ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে ক্লাশের পড়া কেন পড়তেন?
ভাইরাল হওয়ার জন্য!
কথাটা হয়ত সত্য নয়, হয়ত মিথ্যেও নয়! কিন্তু আমি যতদূর জানি, তাঁর প্রদীপে তেল ছিল না। তেল কেনার মত পয়সাকড়িও সেদিন হাতে ছিল না। সেইজন্যেই প্রতিবেশীর জানলা নিঙড়ে রাস্তায় পড়ে থাকা এক চিলতে আলোর মুখে বই মেলে বসে পড়তে হয়েছিল তাকে।
এইটা হল গল্প। এই গল্পের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে কেউ যদি মনে করেন, ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে দুইচার পাতা বিদ্যাপাঠ করলেই বিদ্যাসাগর হয়ে যাবেন, আমরা নির্দ্বিধায় বলব আপনি ভুল করছেন। আপনি শুধু বাইরের খোলসটাই দেখলেন। ভেতরের ডেডিকেশনটা দেখার মত চোখ এখনো হয় নাই।
মানিক বাবুর কোন একটা গল্পে পড়েছিলাম, বাজারে ভাড়া খাটা এক পতিতা জাত-যাওয়ার ভয়ে মুসলমান খদ্দেরকে ঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না। এই গল্প পাঠ করে এককালে আমি নিজেই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছি। পতিতার আবার জাত যাওয়ার ভয়? তখন বয়স ছিল অল্প। আমি শুধু মেয়েটার ভাঁড়ামিটাই দেখেছি। ওর ভেতরের যৌক্তিক ক্ষত কিংবা অযৌক্তিক সান্ত্বনাগুলি দেখার ক্ষমতা তখনো অর্জন করি নাই।
কদিন আগে একটা বইয়ের শিরোনাম দেখলাম,"সকলেই জান্নাতে যেতে চায়, কিন্তু মরতে চায় না কেউই!"
কথাটা সবার ক্ষেত্রে হয়ত সত্যি নয়। কিন্তু আমার মতো বদ মানুষের জন্য অবশ্যই সত্য। জান্নাতে আমি অবশ্যই যেতে চাই। কিন্তু এত্ত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না। কেন মরতে চাই না? কারণটা খুব সোজা। মরার আগে একবার অমরত্বের স্বাদ পেতে চাই। অমরত্ব আসবে কোত্থেকে? উত্তর নেই জানা। আবছা ভাবে এইটুকু শুধু টের পাই, ইলিয়াড, ওডিসি, গিলগামেশ কিংবা রামায়ণ-মহাভারতের মতো দুই একটা মহাকাব্য যদি লিখে ফেলতে পারি, কয়েক হাজার বছরের জন্য নিজের নামটা ইতিহাসের পাতায় ছাপার হরফে লিখা হয়ে যাবে। আমি মরে গেলেও আমার নামটা থেকে যাবে!
এইটা নিঃসন্দেহে অমরত্ব নয়। এক ধরণের অযৌক্তিক সান্ত্বনা। মানুষ সান্ত্বনা ভালোবাসে। আমি তার ব্যতিক্রম নই।
বছর খানেক আগে খুব স্বাদ করে একটা বইয়ের দোকান দিলাম। বই চলছে না। মানুষ দোকানের পাশ দিয়ে শিষ বাজিয়ে চলে যায়, আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। পাশেই ছিল বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। সেখান থেকে মানুষ লাড্ডু কেনে, কদমা কেনে, লাচ্ছি খায়, শরমা খায়... কিন্তু বই খায় না। বইয়ের ভাঁজে ধুলা ধরছে। ভেতরে ভেতরে ইঁদুর আর উইপোকার খুব সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে। দোকান ভাড়া বাকি পড়ছে। কি করি? কি করা যায়? মাথা গেল গরম হয়ে। চরাচরে তখন কাঠফাটা গরম। হিসেব করে দেখলাম, এই গরমে ডাবের বাজার খুব জমজমাট। মানুষ ধুমায়া ডাব খাচ্ছে।
দোকানের চালান থেকে কিছু টাকা আলাদা করে ৩০০ ডাব আনলাম। বইয়ের চালান বন্ধ রেখে তার সামনেই কচিকাঁচা ডাবের পসারা সাজিয়ে বসলাম। কিন্তু কই, রহিম-করিম-যদু-মধু সকলের দোকানেই খুব ভীড়। দিনে দুইশ তিনশ ডাব বিক্রি করে দিচ্ছে, অথচ আমার দোকান ফাক্কা, কেউ ফিরেও তাকায় না।
অনেক ভেবেচিন্তে টের পেলাম, মানুষ আমার কাছে ডাব কিনতে আসে ঠিকই, কিন্তু ডাবওয়ালাকে খুঁজে পায় না। কাছে এসে জানতে চায়,"ভাই ডাব কার?"
আমি বলি,"আমার।" ওরা বিশ্বাস করে না। জানতে চাই,"কয়টা নেবেন? বাসায় নেবেন, নাকি এখানেই কেটে দেব?"
আমার কথা শুনেই খদ্দেরের ভ্রু কুঁচকে যায়। পরিচ্ছন্ন বাচনভঙ্গি আর ফর্শা জামাকাপড় দেখে ভাবে মশকারা করছি। আশপাশে চোখ ফেলে সত্যিকারের ডাবওয়ালা খুঁজে।
আমি বড় আশান্বিত হৃদয় নিয়ে খদ্দেরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি,"আহা, যদি একটা ডাব কিনত!"
তিনদিন ধরে তীর্থেরকাক হয়ে বসে আছি। কেউ একটা ডাব কিনছে না।
খদ্দের আমার চোখের ভাষা বুঝে না। আমার দিকে ফিরেই তাকায় না, বুঝবে কেমনে? পায়ে পায়ে হেঁটে চলে যায়। পেছন থেকে দরদী গলায় জানতে চাই,"আন্টি ডাব দেবেন না?"
"নাহ, পরে..।"
কেউ কেউ অনিচ্ছুক গলায় জানতে চায়,"দাম কত?"
"বড় চল্লিশ, ছোটটা ত্রিশ টাকা।"
"আচ্ছা, যাওয়ার সময় নিয়ে যাব।"
যাওয়ার সময় আমি আন্টিকে দেখি রাস্তার বাম পাশ দিয়ে কানাচে কানচে চলে যাচ্ছেন। ভুলেও চোখ ফিরিয়ে এইদিকে তাকান না। কেন তাকাতেন না? নিজেকে প্রশ্ন করেছি। প্রশ্ন করে উত্তর বের করেছি। ডাব বেচতে হলে আমাকে ডাবওয়ালার মত জামাকাপড় পরতে হবে। ভাঙা স্বরে টেনে কথা বলতে হবে। উপযাচক হয়ে ডাব গছিয়ে দিতে হবে। দাম নিয়ে কচলাকচলি করতে হবে।
বাধ্য হয়ে তাই করলাম। প্যান্টের ভাজ ভেঙে হাটু অবধি গুটিয়ে নিলাম। রঙচটা দেখে একটা টিশার্ট পরলাম। উপরি হিসেবে মাথার চুল প্রায় ন্যাড়া করে ফেললাম। কোমরে একটা গামছা বেঁধে, হাতে চকচকে বটি নিয়ে পরদিন দোকানে বসলাম।
প্রথম দিন বিসমিল্লাহ বলে নিজেই কচি দেখে একটা ডাবের মাথা ফাকা করে পানি খেলাম। তারপর আরেকটা, তারপর আরও একটা! (একে বলা হয়, প্ররোচনা !) ভাঙারির দোকানদার নাজিম ভাইকে ধরে এনে ডাব খাওয়ালাম। বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের চাচাকে ডেকে এনে ফাউ আরেকটা ডাব কেটে খাওয়ালাম। (এই ছিল বিজ্ঞাপন!) বিজ্ঞাপন দেওয়া শেষ করে চাচার কাছেই জানতে চাই,
"চাচা, মিষ্টি কেমুন?"
"খুব! মাশাল্লা ভালো ডাব এনেছেন!"
"দুপুরের খানা খাইতে বাসায় যাইবেন না?"
"যাব।"
"চাচিজানের জইন্য নিয়ে যান একটা। কচি দেইখ্যা কাইটা দেই?"
চাচাজি প্রথমে আমতাআমতা করেন। কিন্তু একটা ফাউ খেয়েছেন বিধায় একটু দায়বদ্ধতাও জন্মায়। হাসিমুখে বলেন,"দাও একটা। দাম কিন্তু বেশি হয়ে যায়। পঁচিশ হলে.."
"আপনার সাথে দামাদামি কি করব, দেন, পঁচিশই দেন..!"
এইভাবে শুরু। দোকানের পাশে কর্মক্লান্ত রিকশাচালক এসে দাঁড়ায়। আমি স্বগতোক্তি করি,"আ রে শুয়ারের বাচ্চার গরম রে। মানুষকে কুত্তা পাগল কউরা ছাড়ব এই গরম!"
রিকশাচালক ফিরে তাকায়। আমারে দেখে। ডাব দেখে। উদাস গলায় জানতে চায়,"ও মিয়া, ডাব কত?"
"কোনডা লাগব। বড্ডা না ছোড্ডা?"
"কোনডা কত?"
"বড্ডা চল্লিশ, ছোড্ডা তিরিশ।"
"ধুর মিয়া, ডাবের দাম অত না। ধর বিশ ট্যায়া অইলে দেও.."
"বিশে অয় না চাচা। পচিশ দিয়েন..।"
চাচার সম্মতি পাওয়ার আগেই কিন্তু কচি দেখে একখানা ডাব হাতে নিয়ে ঘুরানো শুরু করে দিয়েছি। (একে বলা হয়, মোটিভেশন!) সম্মতি পেতেই কায়দা করে একটা কুপ দিয়ে ডাবের মাথা কেটে একটা স্ট্র ডুকিয়ে দিয়েছি।(একে বলা হয়, প্রফেশনালিজম!)
মাঝেমধ্যে কলেজে পড়া কিউট কিউট মেয়েগুলা আসত তাদের বড়ফ্রেন্ড আর পাড়াত ভাইদের সঙ্গে নিয়ে।
"মামা, ডাবের জোড়া কত?"
"জোড়া পঞ্চাশ।"
"কাট, সুন্দর দেখে দুইটা কাট। পানি মিষ্টি হবে ত? মিষ্টি না হলে কিন্তু পয়সা পাবা না!"
"মিষ্টি অইব।"
"আচ্ছা, কাট.."
পানি খাওয়া শেষ হলে জানতে চায়,"ভেতরে শাঁস আছে কি?"
"আছে মনে অয়।"
"কেটে দাও।"
আমি ডাব কাটি, শাঁস তুলে দেই। উচ্ছিষ্ট ডাবের খোল আর ছুবড়াগুলি নিজের পাশেই জমিয়ে রাখি। ততদিনে জেনে গেছি, এইটাও এক ধরণের বিজ্ঞাপন। খোলের স্তুপ যত উঁচু হয়, ব্যবসার গতি তত বাড়ে।
দুই দিনেই প্রথম চালানের সব ডাব ফুরিয়ে গেল। দ্বিতীয় চালান নিয়ে আসলাম। তৃতীয় চালান নিয়ে আসার আগেই বিরাট এক ধাতানি খেলাম হবু শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে। শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হবার পর, আমার নাদুসনুদুস সিজিপিএ (3.94 out of 4) দেখে সকলেই আশা করেছিলেন, কোন একটা পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনায়াসে জয়েন করার ক্ষমতা রাখি, আখেরে আমি তাই করতে যাচ্ছি। কিন্তু ঘটনা উলটে গেল বইয়ের দোকান নিয়ে বসার পর। এবং তা চরম বৈরি রূপ ধারণ করল, যখন ডাবের ব্যবসা শুরু করলাম।
ডাবের ব্যবসাটা আর কিছুদিন ধরে রাখতে পারলে বইয়ের দোকানটা দাঁড়িয়ে যেত। বইয়ের দোকানটা দাঁড়িয়ে গেলে, মহাকাব্য রচনায় আরও দুই কদম এগিয়ে যেতে পারতা। আদতে কিছুই হল না।
ঠিক সেই সময়টাতেই হঠাৎ একদিন ফেসবুকে মিঞা শোভনকে নিয়ে লেখা একটা পোস্ট চোখে পড়ল। কেউ একজন মিশোপার সদস্য হয়ে অন্যদের সদস্য হবার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।
সমস্ত লেখাটা পাঠ করে অবাক হলাম। আল্লাহ'র দুনিয়ায় পাগল শুধু আমি একা নই, আমার মতো অনেকেই আছে দেখছি!
ছেলেবেলায় প্রবাদবাক্যে শুনতাম,"মানিকে মানিক চিনে, মাতালে চিনে শুঁড়িখানা!"
নিজেকে মদ্যপ বলে তাচ্ছিল্য করার মানুষ আমি নই, মানিক বলে আতেলামিও করছি না। তবে মিঞা শোভনের কার্যকালাপ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। অল্প কদিন পরেই এক রাতে তাকে ইনবক্সে নক দিলাম,"আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই, কোথায় আসব বলেন?"
"বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে চলে আসেন। আগামীকাল সারাদিন ওখানেই থাকব।"
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে গেলাম। মিঞা শোভনের সঙ্গে সেই আমার প্রথম দেখা। সেদিনই মিশোপার সদস্য হলাম। সদস্য হতে টাকা লাগে ৩০০; এত টাকা পকেটে ছিল না। নগদ দুইশ টাকা তার হাতে দিয়ে বাকিতে ফরম পূরণ করে মিশোপার সদস্য হয়ে গেলাম। নিজের বাসায় এবং দোকানে হাজারে হাজার বই থাকা সত্যেও মিশোপার লাইব্রেরী থেকে দশ টাকা দিয়ে একটা বই ধার নিলাম!
এরপর যেখানেই ছিলাম... যেভাবেই ছিলাম... নিজের আর পাঁচটা পরিচয়ের মতো মিশোপার সদস্য পরিচয়টা গর্বের সঙ্গেই ধারণ করেছি।
যখনই বইয়ে কথা এসেছে, আগামী পৃথিবী নিয়ে আমাদের স্বপ্নের কথা এসেছে, মিশোপার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। মিঞা শোভন হয়ত জানে না, মিশোপা এখন আমাদের প্রতিদিনের চা-চক্রে নিয়মিত আলোচ্য বিষয়ের একটি। মিঞা শোভনের পাঠশালা কেমন চলছে, সদস্য কত, সাফল্যের সম্ভাবনা কদ্দূর, তাকে নিয়ে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতমত এই সবই এখানে আমার স্থানীয় বন্ধুরা জানতে চায়। আমি খুবই আগ্রহের সঙ্গে এইসব প্রশ্নের উত্তর দেই।
মিশোপাকে এতটা গুরুত্ব দিতে হবে কেন? মিশোপা কি? এর ভবিষ্যৎ কি? মিঞা শোভন কি সত্যি সত্যি এই দেশে একশ একরের একশটা ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে জাতিকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন? উত্তর নেই জানা। উত্তরটা জানার দরকারও নেই। আমি বরং নিজে কথা বলি:
"বাংলাভূমি" নামের একটা বইয়ের দোকান দেওয়ার সময় আমিও ভেবেছিলাম এই ঢাকা শহরে কম হলেও বাংলাভূমির ২০ ব্রাঞ্চ খুলবো। ব্রাঞ্চ তো দূরের কথা, বাংলাভূমির মূল দোকানই আমাকে গুটিয়ে নিতে হয়েছে। নিঃসন্দেহে এইটা হতাশার কথা। কিন্তু যারা অমরত্ব চায়, তারা এত্ত সহজে হতাশ হয় না।
দশ বছর ধরে একটা সিনেমাওয়ালা হবার স্বপ্ন দেখেছি। ফাইনালি দেশের প্রথম সারির একটা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে সহকারী পরিচালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়েও কিছুদিন এসিস্টেন্সি পিছু ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি। কেন বাধ্য হয়েছি? কারণ পিছুটান!
সহস্র অদৃশ্য বাঁধা পায়ে পায়ে জড়ায়ে ধরে মোরে। যতই এড়াইয়া চলি, ততই জোরদার হয় বাঁধন!
২০১৮ সালের মেলায় আমার দ্বিতীয় বই "কবি ও কঙ্কাবতী" মেলায় আসল। অথচ আমি একদিনের জন্যেও মেলায় থাকতে পারি নি। চল্লিশ দিনের জন্যে নিজেকে নির্বাসন দণ্ড দিতে হয়েছে। কেন এই নির্বাসন? এই প্রশ্নের উত্তর আজ নয়, যদি বেঁচে থাকি অন্যকোন দিন বলার চেষ্টা করব।
নিজের অভিজ্ঞা থেকে থেকে বলছি, যতবার সামনে এগিয়ে যেতে চেয়েছি, ততবার পায়ে পায়ে পিছিয়ে যেতে হচ্ছে আমাকে। এই পিছু হটার মানে কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়া নয়। সমকালীন মানুষের চাহিদা এবং চিন্তা ভাবনার সাথে নিজের স্বপ্নগুলিকে খাপখাইয়ে নেওয়ার জন্য মাঝেমধ্যেই আমাকে শীত নিদ্রায় যেতে হয়।
কিন্তু মিঞা শোভন আমার মতো নয়। আমার চেয়েও অনেক বেশি গতিময়। নিজের স্বপ্নের প্রতি তার একটা বেপরোয়া পক্ষপাতিত্ব আছে। এইজন্যেই সে যতটা নন্দিত, তারচেয়েও বেশি সমালোচিত। অফুরান সীমাবদ্ধতা, সমালোনা এবং বৈরিতার ভেতরেও মিঞা শোভন অটল এবং অবিচল।
...আর এই একটা জায়গায় এসে আমি তার কাছে পরাজিত হই। পরাজিত হয়েও আনন্দিত হই।
বিদ্যাসাগরের দেখাদেখি এই আমি, মুহম্মদ নিজাম, হয়ত ল্যাম্পপোস্টের নিচে ক্লাশের পড়া নিয়ে বসেছিলাম, কিন্তু মিঞা শোভন আমার মত নয়।
মিঞা শোভন নানা ধরণের লোক দেখানো কাণ্ডকারখানা করে নিজেকে ভাইরাল করতে চায়। এইজন্যে তাকে নিয়ে প্রখর সমালোচনা হয়। কিন্তু আমার কেবলই মনে হয়, ওর ভাইরাল হওয়ার নেশাটা হচ্ছে বাইরের খোলস। ভেতরে ভেতরে মিঞা শোভন একজন নিখাদ বই প্রেমী। নেশাগ্রস্ত বইয়ের ফেরিওয়ালা।
মিঞা শোভনের জন্য আমার বুকের ভেতর তাই একটা শুদ্ধতম প্রার্থনা সব সময়েই সক্রিয়। বাংলাভূমির কলাকৌশল ছিল, ডেডিকেশন ছিল না। মিঞা শোভনের ডেডিকেশন আছে, অযৌক্তিক আবেগ নাই, যৌক্তিক প্রণোদনা আছে। আমি যা পারি নাই, মিশোপা একদিন তাই তাই করে দেখাবে.. এই কথা ভাবতে ভালো লাগে।
একটাই দুঃখ,
গত দুই বছরে কত হাতিপু, হলিপু, কত আলমেরা ভাইরাল হল। টিএসসিতে এক চুম্বনের ছবি আর নীরবের কালাভুনায় কুত্তার মাংস নিয়ে দিনকে দিন কত মহাকাব্য রচিত হয়... কিন্তু মিঞা শোভন এখনো ভাইরাল হল না।
হ ভাই বুঝছি, দাঁতে থাকতে দাঁতের মর্যাদা আমার শ্বশুর আব্বায়ও দেন নি। যতদিন মুখ ভরা চকচকা দাঁত ছিল, রসিরে কালাভুনা খেয়েছে আর তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছে। গত দুইদিন ধরে পোকায় খাওয়ার দাঁত নিয়ে কান্দনের উপ্রে আছে। কান্দে আর কয়,"জীবনে কোনদিন কালাভুনা খাব না! আমি জানতাম গরু-খাসি এখন শুনি কুত্তার মাংস! একটা জীবন কাটায়ে দিলাম কুত্তার হাড্ডিতে কামড়া কামড়ি করে। ওয়াক থুঃ, ছিঃ!"
পরিশিষ্ট:
আমি কিন্তু কখনো কালাভুনা খাই নাই। কালাভুনার টাকায় মিশোপার সদস্য হয়েছি। আখেরে কার বেশি লাভ হল? আমার নাকি আমার শ্বশুর আব্বার? উত্তর চাই, দয়া করে উত্তর দিয়ে যান!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০২