সারাদিন ধরে মাথার মাঝে কতকিছু ঘুরে, কিন্তু এই ফাঁকা ঘরটার সামনে আসলেই সব কথা, চিন্তা গায়েব হয়ে যায়। হা করে সাদা রং দেখি! আজকাল রাত আমার প্রিয় সময়। যতটা পারি রাত জেগে রাতগুলোকে পার করি। রাতে ঘুমাতে ভালো লাগে না। তবে দিনগুলো ঘুমিয়েই অর্ধেক পার। যতটা দেরীতে উঠা সম্ভব উঠি, তারপর আবার রাত ১১টার অপেক্ষা! কারন, ১১টা বাজলেই আমার জীবনের একটা দিনের কাজ শেষ। তাি বলে ভাববেন না যা কিছু না করেই দিন পার হলো!! অনেক কিছু করি, আপাতঃ দৃষ্টিতে আমার কাজের কোনো মূল্য না থাকলেও আসলে অনেক গুরুত্ব!
মাঝে মাঝে মনে হয়, যেন কারাবাসে আছি! নিজের বাসাকেই কারাগার লাগে, তাও আবার নিজের বানানো!! অন্য কারো বানানো নয়। মাঝে মাঝে মনে পড়ে কিছু অদ্ভুত দিনের কথা যখন একটা পাঁচতালা বিল্ডিং এর সামনে বসে কাঁদতাম আর ভাবতাম, এত মানুষ এখানে তাও আমার কেউ নাই এই জায়গায়!! তখন মনটা পড়ে থাকত আমার এই বাসায়, যেটা আজ আমার নিজের বানানো কারাগার। আসলে মানুষ যখন বলে যে, দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। খুব হাসি পায়, মাঝে মাঝে রাগও হয়। ঠিক হবে এই বানী তো কবে থেকেই শুনছি। ঠিক আর হলো কোথায়? সব তো হিসেবের বাইরে কঠিন আর বেঠিক হয়ে গেলো। খুব ক্লান্ত লাগে। হয়তো খুব বেশি চেয়েছিলাম কিছু, তাই কিছুই পেলাম না। অদ্ভুত হলেও সত্যি যে আমি যতই কম চাওয়া শুরু করেছিলাম, আমার ভাগে যেন ততই কম পাওয়া হচ্ছিল!
কয়েকটা মজার কথা শেয়ার করি। ইদানীং মাঝে মাঝে মনে হয় আসলে আমার পড়ালেখা করা উচিত হয় নাই। এমন না যে হতাশা বা অন্য কিছুর কারণে। আমার স্টুডেন্ট খুবই ফাঁকিবাজ ছাত্রী। ওর একটা প্রশ্ন শুনাই, "ইংরেজী কেন পড়া লাগবে?" মাঝে মাঝে মুখে না বললেও ওর ভাব দেখে বুঝি যে ও আমাকে এই প্রশ্নও করবে একদিন যে পড়া কেনো লাগবে? আশে পাশের মানুষের আর সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে হাজার হাজার মানুষের কমেন্ট পড়ে মাঝে মাঝে আমিও আমার অস্তিত্ব, আমার জ্ঞান, আমার ভবিষ্যত আর আমার মানসিকতা নিয়ে নিজের মাঝেই দ্বন্দ্বে ভুগি। আসলেই আমি কি মানুষ? না একটা গাছ? যার ফল সবাই খাবে আর প্রয়োজনে তার মূলসহ উপড়ে ফেলবে! অনেক ছোটবেলা থেকেই বুঝে গিয়েছিলাম যে আমার মাথা আর দশটা হাভাতে মানুষের মত যে যা বুঝায় তাই বুঝে থেমে থাকে না। ভেবেছিলাম আসলেই হয়তো একদিন মানুষ হব সবার চোখে, এখন মনে হয় আসলে নিজের চোখেই মানুষ হতে পারলাম না। সবাই ভাবে মেয়েরা ঘরে বন্দী থাকলেই ভালো। আচ্ছা ধরলাম, ভালো। তাহলে মেয়েদের আর একটা রোবটের মাঝে পার্থক্য কোথায়? যে সারাদিন তার প্রভুর দাসত্ব করবে আর তার নিজের কোনো ইচ্ছা, চিন্তা ভাবনা থাকবে না। কই পড়ে আছি আমরা!! আর গান শুনার সময় ঠিক ই তো ইংরেজী গান শুনি, তাদেরকে ফলো করে প্যান্ট পড়ি; কেনো? লুংগিতেই থাকা গেলো না? নিজের জন্য লুংগি ছেড়ে প্যান্টের হিসাব। আর মেয়েরা যদি পাশ্চাত্য ফলো করে যাই পড়ুক তাতেই বেড়িবাধ! নিজে পড়ছেন আর গোলামি করছেন পাশ্চাত্যের আর মেয়েরা যদি পাশ্চাত্যের মত খালি রেস্পেক্ট আর নিজেদের জীবনে অন্যের হস্তক্ষেপ আশা না করে তাহলেই নারী জাতি উচ্ছন্নে গেলো? যাই হোক, লিখলে অনেক কিছুই লিখা যায়। কিন্তু এসব ফালতু পেঁচাল পেড়ে লাভ নাই। যদি আবারও জন্মের সুযোগ থাকতো তাহলে পাখি হতাম। কোন একটা পাখি আছে না? জোড়ার একটা পাখি মরলে নাকি আরেকটা বাঁচে না!! ঐটা। অমানুষ হয়ে জন্মানোর সাধ শেষ!!!
আগের পর্বে ডিপ্রেশন নিয়ে লিখেছিলাম। ঐ ব্যাপারে ফেরত আসি। মানুষ ডিপ্রেশড হবে এটাই স্বাভাবিক। খুব ভালো যারা থাকে তার হয় পাগল বা বোকা! তো আপনি বুঝতে পারছেন আপনি বিষন্নতায় ভুগছেন। কি করবেন? এতগুলো সময় একা থেকে অনেক কিছু শিখেছি। এখন তাই কিছু ভালো থাকার পদ্ধতি শুনাই, কাজে লাগতেও পারে কারো!
১। কম কথা বলুন। হতেই পারে আপনি কথা বলতে খুব ভালোবাসেন আর আপনার কাছে দুনিয়ার সব মানুষ খুব ভালো। তবুও কম কথা বলার চেষ্টা করুন, কারণ কোনো না কোনো একদিন আপনাকে হয়তো একটা কথার জন্য অনেক কিছুর দায়ভার বহন করতে হবে।
২। সব ভালোই ভালো না। কোনো কিছুকে এত বেশি ভালো বলবেন না যে তা আর ভালোই না থাকে। সেটা হোক আপনার পছন্দের ভালো রেস্টুরেন্ট বা আপনার সবথেকে ভালো বন্ধু।
৩। কারো উপর এত বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাবেন না যে তাকে ছাড়া আপনার চলাই মুশকিল হয়ে পড়ে।
৪। ইয়োগা, হাঁটা, দৌড়ানো, ব্যায়াম- যে কোনো একটাকে প্রতিদিনের রুটিনে নিয়ে ফেলুন। এই সময়টা শুধু আপনার একার! (একটা মজার ব্যাপার হলো বেশিরভাগ সময়ই এই কাজগুলো করার সময় দুনিয়ার সব মন খারাপ কথা মনে আসবে, তখন জোরে হাটবেন বা গতি বাড়িয়ে দিবেন। নির্দিষ্ট সময়ের হাটা বা ব্যায়াম শেষে আপনার ভালো লাগবে! )
৫। রুটিনের বাইরে মাঝে মাঝে একটা দিন নিজের মত করে কাটান।
৬। খুব রেগে গেলে পানি খেয়ে ঘুমিয়ে যান। অনেক কাজে লাগবে এই টিপস!!!
৭। লক্ষ্যচ্যুত হয়ে গেছেন? কিছুদিন মাথা ঠান্ডা করে বসে থাকুন। কম্পিউটার মাঝে মাঝে ঝামেলা করলে আমরা বন্ধ করে দিই না? তারপর অনেকক্ষণ পর রিস্টার্ট করলে সব সিস্টেম ঠিক থাকে আগের মত। আমাদের জীবনটাও তাই।
৮। অনেক সময় কথা বলে মন হালকা হয়। আবার এর উল্টাটাও হতে পারে। সামনের মানুষগুলো যদি আপনার কথা না বুঝে তাহলে কথা বলে অযথা সময় এবং নিজের মেজাজ নষ্ট করার মানে হয় না।
৯। যে যাই বলুক, জীবনটা আপনার। তাই মানুষের কথায় কান দিয়ে কোনো কাজ না করাই ভালো। সেটা যত ছোটই হোক না কেনো।
১০। মানুষের জীবনের ভালো খারাপের বোঝা নিজের জীবনে নিবেন না। মনে রাখবেন আপনার জীবনের ভালো খারাপের দায়িত্বও অন্য কেউ নিতে আসবে না। (চরম সত্য!)
মনে রাখবেন, জোলির মতো নামী মানুষের জীবনেও ডিপ্রেশন এসেছিল। তার ভাগ্য অনেক ভালো যে তার আসলে ভালো জীবনসংগী আছে! আপনার সেটা নাও থাকতে পারে (না থাকার সম্ভাবনাই বেশি, ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। কারন এই যুগে কেউ কারো না!)। তবে তার মানে এই না সেই শোকে বসে থাকবেন আর নিজে মরবেন বা তারে মারবেন। আর ঘর তো জীবনেও ছাড়বেন না, তাহলে অপরপক্ষ খুব খুশি হবে। Be a Boss! Make them pay for the loss of your sanity because of them!! There is nothing more intelligent to torture anyone mentally than just being tortured by them!!! পরের টুকু না করতে পারলেও শুধু Don't care ভাব নিয়ে থাকলেও চলবে। আর মেয়েদের জন্য বড় হাতিয়ার হচ্ছে খাবারে লবন ঝাল বেশি দিয়ে জীবন তেজপাতা করে ফেলা!!! এই নিয়ে পরে আরও বিশদ বিবরণ দিব। আজকে আর চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না।