কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়া, সোনালু,কনকচাঁপা, জারুলসহ নাম না জানা গ্রীষ্মের হরেক রকম বাহারি ফুলের শুভেচ্ছা।
নিশ্চয় খুব ভালো আছো । আর তোমার মতো এক নিষ্ঠুর-নির্দয় ,বেদরদী পাথর পাষাণ জড়কঠিন হৃদয়ি ,একজন স্বার্থবাদী মানুষের ভালো না থাকবার কথাও নয় ।
হ্যাঁ, প্রকৃতি থেকে বিদায় নিয়েছে বসন্ত আর প্রচন্ড খরতাপ নিয়ে এসেছে গ্রীষ্ম ; সেই সাথে আমার জীবন থেকেও হারিয়ে গেলো রঙের ছটা। ব্যস্ত এই নগরীতে সোনালুর নান্দনিক সৌন্দর্য নাকি থমকে দেয় পথিকের পথ চলা আর আমাকে থমকে দিলো তোমার চূড়ান্ত অবজ্ঞা আর অবহেলা।
বুঝতে পারছি , আমার এতোসব বিরূপ বিশেষনের আতিশয্যে তুমি প্রচন্ডভাবে ভারাক্রান্ত । এ চরম আঘাতে অবসন্ন ক্লান্তিজড়া হৃদয়ে হয়তো ভাবছো আমি এতোবড়ো স্পর্ধা কোথায় পেলাম ,তাই না ? জানি তোমার একপেশে নির্দয় পাষাণ হৃদয় আমার এ গ্রানাইটকঠিন তিরস্কারে হত-বিহবল । তোমার প্রতিক্রিয়াশীল সত্ত্বায় নিশ্চয় এখন গুলিবিদ্ধ পাখির মত যণ্ত্রণায় ছটফট করছো । তীব্র প্রতিশোধ স্পৃহায় ভীষণ প্রতিহিংসার জ্বালায় তুমি সুদীপ্ত চেতনায় চরম উত্তপ্ত ।
তারপরও বলি ---
দিনের পর দিন আমার প্রতি তোমার নিদারুণ অবিচার ,নিষ্ঠুর-নির্দয় অবহেলা ,আমাকে যথেষ্ঠ মর্মপীড়ায় ক্ষত-বিক্ষত করেছে । এরপরও আমি তোমার মানসপটে দেখেছি অবজ্ঞার বিভৎস বিভীষিকাময় হিংস্র হায়নার ভয়াল প্রতিকৃতি ।যার মধ্যে বিন্দুমাত্র কোন সুবোধ উদয়ের লক্ষণ কিংবা অনুতপ্ত বা অনুশোচনার আভাসমাত্র ছিলনা ,যা এ ব্যথিত হৃদয় কিঞ্চিত প্রশমিত করতে পারে ।আজ আমার এ প্রতিবাদের ভাষা অতিমাত্রায় তীক্ষ্ণ ও প্রখর - এ বিষয়ে আমি সম্যক অবগত ।তথাপি বলতে পারো -কেন এত লাঞ্চনা-গঞ্জনা ? একবার বলবে কি - কেন এতো নেতিবাচক বজ্রকঠিন বিশেষণের বিরঞ্জন ? কেন আমার এ বিরস খরতপ্ত মরুদ্যান রচন ? আমার এ আঁধার-কালো অধ্যায়ের অবতারণা কি কেবল-ই নিছক ?অরুণাদীপ্ত উষার প্রভাতে আমার এ বিষবাষ্প উদগীরণ কি শুধু-ই নিরর্থক ? - প্রশ্ন রইল তোমার বিবেকের প্রতি ।
গ্রীষ্ম আসতে না আসতেই প্রকৃতিতে ফিরে আসে চঞ্চলতা। কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক জীবনে প্রশান্তির একটুখানি ছোঁয়া পেতে, কাঠফাটা রোদ্দুর আর দাবদাহে ক্লান্ত শরীর খুজেফেরে ছায়া- সুশীতল বৃক্ষরাজি। অথচ আমি সে তীব্র দাবদাহে পুড়ছি প্রতিক্ষন। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যের পানে মানব মন যখন ছুটে চলছে প্রশান্তির আশায় তখন আমি এই উষ্ণঋতুর রুদ্র-কোমল বৈপরীত্যের কাছে হার মেনে গিয়েছি ।
রোদ্রতপ্ত গ্রীষ্মদিনের অবসাদকে দূরে ঠেলে আমার মনে সতেজতা ফিরিয়ে আনতে পারিনি।আমি-তো কেবল তোমার পুষ্প সুলভ মালতী সৌরভের মাধুর্য চেয়েছিলাম-তবে কেন আমায় এমন বিষকাঁটায় রক্তাক্ত করলে ? - না ,অভিযোগ নয় ।আর কোনরূপ প্রতিহিংসাও হৃদয়ের গহীনে পুষে রাখতে চাইনা -তাই তোমাকে আরেকবার সুযোগ দিচ্ছি - তোমার অনুভূতিশীল অন্তরাত্মা দিয়ে এ বিদগ্ধ অন্তর উপলব্ধি করো । প্লিজ বাটখারা আর দাঁড়িপাল্লায় আর নয় ! এ মনের ওজন যে ঐ মণের থেকেও অনেক ভারী ।
মানব মনের অস্তিত্ব চিরসত্য ! তবে এ সত্য যে ইন্দ্রিয়গাহী নয় ।দেহ ও আত্মার মাঝে ঠিক যেখানটায় মনের অবস্থিতি ,যেখানে যে লৌকিক দৃষ্টিশক্তি পৌছতে পারেনা । লোকচক্ষুর অন্তরালে মন তাই একাকী গুমরে কাঁদে ।
আজ আমি নির্বাসিত ।
তোমার কাছে যে প্রত্যাশা রেখেছি ,তোমাকে নিয়ে যতটা স্বপ্ন বুনেছি - সবকিছু থেকে । আজ আমি নির্বাসিত জগতে তোমার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবার বজ্রকঠিন সংকল্প নিয়ে একাকী চলেছি অনন্ত আঁধার রাতের পথ । আজ আমি আলোহীন পৃথিবী ভালোবেসে জেগে আছি রাত্রির গুহায় । নিরন্তর আঁধারের হাতছানি আজ আমার একমাত্র গন্তব্য । নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকারের তিমিরে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে-ই কেবল এখন আমার ক্ষয়িষ্ণু জীবন বহমান । অন্ধকারের প্রতি আসক্তিপূর্ণ আমার এ পথ হাটা অব্যাহত থাকবে-যতদিন না তোমার সুমতি উদিত হয় । আর তুমি আমার আহ্বানে সাড়া দিবে ততদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে আমার এ নির্বাসন ।নির্বাসিত জগতে অন্তহীন কণ্টকাকীর্ণ বন্ধুর পথ চলা । আমার এ নিশাচর হয়ে নষ্টের কষ্টে অবগাহন ,নিরন্তর আঁধার-কালো জীবন যাপন ।নিষিদ্ধ গন্ধম ফলের দুর্গন্ধময় তিক্ত স্বাদ আস্বাদন এবং তার বিষাক্ত ছোবলে সুতীব্র বাঁচার আকাংঙ্কা নিয়ে মরণ যণ্ত্রণায় ছটফট করে কাতরানো । এবং পরিশেষে সকল আকুতি অন্ধকারে ফেলে রেখে তৃষিত বুভুক্ষু আত্মায় তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে দিনযাপন অথবা অতৃপ্ত অপূর্ণ অবসাদগ্রস্হ হৃদয়ে গভীর বিষন্নতায় নীরব নির্জন রাতে একাকী নিঃসঙ্গ জেগে থাকা ।
নির্বাসিত জগতে আজ আমি একা ,ভীষণ একা । পাশে দাঁড়াবার মতো আজ আর কেউ নেই ।সামনে পিছনে ধুধু অন্ধকার আর উপরের আকাশটা ঘন কালো মেঘে ঢাকা । জীবন বৃত্তের পরিসীমায় দিগন্ত বিস্তৃত অসীম শূন্যতা । অস্তগামী নক্ষত্রের ন্যায় ধূসর এ জীবনের প্রতিটি বালুচর । রিক্ত নিঃস্ব এ জীবনে কেবল সীমাহীন হাহাকার । এ গ্লানিবহ জীবন কেবল নীরবে কাঁদায় । না পাওয়ার ভারাক্রান্ত এ হৃদয় নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকারে হাতরে ফেরে জীবন ধারনের জন্য কিঞ্চিত অবলম্বন । নিঃসঙ্গ জীবনে নিবিড় একাতিত্ব এ ধূসর জীবকে করেছে আরও মরুময় । আজ এ চেতনায় বিকশিত কেবল বিষের দহন !
আজ আমার মনে কেবল অপেক্ষা রূপময় বর্ষার আগমন।যেন এই মনটা বিষণ্নতার আবেশে নিমগ্ন থাকে তার নৈসর্গিক নিরবতায়।আমার এ মনে গ্রীষ্মের যে প্রখরতা বইছে তা বিদায় দিয়ে যেন স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে দেয় আষাঢ়,যেন ফিরে পাই শান্তি অফুরান! দিশেহারা মন যেন হারিয়ে যায় মেঘমালার দেশে; দূর-দিগন্তে যেখানে মেঘেরা পাড়ি জমায় কিংবা যেখান থেকে মেঘেরা ভেসে আসে শহর-বন্দর, গ্রাম-জনপদ ভিজিয়ে দিতে।
এমনি অনেকটা দিন চলে যাবে শোকের কড়া গুণে ;শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা অথবা বসন্তে কিইবা যাবে আসবে!!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ সকাল ৯:৩৬