- হ্যালো রফিক , সীমা বলছি ।
- কি খবর ? কার নাম্বার থেকে ফোন
করেছ ?
- বাবার নাম্বার । আমার
মোবাইলে ব্যালান্স নেই ।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ছিল ।
- বল
- পরশু থেকে তোমার সাথে আমার আপাতত
দেখা হচ্ছে না ।
- মানে ? কি বলছ ?
- বাবা সিলেটে বদলি হয়েছেন । তাঁর
সাথে আমাদের ফ্যামিলির
সবাইকে সিলেটে যেতে হবে ।
- এসব কি বলছ ?
- যেটা ঘটতে যাচ্ছে সেটা বলছি ।
- তোমার জব ?
- ভাবছি , সিলেটের এক কিন্ডার
গার্টেনে জয়েন করব ।
বাবার বন্ধুর কিন্ডার গার্টেন ।
- প্লিজ , তুমি ঢাকা থেকে যাও ।
- ঢাকায় কোথায় থাকব ?
- কোন আত্মীয়ের বাসায় ।
- থাকার মত ঢাকায় আমার আত্মীয়দের
কোন বাসা নেই ।
- ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাক !
- একা একা ?
- তুমি চাইলে আমি তোমার সাথে লিভ
টুগেদার করতে পারি ।
- ফাজলামো করবে না ।
- আই এম সিরিয়াস ।
- পারলে না তো একটা চাকরি খুঁজে বের
করতে । তোমার
ইনকামের একটা সোর্স
থাকলে তোমাকে বিয়ে করে ঢাকায়
থেকে যেতাম ।
- কিছুই কি করার নেই ?
- না । নেই । চাইলে আজ সন্ধ্যায় আমার
সাথে লাস্ট মিট
করতে পারো । কবে না কবে দেখা হয়
কে জানে ! পকেটে হাত দিয়ে রফিক
দোমড়ানো মোচড়ানো কয়েকটা পুরনো ৫
টাকার নোট বের করল ।
গুনে দেখল , ২০ টাকা আছে ।
২০ টাকা নিয়ে কোন অবস্থাতেই সীমার
সাথে দেখা করা যায় না ।
কারন , রফিকের যতই অভাব
থাকুক না কেন , সীমার কাছ থেকে কখনই
সে খাবার-
দাবারের বিল , রিকশা ভাড়া নেয় না ।
যদিও সীমা তাকে অনেক
সাধাসাধি করে ।
রফিক মনে করে , এসব ক্ষেত্রে সীমার
কাছ
থেকে টাকা নিলে সীমা তাঁর উপর
সময়ে অসময়ে কতৃত্ব
খাটানোর চেস্টা করবে ।
ধারণাটা অমূলক নয় । মেয়ে মানুষের
মনের অন্তর্নিহিত ইচ্ছে হল বয়ফ্রেন্ডের
উপর খবরদারি করা । আর
সেটা টাকা নামের
ইস্যু ধরে হলে তো কথাই নেই !
যে কোন ভাবেই হোক রফিককে মিনিমাম
৩০০ টাকা যোগার
করতে হবে । সীমার
সাথে কথা হয়েছে সে বি.এফ.সি তে আসবে ।
ওখানে ২ পিস চিকেন ফ্রাইয়ের
খেতে গেলেও
৩০০ টাকা লাগে ।
অনেকের জন্য ৩০০ টাকা ম্যানেজ করা ৩
সেকেন্ডের কাজ ।
কিন্তু রফিকের ফ্যামিলির অবস্থা এমন
যে ৩০০ টাকায়
তাদের একদিন চলে যায় । মায়ের
সামনে দাড়িয়ে রফিক ৩০০ টাকা চাইবে
আর তাঁর মা নিমেষেই
আলমারি খুলে ৩০০ টাকা বের
করে দিবে এটা অসম্ভব
কোন কল্পনা ।
এমন সময় এলাকার এক ছোট ভাই
এসে রফিক কে জানালো তাঁর বড় বোনের
নাকি এক্টোপিক
প্রেগন্যান্সি হয়েছে । প্রচুর রক্তক্ষরণ
হচ্ছে । অপারেশন
না করলে নাকি সে বাচবে না , আর
অপারেশনের জন্য
দরকার ও পজিটিভ ব্লাড । রফিকের
রক্তের গ্রুপও ও পজিটিভ । দ্রুত
এলাকার ছোট ভাইয়ের
সাথে সে হাসপাতালে ব্লাড
দিতে চলে গেল ।
ব্লাড দিয়ে বিকেলের মধ্যেই ক্লান্ত
শরীর নিয়ে রফিক সীমার
সাথে বি.এফ.সি তে দেখা করল । দুই
পিস চিকেন ফ্রাই সে সীমার
সামনে রাখলো ।
সীমা রফিককে খেতে অনেক
সাধাসাধি করলো । কিন্তু রফিক
সীমাকে মিথ্যে জানালো যে বাসা থেকে
সে ভরপেটে খেয়ে এ
তাঁর খুব বমি বমি ভাব হচ্ছে । ক্লান্ত
শরীর , কিন্তু
তৃপ্তি ভরা চোখে সে সীমার খাওয়ার
দৃশ্য দেখলো । এর পরের হিস্ট্রি অনেক
করুন ।
সীমা রফিককে ছেড়ে বাবা , মায়ের
সাথে সিলেটে চলে গেল ।
একটা কথা আছে , চোখের আড়াল
হলে মনের আড়াল । প্রথম প্রথম
সীমা রফিককে দিনে ১ বার ফোন দিত ।
কিছুদিন পর দিত
সপ্তাহে ১ বার , তাঁর
কিছুদিন পর মাসে একবার ।
এখন ও সীমা রফিক কে ফোন দেয় ।
বছরে একবার ।
রফিকের জন্মদিনে ।
কিভাবে ডেইলি দিবে সীমা ?
সে তো তাঁর হ্যাজব্যান্ড আর
ছেলেমেয়ে নিয়ে ব্যস্ত ।
এখনো প্রতিটা রাতে সীমাকে রফিকের
মনে পড়ে ।
মনে পড়ে লাস্ট বি.এফ.সি তে শেষ
দেখা হওয়ার কথা ।
মনে পড়ে ৩০০ টাকা যোগার করার ঘটনার
কথা ।
ও পজিটিভ ব্লাড দিয়ে সে এলাকার
ছোট ভাইয়ের কাছ
থেকে ৩০০ টাকা নিয়েছিল । রক্ত
বেচা টাকা দিয়ে সে সীমাকে খাইয়েছিল
।
কখনো কখনো ভালবাসা রক্তের সাথেও
বেঈমানি করে ।
[ সত্য ঘটনা অবলম্বনে ।]