somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দহনবেলা

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিত্রনাক সীয়াম যখন লন্ডনে, পূজা চেরী ছোট পর্দায় বিজ্ঞাপনে, আমরা তখন বান্দরবনের পাহাড়ি ঢাল আর আরণ্যক পথে-প্রান্তরে পোড়ামন ওয়ান সিনেমার শ্যুটিং স্পটের ছায়া মাড়িয়ে অন্য আরেকটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
তখন অবধি আমরা কেউ কাউকে চিনি না, সকলেই ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছি সিনেমায় নাম লিখাব।
বাংলা সিনেমা।


একজন চিত্রনায়িকার যাত্রা শুরু হতে পারে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সেই। আঠারো বছর বয়সেই সে হয়ে উঠতে পারে গ্লামার কুইন। একটা প্রজন্মের হার্টথ্রব। দেশের প্রথম শ্রেণির একজন তারকা। আঠাশে এসে সে যদি ফুরিয়ে যায়, উড়িয়ে হারায়, তাতে কেউ আহত হবে না, আহত হয়ও না। কেননা, ততদিনে অন্যকোন "অপ্সরীর" উত্থান পর্ব শুরু হয়ে যায়।

একজন চিত্রনায়ক আটত্রিশ কিংবা আটচল্লিশ অবধি খুব দাপটের সাথে আদিরস, বীররস এবং হাস্যরসের সমাহার ঘটিয়ে একটা জাতিকে বিনোদিত করে যেতে পারেন। কিন্তু আটান্নর কোটায় পৌঁছাতেই তাকে কক্ষচ্যুত হয়ে যেতে হয়। বাবা-চাচাদের ভূমিকায় অভিনয় করার প্রস্তাব পেতে হয়। প্রথম প্রথম তার খুব অভিমান হবে। মেনে নিতে কষ্ট হবে। তবুও মেনে নিতে হয়। নদী কবু একই ধারায় দেয় না প্লাবন।

কিন্তু একজন প্রতিশ্রুতিশীল সিনেমাওয়ালা মহানায়িকা সুচিত্রা কিংবা মহানায়ক সালমান শাহের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২৬ বছর বয়সেই জীবনের শ্রেষ্ঠতম সিনেমাটিতে নাম লেখানোর দুঃসাহস দেখাবেন না। তাকে অপেক্ষা করতে হয়। খুব গভীর থেকে, খুব নিবিড়ভাবে আগামী দিনগুলির খসড়া তৈরি করে যেতে হয়।
অগুন্তি প্রদীপের ভিড়ে, প্রদীপের ছায়া হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। এই হল ওর নিয়তি। ওর প্রশিক্ষণপর্ব। বলা হয়ে থাকে যে, একটা সিনেমার ডিরেক্টর হলেন একজন নাবিকের মত। জাহাজের মালামাল কিংবা মালিকানা তার নয়। কিন্তু সমস্ত মানুষ এবং মালামালগুলিকে নিরাপদে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা তাকেই করতে হয়।
নিঃসন্দেহে, এইটা কোন সহজ কাজ নয়।


আগামী দিনের গল্প বলিয়ে এবং সিনেমাওয়ালাদের প্রস্তুতিপর্ব শুরু হয়েছে বহুকাল আগেই। প্রস্তুতি তখনো নিচ্ছিলাম, এখনো নিচ্ছি-
এরই মধ্যে সীয়াম এবং পূজা চেরীর "পোড়ামন ২" দুর্দান্ত রকমের সাড়া জাগিয়ে দেশের ভক্তশ্রেণীকে আবেগে প্লাবিত করে দিয়ে গেল। পরিচালক রায়হান রাফির হাত ধরেই এই জুটির দ্বিতীয় সিনেমা "দহন" এর শ্যুটিং চলছে। অল্পদিন পরেই হয়ত দহন মুক্তি পাবে। দেশের প্রথম সারির তারকা খ্যাতি লাভের পথে তারা আরও কয়েক কদম এগিয়ে যাবেন। ওদের দহনবেলা যতটা না চাকচিক্যময়, আমাদের দহনবেলা ঠিক ততটাই তমসাময়।
নিজের আয়ুর দিনগুলি গুণে গুণে খুন করছি। একদিন সিনেমায় নাম লিখাব, অনেকদিন থেকেই তার প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি বেঁচে থাকি, যদি সত্যিই কখনো নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারি, খুব বেশি নয়- মাত্র ১০/১২টা সিনেমা বানাব। বিশ-পঁচিশটা চিত্রনাট্য লিখে দেব, আর ডজনখানেক উপন্যাস।


প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ৫০০০ বই পাঠ না করে জীবনের প্রথম বই প্রকাশ করব না। দয়াময় স্রষ্টা প্রতিজ্ঞা পূরণ করার সুযোগ দিয়েছেন।
প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ১০ বছর সিনেমার লাইনে খাটাখাটুনি না করে প্রথম সিনেমায় হাত দেব না। প্রতিজ্ঞায় অটল থাকার চেষ্টা করছি। আদি গুরু বানভট্ট বলেছেন,"প্রতিজ্ঞা যার স্থির সে বীর। সমুদ্র তার কাছে- খাল। সুমেরু- উইয়ের ঢিপি।"

বাণভট্টের জন্ম আজ থেকে প্রায়
১৪শ বছর আগে। এই উপমহাদেশের প্রাচীনতম কবিদের মধ্যে তিনি একজন। বাণভট্ট ছিলেন রাজা হর্ষবর্ধন শিলাদিত্যের সভাকবি। তাঁর রচিত গ্রন্থ সংখ্যা মাত্র চারটি।

-হর্ষচরিত
-মুকুটতাড়িতক
-কাদম্বরী
-চণ্ডীশতক

কবি বাণভট্ট মানুষকে মূল্যায়ন করেছেন অপরিমেয় শক্তির উত্স হিসেবে। বীরের ধনুকের শব্দ শুনে পাহাড় যে মাথা নত করে না, এইটাই তার কাছে আশ্চর্য মনে হয়েছে!
চারটি মাত্র গ্রন্থ লিখে যিনি হাজার বছরের অমরত্ব অতিক্রম করে ফেলেছেন, তার কাছে অবশ্যি এইটা আশ্চর্য হবারই কথা। আমি ভাবছি নিজের কথা। ১০খানা সিনেমাই বানাতে হবে কেন? কেন ৪টা নয়? ৪টা মাত্র সিনেমা বানিয়ে হাজার বছরের অমরত্ব স্পর্শ করার মতো বুকেরপাটা কি আমাদের কারো নেই?
নেই কেন?
থাকতে হবে, নিজেকে সেইমতো তৈরি করতে হবে। গুরু বলেছেন, প্রতিটা মানুষ অপরিমেয় শক্তির উৎস...
অপরিমেয় মানে, প্রায় অফুরান। আমরা সেই অফুরান শক্তিবলয়ের কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্যই পায়তারা করছি।
বাকিটা সময়ই বলে দেবে।


আপাত একটাই রিকুয়েস্ট, সঙ্গে থাকুন, শুনতে থাকুন নূরানি ক্রন্দন। ক্রন্দন মানে কান্না। কান্নাকাটিও কিন্তু এক ধরণের রস, ঐযে পেছনে লাল টিশার্টওয়ালা, চিকনে ফুটেজ খাওয়ার পায়তারা করছে, করুণ রস !!!

পরিশিষ্ট:
বানভট্টের জন্ম আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। "ঝড় ও জনৈক চিন্তাবিদ" এবং "কবি ও কঙ্কাবতী" ভুবনজয়ী সাফল্যের পর তৃতীয় যে উপন্যাসটি লিখতে শুরু করেছি এবং গোপনে আশা পোষণ করছি যে, ২০২১ সালের মেলায় বইটি প্রকাশিত হবে, তার সময়কাল কিন্তু বানভট্টের জন্মের চাইতেও ১৪০০ বছর আগে।
আমার গুরু বানভট্ট। বানভট্টের গুরু ছিলেন বঙ্গরাজ্যের রাজা দেরুমিয়া। সেই দেরুমিয়াদের সময়কালে ইদানীং খুব ঘুরে বাড়াচ্ছি। খুব মজা পাচ্ছি। অতএব দিনের শুরু থেকে শেষ অবধি আমাদের কথা কিন্তু একটাই, show must go on, অর্থাৎ, জীবন সুন্দর!

© মুহম্মদ নিজাম।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৩:০০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×