somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প- জীবনের এই পথ যেতে যেতে

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


'বাসা খালি ? যদি খালি হয় তবে আজ রাতে আমি তোর বাসায় থাকতে চাই।'
'সত্যিই?'
'হু। তবে একটা শর্ত আছে।'

জানতে চাইলাম, কি শর্ত? শিমু উত্তর দিল না। ব্যস্ত গলায় বলল,'এদিকে ডিসপেনসারি কোথায় আছে চল তো। কিছু ট্রিপটিন কিনতে হবে।'
'ঘুমের ঔষধ কেন?'
'চুপ। কোনো প্রশ্ন করবি না। আজ রাতে আমি যা যা বলব, শুধু শুনে যাবি।'
'যথা আজ্ঞা মহারাণী!'

শিমু আজ রাতে আমার বাসায় থাকবে, ভাবতেই মন জুড়ে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যাচ্ছে। বুকের ভেতর হাপরটানা বেড়ে গেছে। ব্যাপক স্ফুর্তি হবে! ব্যাপক হল্লা হবে আজ রাতে! কিন্তু ঘুমের ঔষধ কেন? ওকে নিয়ে ডিসপেনসারিতে গেলাম। শিমু ভ্যানিটিব্যাগ থেকে প্রেসক্রিপশন বের করে একপাতা ট্রিপটিন চাইল। কিছু সিভিটাসও নিল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল,'কয়টা বাজে দেখ তো।'
'সন্ধ্যা পৌনে সাতটা।'
'চল, একটু চারুকলা থেকে ঘুরে আসি। আমার একটা ফ্রেন্ড অপেক্ষা করছে। ওকে নিয়ে আসি।'

আমি ভীষণ ধাক্কা খেলাম। শিমু এবং আমি- দুজনেই তো যথেষ্ট। ফ্রেন্ড নামক উপগ্রহটা আবার কেন? সেও কি আমাদের সঙ্গে যাবে নাকি? কিন্তু এই প্রশ্ন শিমুকে করতে পারলাম না। অনিশ্চয়তার দোলাচলে মন খারাপ করে রিক্সশায় উঠলাম।
শিমু আমার দিকে চোরা চোখে তাকিয়ে একটু যেন হাসল। আমি নতুন করে আশায় বুক বাঁধলাম। হয়ত সে মজা করছে আমার সাথে। হয়ত অহেতুকই বন্ধুর কথা বলে আমার মন পরীক্ষা করছে। কিন্তু কপাল খারাপ। চারুকলায় এসে দেখি লম্বা চুল, দাড়ি-পাঞ্জাবী পরা মূর্তিমান রবীন্দ্রনাথ দাঁড়িয়ে আছেন। বয়সে আমার চেয়ে বেশি হবে না। কিন্তু চোখে মুখে খুব ক্লান্তির ছাপ। পায়ে ছেড়া চটি, এই তীব্র শীতেও একটা পুরনো শাল ছাড়া গায়ে কোনো গরম কাপড় নেই। ওদিকে বাবুর চেহারাখানা অবশ্যি মাশাল্লাহ! খুব মায়াময়।
শিমুকে দেখে ছেলেটা লাজুক মুখে হাসল। শিমু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
'ওর নাম তনয়। পরিচিত হয়।'

আমি মেকি হাসির সহিত তনয় বাবুর সাথে হেন্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালাম। কিন্তু হারামিটা হাত না বাড়িয়ে এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। বলল,'তোমার কথা শিমুর মুখে অনেক শুনেছি। তুমি ওর বেস্টফ্রেন্ড!'

ভদ্রলোকের ছেলে আমি। মন খারাপ হলেও মুখে হাসি অটুট রেখে মাথা ঝাঁকালাম।
শিমু আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ জানতে চাইল,'তোর বাসায় রুম কয়টা?'
'একটা।'
'ওহ! তবে তো আজ রাতে তোকে একটু কষ্ট করতে হবে দোস্ত। কিন্তু, আচ্ছা- ওসব পরেও বলা যাবে। এখন চল, একটা সিএনজি ধরতে হবে।'
টিএসসির সামনে এসে সিএনজি নিলাম। তিনজনেই যাচ্ছি বেইলী রোড। আমার বাসা হচ্ছে শিববাড়ি। বেইলীরোড কেন যাচ্ছি জানি না। শিমু প্রশ্ন করতে নিষেধ করেছে। তাই মৌনভাব বজায় রাখলাম। যদিও ভেতরে তখন আমার এক বিচিত্র অনুভূতি। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
বেইলি রোড নামতেই একপাল গ্যাদাগ্যাদা বাচ্চাকাচ্চা ছুটে এসে তনয় এবং শিমুকে জড়িয়ে ধরে হল্লা শুরু করে দিল। আমি একা বেকুবের মতো দূরে দাঁড়িয়ে রইলাম। খুব রাগ হল শিমুর উপর। কী ভেবেছে সে, ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা আমি? বেস্টফ্রেন্ড বলেই কি এত অবহেলা সইতে হবে?

'আপনি নিজাম ভাইয়া না?' হঠাৎ রিনিঝিনি মেয়ে গলায় নিজের নাম শুনে ফিরে তাকাই এবং অবাক হয়ে দেখি খুব মিষ্টি খুব সুন্দর একটা মেয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে। হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে। হায় আল্লাহ, ও কী মানবী? নাকি জান্নাতের হুর?
'আমার নাম তিতলি। তনয় আমার কাজিন।'
'ও আচ্ছা। আমি নিজাম।'
মেয়েটা হাসল। বলল,'শিমু আপুর মুখে আপনার কথা অনেক শুনেছি। লেখালেখি করেন।'
'হু।'
'চলেন। সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় ওদের বিয়েটা শেষ করে আসি?'
অবাক হলাম।
'বিয়ে? কার বিয়ে? কখন?'
'আপনি জানেন না কিছু? বলেনি আপনাকে? শিমু আপুর সাথে তনয় ভাইয়ার বিয়ে আজ।'
'বলেন কি!'
'হু। আমরা দুজন হলাম বিয়ের সাক্ষ্যি।'
'কিন্তু এই ক্ষুদে ক্ষুদে বাচ্চারা, ওরা এখানে কেন?'
'ওরা সবাই এতীমখানা থেকে এসেছে। তনয় ওদের শিক্ষক। আজ এসেছে বিয়ের গেস্ট হিসেব।'

বড় বিচিত্র অনুভূতির মুখোমুখি হলাম আমি। পরে শুনেছি তনয় নিজেও বাবা-মা হারা এক নির্জন মহামানব। এতিমখানাতেই বড় হয়েছ। টিউশন করে পড়ালেখার খরচা চালিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স মাস্টার্স।
মগবাজার কাজী অফিসে ওদের বিয়ে হল। এরপর বাচ্চাদের নিয়ে একটা থাই রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেইরকম খানাপিনা। শিমু কোটিপতি বাপের মেয়ে। টাকার অভাব নেই।
শিমুর বাবা এই বিয়ের খবর পেলে কী লঙ্কাকান্ড ঘটাবে ভাবতেই আমার শরীর থেকে কাল ঘাম বইছে শুরু করেছে। কিন্তু তিতলির একটা কথা শুনে আবার বড় মাপের ধাক্কা খেলাম আমি। তনয় মরণব্যাধি ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত। লাস্ট স্টেজ। ছয়মাসের বেশি বাঁচবে বলে মনে হয় না। তাইজন্যই শিমু কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তনয় অনেক চেষ্টা করেও শিমুকে এই সিদ্ধান্ত হতে সরাতে পারে নি।
মনটাই খারাপ হয়ে গেল আমার। শিমুর উপর রাগ হল। শ্রদ্ধাও হল। ওদেরকে আমার বাসায় পৌঁছে দিয়ে অদ্ভুত একটা ভালোলাগা নিয়ে নিচে নেমে এলাম।
তিতলি জানতে চাইল,'কোথায় যাবেন এখন? কোনো বন্ধুর বাসায়?'
আমি না সূচক মাথা নাড়লাম।
আশ্চর্য ঘোরলাগা গলায় বললাম,'আজ সারারাত আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াব। আজ আমি কোত্থাও যাব না।'
'সঙ্গে নেবেন আমাকে?'
'যাবেন?'
'হা।'
'চলুন তাহলে।'

আমরা এক পবিত্র মন নিয়ে রাস্তায় নেমে এলাম। হাতে হাত রেখে চলতে শুরু করলাম এক অজানা গন্তব্যের অভিমুখে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:৫৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×