#রিপোস্ট
#মুলপোস্ট#২০১৬ (কিছুটা পরিমার্জিত)
জীবন থেকে আরো একটা বছর চলে গেলো।প্রতিটা মানুষের জন্যেই এটা অত্যন্ত শোকের ; কারণ তার আয়ুর এক বছর শেষ হয়ে গেলো।গত বছর যেটাকে ভাবতে হয়েছে আমি আরো পাঁচ বছর বাঁচলে হয়তো এটা করব সেটা করবো সেই ভাবনাটাও এ বছর বদলে গিয়ে হয়ে যাবে আর মাত্র চার বছর বাঁচলে কত কিছুই করতে পারবোনা।সময় নেই।এতো অল্প সময়ে কি করা যায়! কোনো কোনো বাবা-মা রা ভাবছেন ছেলে-মেয়েগুলোর মাথা গুজার ঠাই করে দিয়ে যেতে পারবোতো? আবার কেউ কেউ ভাবছেন ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতটা গড়ে দিয়ে যেতে পারবোতো? অথচ দেখা যাবে এই সন্তানগুলো পিতামাতার মৃত্যুর পর তাদের কবরের পাশে যাবারও সময় করে উঠতে পারবেনা দুনিয়াবি ব্যস্ততার জন্য; তাদের নিজেদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ এর চিন্তায় ব্যস্ত থাকার কারণে।জীবন বলতেই এটা।
কেউ হিসেব করছে এ বছর ছাত্রজীবনের এই স্টেজটা শেষ হয়ে গেলো; হাইস্কুল জীবন শেষ, আর কখনো যাওয়া হবেনা স্কুলে ; বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া হবেনা স্কুল পালিয়ে, হৈ-হুল্লোড় হবেনা আর।স্কুল যাবো বলে ঘর থেকে বের হয়ে পাড়ার ক্রিকেট মাঠে খেলা হবেনা আর। কলেজ ফাঁকি দিয়ে বন্ধুরা মিলে আর মাস্তি করা হবেনা।কখনো কলেজের নাম করে বের হয়ে মেয়ে বন্ধু নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া হবেনা কিংবা মেয়েরা তাদের ছেলে বন্ধু নিয়ে ঘুরতে যাওয়া হবেনা আর।কারো কারো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ দিন ছিল এই বছরের শেষ দিন ; ক্লাসের ফাঁকে টং দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা এর আড্ডা হবেনা আর। যে টিচার কে ভালো লাগেনা বলে তার ক্লাসে আধা ঘন্টা দেরী করে ঢোকা হতো, তা হবেনা আর ; অলসতার কারণে ক্লাস ফাঁকি দেওয়া সেও হবেনা কোনোদিন। এইসব সুখের মুহুর্তগুলো আর ফিরে আসবেনা।এই আনন্দ এই উল্লাস এই ফাঁকিবাজি এই আড্ডা এসব আর ফিরে আসবেইনা।ইচ্ছে করলে ওই সময় থেকে একটা সেকেন্ডও ফিরিয়ে আনতে পারবোনা আমরা। এটাই বাস্তবতা।এটাই নিয়ম।
যাদের চাকরি শেষ হলো এ বছর তারা ভাবছেন জীবনের মূল্যটা এখানেই শেষ। আর কীইবা হবে বেঁচে থেকে! দিনগুলো কাটবে কিভাবে ; কি করে পার করবো অলস মুহুর্তগুলো। এতোদিন পরিবারে সমাজে যেভাবে মাথা উঁচু করে বেঁচেছিলাম আজ থেকে আর সেই মুল্যটাই থাকবেনা। স্বার্থপর ছেলেমেয়েগুলো এতোদিন চাকরি ছিল বলেই বাবার ঘরে একবার উঁকি মারতো ; আজ থেকে আর সেটাও করবেনা। কি হবে বেঁচে থেকে! অবসরে যাওয়া এ মানুষগুলো ভাবছেন যে ক'দিন বেঁচে থাকবো দু মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবোত!
শিক্ষক ভাবছেন এই ছাত্রটা এতো জ্বালিয়েছে যে পুরো চাকরিজীবনে এমন ছাত্র আর পাইনি। যাক ; এ বছর কোনোমতে পাস করে বের হয়ে গেলো আর আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। ছাত্ররা ভাবছে যাক এই ভয়ঙ্কর অগ্নিমূর্তি স্যার এর হাত থেকে রেহাই পেলাম। কিন্তু আদৌ কি এরা রেহাই পেলো? শিক্ষক তার এই ডানপিটে ছাত্রটিকেই সব থেকে বেশি ভালোবাসতেন আর ছাত্রটিও এই অগ্নিমূর্তি স্যারকেই সবথেকে বেশি শ্রদ্ধা করত। অথচ তারা তাদের সুখের মুহুর্তগুলো হারিয়ে ফেললো এ বছর।এ সময়গুলো আর আসবেনা।
অনেকেই তার পছন্দের স্কুল,কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যোদ্ধে হেরে গেছেন। আবার অনেকেই তার লক্ষ্য অনুযায়ী চান্স পেয়ে গেছেন। আবার অনেকের ছোটবেলার ইচ্ছে, জীবনের লক্ষ্য ছিল ডাক্তার হবেন ইঞ্জিনিয়ার হবেন ; এর মধ্যে কেউ কেউ সুযোগ পেয়েছেন ; কেউবা পাননি। আবার কেউবা এইখানটায় পৌছেই তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বদলে নিয়েছেন।
কেউ কেউ বাবা হয়েছেন আবার কেউ কেউ মা।কেউ হাজার প্রতীক্ষার পর তার ভালোবাসার মানুষটিকে বরণ করে নিয়েছেন এ বছরই।আবার কারো এমন হয়েছে যে; জীবনের সব থেকে বেশি যাকে ভালোবেসেছেন সে আপনাকে ধোঁকা দিয়ে চলে গেছে অন্যত্র। কেউ কেউ নতুন চাকরি পেয়েছেন ; কেউবা চাকরি হারিয়েছেন। কেউ কেউ নতুন বাড়ি কিনেছেন,গাড়ি কিনেছেন। কেউ তার মাকে হারিয়েছেন কেউবা বাবাকে ; আবার কারো কারো স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছেন কেউবা তার স্বামীকে হারিয়ে ফেলেছেন।এমনও কেউ কেউ আছে যারা গাড়ি এক্সিডেন্টে পুরো পরিবারটিই হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
আবার এমনও হয়েছে আপনি কাউকে আপনার মন থেকে যেকোনোভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে চেয়েছেন কিন্তু সে আপনাকে ভুল বুঝে অনেক অপমান বা লাঞ্চিত করেছে। আপনি কারো কাছে সাহায্য চেয়েছেন কিন্তু সে আপনাকে সাহায্য না করে অপমান করে দিয়েছে। আবার আপনি অনেককে নানানভাবে নানান সহযোগিতা করে গিয়েছেন নিঃস্বার্থভাবে।এ বছরই আপনি নিজের সব থেকে প্রিয় বস্তুটি উৎসর্গ করে দিয়েছেন অন্যের জন্য । আবার এমনও হয়তো হয়েছে আপনার জন্যে হয়তো কেউ তাঁর নিজের জীবনটাই উৎসর্গ করে দিয়েছে।
আরো অনেক কিছুই আছে যা লিখলে আগামী এক বছরই লিখা যাবে ।এ সবকিছুর মধ্যে বেশির ভাগ মানুষেরই অপ্রাপ্তির চেয়ে প্রাপ্তির পাল্লাই ভারী ছিল বেশি।তবুও আমাদের মনে রাখা উচিত যে, সব চাওয়াই প্রাপ্তির ফলপ্রসূতায় পর্যভূষিত হয়না বা হতে পারেনা। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট মানুষদেরও অনেক অপ্রাপ্তি রয়ে গেছে বা থেকে যায়। প্রধানত যেকোন অপ্রাপ্তির পেছনে থেকে যায় সঠিক পরিকল্পনা এবং
সময়োপযোগী প্রতিফলনের অভাব এবং সেখান থেকেই চলে আসে অপ্রাপ্তির ফলাফল যা আমরা হয়ত সহজভাবে গ্রহণ করতে পারিনা কিন্তু এসব অপ্রাপ্তিকে সহজ করে নিলেই ভবিষ্যতের পরিকল্পনাগুলি সঠিক হয়ে প্রাপ্তির খাতায় যোগ হতে পারে।
তবে এই ২০১৮ ছিল আমার জন্যে স্মরণকালের সবচেয়ে কষ্টের বছর। আমার প্রাপ্তি থেকে অপ্রাপ্তিই ছিল অনেক বেশি। এ বছর আমি হারিয়েছি আমার জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আমার ছোট মামাকে। যেই মামার জন্যে আমি নিজে এই ২০১৮ তে একজন মানুষ হয়ে দাঁড়িয়েছি।অথচ যেই মামা আমার এই জীবনের পিছনে সবচেয়ে গুরুতপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিলেন তাঁর সাথে দেখা হয়েছে ২০১৮ তে মাত্র একবার তাও এক থেকে দেড় ঘন্টার সময়ের জন্যে।এটাই ছিল শেষ দেখা। এই হারানোর ব্যথা ২০১৮কে চিরস্মরণীয় করে দিল। এই ঘটনার ঠিক উল্টোটাও হতে পারত ২০১৮ তে!
যাক;তবুও অনেকের এই ছোট জীবনে অনেক অপ্রাপ্তির মাঝে প্রাপ্তির সংখ্যাটি নেহাত কম নয়। হতাশার সময়ে যদি একটি লিস্ট তৈরি করে ফেলি যেখানে জীবনের প্রাপ্তিগুলো লেখা থাকবে। প্রাপ্তি যত ছোটই হোক না কেন সেটি লিস্টে যুক্ত করে ফেললে দেখব অপ্রাপ্তির চেয়ে প্রাপ্তির লিস্টই বেশ বড় হয়ে গেছে।
যে বছরটা গতকালই শেষ হয়ে গেল সেই বছরের অপ্রাপ্তির কথা ভুলে নতুন বছরটিকে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে নতুনভাবে বাঁচার চেষ্টা করি।আমরা জানি যে ,প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট আছে। আমরা যদি মানবশ্রেষ্ঠ হযরত মোহাম্মদ (স)-কে দেখি, তার জীবনেও দুঃখ কষ্ট লাঞ্ছনা বাধা অপমানের কমতি ছিলো না। একজন মানুষ জীবনে যত ধরনের দুঃখ কষ্ট লাঞ্ছনা পেতে পারে, তিনি তার সবই পেয়েছিলেন। তারপরও কি তিনি হতাশ হয়েছেন?
প্রিয়জন বলতে যাদের বোঝায় তাদের সবার মৃত্যুশোক তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে। বাবা মা দাদা চাচা স্ত্রী সন্তান-সবাই মারা গেছেন একে একে। যাদের উপকার করতে চেয়েছেন তাদের কাছ থেকেই পেয়েছেন লাঞ্ছনা, অপমান আর নির্যাতন। তারপরও কি তিনি হাল ছেড়ে দিয়েছেন?
তিনি যে কষ্ট বঞ্চনা পেয়েছেন, পৃথিবীর আর কোনো মানুষই তা পায় নি। আপনার জীবনে নিশ্চয়ই এর চেয়ে বেশি কষ্ট নেই। তাই যখনই খারাপ লাগবে, চিন্তা করবেন যে, আমি কি পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী? আমার চেয়ে কষ্টে কি আর কেউ নেই? দেখবেন যে, এমন অনেকের কথা ভাবতে পারছেন যারা আপনার চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছে। আর তখন আপনার খারাপ লাগাও কেটে যাবে।
নতুন বছর নতুনভাবে আরো সুন্দর কাটুক।সবাই সুস্থ থাকুন।সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫০