দোয়াত কালির এক ব্যবসায়ী আত্মীয়তার সূত্র ধরে রবীন্দ্রনাথের কাছে এসে মিনতি করলেন,"আপনি একটা বিজ্ঞাপন লিখে দিন প্লিজ। কাগজে ছেপে দেব। ব্যবসাটা দাঁড়িয়ে যাবে!"
রবীন্দ্রনাথ ভেবে দেখলেন, নিজের ইমেজের কথা ভাবতে বসলে এই কাজ তার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তিনি বিকল্প রাস্তা খুঁজে নিলেন। স্যাটায়ার। হাতের কাছে দোয়াত আর কালি মজুদ ছিল। তৎক্ষণাৎ কাগজে কলম বসিয়ে ঘেষঘেষিয়ে লিখে দিলেন,"বাসমতী দোয়াত কালি, এই কালির রঙ কলঙ্কের চেয়েও কালো!"
বাসমতীর মালিক হাসিমুখে বিজ্ঞাপন নিয়ে বিদেয় হলেন। কাগজে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের নামেই এই বিজ্ঞাপন ছাপা হল। ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেল।
গত দুইদিন ধরে টাইমলাইনে একজোড়া নরনারীর কথোপকথন ঘুরাফেরা করছে।
বউ তার অফিস ফেরত স্বামীর কাছে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে,
"ফেরার সময় এক কেজি লবণ, দুই ডজন কলা আর কিছু গরম মসলা নিয়ে এসো।
আর শোন, বীথি ফোন করেছিল।"
স্বামী জানতে চাইল,"বীথি কে?"
স্ত্রী বলল,"কেউ না, ম্যাসেজটা পড়েছ কিনা তাই টেস্ট করে দেখলাম!"
ম্যাসেজ পড়া হয়েছে, এই স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্যে বীথি নামটি তাকে ব্যবহার করতে হয়েছে। কেন করতে হয়েছে? উত্তরটা একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া যাক:
মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তাঁর সুদীর্ঘকালের কালের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে হয়ত একটা বিষয় খুব ভালো করেই আত্মস্থ করে রেখেছেন যে, বাঙালি আমজনতা হল সেই অফিস ফেরত স্বামীর মতোই ভয়াবহ নির্বিকার আওলাদ!
রাজনৈতিক নেতারদের বাণীকে এরা পেয়াজ-রসুনের মতোই উত্তেজনাহীন ও অলাভজনক একটা প্রোডাক্ট হিসেবে গণ্য করে খুব সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়ার পায়তারা করে।
এদের সামনে মিথ্যে করে হলেও যুথি, বীথি কিংবা প্রিয়াঙ্কার মত টসটসে কোন মেয়ের নাম নিয়ে একটা খুব রসাল গুটি ছুড়ে দিতে হয়।
আলাভোলার আওলাদ তখন রসের সুবাস পেয়ে সবেগে ঘুরে দাঁড়ায়। ফুরফুরে গলায় জানতে চায়,"বীথি কে? হো ইজ বীথি!"
খেলাটা আসলেই জোশ! গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঠিক এই খেলাটাই খেলেছেন আমাদের হাওর-ভূমিপুত্র মহামান্য আব্দুল হামিদ।
কথা ছিল অনেক, কথায় কথায় অনেক কথাই বলেছেন তিনি...
*ডাকসুর নির্বাচন সংক্রান্ত আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আতঙ্কের কথাও বলেছেন।
*শুধুমাত্র কালো টাকা দাপট আর আলগা ক্ষমতা ফাপর দিয়ে কিছু মানুষ রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করে। বেহুদা মাস্তানি করে। এদের দুই গালে কষে চপেটাঘাত করার প্রণোদনা দিয়েছেন তিনি। এইটার দরকার আছে। খুব দরকার।
*মুঠোফোন কেন্দ্রীক ভারচুয়াল দুনিয়ায় তরুণ প্রজন্মের অতিরিক্ত আসক্তি দেখে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। কাগজেকলমে প্রেমপত্র লিখে হাতে হাতে চালান দিয়ে আমাদের আরেকটু বেশি সামাজিক হওয়ার রিকুয়েস্ট করেছেন।
*কচিকাঁচা শিশুদের যাবতীয় আবদার আর কান্নাকাটি থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্যে কিছু কিছু মা সন্তানের হাতে মুঠোফোন ধরিয়ে দেয়। নিজেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আরামসে স্টার জলসা দেখে। এইসব মন্দ ধারার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন।
*পুরুষ নির্যাতনের বিষয়টা আপাত দৃষ্টে খুবই হাস্যকর। কিন্তু উগ্র নারীবাদীদের উদ্ভট যুক্তিগুলি যদি হালকা করেও রিভাইস করা হয়, এই স্যাটায়ার সকরুণ রূপ ধারণ করে বুকে ধাক্কা দেব।
কিন্তু এইসব আমার কানে আসে নি। আঁতে ঘা দিতে পারে নি। তার কথাগুলি হয়ত পাত্তাই পেত না, অন্তত আমার কাছে পৌঁছাত না, যদি না তাতে বিশ্বখ্যাত সুন্দরী প্রিয়াঙ্কার বিষয়টা জড়ায়ে না যেত!
প্রায় সত্তর বছর বয়সী এক মহামান্য বৃদ্ধ হাঁটুর বসয়ী এক বারাঙ্গনাকে বিয়ে করার সুপ্ত ইচ্ছে ব্যক্ত হাস্যরসের জন্ম দিয়েছেন। তিনি মজা করেই বলছেন, কিন্তু এই লেবেলের একজন মানুষ এমন স্থূল বিষয় নিয়ে কেন মজা করবেন? খবরটা খুব দ্রুতই চাউর হয়ে গেল। জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম হয়ে গেল। আমরা এড়াতে গিয়েও ফিরে তাকালাম। তাকায়ে অবাক হয়ে গেলাম।
কেউ বলছেন, ছিঃ!
কেউ বলছেন, ভাঁড়ামি!
কেউ বলছে, এমন কিউট রাষ্ট্রপতি পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই!
আমি সেই কথা বলব না। বরং রাকিবুল হক ইবন নামের এক তরুণের কবিতার কথা কই।
কবি লিখেছেন,"
"এতো এতো ভাঁড় রাষ্ট্রপতি
এতো এতো ক্লাউনের দেশে
এক একটা গাড়ি
এক একটা গাড়িকে
পার করে যায়;
আমার মাথায় স্ফুরণ
ঘটে আর ডাহুকের
যন্ত্রণা হয়।"
ইবন এই কবিতাটা লিখেছেন অনেক আগে। মহামান্য আবদুল হামিদ যে তির্যক শিক্ষা আমাকে দিয়েছেন, তারই প্রেক্ষিতে কবির কাছে একটা রিকুয়েস্ট করতে ইচ্ছে হচ্ছে;
প্রিয় কবি,
আপনি কি আপনার কবিতা থেকে ভাঁড় শব্দটা তুলে দিয়ে প্রজ্ঞাবান শব্দটা বসিয়ে দিবেন? আপনি দেন বা না দেন, আমি কিন্তু ঠিকই তুলে দিয়েছি! আমি তাঁকে বলছি, প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রপতি! মাটিঘেষা মানুষের রাজা!
ক্লাউন শব্দটা অব্যাহত থাকুক। অন্তত আমার মত ক্লাউনের জন্যে হলেও ক্লাউন শব্দটা অব্যাহত থাকুক!
© মুহম্মদ নিজাম
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৫৯