দীর্ঘ তিরিশ বছরের চাকরিজীবনের আজ শেষ কর্মদিবস ছিলো আমার আম্মার।আমি জানি পৃথিবীতে বেঁচে থেকে এর চেয়ে নিদারুন শোকের আর কিছু হতে পারেনা একজন কর্মজীবি মানুষের জন্যে। এতোগুলো বছর শিক্ষকতা করে পেয়েছেন অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর ভালোবাসা আর কর্মসস্থলকে ভালোবেসে নিজের অর্জিত সমস্ত কিছু ব্যয় করেছেন সেই জায়গাতে। এই ভালোবাসার জায়গা থেকে অবসর চায় কয়জন!! এই অবসরযাপন যে কতটা কষ্টকর সেটা সেই ব্যক্তিই জানে যিনি ঐখানটায় পদার্পণ করেছেন।
নিজের ৫৯ বছরের জীবনের সবথেকে উত্তম সময়গুলোই হয়তো কেটেছিল তাঁর কর্মসস্থলে ; যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক।
যাইহোক ; আমার পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি আমার আম্মারই হাতে। আমার অংক,ইংরেজীর হাতেখড়ি আম্মারই হাতে।আমার মা বলেই নয় একজন শিক্ষক হিসেবে অংক এবং ইংরেজিরর জন্যে প্রাইমারি,সেকেন্ডারি দুটোতেই আম্মাই ছিলেন আমার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
প্রাইমারী, সেকেন্ডারি লেভেলে আম্মার বেঁধে দেয়া নিয়মগুলো ছিল অত্যন্ত কঠোর ; হয়তোবা সেই কঠোর নিয়মকানুন গুলো সেদিন মেনে এসেছি বলেই হয়তো আমি ছাড়া আমার বড় চারভাইবোন আজ গ্রেজুয়েশন করে একেকটা অবস্থানে আছে।আমি খেয়াল করেছি আম্মা একেকটা অংক বুঝানোর জন্য যে কতশত বার চেষ্টা করে যেতেন ; আর সেই জন্যেই দেখতাম তাঁর অনেক ছাত্রই অংক বুঝতে আসতো তাঁর কাছে। আমার ভাইবোন ছাড়াও তাঁর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী আজ বেশ ভালো অবস্থান নিয়েই আছে।হয়তোবা কেউ মনে রাখছে হয়তোবা না,কিন্তু শিক্ষক হিসেবে তিনি কি করে ভূলে যাবেন সেইসব দিনগুলোর কথা।
জীবনের একটা পর্যায়ে এই অবসরটুকু কেউ না চাইলেও নিতে হয় ; কিন্তু এই অবসর যে শারীরিক অসুস্থতা থেকেও করুণ হয়ে যায়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে দিন যাপন করা কতোটা দুঃখ ভারাক্রান্ত হতে পারে এইটা এইসব অবসরে যাওয়া মানুষগুলোই অনুধাবন করতে পারেন।
আল্লাহ যেন আমার জীবনের প্রথম শিক্ষক/আমার অভিভাবক/আমাদের মাথার উপরের ছাতার একটা অংশ/আমাদের আম্মাকে দীর্ঘজীবি করেন ; সুস্থভাবে চলাফেরার করার তাওফিক দান করেন। এই করুণ মুহূর্তে আম্মার কাছে উপস্থিত থেকে কয়েকটা সেকেন্ড কাটানোর মতো সময় হয়ে উঠেনি আমার ; আর এই হলাম আমরা সন্তান!!!!!