যাসের সখীপুরে ওর ছোট আপার বাড়ি গিয়েছিল। পরদিন দুপুরে বাসায় ফিরে দেখে, আম্মা বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন! কেমন যেন মনে হল, এভাবে আম্মাকে সে কোন দিন, দিনে দুপুরে শুয়ে থাকতে দেখেনি। এর মধ্যে দেখে-আরে না- আম্মাতো রান্না ঘরে, রান্নার আয়োজন করছেন, কাছে যেতে জিজ্ঞেস করলেন-
ঃ এই বুঝি এসেছ? কেমন আছে রুখসানা? মানে যাসেরের ছোট আপা। যাসের বলল- ভাল, তোমাকে সালাম সালাম জানিয়েছে, আগামী সপ্তা এখানে দুলাভাইকে নিয়ে বেড়াতে আসবে।
যাসেরের মন কিন্তু আম্মার বিছানায়, কে এমন মানুষ! যে আম্মার বিছানায় শুয়ে আছে! আবার চট করে আম্মার রুমে এসে ঢুকল। শরীরটা চাদরের নিচে ঢাকা থাকলে ও পষ্ট বুকের অবস্থানে ঘোষণা করছে- এই চাদরের নিচে একজন মহিলা শুয়ে আছে, শুধু মহিলাও নয় তরুণী ও বটে! যাসেরের বড় তিন বোনের বিয়ে সেই কবে হয়েছে, তারা সবাই বহাল তবিয়তে এখন শ্বশুরবাড়ি। আর ছোট বোন, মাত্র বার বছরের, তাছাড়া সে এখনো স্কুলে। যাসেরের জ্ঞান হবার পর থেকে দেখেছে, বাবা মায়ের বিছানায় ওর ভাই বোনরা কখনো শুয়া বসা করতনা। একটা অলিখিত নিয়ম ছিল ওদের ফ্যামেলিতে। বাবা মার সম্মানার্থে শোয়া তো দুরের কথা, অসম্মান হবে ভেবে কেউ বসার চেষ্টা করত না।
এত দিনের এই অনতিক্রম্য প্রথা ভঙ্গকারিনী, কে এই তরুণী! তাকে এক নজর দেখার খুব ইচ্ছা হল - কিন্তু যাসেরদের বহুস্তর বিশিষ্ট পারিবারিক রক্ষণশীলতার কারণে- সে ইচ্ছা পূরণ করতে ভয় লাগছিল। যাসের কি করছে তা দেখার জন্য ওর আম্মা রুমে ঢোকেন, যাসেরকে উনার রুমে দেখে বললেন- তুমি এ রুমে আবার কি করছ? বলল- না কিছু না, তবে তোমার বিছানায় আজ এ অসময়ে কাউকে শুয়ে থাকতে দেখে অবাক ই হলাম। আম্মা বললেন- ও আমার এক বোন- মানে তোর খালা। ঃ খালা! বল কি আম্মা? জ্ঞান হবার পর থেকে, তোমার কোন বোন ছিল তাতো শুনি নাই! ঃ আরে পাগলা খালী মায়ের পেটের বোন হলেই কি বোন ? আত্মীয়ের মধ্যে বোন থাকতে পারেনা? ঃ তা পারে, তবে তোমার এই বোনটা এ অসময়ে তোমার বিছানায় শুয়ে আছে কেন? ঃ ওর বাড়ি বহু দূরে- সে কোথায়- টাঙ্গাইল বলে নাকি এক জায়গা আছে সেখানে, কাল বিকালে বেচারী বাড়ি থেকে বের হয়েছিল আর আজ দুপুরে এখানে এসে পৌঁছেছে।
যাসেরের মুখটি এবার সত্যি হা হয়ে গেল! তার আম্মার আত্মীয় তা আবার সেই সুদূর টাঙ্গাইল! যে আম্মা নন সিলেটি মানুষের কথা শুনলে বলতেন- বেঙ্গলী মানুষ, বিদেশী মানুষ, আর সেই আম্মার নাকি সেই বেঙ্গলে, বিদেশে আত্মীয় ও আছে! ঃ আম্মা তোমার দাদার ও নানার ইতিহাস বহুবার তো শুনিয়েছ কিন্তু এ ইতিহাস তো একবার ও বল নাই তোমার বংশের লোক বিদেশে বাস করে? আম্মা হেসে বললেন- আমি কি আগে তা জানতাম রে! এই ঘণ্টা খানেক হয়- আমি জানলাম, আমাদের এক আত্মীয় টাঙ্গাইলে থাকেন! ঃ ইন্টারেষ্টিং ঃ হ্যাঁ তোর মামাই তো এই মেয়েটাকে এনে পরিচয় দিল আমাদের ফুফাত বোন বলে। ঃ মামা বলল আর তুমি মেনে নিলে? ঃ না, ও মিথ্যা বলে নাই- বহু আগে আমি ও শুনেছিলাম, আমার দূর সম্পর্কের এক ফুফুর টাঙ্গাইলের এক ডাক্তারের সাথে বিয়ে হয়েছিল। এই মেয়ে নাকি সেই ফুফুরই মেয়ে। ঃ যাক তাহলে সিলেটের বাইরে আমাদের আত্মীয় আছে, তা হলে সিলেট থেকে যে বড়, আমাদের দুনিয়াটা তা বুঝা যাবে। এই বার পিছনে চুড়ীর রিনি ঝিনি শব্দ শুনা গেল, দেবীর যেন অকাল বোধন হল। মুখের উপর থেকে চাদর সরাতে যাসেরের চোখা চোখি হল মেয়েটির। আম্মা পরিচয় করিয়ে দিলেন- এ তোমার এক খালা । আর এ আমার মেঝ ছেলে। মেয়েটি ফর্সা। এত ফর্সা! সাধারণ বাঙ্গালী এত ফর্সা হয়না।মেয়েকে দেখে যাসের বলল- এই ছোট মেয়েটি তোমার বোন? আর আমি ওকে খালা বলব? ঃ ঠিক আপনি নাম ধরেই ডাকবেন। চমকে উঠল
যাসের। মেয়েটা শোয়া থেকে উঠে বসেছে। ঃ আমার নাম ইসমত আরা ঃ ইসমত আরা………….. এ আবার কেমন নাম? ঃ কেন ? ভাল লাগলনা? ঃ কেমন ইস্পাত ইস্পাত নাম। ঃ বেশ তো রেণু বলে ডাকুন। ঃ রেণু! সে আবার কি? ঃ এটা আমার ডাক নাম, আশাকরি এই নামটা ইস্পাত কঠিন হবেনা। ঃ কি জানি বাবা তোমার এই নামটা ও কেমন রেণু পোনার মত লাগছে। আম্মা বললেন- ওকে খালা বলবে। যাসের প্রতিবাদ করে উঠল- না ওকে নাম ধরে ডাকব। মেয়েটি- বলল- আমি আপনার বয়সে ছোট আপনি নাম ধরেই ডাকুন তাতে কোন অসুবিধা নেই।..............................