সারাক্ষন আমরা যারা চেষ্টা করি কিভাবে সৎ ভাবে কাজ করা যায় কিন্তু আমাদের দেশের সিস্টেম অনুযায়ী গত কয়েকটা দিনের ভোগান্তি থেকে এটাই প্রমাণ হলো যে ; না,সৎ ভাবে কাজ করতে গেলে দুর্ভোগ পোহাতেই হবে তবু আপনার কাজ হবেনা। যত ২ নাম্বারি করবেন, দেখবেন আপনার কাজ সহজেই উদ্ধার হয়েছে,কোনো ভোগান্তি নেই।
প্রসংগ: বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া অনেক জঘন্য অভিজ্ঞতা।
আমরা সাধারণত যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন: হাসপাতাল,শিক্ষা প্রতিষ্টান,ব্যাংক আরো অনেক কিছুই আছে যেগুলোকে এড়িয়ে যাই।বেসরকারিতে যাই কিছু বাড়তি সুবিধা পাবার জন্যে।পয়সা খরচ করব তবু যেন একটু আরাম হয়।কিন্তু আমরা কি আসলে পাই??
হাসপাতাল থেকে অনেক ভোগেছি।সে ব্যপারে নতুন কিছু বলার নেই।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেও অনেক ভোগেছি,তবে সেগুলো ছিল সরকারি, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান । ছেড়ে দিলাম,এটা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা কর্মমচারীদের বৈশিষ্ঠ্য মনে করে।
কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আমি এই প্রথম।
স্কলার্সহোম, পাঠানটুলা ক্যাম্পাস।বর্তমানে সিলেটের সবচেয়ে বড় বানিজ্যিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কলারসহোম । ছোট বোন (কাজিন) এইচ,এস,সি পাস করেছিল ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে।একটা জরুরী কাজে কলেজের একজন শিক্ষক থেকে একটা সুপারিশ পত্র প্রয়োজন।বোনের ক্লাস টিচারের (মহিলা) নাম্বারে কল দিলাম।তিনি ফোন পিক করলেন,ছাত্রীর ডিটেইলস বলে তার সহযোগিতা কামনা করলাম।বললেন অকে। ওকে বলার আধা ঘন্টা পর তাঁকে আবার ডায়াল করলাম,কল পিক করলেননা,৩/৪ বার দিলাম; না ফোন উঠালেননা।তারপর তাঁর ছাত্রীকে দিয়ে ফোন করালাম; না,তিনি ফোন পিক করলেনই না।আবার একটু পর আরেকটা নাম্বার দিয়ে দিলাম,ধরলেন,মিস আমি.....বলতেই ঠাস করে লাইন কেটে দিলেন। তারও ১০ মিনিট পর কল দিলেন তিনি নিজেই। কল দিয়ে তিনি যে ব্যবহার করলেন বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কোনো রিক্সাওয়ালাও এমন রুডভাবে কথা বলেনি।এমন জঘন্য ব্যবহার করেনি।
একজন শিক্ষক,মানুষ গড়ার কারিগর থেকে একজন অভিভাবক যদি এই ব্যবহার পায় তবে তিনি আর কি মানুষ গড়বেন?? তাকে গড়ার জন্যেই কতৃপক্ষকে আরেকজন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
অনেক আশা নিয়ে কল দিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম তিনি হয়তো জিজ্ঞেস করবেন "ওহ অমুক,সে এখন কি করে? কিসে পড়ছে? কোন সাবজেক্ট পড়ছে??? কিন্তু না; তিনি উলটা তাঁর ন্যাচারাল রুপটা আমাকে বুঝিয়ে দিলেন; তিনি হয়তো জানেননা যে কৃত্রিম রুপ নিয়ে আর যাই হোক শিক্ষকতা হয়না,চাকরি করতে পারেন,মাস শেষে বেতন পেতে পারেন কিন্তু ছাত্রছাত্রীর দোয়া পাওয়া যায়না।
একটা মানুষ তার পরিবারের পরে সব থেকে বেশি সম্মান করে তার শিক্ষককে,সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে শিক্ষককে।কিন্তু এই ধরণের শিক্ষককে সম্মান করা???
তারও দু থেকে তিনদিন পর গেলাম কলেজে, ঢুকতেই সামনে পড়লেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান। বোন সাথে,দুজনেই সালাম দিলাম। সালামের জবাব তো দূরে থাক তিনি চেহারা বানিয়ে রাখলেন বাংলা পাঁচ করে।
বললাম,স্যার ও আপনার এক্স ছাত্রী,এতো সনে এইচ,এস,সি পাস করেছে।
তিনি তাঁর বাংলা পাঁচ চেহারা নিয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন "তো আমি করব??"
স্যার,এই কাজের জন্যে আপনার কাছ থেকে একটা সুপারিশ পত্র লাগত।
বললেন,মানে কি বুঝলামনা।
যিনি একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ;তিনি আমার বাংলা কথা বুঝলেননা।আসলে বুঝলেন না,তা না।তিনি আমাকে গুরুত্ব দিলেননা,আমার কথায় কান দিলেন না।
পরেই বললেন,তাকে তো প্রশংসাপত্র দেয়া হয়েছে,সে পাস করার পর পরই আমরা দিয়ে দিয়েছি।দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন প্রধানকে আমার বুঝাতে হলো এই সুপারিশ পত্র আর সেই প্রশংসাপত্র একই জিনিস না।এই সুপারিশ পত্র আমার এখন দরকার।আর অইটাতো কয়েক বছর আগের।
তারপরও তাঁকে বুঝানোর চেষ্টা করে গেলাম,তিনি আমার পুরো কথাই শুনতে চাইলেননা,একটা সুপারিশ পত্রের ফরমেট দেখালাম,ঐটার দিকে তাকালেনইনা।
ফাইনালি বললেন,আমরা এসব করিনা,আমরা কোনো ঝামেলায় যেতে চাইনা,যাবনা।তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব দিয়ে দিয়েছি।
নিরাশ হয়ে তার কাছ থেকে সরে গিয়ে লবিং এর চেষ্টা করলাম। হলোও।কিন্তু একদিন সময় নিলেন।পরদিন দেবেন। তারপর জনৈক ব্যক্তি বললেন "সে (ছাত্রী) যেভাবে নাক মুখ ঢেকে এসেছে কিভাবে চিনবে তিনি তাঁর ছাত্রীকে কিন্তু তিনিই আমাদের সবগুলো প্রতিষ্ঠান থেকে সব চেয়ে ভালো প্রধান"।
এই যদি হয় ভালোর অবস্থা তবে বাকীদের কি অবস্থা আল্লাহই মালুম।তিনি যে নিকাবি ছাত্রী পছন্দ করেননা,তাকে দেবেননা এই কথাটা আগে বললেই পারতেন।
যাইহোক; আজ আবার গেলাম। ফ্রন্ট ডেস্কে বসা কর্মচারীর ব্যাবহার???? কেউ হয়তো তাদের বাড়িতে এমন জঘন্য কুকুরও পালবেনা কিন্তু স্কলারসহোম নামক ব্র্যান্ড এই ধরনের কর্মকর্তা/কর্মচারী পালতেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক দিয়ে বর্তমানে সব থেকে বড় ব্রান্ড স্কলারসহোম(সিলেটে)।সেই জায়গা থেকে আমরা যেখানে এমন সার্ভিস পাচ্ছি তবে বাকীদের না জানি কি অবস্থা।
ছাত্রছাত্রী পাস করে বের হয়ে গেলেই তার সাথে তার অভিভাবকের সাথে এমন ব্যাবহার করতে হবে???এ কেমন শিক্ষা দিচ্ছে এরা।
ছোট ছোট পরিসরে চাকরি করা চাকরিজীবীদের মন মানসিকতা জঘন্য(কেবলি চাকরির ক্ষেত্রে) থাকে এটা অনেকেই বলে ;আসলেই এটাই ঠিক।
বাংলাদেশে এমন একটা সুপারিশ পত্রের জন্য কেউই সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির কাছে যায়না; ৯৯% মানুষ নিজেরাই তৈরী করে নেয়।মানে ২ নাম্বারি পথ,অসদুপায়। আমার গত ৪/৫ দিনের অভিজ্ঞতা এটাই বলে যে এদেশে সৎ উপায়ে কিছু করাই যাবেনা।যত ২ নাম্বারি করবেন ততই ভালো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫