে মোবাইল ফোনে, এসএমএসে!
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি রিফ্রেসার কোর্সে তাই আমি এই শক্তির কথা বলে এসেছি। কর্মশালার অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন জেলায় কর্মরত বিসিসির প্রোগ্রামার। এই বই থেকে জানা জুকারবার্গের গল্প তাদের বলেছি। আর্ট কোর্সের পরীক্ষার সপ্তাহখানেক আগে জুকারবার্গ আবিস্কার করে এই কোর্সে তার পক্ষে পাস করা সম্ভব হবে না (সে সময় সে একটি নতুন কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় যুক্ত ছিল)। কিছুক্ষন ভেবে চিন্তে জুকারবার্গ বিখ্যাত আর্টিস্টদের বিভিন্ন শিল্পকর্মের ছবি গুগল করে ডাউনলোড করে। তারপর সেগুলোকে একটি কমনস্পেসে আপলোড করে, প্রত্যেক ছবির নিচে একটি টেক্সট বক্স। তারপর তার ক্লাসের সব বন্ধুদের ই-মেইল করে জানায় যে, সে একটি টিউটোরিয়াল তৈরি করেছে, সবাই মিলে সেখানে নিজেদের জানা জ্ঞান জাহির করতে পারে!!! ফলাফল - পরীক্ষা শেষে কোর্স টিচার ক্লাসে এসে বলেছেন পুরো ক্লাসের গ্রেড অন্য যে কোন বারের চেয়ে ভাল হয়েছে। জুকারবার্গ নিজের ভাল করেছে সবার ভাল করার মধ্য দিয়ে!
প্রথম অংশে, গুগোল রীতি, জেফ কয়েকটি অধ্যায়ে বিষয়গুলো আলোচনা করেছেন। প্রত্যেকটি সাব-হেডিং-এর মধ্যে এসেন্সটা খুঁজে পাওয়া যায়। মূল আলোচনা যেহেতু, ব্যবসা, তাই সেটি মুখ্য থাকে সবসময়। আমি কিছু সাবহেডিং এখানে উল্লেখ করছি ---
তোমার সবচেয়ে খারাপ কাস্টোমার তোমার বন্ধু
কঁমার সবচেয়ে ভাল কাস্টোমার তোমার পার্টনার
লিংক সবকিছু বদলে দেয়
সেরা যা পারো তা করো আর বাকীটুকু লিংক করো
ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভাবো
যদি তুমি সার্চেবল না হও, তাহলে তুমি নাই
তোমার গ্রাহত তোমার এড এজেন্সি
ছোট হলো এখন নতুন বড়
মুক্ত সোর্সে যোগ দাও
ফ্রী ইজ এ বিজনেজ মডেল
লাইফ ইজ বেটা!
বি হনেস্ট
ডোন্ট বি ইভিল, ইত্যাদি।
প্রত্যেকটি সাব-হেডে জেফ বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন। কখনো গল্প বলেছেন ( এ কাজটি সবচেয়ে বেশি করেছেন। আমি প্রায়শ ভাবি আমাদের বিজনেজ স্কুল গুলোতে কেন খালি কেস স্টাডি পড়ায় না, খালি খালি কতগুলো নিরস থিউরি পরে কী লাভ - কেবল বইপূর্ণ গর্দভ তৈরি হওয়া ছাড়া। সম্ভবত এ কারণে আমাদের বিজনেজ গ্রাজুয়েটদের প্রথম লক্ষ্য হয় কর্পোরেট চাকুরি কিংবা চাকুরির উন্নতি। কিন্তু হার্বাটের ওরা আগে নিজে কিছু করার চেষ্টা করে, না পারলে চাকরি খুঁজো। দুই জায়গার ব্যতিক্রম সহ।) কখনো উদ্ধৃতি দিয়েছেন। ককনো এনালজি খুঁজেছেন। জুকারবার্গের গল্প কয়েক জায়গায় বলা হয়েছে। বিশেষ করে তার চাছাছোলা কথাবার্তা আর স্যান্ডেল পড়ে সম্মেলনে আসার কথা।
বইএর প্রায় প্রতিটি লাইনে চিন্তার এবং না-চিন্তার খোরাক আছে। সব কিছু মেনে নিতে হবে এমন নয়। কারণ সবাই গুগল নয়। কারো কারো নাম স্টিভ জবস, এপল। কাজে জেফ শেষে এপল আর জবসের কথাতে এসেছেন। গুগল যদি হয় ছড়িয়ে দাও, খুলে দাও তাহলে জবস হবে তার উল্টো। তারপরও তার সাফল্য কম নয়। জেফ বলছেন এর কারণ হলো - এপল হলো এপল, জব হলো জব!
দুই ভাগের পর জেফ একটি কমেন্টারি তৈরি করেছেন জেনারেশর জি - মানে গুগল প্রজন্ম নামে। এবং সবশেষে আলোচনাটি টেনে নিয়ে নিয়েছেন তার ব্লগে।
দ্বিতীয় অংশে ইউটোপিয়া অংশের একটি শিরোনাম হলো - ইউনাইটেড স্টেট অব গুগল। গুগল প্রজন্মের লোকেরা যদি রাজনীতির নিয়ামক হয় তাহলে কেমন হবে। এ অংশটিতে সম্ভবত আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আশার আলো। মুক্ত চিন্তা, যুক্ত থাকার মানসিকতা সমৃদ্ধ রাস্ট্রনায়ক স্বভাবতই রাস্ট্রকে বদলে দিতে পারবে। যেমন ভাবে ইন্টারনেট আর গুগল আমাদের চিন্তার জগৎকে পাল্টে দিচ্ছে।
আমরা যারা পরিবর্তনের প্রত্যাশী তাদের তো বটে, যারা সেটি চান না, তাদের সবাইকে আসলে এই বই পড়তে হবে।
সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।