"অ্যাই , তোমার বাসায় চিরুনী নাই?? এরপর থেকে আমার সাথে আসলে মাথার চুল আঁচড়িয়ে আসবা, নাহলে আমি তোমার সাথে ঘুরতে বের হবো না।" হাসে মৃদুল জোরে জোরে। মিলির এই ব্যাপারটা ওর খুব ভালো লাগলে, কিছু হলেই থ্রেট দেয় মেয়েটা। খুব ভালোমতোই জানে মৃদুল, এরপরের দিনও ও এই একই কথা বলবে। হয়তো ব্যাগে করে চিরুনীও আনতে পারে। এমনিতেই মৃদুল খুব অগোছালো, আর মাথার চুল আঁচড়ানোটা ওর সবথেকে অপছন্দের কাজ। মিলি প্রথম দিন থেকেই ওর চুলের পিছনেই লেগে থাকে। কিন্তু মৃদুলের এই অভ্যাসটা ও ছাড়াতে পারলো না। আরও অনেক অভ্যাসই আছে মৃদুলের যা মিলির পছন্দ না। তবুও কেনো জানি মিলি আর মৃদুল এতো কাছাকাছি চলে এসেছে দুজন দুজনার। মিলি এখন মৃদুলের অভ্যাস, আর মৃদুল মিলির ঝাড়ি দেওয়ার একমাত্র মানুষ। সারাদিন দুজন ম্যাসেজ চালাচালি করে। মিলির একটা ব্যাপার মৃদুলের একটু খারাপ লাগে, ও ম্যাসেজের উত্তর দিতে দেরী করে। তখন খুব অস্থির হয়ে যায় মৃদুল, একের পর এক ম্যাসেজ দিতেই থাকে, তারপর অবশ্য মিলির কাছে বকাও খায়। কিন্তু এটাই ওর ভালো লাগে। মিলির খবরদারী, ওর বকা, ওর কেয়ার করা সব সব।
মৃদুল বারবার মিলির ফোনে কল দিচ্ছে। ওর ফোনটা বন্ধ। টিটু ওকে বলতেছে," আরেহ, তুই কি ঐ মেয়ের জন্যে পাগল হবি নাকি?আমি আগেই কইছিলাম মেয়েটা ভালো না, তুই তো আমার কথা কিছুই শুনলি না। স্মার্ট মেয়ে দেইখা পইটা গেলি।" আরও কি কি সব বলে যাচ্ছে টিটু। মৃদুলের কান দিয়ে ওগুলো ঢুকছে না। মাথাটা ঘুরাচ্ছে। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। খুব আটকানোর চেষ্টা করছে ও। কিন্তু কিছুতেই পারছে না ও। বাচ্চাদের মতো হু হু করে কেঁদে ফেলে সে। টিটু হতভম্ব হয়ে যায়। মৃদুলের এই রূপ কখনো দেখিনি সে। সব ঐ মেয়েটার জন্যে। রাগ হয় টিটুর। বন্ধুর কাছে গিয়ে ওকে সান্তনা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে সে।
এই কয়মাসে অনেকটা সামলে উঠেছে মৃদুল নিজেকে। এর মাঝে দুয়েকবার মিলির সাথে কথাও হয়েছে ওর। কেমন আছ, ভালো আছি টাইপের কথা। বুকের ভেতরটা মাঝে মাঝে খাঁ খাঁ করে ওর। মিলির হাসির শব্দ শুনতে ইচ্ছা করে। মিলিকে নিয়ে রিকশায় ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরতে ইচ্ছা করে। মিলির বকা শুনতে ইচ্ছা করে। কিন্তু কেনো যে সব নষ্ট হয়ে গেলো তা মৃদুলও জানে না। মিলি খুবই জেদী। নিজের ভুল স্বীকার করতে চায়না সে, আবার নিজেকে কষ্ট দিয়ে হলেও নিজেকেই ঐ ভুলের শাস্তি দেয়। কিন্তু মৃদুলের কি ভুল ছিলো?? কেন মিলি এভাবে মৃদুলের জীবনে সবথেকে বড় কষ্ট টা দিলো? নিজেকে বারবার এই প্রশ্ন করেছে সে। কিন্তু উত্তর পায়নি। আগের মত হাসিখুশি থাকতে পারেনা মৃদুল চাইলেও। বন্ধুরা মিলিকে দুষে, কিন্তু মৃদুল মিলিকে দোষও দিতে পারে না। অনেক বেশি ভালোবাসত মেয়েটাকে সে। মাঝে মাঝে বন্ধুদের ফেসবুক আইডি থেকে মিলির ছবি দেখে সে। আগের থেকে আরও বেশি সুন্দর হয়েছে মেয়েটা। কিন্তু র হাসির মধ্যে কেনো জানি কোনো প্রান নেই। মিলিও কি মৃদুলের মতোই কষ্টে আছে? এসব প্রশ্ন হয়তো কখনোই জানা হবে না মৃদুলের। তবু কোনো কোনো রাতে, অথবা বৃষ্টিভেজা বিকেলে মিলির ফোনে ছোটো একটা বার্তা পাঠায় সে, " খুব ভালোবাসি।"
*** একটু চেষ্টা করলাম অপরপাশের মানুষটার কষ্টটা বুঝতে, কতটুকু পারলাম জানিনা। গল্পটার প্রতিটি শব্দ একজন মানুষের জীবন থেকে নেয়া। এই গল্পটা শুধুই তোমার জন্যে,রি । ***