somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অবনি মণি
অনেক বছর হলো ; তবুও নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মতো নির্জন নিস্তব্ধ মৌন পাহাড়ের মতোই একা পড়ে আছি আজও। একাই আছি এই দীর্ঘশ্বাসের মতো! তোমারও কি শুধু দীর্ঘশ্বাস,গ্রীলে বিষন্ন গোধূলী?

"রোগীরা তো রোগী নয় খদ্দের এখন"

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"রোগীরা তো রোগী নয় খদ্দের এখন
খদ্দের পাঠালেই কমিশান
ক্লিনিক আর ডাক্তার কী টুপি পড়াচ্ছে
বুঝছেনা গর্দভ জনগন
কসাই জবাই করে প্রকাশ্য দিবালোকে
ওদের আছে ক্লিনিক আর চেম্বার
ও ডাক্তার, ও ডাক্তার।।"

প্রসঙ্গ এটা না ; প্রসঙ্গ হলো আমরা সাধারণ জনগণ চেষ্টা করি একটু ডিগ্রীধারী ডাক্তারের কাছে যেতে। আমরা এটাই মনে করি যে একজন ডাক্তারের ডিগ্রি যত বেশি ডাক্তার ততোই ভালো। আসলে কি তাই??

আমি মাসে অন্তত দু'তিনবার ডাক্তার খানায় যাই।নিজের ফ্যামিলির মানুষ ছাড়াও নানাবাড়ির বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন অনেকটা আমার উপর ডিপেন্ড করেই শহরে আসেন ডাক্তার দেখাতে।এরকম মাসে প্রায় ১/২ জন থাকেই।

তো মাসখানেক আগে এরকমই একজন রোগী আসলেন। টিকেট কাটলাম একজন Obs & Gynae Specalist ডাক্তারের যিনি MBBS,BCS (Health),MCPS,DGO (BSMMU) FCPS (Gynae),Associate Professor SOMC.

আমাদের সবার চোখে উনি অনেক বড় ডাক্তার। এবং উনার চেম্বারে এতো ভীড় যে মহিলার চে' পুরুষেরাই চেম্বারের দরজায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বেশি। ডাক্তার তাঁর রুমে এক সাথে ৪ জন করে রোগী ঢুকাচ্ছেন। একটা ব্রেঞ্চ এ বসাচ্ছেন যেখানে চারজনের পা রাখাই কষ্টকর। ঐ ৩ জন রোগীর সামনেই একজন রোগী দেখছেন।হিস্ট্রি নিচ্ছেন,যেখানে প্রাইভেসি বলে কিছু নেই। তার এসিস্ট্যান্ট ওজন নিচ্ছেন।৭ মাসের প্রেগন্যান্সির একটা রোগীর ওজন নিয়ে উনি বলছেন ৩৫ কেজি। অবাক করার মত। পরে অবশ্য ডাক্তার নিজে বললেন 'আরে না; আবার দেখো।দেখা গেলো ৬৮ কেজি। গেলো এই পর্ব।

আসলো আমার রোগীর পালা।উনাকে আমার ঘরের মেশিন দিয়ে ঐদিনই মেপে দেখলাম ৫৮ কেজি।উনার এসিস্ট্যান্ট দেখে কি না দেখেই বলল ৭০ কেজি। ঐ রোগীর প্রেগন্যান্সির বয়স তখন ১ মাস ও হয়নি। উনার সময় কই ভেরিফাই করার।উনি তো বড় ডাক্তার।তাকানোর সময় কই!

দিলেন একটা টেস্ট।খুবই নরমাল। USG!:আমি সাথে সাথেই করায়ে নিলাম।

পরের দিন রিপোর্ট সহ রোগীর হাজবেন্ড নিজে গেলেন রিপোর্ট দেখাতে।ঢুকলেন ও। আমি রিপোর্ট আগেই দেখে নিছি।যেখানে দেখা গেছে তেমন কিছু আসেনি এবং প্রেগনেন্সি নেগেটিভ,দিলেন আরো একটা টেস্ট।কনফার্মেটরী টেস্ট। ওটাতে দেখা গেলো পজিটিভ এসেছে।

রোগীর সিম্পটম ছিল।তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা। ঐ রিপোর্ট টা নিয়ে আবার গেলেন রোগীর হাজবেন্ড। ডাক্তার অনেক কড়া সুরে বলে দিলেন। "প্রেগন্যান্সি পজিটিভ তবে বাচ্চা ক্রিটিকাল সিচুয়েশান এ আছে। ওই বাচ্চা রাখা যাবেনা ; দুই দিনের ভেতরে পেটের ব্যথা না কমলে ভর্তি হয়ে যান।বাচ্চা অপারেশন করে ফেলে দিতে হবে; তা না হলে রোগীর সিচুয়েশান খারাপ হয়ে যাবে। যান বাড়ি যান।গিয়ে দু'দিনের ভেতরে ডিসিশন নিয়ে আমার কাছে আসেন।

উনি আসলো আমার কাছে। আমি আবার আমার SACMO ফ্রেন্ড একজনের সাথে আলাপ করলাম। সে বলল " আরে না,এখনো সময় আছে।বাচ্চার ভ্রুন এখনও টিউবের ভেতরে আছে যার জিন্যে আল্ট্রাতে আসেনাই।সো টেনশনের কিছু নেই দু'তিন সপ্তাহ পর আবার আল্ট্রা করে দেখ পরে ডিসিশন নে। আমি কিছু আশ্বাস পেলাম এবং রোগীকে জানালাম। এতো বড় ডাক্তারের কাছ থেকে আশাহত হয়েই ডিপ্লোমা ডাক্তারের দা'র স্থ হলাম।

পরে হঠাৎ মাথায় এলো ; ডাক্তার চেঞ্জ করি। দেখি অন্যজন কি বলে। মুহুর্তেই ডিসিশন নিয়ে নিলাম। ওসমানী মেডিকেলের একজন রেজিষ্টার,MBBS,FCPS. উনার রোগী হাতে গুনা ১৫ জন।ভিজিট ও কম। প্রতিটা রোগীকে হিস্ট্রি নেয়া ছাড়াও ফিজিক্যাল এক্সাম যা করার করছেন,অমায়িক ব্যবহার।প্রতিটা কথা খুটিয়ে খুটিয়ে শুনছেন। ব্যবহারেই অনেকটা আশ্বস্থ হলাম। বললেন " টেনশন করার কিছু নেই,আমি আরেকটা টেস্ট দেই,তাহলে আপনি ১০০% সিউর হয়ে যাবেন,রোগীর কন্ডিশন কি।এটা করায়ে নিয়ে আসেন তাহলেই বুঝা যাবে"।

নিয়ে গেলাম এবং টেস্ট করায়ে নিয়ে আসলাম।বললেন " টেনশনের কিছু নাই,রোগী ভালো আছেন। পেইন এর জন্যে কিছু মেডিসিন দিচ্ছি, আশা করি কমে যাবে"।

একজন ছোট ডাক্তার,কম ডিগ্রি ধারী ডাক্তারের কাছ থেকে এরকম কথা শুনে সবাই সহজে আশ্বস্থ হবেনা।তবে আমার ভালো লেগেছে তাঁর ব্যবহার কথাবার্তা। আবার আরেকটা টেস্ট দিলেন ৩ সপ্তাহ পর করার জন্যে। আবার ঐটা করালাম। এবং তিনি বললেন "সবকিছু ভালো আছে,নিশ্চিন্তে থাকুন"।

চিন্তা করুন আমরা কি ধরণের খদ্দের। যার রুমের সামনে ১০০/১৫০ রোগী।দাঁড়ানোর মতো চুল পরিমাণ জায়গা নেই,ভিজিট ও বেশি। রোগীর দিকে দু চোখ দিয়ে তাকিয়ে কথা বলার সময় নাই। চোখ বন্ধ করে প্রেসক্রিপশন লিখছেন আর টাকা গুনছেন। অথচ একজন রোগীর জীবনমরণের সিদ্ধান্ত এতো সহজেই দিয়ে দেন।

দিনশেষে এটাই বুঝি সবাই এক না,সমান না।ভিন্নতা আছে।কিন্তু যাদের উপর আমাদের বাঁচা মরার ওছিলা থাকে তারাই যদি আমাদেরকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করিয়ে দেন; আমরা যাব কোথায়? আমরা এভাবে গর্দভ থেকেই যাই যখন অসুস্থ হই।

অতএব ডিগ্রি দেখে যেন আমরা ডাক্তারের সরনাপন্ন না হয়ে ব্যাবহার দেখে যেন হই।তাতে হয়তো আমাদেরই মঙ্গল নিহিত!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×