(আমার লেখার হাত ভাল না এবং বানান ভুলের জন্য দুঃখিত)
প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে প্রচুর পর্যটক নেপাল ভ্রমন করতে যায়, আমার মনে হয়েছে সঠিক ইনফরমেশন এর অভাবে ৩০-৪০% পর্যটকদের নেপালের আসল সৌন্দর্যই দেখা হয়ে উঠেনা। আমি চেস্টা করব নেপাল ভ্রমণের জন্য A-Z গাইড লাইন দিতে । আমি নিজে দেখেছি এক বাংলাদেশি পরিবার নেপাল ভ্রমণের ৩ দিনে শুধু বউ ছেলে মেযে কে নিয়ে হোটেলে ছিল পোখারা তো দুরে থাক কাঠমুন্ডুর তে কিছুই দেখেনি ভদ্রলোক শুধু মার্কেটে ঘুরে ২০/২৫ চাদর কিনেছে। আসলে খারাপ লাগে যখন এক ব্যাগ টাকা খরচ করেও দেশে ফিরে মুখ কালো করে কেউ বলে নেপালে দেখার মত কিছু নায় ।
নেপালে কেন যাবেন ?
নেপাল এমন একটি দেশ যেখানে আপনি একসাথে অনেক বিনদোন পাবেন । পুরা দেশটা যেন প্রান জুড়ানো সবুজের হাতছানি আপনাকে মুগ্ধ করবে প্রাচীন কোন হ্রদের ধারে কিংবা জলপ্রপাতের কলকল ধ্বনির সাথে । ঐতিহাসিক মন্দিরের ,স্বচ্ছ হ্রদ , সারি সারি সবুজ ভ্যালি , বন্য প্রানী সংরক্ষণ কেন্দ্র , পাহাড় কিংবা তাদের রাজপ্রাসদ সমূহ সব কিছুতেই মুগ্ধতা। আর আপনি যদি এ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হন তাহলে আাপরার কাছে নেপাল যেন পৃথিবীর বুকে বুকে টুকরো স্বর্গ । র্যাফটিং, বাঞ্জি জাম্পিং, প্যারাগ্লাইডিং, কি নায় নেপালে । আর খরচ হাতের নাগালে তাহলে কেন যাবেন না কাছের এত সুন্দর একটা দেশে ?
তাহলে আপনি প্লান করে ফেলেছেন পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে হিমালয়ের দেশে যাবেন?
নেপালে ৬০% ভ্রমণ এর আনন্দ উপভোগ করতে হলে আপনাকে মিনিমাম ৫ দিন সময় নিয়ে যেতে হবে ।তার কমে হলে শুধু কাঠমান্ডু ঘুরে চলে আসতে হবে । তবে শুধু কাঠমান্ডু তে ঘোরার জন্য নেপালে না যাওয়া ভাল । সুতারং আমি ধরেই নিয়েছি আপনি কাঠমান্ডু এবং পোখারা যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ থেকে নেপালে কোন প্রি-ভিসা নিয়ে যেতে হয়না, সার্ক ভুক্ত দেশ থেকে নেপালে অন এরাইভাল ( অর্থাৎ তাৎক্ষণিক ) ভিসা দেয়া হয় সুতারং ভিসা নিয়ে কোন চিন্তা নায় ।
তবে কেউ যদি আগে-ভাগে ভিসা নিয়ে যেতে চান তবে বাংলাদেশ থেকে নেপালের এমব্যাসিতে একটি ফর্ম পূরণ করে পাসপোর্ট জমা দিয়ে পরের দিন ভিসা সহ নেয়া যায় ।
ভিসা তো পাবেন , এখন প্লান করেন বিমানে টিকেট কাটা , কোন বিমানে যাবেন ?
বিমান / ইউ-এস বাংলা । আাপনার রুটিন প্লান অনুযায়ি দেখেন কোন বিমানে কি কি বারে ফ্লাইট আছে । ইউ-এস বাংলা সপ্তাহে দুটা ,বিমান মনে হয় ৩/৪ টা । সুতারং আপনার সুবিধা এবং ট্যুর প্ল্যান মত টিকেট কাটেন । নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী-হাই পিক টাইম, এ সযয় ভাড়া একটু বেশি পড়বে এবং একটু আগে-ভাগে টিকেট বুকিং দিবেন। (ভাড়া ২০/২২ হাজার এর মত পড়বে ) । তবে অপ-পিক টাইমে বিমান ভাড়া হোটেল ভাড়া সবই কম পাবেন। ইউ-এস বাংলা এ রুটে ভালো সার্ভিস দেই তবে বিমান বাংলাদেশ এ্যারলাইন্স এর সার্ভিস বর্তমানে নির্ভরযোগ্য । বিমান মাঝে মাঝে বাজে রকমের ডিলে করে, তবে তারপরও খারাপ না।
আচ্ছা টিকেট ও কাটা শেষ। এবার শুরু করুন ব্যাগ-পাতি গোছানো, ও আপনার তো হোটেল ঠিক করতে হবে ?। আপনি যেহেতু ঢাকা টু- কাঠমান্ডু যাবেন আগে আপনাকে কাঠমান্ডুতে হোটেল বুকিং করতে হবে চাইলে পোখারা ও বুক করতে পারেন । কাঠমান্ডুতে থামেল হচ্ছে ট্যুরিস্ট হাব, এখানেই হোটেল নিবেন (http://www.booking.com) গিয়ে পছন্দের হোটেল বুকি্ং করে ফেলেন ,থামেলে মোটামুটি ভালো ধরনের বাজেট হোটেলপাওয়া যায় ৮০০ থেকে ২০০০ রুপির মধ্যে (ডাবল বেড) এসি খুজলে ২০০০্ এর উপরে ভাড়া পড়বে , দামি হোটেলেরও অভাব নেই এখানে। আমার মতে হোটেল বুক করে যাওয়ার চেয়ে রাস্তায় হেটে হোটেলের রুম ঘুরে দেখে পছন্দ হলে দামাদামি করে রুম নেয়া ভালো, এতে খরচ কম পরে এবং ভালো রুম পাওয়া যায়। তবে যদি পরিবার নিয়ে যান তাহলে ঝামেলার দরকার নায় আগেই হোটেল বুকিং করে ফেলন। যারা পেশাদার পর্যটক তারা যানে booking.com কি ভাবে বুকিং করতে হয়।যে ভাবেই বুকিং করেন বুকিং এর ডুকমেন্ট নিয়ে নিবেন। আগে থাকে ভিসার আবেদন ফর্মটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে হাতে পূরণ করে সাথে পাসপোর্ট এর কপি এবং এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগিয়ে রাখেন নাহলে নেপাল এয়ারপোর্টে বসে এগুলো যোগার এবং পূরণ করার ঝক্কি থেকেই যাচ্ছে ডাউনলোড লিং (Click This Link )। আর দিবা-স্বপ্ন দেখতে থাকেন নেপাল এর । যারা পেশাদার পর্যটক তাদের এয়ারপোর্ট এবং ইমিগ্রেশন সম্পর্কে ভাল ধারনা আছে, যারা একেবারে নতুন, তাদের জন্য হালকা কিছু টিপস, এয়ারপোর্ট গিয়ে প্রথমেই চেকিং শেষ করে বোর্ডিং পাস নিয়ে নিন, এরপর ইমিগ্রেশন অফিসার আপনাকে হালকা কিছু প্রশ্ন করবে, কাঠমান্ডুতে ইমিগ্রেশন আপনাকে কোন কিছুই বলবে না তবে বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে সমস্যা করার কারন আপনি নতুন মক্কেল, যদি কিছু ধান্দা করা যায় আপনার কাছ থেকে? আপনি যদি ফ্যমেলি সহ বেড়াতে যান তবে তেমন কোন সমস্যা নেই ।আর যদি একা যান তবে বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে একটু স্মার্টলি কথা বলুন, পারলে ফটাফট দু-একটা র্যাপ স্টাইলের ইংরেজী ছেড়ে দিন, দেখবেন ব্যাটা ঘাবড়ে গিয়ে পাস দিয়েছে (সত্যচারী ভাই এর অভিজ্ঞতা), তবে ভুলেও ত্যড়ামি করবেন না,
( ভালো হবে ডলার এন্ডরসমেন্ড করে গেলে ব্যাঙ্ক বা কোন এজেন্ট থেকে আপনার কিছু সময় বাচবে যদি ইমিগ্রিশন এ ধরে)
একটা কথা ভুলে গেছি বিমানবন্দর থেকে বোর্ডিং নেবার সময় বোর্ডিং অফিসারকে বলে চেষ্টা করুন বামদিকের সাড়ির সিট নিতে, তাহলে কাঠমান্ডু ল্যান্ড করার বেশকিছুক্ষন আগে থেকে মেঘের উপর হিমালয় কন্ন্যার দেখা পেতে পারেন । আপনি মেঘের খেলা দেখতে দেখতে কখন যে ত্রিভুবন এয়ার পোর্ট ল্যান্ড করবেন বুজবেন না।নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুর ত্রিভুবন বিমান বন্দরে আসার পরে অনেক অনেক ট্যুরিস্টের ভিসার লাইন দেখে ঘাবড়ে যাবেন না, ভিসা ডেস্কের একদম পশ্চিমে শেষের মাথায় গ্রেটিস ভিসা (Gratis Visa) এর একটি কাউন্টার আছে , যা যে কোন গার্ড বা অফিশিয়াল কে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে। গ্রেটিস ভিসার লাইনে গিয়ে যতদিন থাকবেন তার দিগুণ, অন্তত একমাসের কথা বলে তত দিনের ভিসা নিয়ে নিবেন।
সার্ক ভুক্ত দেশ তথা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রথম এক বছরে একবার নেপালে গেলে ( ভিসার আবেদন করলে ) তা বিনামূল্যে দেয়া হয়
এবার ত্রিভুবন বিমান বন্দরের বাহিরে আসুন , হোটেল থেকে যদি গাড়ি আসে তাহলে ভাল , না হলে একটা টেক্সি দিয়ে থামেল চলে যান । ভাড়া তারা ৮০০/১০০০ চাইবে আপনি ৪০০ রুপি বলবেন। হিন্দিতে হালকা একটা ভাব নেন যেন নেপালে আপনি রেগুলার আসেন। হোটেল আগে থেকে বুকিং থাকলে সরাসরি হোটেলে উঠে পড়েন যারা হোটেল ঠিক করেনি একটু ভিতরের দিখে হোটেল নেন অনেক কমে পাবেন ।
কাঠমান্ডুতে থামেল হচ্ছে ট্যুরিস্ট হাব, কারন থামেল জায়গাটা বেশ জমজমাট চারিদিকে শুধু সাদা চামড়ার মানুষ । অলিতে গলিতে শতশত দোকান, তারউপর তলায় রেস্টুরেন্ট ও বার, তার উপর হোটেল। আমার মতে হোটেল বুক করে যাওয়ার চেয়ে রাস্তায় হেটে হোটেলের রুম ঘুরে দেখে পছন্দ হলে দামাদামি করে রুম নেয়া ভালো, এতে খরচ কম পরে এবং ভালো রুম পাওয়া যায়। হোটেল নেবার সময় মাথায় রাখবেন এসি রুম নিয়ে তেমন লাভ হয়না, কারন নেপালে লোডশেডিং বেশি থাকে । আর যেহেতু রাতে ঘুমানো, শাওয়ার/বাথরুম আর ব্যাগ রাখা ছাড়া হোটেলের তেমন কাজ নেই, তবে হোটেলে ফ্রি ওয়াইফাই দেখে আপ্লুত না হয়ে আগে জেনে নেয়া ভালো ফ্রি ওয়াইফাই কি শুধু লাউঞ্জে নাকি রুমেও।
যায় হোক এখন হাত মুখ ধুয়ে একটু তাজা হয়ে নিচে নেমে হোটেলের রিসেপশনে জিজ্ঞেস করেন তাদের কাছে কাঠমান্ডু-পোখারা ট্যুরিস্ট বাসের টিকেট আছে কিনা, প্রায় সব হোটেলেই টিকেটের ব্যবস্থা থাকে। না থাকলে রাস্তায় নেমে ১০ কদম হাটার আগেই একের পর ট্রাভেল এজেন্ট পাবেন , যাদের সবার কাছেই কোনও না কোনও বাসের টিকেট থাকে। নন এসি বাসের টিকেট ৬০০-৮০০রুপি , এসি বাস নিয়ে তেমন লাভ হয়না ভরপুর গরমকাল না হলে, কিছু বিলাশ বহুল বাস আছে ২০০০ মতো ভাড়া (আমাদের দেশের RM2 মতো তিন ছিট)। মাথায় রাখবেন, টিকেট কাটার সময় চেষ্টা করুন কাঠমান্ডু থেকে পোখারা রুটে ডান দিকের সাড়ির সিটনিতে, আর পোখারা থেকে কাঠমান্ডু আসার সময় বাম দিকের সাড়ির সিট নিতে তাহলে নেপালের আসল মজা পাবেন । এবার রাতের খাবারের যোগাড় করতে হবে ? খাওয়া ঢাকার থেকে সস্থা। অশংখ দোকান আছে। সবচেয়ে পেট ভরার জন্য লাভজনক খাওয়া নেপালে "থালি" থালি তে ডাল ভাত সবজি আর মাছ থাকবে, ডাল ভাত সবজি আনলিমিটেড একই দামে। তবে একেবারে দেশি খাবার খেতে চাইলে চলে যান হোটেল আল-মদিনা। খাবার ভাল, দাম অনেক কম আর হালাল। দেখবেন অনেক বাংলাদেশীদের সাথেও দেখা হবে এই হোটেলে। আল-মদিনা ২ টা হোটেল একটা সামনে আার একটা পিছনে। খাওয়া দাওয়া শেষে মোস্তফা ভাই কে খোজেন । ভাবছেন মোস্তফা ভাই টা আবার কে? উনি আল-মদিনা হোটেলের মালিক । অনেক ভাল মনের মানুষ নেপালে যে কোন সম্যসায় উনি আপনাকে সাহায্য করবে । বাসের টিকেট , বা হোটেল বা কোথোয় ঘুরবেন উনি আপনাকে সাহায্য করবে কারন আপনি বাংলাদেশি এবং মোসলমান । আসা করি পোখারা টিকেট কেটে ফেলেছেন তাড়াতড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন খুব সকালে আাপনাকে পোখারার বাস ধরতে হবে । (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৩