টিফিন এর সময় সব ছেলে-
মেয়ে টিফিন করতে বাইরে গেল ।
সবাই ক্লাস থেকে বের হয়ে কেউ
কেউ গেল ক্যান্টিন এ আবার কেউ
কেউ মাঠে খেলতে । কিন্তু এর
থেকে একটি ছেলে এর কোনটিতেই গেল
না ।
মাঠের এক কোনে , গাছের
নিচে বসে আছে । প্রতিদিনই এই রকম
দেখা যায় ।
ক্লাসে এ অনেকেই এই
ছেলেটিকে দেখতে পারে না ।
ছেলেটার জামা নোংরা , চুল
গুলো এলোমেলো । আর বাকিদের ,
সুন্দর জামা -কাপড়। সুন্দর
করে পরিপাটি করে আসে সবাই শুধু ঐ
ছেলেটি ছাড়া ।
সামনে পরীক্ষা ।
স্কুলে টাকা দিতে হবে । সবাই যার
যার বাসায় জানায় ।
সবার বাবা-মা এসে টাকা পরিশোধ
করে গেছে । শুধু ঐ ছেলেটির পরীক্ষার
ফি বাকি ।
ছেলেটি ক্লাসে আসলেই স্যার
ফি এর কথা জিজ্ঞাসা করে । আর
ছেলেটি চুপ করে থাকে । এই
ভাবে ২-৩ দিন গেল ।
স্যাররা বুঝতে পারলো , এই ছেলে তার
টাকা দিতে পারবে না । হেড স্যারের
কাছে নিয়ে ছেলের
নামে নালিষ করলো । হেড সার
ছেলেটিকে তার রুমে ডাকলো ।
অনেক বকা ঝকা করলো ।
বাবা-মা দিয়ে পরের দিন
ক্লাসে আসতে বলল ।
"প্রথম দিন
তোমার বাবা-মা এসে সেই
যে ভর্তি করে দিয়ে গেল আর
তাদের মুখ এ দেখলাম না ১ বছরের ।
কাল যদি তোমার বাবা-মা আমার
সাথে দেখা না করে তুমি আর
ক্লাসে আসবে না ।
এখন যাও ।
ছেলেটির বয়স তত বেশী হবে সা ।
১৪-১৫ .
ছেলেটি কাদতে কাদতে ক্লাসে গিয়ে তার
ছিড়া - ব্যাগ টি নিয়ে বের
হয়ে গেল স্কুল থেকে ।
সেই থেকে ছেলেটি আর স্কুলে আসে না ।
অনেক দিন পর সেই স্কুলের হেড স্যার
একদিন রাস্তায় রিক্সার জন্য
দাড়িয়ে ছিল । কোথা থেকে যেন
একটা রিক্সা এসে বলল , স্যার উঠেন ।
স্কুলে যাবেন ?
স্যার একটু আশ্চর্য হয়ে রিক্সা চালকটির
দিকে তাকিয়ে রইলো ।
একটা ১৪-১৫ বছরের
ছেলে রিক্সা চালাচ্ছে ।
স্যার আরও বেশী অবাক হল , যখন
দেখলো এই ছেলেটা সেই ছেলে .
যাকে সে স্কুল থেকে বের করে দিয়ে ছিল
।
স্যার আর কথা বলতে পারলো ণা । চুপ
করে রিক্সায় উঠে বসলো।
ছেলেটি কথা বলতে শুরু করলো।
" স্যার , আমাকে চিনছেন ?
= স্যার , না (না চিনার ভান করে বলল
- )
"স্যার ঐ দিন পরীক্ষার
ফি দিতে পারি নাই তাই
আমাকে বের করে দিছিলেন।
আমি সেই ছেলে ।
= হুম . চিনতে পারছি "
স্যার আপনে ঐ দিন আমারে স্কুল
থেকে বের না করে দিয়ে আমি , আজ
না খেয়ে মরতাম ।
= মানে
" স্যার আমি এতিম । রাস্তায় রাস্তায়
ঘুরতাম । আর বিভিন্ন স্কুলের
সামনে দারাইয়া থাকতাম আর
ভাবতাম আমি যদি পরতে পারতাম ।
একদিন একটা , সাহেব তার বউ
আমারে দেইখা , আপনার
স্কুলে ভর্তি করাইয়া দিছিল।
আমি অনেক খুশি ছিলাম । কিন্তু
স্কুলে ভর্তি করানোর পর আর সেই
সাহেব- মেডাম রে দেখি নাই । আর
আমি পাগলের মত ,
খাইয়া না খাইয়া সারা দিন
স্কুলে পইরা থাকতাম । সাবই যখন
টিফিন খেত , আমি দূরে এক
কোনে বসে বসে ,
সবা্র খাওয়া দেখতাম । আর
কান্না করতাম ।
ক্ষিধা অনেক লাগতো । কিন্তু ক্লাস
করতে বেশী ভাল লাগতো । তাই
না খাই য়া ক্লাস করতাম । আর
রাতে গিয়া রাস্তার পাশে ঘুমাইতাম ।
আপনে আমারে স্কুল থেকে বের
করে দেবার পর বুঝতে পারলাম ,
পড়া শুনা আমাদের জন্য না । যাদের
পেটে ১ বেলা বরপেট খাবার
জুটে না , বাবা- মা নাই তাদের জন্য
পড়া লেখা না ।
তাই ঐ দিন থেকে স্যার
আমি রিক্সা চালাই
তাছি । এখন স্যার প্রতিদিন ৩
বেলা হোটেল এ ২ প্লেট ভাত ,
সাথে মাছ , ডাইল . দিয়া পেট
ভইরা ভাত খাই । .....
স্যার মাফ কইরা দিয়েন ,
আমি কি সব বকবক
কইরা আপনেরে ডিস্টার্ব করতাছি ।
স্যার স্কুল আইসা পরছে ।
= এই নেও ভাড়া ।
" স্যার এই ডা কি কন ?
আপনি আমার স্যার , আপনার
থেকে আমি টাকা নিয়া বেয়াদবি করতে পারমু
না । স্যার ।
বলে ছেলেটা চলে গেল ।
আর ততখনে , হেড স্যারের , দুচোখ
দিয়ে অঝর পানি পড়ছে ।
রুমাল দিয়ে মুছতেছিল , কিন্তু
এখন যেন আর মুছে শেষ
করা যাচ্ছে না । যেই
ছেলে টা কে সে , না জেনে অনেক
কথা শুনিয়ে স্কুল থেকে বের
করে দিয়ে ছে ,
আহ সেই ছেলে তাকে এত সম্মান দিল ?
স্যার হাটতে হাটতে আর চোখের
পানি মুছতে মুছতে নিজের
রুমে ডুকলেন ।
" আসুন না , আমরা এই রকম কিছু গরীব
ছেলেদের সাহায্যে এগিয়ে আসি ।
একদিনের জন্য নয় , ছেলেটির পাশে সব
সময় থাকি ।
আপনি এত টা কামাচ্ছেন , এর
থেকে যদি প্রতি মাসে , ২০০ টাকা ,
কোন গরীব ছেলের পড়াশুনার
খরচে ব্যয় করেন ,
দেখবেন নিজেকে অনেক সুখি লাগবে । )
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৩৯