হৃদি হঠাৎ করেই আরিয়ান কে নক করলো ফেসবুকে। অনেকদিন ধরে আরিয়ানের গল্প শুনে আসছে।আরিয়ান ইসলামিক গানের একজন বিখ্যাত গীতিকার ও সুরকার । মোটামুটি পুরো দেশেই সে সুপরিচিত এবং জনপ্রিয়। যার কাছ থেকেই হৃদি আরিয়ানের গল্প শুনেছে প্রত্যেকেই এতো এতো প্রশংসা করেছে যে শুনতে শুনতেই হৃদিও তার ভক্ত হয়ে যায়।ইসলামিক গান খুব একটা শুনতোনা হৃদি। কিন্তু আরিয়ানের গল্প শুনার পর থেকে অনেকটাই ঝুকে গেছে সে ইসলামিক গানের প্রতি। আস্তে আস্তে ইউ টিউবে তার লেখা ও সুরের গানগুলো শুনা শুরু করল। তারপরই হঠাৎ একদিন আরিয়ানের ফেসবুক আইডিতে সালাম দিয়ে মেসেজ পাঠালো।
দিন যায়,রাত যায় কিন্তু আরিয়ান উত্তর দেবার পাত্র নয়।এ গল্পটাই সব থেকে বেশি শুনেছিল হৃদি; আরিয়ান রিপ্লাইটা দেবেনা।কিন্তু কে বুঝে কার কথা।হৃদিও দমে যাবার পাত্রী না। সেও মনে মনে বলতে থাকে; আমার মেসেজের রিপ্লাই তোমাকে দিতেই হবে আরিয়ান।তারপর আচমকা একদিন চলেও আসে" ওয়ালাইকুমুসসালাম"। হৃদি মোটেও হতভম্ব হয়নি।সে আশাবাদী ছিল ; আরিয়ান উত্তর দেবেই।এবং তাই হলো।
এইখান থেকে শুরু।ওহ একটা কথা স্কিপ করে গিয়েছি। আরিয়ানের ছোট ভাই হৃদির খুব ক্লোজ বন্ধু ছিল।সে হৃদিকে চ্যালেঞ্জই করেছে বলা যায় যে, আরিয়ান হৃদির সাথে কথা বলবেনা। কিন্তু হৃদি ছিল নাছোড়বান্দা। সে এ যাত্রায় জিতেও গেলো। তিন চারদিন ফেসবুকে চ্যাট করার পরেই হৃদি শুরু করলো নতুন আরেক নাটক।ফোন নাম্বার চেয়ে বসল।আরিয়ান দেবেনা; কোনোমতেই স্বীকার করেনা নাম্বার দেবে বলে।হৃদি ছোট্ট একটা দুষ্টুমি হুমকি দিয়ে দিল ; আপনার নাম্বার যোগাড় করা কোনো ব্যাপার হলো? আপনি হলেন সেলিব্রেটি মানুষ,যে কারো কাছেই পাওয়া যাবে নাম্বার। তারপর হঠাৎ কি মনে করে আরিয়ান নাম্বারটা দিয়ে দিলো। আরিয়ান হয়তো এতো কিছু ভাবেনি; কোথা থেকে একটি মেয়ে এসে হঠাৎ নাম্বার পেয়েই প্রপোজ করে বসবে।
নাম্বার যেদিন পেলো সেদিনই হৃদি রিং দিলো আরিয়ানকে।শুরু হলো ফোনে কথা।যে আরিয়ান জীবনে কোনো মেয়ের সাথে কথাই বললোনা সেই আরিয়ান সব ধ্যান ভুলে হৃদির সাথে কথা শুরু করলো। দু'চারদিন কথা বলেই হৃদি আরিয়ানকে প্রেমের প্রপোজ করে বসলো। আরিয়ান পুরো অবাক হয়ে গেলো। এ মেয়েটি কি পাগল,বড্ড পাগল? নাহলে আমার মতো বেকার ছেলেকে কেন ভালোবাসতে যাবে।মেয়েরা তো এমন হয়না; বেকার ছেলেত কোনো প্রতিবন্ধী মেয়েও চাইবেনা। তবে কেন? কেন এ মেয়ে আমাকেই ভালোবাসছে।
প্রপোজ শুনে আরিয়ান হৃদির ফোনকল পিক করা বন্ধ করে দিলো।হৃদিও নাছোড়বান্দা। সে কখনোই দমে যাবার পাত্রী ছিলনা।অনবরত কল দিয়েই যাচ্ছে। অনেকগুলো রিংয়ের পর একটা ফোন পিক করত আরিয়ান। আরিয়ান স্পষ্ট ভাষায় হৃদিকে জানিয়ে দেয় 'দেখো হৃদি,আমার দ্বারা এটা সম্ভব না; আমার এখন বিয়ের বয়স,আমার বাসা থেকে আমার জন্যে মেয়ে দেখা হচ্ছে। আমি বেকার ছেলে, কোনোমতে একজন হলেই কাজ সেরে ফেলব।এ বয়সে এসে কারো প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়া আমার দ্বারা হবেনা।আমাকে ক্ষমা করো হৃদি। আমাকে আর কল দিওনা প্লিজ।'
হৃদি মোটেও অবাক হলোনা। সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, সে-ই পারবে আরিয়ানের মন গলাতে। সে অনবরত আরিয়ানকে মেসেজ দিয়ে যেতে লাগলো। আমি আপনাকে আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে চাইই চাই।এতে আমার যত পরিবর্তন দরকার,করব।তবু আপনাকে আমি চাই। আরিয়ান অনেক বুঝালো হৃদিকে।হৃদি কোনোভাবেই বুঝতে রাজিনা।
হঠাৎ কি ভেবে যেন আরিয়ান হৃদিকে বললো 'তুমি আমাকে জীবনসঙ্গী করতে চাও ঠিক আছে,কিন্তু আমি তোমার সাথে প্রেম করতে পারবনা। যদি তোমার পারিপার্শ্বিক সবকিছু আমার পছন্দের আওতায় পড়ে তবে আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি।তুমি বিয়েতে রাজি থাকলে আমাকে জানিও, নতুবা আমাকে আর কল দিওনা। হৃদি সাত পাঁচ না ভেবেই বললো আমি রাজি।
এই বলার পনের দিনের মাথায় আরিয়ানের কিছু বন্ধুর সহযোগিতায় তারা বিয়ে করে ফেলল।বিয়ের আগে তাদের দেখা হলো মাত্র দুদিন।ল কয়েক মিনিটের জন্যে।
আরিয়ান বিয়ের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ভেবেছিল এটা স্বপ্ন ; এটা কোনোমতেই বাস্তব হতে পারেনা।হৃদি উচ্চ শিক্ষিতা মেয়ে,পরিবারের সবাই উচ্চ শিক্ষিত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করছে; তার একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে।সে কেন আমার মতো একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হবে।কিন্তু না; সে ঠিকই সময়মত উপস্থিত। সময়ের সাথে সাথে আরিয়ান অবাক হচ্ছে কিন্তু হৃদি মোটেও বিব্রত না; সে খুব এক্সাইটেড ছিল তার সাধনার মানুষটাকে আজ চিরদিনের জন্যে পেয়ে যাচ্ছে। এর থেকে বড় শুকরিয়া আর কীইবা হতে পারে।
যাইহোক। অবশেষে শেষ হলো বিয়ের সকল কাজ। এ তো শুরু হলো নতুন এক যোদ্ধ। দু'জনের পরিবারে এটাকে কিভাবে উপস্থাপন করা যাবে।পরিবার কি মেনে নিবে এ বিয়ে? আরিয়ানের পরিবারের কিছুটা মত থাকাতে আরিয়ান বিয়ে করতে ভয় পায়নি; কিন্তু হৃদি খুব ভালো করে জানে তার পরিবার এটা মেনে নেবেনা। আরিয়ান-হৃদির অন্তিম সময় কাটানো মানেই রেস্টুরেন্ট এ বসে আধা ঘন্টা এক ঘন্টা সময় কাটানো,গল্প করা আর খাওয়া।এই শেষ।আস্তে আস্তে আরিয়ান তার পরিবারে আকারে ইংগিতে বুঝাতে শুরু করল। তার পরিবার কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলও কিন্তু যত সমস্যা ছিল হৃদির। প্রায় ছয়মাস অতিবাহিত হবার পর দুজনে পরিকল্পনা মতো মাঝের মানুষকে দিয়ে হৃদির পরিবারে প্রস্তাব পাঠায়।হৃদির পরিবার সাত পাঁচ না ভেবেই সরাসরি নাকচ করে দেয়।হৃদি মোটেও অবাক হয়না।সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।পরিবার এটা মেনে নিবেই।মেনে নিতে হবেই।সে আরিয়ানকে হারাবার মেয়ে নয়; আরিয়ানকে সে অনেক সাধনার পর পেয়েছে। আরো কিছু দিন পর আবার প্রস্তাব পাঠায়,তাও নাকচ হয়ে যায়।তারপরে আবার; তাও একজন রাজি হয় আরেকজন না। এমনি করতে করতে একদিন হৃদির পরিবার জেনে গেলো যে আরিয়ানের সাথে হৃদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। শুনামাত্রই হৃদির পরিবার আগুন হয়ে যায়।হৃদি কিছুটা ভয় পেলেও সে আশাবাদী সে এই পরিস্থিতি ঠিক করতে পারবে। এবং অবশেষে হৃদি সব প্রতিকূল পরিবেশ কে আস্তে আস্তে অনুকূলে নিয়ে এলো।কিন্তু বিধিবাম, আরিয়ানের বাসায় নানান সমস্যা থাকায় এখনো তাদের রিসিপশন হয়নি; আরিয়ান বেকার ছেলে। সে নিজের শক্তিতে হৃদিকে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করতে পারতেছেনা।
আরিয়ান নিজেকে খুব অপরাধী ভাবছে।কেন সে এ বিয়ে করলো!কেন সে হৃদিকে এতো কষ্টে রাখলো। নিজেরে সে ক্ষমা করতে পারেনা।তবে আরিয়ান আশাবাদী একদিন সে ভালো কিছু করবে।আর কারো জন্যে না হোক তার ভালোবাসার জন্যে সে সব করতে রাজি।
পারিবারিকভাবে দু'জন দু'জায়গায় থাকলেও হৃদির ছোট্ট একটা চাকরির সুবাদে শহর থেকে অনেক দূরে থাকে আজ। ছোট্ট এই চাকরির টাকা দিয়ে কোনোমতে দুজনের ছোট্ট সংসার চলে যায়। হৃদি মোটেও আপসেট নয়,তার স্বামী বেকার। সে এতোটুকুই জানে সে আরিয়ানকে পাগলের মতো ভালোবাসে,আরিয়ানকে ছাড়া তার দম বন্ধ হয়ে আসে। এই চাকরি দিয়েই দুজনের ছোট ছোট আশাগুলো পূর্ণ হয়।এখন ওরা দুজনে খুব ভালো আছে।সুখের সাগরে ভেসেই ওদের দিন অতিবাহিত হচ্ছে।সামনেই তাদের দীর্ঘ পথচলার দু'বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে।
ওদের এই পথচলা যেন আরো সুগম ও প্রসারিত হয়।শুভ কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬